চরিত্রহীন উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি ও সংলাপ : ‘চরিত্রহীন’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি জনপ্রিয় ও বহুচর্চিত বাংলা উপন্যাস, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে। এই উপন্যাসে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন সমাজের দ্বিচারিতা, নারীর অবস্থান ও তথাকথিত ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রচলিত সামাজিক ধারণা। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র—কিরণময়ী, সবিত্রী, সূর্যকান্ত, উপেন্দ্র—তাদের নিজস্ব বেদনা, ভালোবাসা ও সংকটের মধ্যে দিয়ে পাঠকের মনে প্রশ্ন তোলে: সত্যিকারের ‘চরিত্রহীন’ আসলে কে?
এই উপন্যাস শুধু প্রেম বা সামাজিক নৈতিকতা নিয়ে নয়, বরং একজন লেখকের নির্ভীক দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর অন্তর্জগৎ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুখোশ উন্মোচনের একটি অনবদ্য সাহিত্যমূল্য ধারণ করে।
প্রিয় পাঠক, এই ব্লগ পোস্টে আমরা তুলে ধরেছি চরিত্রহীন উপন্যাসের সবচেয়ে আলোড়ন তোলা, প্রভাবশালী ও হৃদয়স্পর্শী কিছু সংলাপ ও উক্তি, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও ভাবনায় আলোড়ন তোলে।
Quotes from Charitraheen by Saratchandra Chattopadhyay l চরিত্রহীন থেকে কিছু স্মরণীয় উক্তি
Table of Contents
যেদিন বুঝবে রুপটাও মানুষের ছায়া, মানুষ নয় সেদিনই শুধু ভালোবাসার সন্ধান পাবে।
ধুঁয়া যেমন একটুখানি রন্ধ্রের সাহায্যে সমস্ত ঘর নিমিষে ব্যাপ্ত করিয়া ঘোলা করিয়া দেয়, তেমনি করিয়া একটিমাত্র নিষ্ফলতার ক্ষুদ্র দ্বার ধরিয়া নৈরাশ্যের গাঢ় অন্ধকারে তাহার সমস্ত মন পরিপূর্ণ হইয়া গেল।
যে বস্তুই হোক, শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখা মানুষের সাধ্য নয়। যিনি যত বড় বিচক্ষণ পন্ডিতই হোন না কেন, শেষ ফলটুকু ভগবানের হাত থেকেই নিতে হবে।
সন্তান-ধারণের জন্য যে-সমস্ত লক্ষণ সবচেয়ে উপযোগী তাই নারীর রূপ। সমস্ত জগতের সাহিত্যে, কাব্যে এই বর্ণনাই তার রূপের বর্ণনা।
বুড়ো মানুষের কাছে কোনো যুক্তিই যুক্তি নয়। তাদের নিজের প্রয়োজনের বেশি সংসারে আর কিছু তারা দেখতেই পান না।
জগতের সমস্ত বস্তুই সাফাই সাক্ষীর হাত ধরে হাজির হতে পারে না বলে মিথ্যা বলে ত্যাগ করতে হলে অনেক ভালো জিনিস হতেই আমাদের বঞ্চিত হয়ে থাকতে হয়।
যেদিন বুঝবে রূপটাও মানুষের ছায়া, মানষ নয়—সেইদিনই শুধু ভালবাসার সন্ধান পাবে।
হায় রে মানুষের মন! এ যে কিসে ভাঙ্গে, কিসে গড়ে, তাহার কোন তত্ত্বই খুঁজিয়া পাওয়া যায় না! এই যে কতটুকু আঘাতে একেবারে মাটিতে লুটাইয়া পড়ে, আবার কত প্রচণ্ড আঘাতও হাসিমুখে সহা করে তাহার কোন হিসাবই পাওয়া যায় না। অথচ, এই মন লইয়া মানুষের অহঙ্কারের অবধি নাই।
যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে, এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়! কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। পূর্বের টা ব্যাথা দেয়। কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমান ও করে।
যাহা জটিল ও দুর্বোধ্য, তাহা বিশদভাবে পরিষ্কার করিয়া বুঝাইয়া বলিবার সময় ও সুবিধা না হওয়া পর্যন্ত একেবারে না বলাই ভাল। ইহাতে অধিকাংশ সময়ে সুফলের পরিবর্তে কুফলই ফলে।
এই গেরুয়া কাপড় পরা লোকগুলি সংসারকে যে অনেক জিনিসই দিয়ে গেছেন ।
কাঁচার দাম যে কি, সে কেবল তখন বুঝবি যখন আরও পাকা হবি৷
যতদিন তুমি পরকালের কল্পনা, আত্মার কল্পনা, ঈশ্বরের কল্পনা, প্রভৃতি জঞ্জালগুলি মনের মধ্যে থেকে পরিষ্কার করে ঝেঁটিয়ে না ফেলতে পারবে, ততদিন সংশয় তোমার থেকেই যাবে। সখেই যে জীবনের শেষ উদ্দেশ্য এবং সুখী হওয়াই যে জীবনের চরম সার্থকতা, এ কথা বঝেও বুঝবে না। কেবলই মনে হতে থাকবে, কে জানে, হয়ত বা আরো কিছু আছে। অথচ এই আরো-কিছুর সাধন কোনদিনই খুঁজে পাবে না। এ তোমাকে ব্যস্ত করে রাখবে, অথচ গতি দেবে না, আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলবে, কিন্তু পরিতৃপ্তি দেবে না। পথের গল্পই বলবে, কিন্তু কোনদিন পথ দেখিয়ে দিতে পারবে না।
ভালো ডাক্তার কেবল বড় লোকের জন্য, গরীবের বেলায় হাতুড়ে।
জগতের সমস্ত বস্তুই সাফাই-সাক্ষীর হাত ধরে হাজির হতে পারে না বলে সে সব মিথ্যা বলে ত্যাগ করতে হলে অনেক ভালো জিনিস হতেই আমাদের বঞ্চিত থাকতে হয়।
যে বস্তুরই হোক, শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখা মানুষের সাধ্য নয়। যিনি যতবড় বিচক্ষণ পণ্ডিতই হোন না কেন, শেষ ফলটুকু ভগবানের হাত থেকেই নিতে হয়।
যার ভালো-মন্দ কিসে হয় না হয় বুঝি, সেটা উপেক্ষা করে তার ক্ষতি করে একটা অনিশ্চিত মহত্ত্বের পিছনে ছুটে বেড়ানো আমার কাছে ভালো ঠেকে না।
শ্রদ্ধা ছাড়া ভালোবাসা দাঁড়াতে পারে না। সমাজ যে স্ত্রীকে তাঁর সম্মানের আসনটি দেয় না, কোন স্বামীরই ত সাধ্য নেই নিজের জোরে সেই আসনটি তার বজায় করে রাখেন।
যে চুপ করে সহ্য করে, সবাই তার ওপর অত্যাচার করে।
মানুষে একেবারে চুপ করে থাকতেও পারে না, পারা উচিতও নয়।
সংসারে বাস করতে গেলে অনেক ছোটখাটো মন্দ জিনিসকে অগ্রাহ্য করতে হয়
চরিত্রহীন উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি l চরিত্রহীন থেকে কিছু স্মরণীয় উক্তি
- আমি চরিত্রহীন নই — আমি স্বাধীন।
- সমাজ ভুল বোঝে, তাতে কী আসে যায়? আমি জানি আমি কে।
- নারীর ইচ্ছার স্বাধীনতাই সমাজের চোখে ‘অপরাধ’।
- যার মনে সন্দেহ, তার প্রেমে বিশুদ্ধতা নেই।
- ভালোবাসা চুপিচুপি নয়, সাহসিকতার নাম।
- আমার পথ আমি ঠিক করব — তোমার চোখ দেখে নয়।
- চোখের জল সমাজ দেখে না, বিচার করে শুধু।
- আমি যদি দোষী হই, তবে সমাজ কেন? বিবেক আমাকে বিচার করুক।
- ভালোবাসা মানে শুধু কাছাকাছি আসা নয়, বোঝা ও বিশ্বাসও।
- তুমি ভালোবাসলে বোঝো — আমার অতীত নয়, আমার মন।
- আমার ‘না’ বলার অধিকার তোমার ‘ভালোবাসা’র অংশ।
- আমি তোমার দয়া চাই না — চাই সম্মান।
- চরিত্র হয় অন্তরে — জামায় না।
- নারীও মানুষ — অনুভব আছে, সম্মান চাই।
- যাকে সমাজ চরিত্রহীন বলেছে, সে হয়ত সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে জানে।
- একটা ভুল তোমার চোখে আমাকে অযোগ্য করে দিল? তাহলে তুমি কোনোদিন ভালোবাসোনি।
- আমি যদি অন্যরকম হই, তবেই কি ‘চরিত্রহীন’?
- সমাজ আমার পরিচয় নয় — আমি নিজেই নিজের পরিচয়।
- ভালোবাসার নামে কারাগার চাই না — চাই মুক্তি।
- যদি ভালোবাসো, তবে বিশ্বাস করো — সন্দেহ নয়।
Famous Quotes from Charitraheen (Translated from Bengali):
- “এই সমাজের বিচার বড় বিচিত্র। যে সত্যিকার পবিত্র, তাকেই সমাজ পাপী বলে চিহ্নিত করে।”
“This society’s judgment is strange—those truly pure are the ones it condemns as sinners.” - “নারীর পবিত্রতা সমাজের দেওয়া নয়, নারীর নিজের অর্জন।”
“A woman’s purity is not a gift from society—it is her own achievement.” - “ভালোবাসা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা ত্যাগে রূপ নেয়।”
“Love reaches fulfillment only when it transforms into sacrifice.” - “চরিত্রহীন বললেই সে দোষী হয়ে যায় না, কখনো কখনো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি চরিত্রহীন হয়।”
“Being called ‘characterless’ doesn’t make someone guilty—sometimes, it’s society’s perspective that is tainted.” - “মানুষ যতই আধুনিক হোক, তার মনে একখণ্ড পাথর থেকেই যায়, যা অন্যের কষ্টকে অনুভব করতে পারে না।”
“No matter how modern a person becomes, a stone always remains in their heart—unmoved by others’ pain.”
আরো পড়ুনঃ দেবদাস উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি