শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন উত্তম চিন্তাবিদ। তার বিখ্যাত উক্তি ও বাণী (Quotes By Sarat ChandraChattopadhyay in Bengali) মানুষের মধ্যে আলোকের একটি বিক্ষোভ ঘটিয়ে তোলে। তার প্রবন্ধ, উপন্যাস, ও উক্তির মধ্যে প্রকাশিত বোধগম্য ধারার উদাহরণ দেখে মানুষ সবোর্থ এবং উদ্দীপনামূলক পরামর্শ পেতে পারে।
এই ব্লগে আমরা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহৎ বিচার ও বাণীগুলির প্রকাশ করে তার উদ্দীপক চিন্তার সাথে পরিচিতি করার চেষ্টা করব। তার আলোকিত বিচার এবং সত্যের খোঁজে প্রেরিত পরামর্শগুলি মানুষের জীবনে একটি নতুন আলোক বিচারের দিকে প্রেরণা দেতে পারে। এই ব্লগে আমরা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি ও বাণী পোস্ট করেছি। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।
আসুন এই অপরিসীম বিচারধারার দ্বারা প্রত্যক্ষ হতে পারি আমাদের সৃষ্টির মূলধারা, ও আমাদের জীবনে নতুন আলোক প্রকাশ করতে পারি আমাদের পথে।
Quotes By Sarat ChandraChattopadhyay in Bengali l শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাণী
Table of Contents
* সমস্ত রমণীর অন্তরে নারী বাস করে কিনা তাহা জোর করিয়া বলা অত্যন্ত দুঃসাহসের কাজ। কিন্তু নারীর চরম সার্থকতা যে মাতৃত্বে এ কথা বোধ করি গলা বড়ো করিয়াই প্রচার করা যায়।
* বনের পাখির চেয়ে পিঞ্জরের পাখিটাই বেশি ছটফট করে।
* ভালো বক্তার কাছে জনতা যুক্তিতর্ক চাহে না, যাহা মন্দ তাহা কেন। মন্দ এ খবরে তাহাদের আবশ্যক হয় না। শুধু মন্দ যে কত মন্দ অসংখ্য বিশেষণ যোগে ইহাই শুনিয়া তাহারা চরিতার্থ হইয়া যায়।
* যেখানে ফেলে যাওয়াই মঙ্গল সেখানে আঁকড়ে থাকাতেই অকল্যাণ।
* লোকে বলে, এই তো দুনিয়া! এমনি ভাবেই ত সংসারের সকল কাজ চিরদিন হইয়া আসিয়াছে। কিন্তু এই কি যুক্তি! পৃথিবী কি শুধু অতীতের জন্য, মানুষ কি কেবল তাহার পুরাতন সংস্কার লইয়া অচল হইয়া থাকিবে! নূতন কিছু কি সে কল্পনা করিবে না! উন্নতি করা কি তাহার শেষ হইয়া গেছে!
* কোনো প্রেমই কোনোদিন ঘৃণার বস্তু হতে পারে না।
* আমাদের দেশের লোক বই পড়েন বটে, কিন্তু পয়সা খরচ করে কিনে পড়েন না।
* অর্থশালী পুরুষের যে কোনো দেশেই বয়সের অজুহাতে বিবাহ আটকায়, বাংলা দেশে ত নয়ই।
* পৃথিবীর আকর্ষণ ত চিরদিনই আছে কিন্তু সে আকর্ষণে আত্মসমর্পণ করতে গাছের পাকা ফলটিই পারে, কঁচায় পারে না। তার আঁশ শাঁস পৃথিবীর রসেই পাকে, স্বর্গের রসে পাকে না। সুন্দর ফুল রূপ দিয়ে, গন্ধ দিয়ে, মধু দিয়ে, মৌমাছি টেনে এনে ফলে পরিণত হয়, সেই ফল আবার ঠিক সময়ে মাটিতে পড়ে অঙ্কুরে পরিণত হয়। এ তার প্রকৃতি, এই তার প্রবৃত্তি, এই তার স্বর্গীয় প্রেম। বিশ্বজুড়ে এই যে অবিচ্ছিন্ন সৃষ্টির খেলা, রূপের খেলা চলেছে, স্বর্গীয় নয় বলে এতে দুঃখ করবার বা লজ্জা পাবার ত কিছু দেখিনে।
Bengali Quotes By Sarat Chandra Chattopadhyay l শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তিসমূহ
* সন্তানের নামকরণকালে পিতামাতার মূঢ়তায় বিধাতাপুরুষ অন্তরীক্ষে থাকিয়া অধিকাংশ সময়ে শুধু হাস্য করিয়াই শান্ত হন না, তীব্র প্রতিবাদ করেন। তাই অহাদের সমস্ত জীবনটা তাহাদের নিজেদের নামগুলোকেই যেন আমরন ভ্যাংচাইয়া চলিতে থাকে।
* নারীর এক জাতীয় রূপ আছে যাহাকে যৌবনের অপর প্রান্তে না পৌছিয়া পুরুষ কোনোদিন দেখিতে পায় না।
* ছেলে বয়সের একটা মস্ত দোষ এই যে, অনেক বই পড়ার অভিমানটা এদের পেয়ে বসে। তাই নিজের লেখার মধ্যে নিজের কিছুই থাকে না, থাকে শুধু মুখস্থ করা পরের কথা। থাকে কারণে অকারণে যেখানে সেখানে খুঁজে দেওয়া বিদ্যার বাচালতা।
* যারা অধর্মকে ভয় করে না, লজ্জা ভয় যাদের নেই, প্রাণের ভয়টা যদি তাদের তেমন বেশি থাকে, তা হলে সংসার ছারখার হয়ে যায়।
* সংসারে বন্ধু সংখ্যা যাহার অপরিমিত দুঃখের দিনে ডাক দিবার মতো বন্ধুর তাহারি সবচেয়ে অভাব।
* স্পষ্ট করার লোভ যাদের বড় বেশি, বক্তা হলে তারা খবরের কাগজে বক্তৃতা ছাপায়, লেখক হলে নিজের গ্রন্থের ভূমিকা, আর নাট্যকার হলে তারাই সাজে নিজের নাটকের নায়ক।
* চটুল বাক্যের নানা অলঙ্কার গায়ে আমাদের জড়িয়ে দিয়ে যারা প্রচার করেছিল মাতৃত্বই নারীর চরম সার্থকতা, সমস্ত নারীজাতীকে তারা বঞ্চনা করেছিল।
* সর্বপ্রকার মতকেই শ্রদ্ধা করতে পারেন কে জানেন? যার নিজের মতের বালাই নেই। শিক্ষার দ্বারা বিরুদ্ধ মতকে নিঃশব্দে উপেক্ষা করা যায়।
* প্রায় কোনো দেশেই পুরুষ নারীর যথার্থ মূল্য দেয় নাই।
* বিরাগ-বিদ্বেষ নিয়ে বিচার করতে গেলে কেবল একপক্ষই ঠকে না, অন্য পক্ষও ঠকে।
* যে সকল ব্যাপার সচরাচর এবং সহজভাবে ঘটে না এবং যাহার মধ্যে পাপ আছে, তাহা তলাইয়া বুঝিতে না পারিলেও সকলেই নিজের বুদ্ধি অনুসারে একরকম করিয়া বুঝিতে পারে।
* মনই যদি দেউলে হয়, পুরুতের মন্ত্রকে মহাজন খাড়া করে সুদটা আদায় হতে পারে, কিন্তু আসল ত ডুবল।
* যে লোক দাবী করতে ভয় পায়, পরের দাবী মেটাতেই তার জীবন কাটে।
* বড়ো দুঃখ ছাড়া কোনোদিন কোনো বড়ড়া জিনিস লাভ করা যায় না।
* মনের বার্ধক্য আমি তাকেই বলি…যে মন সুমুখের দিকে চাইতে পারে।
All quotes by Sarat Chandra Chattopadhyay । নারী প্রেম ও সমাজ নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাণী
• যে সকল ব্যাপার সচরাচর এবং সহজভাবে ঘটে না এবং যাহার মধ্যে পাপ আছে, তাহা তলাইয়া বুঝিতে না পারিলেও সকলেই নিজের বুদ্ধি অনুসারে এরকম করিয়া বুঝিতে পারে।
• পৃথিবীতে এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না যারা মেয়েদের মানুষ হবার স্বাধীনতা হরণ করেনি, অথচ তাদের মনুষ্যত্বের স্বাধীনতা অপর কোনো প্রবল জাত কেড়ে নিয়ে জোর করে রাখতে পেরেছে।
• মনই যদি দেউলে হয়, পুরুতের মন্ত্রকে মহাজন খাড়া করে সুদটা আদায় হতে পারে, কিন্তু আসল তো ডুবল।
• পুরুষের চরম ও পরম প্রয়োজনেই রমণীর শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রয়োজন।
• সংসারে বন্ধু সংখ্যা যাহার অপরিমিত দুঃখের দিনে ডাক দিবার মতো বন্ধুর তাহারি সবচেয়ে অভাব।
• যারা অধর্মকে ভয় করে না, লজ্জা ভয় যাদের নেই, প্রাণের ভয়টা যদি না তাদের তেমন বেশি থাকে, তা হলে সংসার ছারখার হয়ে যায়।
• কেহ বলে বাল্য প্রেমে অভিসম্পাত আছে, কেহ বলে বাল্য প্রেম দৃঢ় হয় না, কেহ বলে দৃঢ় হয়। যাহাই হোক, এ বিষয়ে ঠিকঠাক একটা কোনোরূপ বন্দোবস্ত করা নাই। সকল রকমই হইতে পারে, কিন্তু যাহাই হোক, ইহার একটা স্মৃতি চিরদিনের জন্য ভিতরে রহিয় যেমন করিয়া উপড়াইয়া ফেলিয়া দেওয়া হোক ন একটু ক্ষুদ্রতম শিকড় বোধহয় অনুসন্ধান অনেক হাত জমির তলে পাওয়া যায়।
• বিদ্যা ও বিদ্যালয় এক বস্তু নয়; শিক্ষা ও প্রণালী এ-দুটো আলাদা জিনিস। সুতরাং একটা ত্যাগ করাই অপরটা বর্জন করা নয়। হতে পারে বিদ্যালয় ছাড়াই বিদ্যালাভের ব আপাতদৃষ্টিতে কথাটা উলটো মনে হলেও হওয়া অসম্ভব নয়। তেলে জলে মেশে না, এ পদার্থও একেবারে উলটো, তবু তেলের : জ্বালাতে যে মানুষ জল ঢালে সে কেবল তেলটাকেই নিঃশেষে পুড়িয়ে নিতে জানে।
রূপই মানুষের সবটুকু নয়, কিংবা শুধুমাত্র সৌন্দর্যচর্চাই বিবাহের উদ্দেশ্য নয়।
বিপ্লব শান্তি নয়, হিংসার মধ্যে দিয়েই তাকে চিরদিন পা ফেলে আসতে হয় এই তার বর, এই তার অভিশাপ।
শরৎচন্দ্রের বাণীগুলি: জীবনের পথে প্রেরণা l
• বস্তু অতীত হয় কালের ধর্মে। কিন্তু তাকে ভালো হতে হয় নিজের গুণে। শুধুমাত্র প্রাচীন বলেই সে পূজ্য হয়ে ওঠে না।
বিশেষণ না থাকিলে বিশেষ্যকে কে চিনিত।… যাহাতে দেখিলে তাহার বিশেষ্যকে মনে পড়ে, বিশেষ্যের সেইটিই বিশেষণ, সেইটিই প্রতিবিম্ব, সেইটিই ছায়া।
• ভালোবাসার শুচিতার ইতিহাস মানুষের সভ্যতার ইতিহাস, তার জীবন। তার বড় হবার ধারাবাহিক বিবরণ।
• মানুষের শক্তি যত কমে আসে মুখের বিষ তত উগ্র হয়ে ওঠে।
• মাতাল তার মাতাল-বন্ধুকে যত ভালোবাসুক না কেন, নির্ভর করবার বেলায় করে শুধু যে মদ খায় না।
• একলা মানুষের আন্তরিকই ইচ্ছাশক্তি এত বড় যে তার পরিমাণ হয় না। ঠিক বামনদেবের পায়ের মতো। বাইরে থেকে সে দেখতে ছোটো কিন্তু সেই ক্ষুদ্র পদতলটুকু প্রসারিত হলে বিশ্ব আচ্ছন্ন করে দেয়।
পুরুষ মানুষকে চোখে চোখে না রাখলেই সে গেল। সংসার করতে আর যাই কেন না ভোলো, কখনও এ কথাটি ভুলো না।
• মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পাওয়াকেই যথার্থ মানুষ হওয়া বলে।
• চটুল বাক্যের নানা অলঙ্কার গায়ে আমাদের জড়িয়ে দিয়ে যারা প্রচার করেছিল মাতৃত্বই নারীর চরম সার্থকতা, সমস্ত নারীজাতিকে তারা বঞ্চনা করেছিল।
• স্পষ্ট করার লোভ যাদের বড্ড বেশি, বক্তা হলে তারা খবরের কাগজে বক্তৃতা ছাপায়, লেখক হলে নিজের গ্রন্থের ভূমিকা, আর নাট্যকার হলে তারাই সাজে নিজের নাটকের নায়ক।
• দুঃখের দিন দেরি করিয়া কাটে সত্য, কিন্তু তথাপি কাটে, বসিয়া থাকে না।
• নিজেকে রিক্ত করে দান করবার অনেক দুঃখ। কিন্তু ঝোঁকের ওপর হয়তো তাই এক মুহূর্তে পারা যায়, কিন্তু তার ফল ভোগ হয় সারাজীবন ধরে।
মানুষের এমনি পোড়া স্বভাব, যা তার সাধ্যাতীত, তাতেই তার সবচেয়ে লোভ। ভগবানকে পাওয়া যায় না বলেই মানুষ এমন করে সব দিয়ে তাঁকে চায়।
• সংসারে যত পাপ আছে, মানুষের দয়ার উপর জুলুম করাটা সবচেয়ে বেশি।
Quotes By Sarat ChandraChattopadhyay in Bengali l শরৎচন্দ্রের উক্তি: সত্য এবং সমাজ
• ভালো করব বললেই ভালো করা যায় না। গোড়ায় অনেকগুলো ছোটো ছোটো সিঁড়ি উত্তীর্ণ হবার ধৈর্য থাকা চাই।
• দুঃখ যত বড়ই হোক সহ্য করাই মনুষ্যত্ব। অক্ষম অপারগ হয়ে সংসার ত্যাগ করা কখনও ভগবানের অভিপ্রায় নয়।
• দুঃখ ভোগ করার মধ্যে একটা মারাত্মক মোহ আছে। মানুষ বহু যুগের জীবনযাত্রায় এটা দেখিয়াছে যে, কোনো বড় ফলই বড়রকম দুঃখ ভোগ ছাড়া পাওয়া যায় না। তার জন্মজন্মান্তরের অভিজ্ঞতায় আজ এই ভ্রমটাকে একেবারে সত্য বলিয়া জানিয়াছে যে, জীবনের মানদণ্ডে একদিকে যত বেশি দুঃখের ভার চাপানো যায়, তার একদিকে তত বড় সুখের বোঝা গাদা হইয়া উঠিতে থাকে।
• বৈরাগ্য যৌবনকেই তো বেশি পেয়ে বসে। যেখানে শক্তি, সেখানে বিরুদ্ধ শক্তি ছাড়া তাকে বশ করবে কে?
• জন্মিলে মরিতে হয়, আকাশে প্রস্তর নিক্ষেপ করিলে তাহাকে ভূমিতে পড়িতে হয়, খুন করিলে ফাঁসি যাইতে হয়। চুরি করিলে কারাগারে যাইতে হয়, তেমনি ভালোবাসিলে কাঁদিতে হয়-অপরাপরের মতো ইহাও একটি জগতের নিয়ম।
• সবাই নিজের দুঃখটা জানিয়ে দুঃখটা কম করে ফেলতে চায়। মানুষের স্বভাবই এই।
• দ্রুতবেগের ভারি একটা আনন্দ আছে। গাড়িরই বা কি, আর জীবনেরই বা কি। কিন্তু যারা ভীতুলোক তারা পারে না। সাবধানে ধীরে ধীরে চলে। ভাবে পথ হাঁটার দুঃখটা যে বাঁচলো এই তাদের ঢের। পথটাকে ফাঁকি দিয়েই তারা খুশি, নিজেদের ফাঁকিটা টেরও পায় না।
• নিজের মন যার পরের হাতে চলে যায়, সংসারে তার চেয়ে নিরুপায় বুঝি আর কেউ নেই।
• দানশীলতার মতো দুষ্কৃতি চাপা দেবার এমন আচ্ছাদন আর নেই।
• ভুলের দণ্ড পেতে হয় এ আমি জানি। তার দুঃখ আছে, কিন্তু লজ্জা নেই।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি ও বাণী l নারী প্রেম ও সমাজ নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাণী
• যে যথার্থ ভালোবাসে। সে সহ্য করে থাকে। শুধু অন্তরে ভালোবাসেও যে কত সুখ, কত তৃপ্তি-যে টের পায়, সে নিরর্থক সংসারের মাঝে দুঃখ অশান্তি আনতে চায় না। দেবতাকে প্রসন্ন করার দুটো ধারা আছে। এক স্তব, আর এক মন্ত্র। স্তব মনের আবেগে যথা ইচ্ছা বানানো যায়, তার একদিনের বাক্য আর একদিনের সঙ্গে মেলার দরকার নেই। শুনে দেবতা খুশি হয়ে বর দিতেও পারেন, নাও পারেন। তাঁর অনুগ্রহে ভক্তের জোর নেই। কিন্তু মন্ত্র তা নয়, ইচ্ছামতো বাড়ানো যায় না, মুখস্থ করে আবৃত্তি করতে হয়। উচ্চারণ নির্ভুল হলে দেবতার না বলবার জো নেই, চুলের ঝুঁটি ধরে বর আদায় হয়। একেই বলে সিদ্ধমন্ত্র।
• মিথ্যার সঙ্গে রফা করতে গিয়ে জীবনের কত অমূল্য সম্পদ না মানুষ নষ্ট করে।
• মানুষ যতই আঁকড়ে ধরে গ্রাস করে ভোগ করতে চায় ততই সে হারায়। তার ভোগের ক্ষুধা তো মেটেই না-অতৃপ্তি নিরন্তর বেড়েই চলে।
• ভিতরের বস্তু যখন কম থাকে, তখন মুখবন্ধের আড়ম্বর দিয়েই শ্রোতের মুখ বন্ধের প্রয়োজন হয়।
লেখার দ্রুতগতি কেরাণির qualification- লেখকের নয়।
• রুগি যখন মরে তখন আড়ালে ডাক্তারের বাপান্ত করা ছাড়া গৃহস্থের আর কোনো সান্ত্বনা থাকে না।
• যাহার রূপ আছে, সে দেখাবেই। যাহার গুণ আছে, সে প্রকাশ করিবেই। যাহার হৃদয়ে ভালোবাসা আছে যে ভালোবাসিতে জানে-সে ভালোবাসিবেই।
• প্রথা যখন একবার ধর্ম হইয়া দাঁড়ায়, দেবতা প্রসন্ন হন, পরকালের কাজ হয়, তখন কোনো নিষ্ঠুরতাই আর অসাধ্য হয় না। বরঞ্চ কাজ যত নিষ্ঠুর, যত বীভৎস হয়, পুণ্যের ওজনও সেই পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
• পরের মতকে যদি শ্রদ্ধা করতেই না পারা গেল তো সে কিসের শিক্ষা?
• চিরদিন সংসারে অত্যাচারিত, পীড়িত, দুর্বল বলিয়া মানুষের সহজ অধিকার হইতে যাহারা সকলের দ্বারা প্রবঞ্চিত, নিজের উপরে বিশ্বাস করিবার কোনো কারণ যাহারা দুনিয়ায় খুঁজিয়া পায় না, দেবতা ও দেবের প্রতি তাহাদেরই বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি।
• বিধবা-বিবাহ ভালো কিংবা মন্দ, সে তর্ক তুলিব না। কিন্তু এ বিবাহ যদি শুধু এই বলিয়াই উচিত হয় যে, অন্যথা তাহাকে সুপথে রাখা শক্ত হইবে, তাহা হইলে আমি বলি, বিধবাবিবাহ উচিত নহে।
• দৈন্য এবং অভাব ইচ্ছাতেই আসুক, আশা বা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আসুক, ও নিয়ে দর্প করবার কিছু নেই। ওর মাঝে আছে শূন্যতা, ওর মাঝে আছে দুর্বলতা, ওর মাঝে আছে পাপ।
• সংসারে অনেক ঘটনার মধ্যে বিবাহও একটা ঘটনা-তার বেশি নয়, ওটাকে নারীরা সর্বস্ব বলে যেদিন মেনে নিয়েছেন, সেই দিনই শুরু হয়েছে মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি।
• মন্দ তো ভালোর শত্রু নয়, ভালো শত্রু তার চেয়ে আরও ভালো- সে।
নারী প্রেম ও সমাজ নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাণী
• মানুষ খাঁটি কিনা, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে। এই জায়গায় নাকি ফাঁকি চলে না, তাই এইখানেই মানুষের যথার্থ রূপ প্রকাশ পেয়ে ওঠে।
• মানুষ তো দেবতা নয়-সে যে মানুষ। তার দেহ দোষ গুণে জড়ানো কিন্তু তাই বলে তো তার দুর্বল মুহূর্তের উত্তেজনাকে তার স্বভাব বলে ধরে নেওয়া চলে না।
• মানুষ খাঁটি কিনা, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে। এই জায়াগায় নাকি ফাঁকি চলে না, তাই এইখানেই মানুষের যথার্থ রূপ প্রকাশ পেয়ে ওঠে।
• আয়নাতে মানুষের ছায়া পড়ে। সেটা ছায়া, মানুষ নয়, এ তো জানা কথা। ছায়াকে মানুষ বলে ধরতে গেলে ভুল করা হয়। কিন্তু রূপ তো সেরকম কোনো জিনিসের ছায়া নয়। সাপকে দড়ি বলে ধরতে যাওয়া ভুল, মরীচিকাকেও জল বলে ছুটে ধরতে যাওয়া ভুল, কিন্তু রূপের পিছনে মানুষ যে নিছক রূপের তৃষ্ণাতেই ছুটে যায়।
• সত্য কখনও বঞ্চনা করে না।
• শ্মশানে মহারাজও ভিক্ষুকের সমান হইয়া যান, এখানেও ভিক্ষুক মহারাজার সমান হইয়া দাঁড়ান।
• মৃত্যুর শোক যেমন বড়ো, তার শান্তি, তার মাধুর্য তেমনি বড়।
• যত্ন জিনিসটায় মিষ্টি আছে সত্যি, কিন্তু তার ভাণ করাটায় না আছে মধু, না আছে স্বাদ।
• সমস্ত সংযমের মতো যৌন সংযমেও সত্য আছে। কিন্তু সে সত্য গৌণসত্য। ঘটা করে তাকে জীবনের মুখ্য সত্য করে তুললে সে হয় আর এক ধরনের অসংযম। তার দণ্ড আছে। আত্ম নিগ্রহের উগ্রদন্তে আধ্যাত্মিকতা ক্ষীণ হয়ে আসে।
• শাস্ত্রীয় বিচারে যিনি মাথা গরম করেন, তিনি দুর্বল।
• যে শিক্ষা পরম শ্রেয়, তাকে এই কিশোর বয়সেই শিরার রক্তের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে গ্রহণ করতে হয়, তবেই যথার্থ করে পাওয়া যায়।
• এ কথা মনে রাখা একান্ত প্রয়োজন যে রাজনীতি পরিচালনা একটা পেশা। যেমন ডাক্তারি, ওকালতি, প্রফেসারি -এমনি অন্যান্য সমুদয় বিদ্যার মতো একেও শিক্ষা করতে হয়, আয়ত্ত করতে সময় লাগে। তর্কের মারপ্যাঁচ, কথা কাটাকাটির লড়াই, আইনের ফাঁক খুঁজে কড়া করে দু’কথা শুনিয়ে দেওয়া, -আবার যথাসময়ে আত্মসংবরণ ও বিনীত ভাষণ-এ সকল কঠিন ব্যাপার এবং বয়স ছাড়া এতে পারদর্শিতা জন্মে না।
• মানুষ তো শুধু কেবল নরও নয়, নারীও নয়-এ দুয়ে মিলেই তবে সে এক। এই অর্ধেককে বাদ দিয়ে যখন দেখি সে নিজেকে বৃহৎ করে পেতে চায়। তখন দেখি সে আপনাকেও পায় না, ভগবানকেও খেয়ায়।
দোষ-লজ্জা প্রতি সংসারে আছে। মানুষের দীর্ঘ জীবনে তাকে অনেক পা চলতে হয়; দীর্ঘ পথটির কোথাও কাদা, কোথাও পিছল, কোথাও বা উঁচু-নিচু থাকে, তাই বাবা, লোকের পদস্খলন হয়, তারা কিন্তু সে কথা বলে না, শুধু পরের কথা বলে, পরের দোষ, পরের লজ্জার কথা চিৎকার করে বলে, সে শুধু আপনার দোষটুকু গোপনে ঢেকে ফেলবার জন্যই।
• ‘সত্য’ কথাটি শুনিতে মন্দ নয়, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাহার ঠিক চেহারাটি চিনিয়া বাহির করা বড় কঠিন। কারণ কোনো পক্ষই মনে করে না যে, সে অসত্যের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছে।
• যে সমাজ দুঃখীর দুঃখ বেঝেনা, বিপদে সাহস দেয় না, শুধু চোখ’ রাঙায় আর গলা চেপে ধরে, সে সমাজ আমার নয়, আমার মতো গরিবের নয়, সে সমাজ বড়লোকের জন্য।
মেয়েমানুষের তৃণে যত প্রকার দিব্যাস্ত্র আছে, ‘আড়িপাতা’ টা ব্রহ্মাস্ত্র। সুবিধে পেলে এতে মা- মেয়ে, শাশুড়ি-বউ, জা ননদ, কেউ কাউকে খাতির করে না।
• সমাজ উদ্ধত হয়ে যখন তার সত্যিকারের সীমাটি লঙ্ঘন করে তখন তাকে আঘাত করাই উচিত। এ আঘাতে সমাজ মরে না-তার চৈতন্য হয়, মোহ ছুটে যায়।
• লেখার অসহিষ্ণুতা যদি বা সহা যায়, ক্রড়তা, নীচতা, অসত্য, অপবাদে মানুষকে হীন প্রতিপন্ন করবার প্রয়াস দীর্ঘদিন পাঠক সমাজ সইতে পারে না, ওঁদের চোখে ধীরে ধীরে লেখক আপনিই হয়ে আসে ছোট, তার স্বরূপ ধরা পড়ে।
• শ্লেষ বিদ্রূপের আমেজে মনের মধ্যে একট ইরিটেশন আনে। তাতে বক্তার উদ্দেশ্য যায় ব্যর্থ হয়ে, শ্রোতারও মন যায় বিগড়ে।
• কোনো একটা অভাব লইয়া-তা সে যত গুরতরই হোক, মানুষ অনন্তকাল শোক করিতে পারে না।
• সত্য গোপন করা, আত্মবঞ্চনারই সমান।
• সভ্যতার যদি কোনো তাৎপর্য থাকে তো সে এই যে, অক্ষম দুর্বলের ন্যায্য অধিকার যেন প্রবলের গায়ের জোরে পরাভূত না হয়।
• সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে তার ভিতরেই বাসনা কামনার আভাস দেওয়াই সাহিত্য। ভাবে কাজে, চিন্তায় মুক্তি এনে দেওয়াই সাহিত্যের কাজ।
• সকলের ভাগ্যেই একরূপ স্ত্রী মিলে না। কাহারো স্ত্রী- দাসী, কাহারো বা বন্ধু, কাহারো বা প্রভু।
• স্বাধীনতাই স্বাধীনতার শেষ কথা নয়। ধর্ম, শান্তি, কাব্য, আনন্দ-এরা আরও বড়। এদের একান্ত বিকাশের জন্যই তো স্বাধীনতা, নইলে এর মূল্য ছিল কোথায়?
• ভাই বল আর বাপ-মা’ই বল, মেয়েমানুষের স্বামীর বড় আর কেউ নয়। ভাই-বাপ-মা গেলে দুঃখকষ্ট খুবই হয়, কিন্তু স্বামী গেলে যে সর্বস্ব যায়।
• পৃথিবীতে ভালো করবার ভার যে কেউ নিজের উপরে নিয়েছে, চিরদিনই তার শত্রুসংখ্যা বেড়ে উঠেছে।
• হৃদয়াবেগ দুর্মূল্য বস্তু, কিন্তু চৈতন্যকে আচ্ছন্ন করতে দিলে এত বড় শত্রু আর মানুষের নাই।
• কে কোথায় তার অসতর্ক মুহূর্তে কি কথা বলেছে, সেইটিই তার জীবনের পরম সত্য নয়। কেবল তাই দিয়েই বিচার করা চলে না।
• মানুষ স্বভাবত অনেকটা যে কল্পনাপ্রবণ তাহা সত্য এবং কল্পনারও যে উপযোগিতা আছে তাহাও সত্য, কিন্তু যথাস্থানে।
• কবি যে শুধু সৃষ্টি করে তা নয়, কবি সৃষ্টি রক্ষাও করে। যা স্বভাবতই সুন্দর, তাকে যেমন আরও সুন্দর করে প্রকাশ করা তার একটা কাজ, যা সুন্দর নয়, তাকেও আর অসুন্দরের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলা তারই আর একটা কাজ।
• যে কামনার দ্বিধা নেই, দুর্বলতা নেই, তাকে না
মঞ্জুর করার শক্তি কোথাও নেই! এরই আর এক নাম বিশ্বাস। সত্য বিশ্বাস জগতে ব্যর্থ হয় না।
• সংসারে এমন অপরাধ অল্পই আছে ইচ্ছে করলে যাকে ক্ষমা করা যায় না।
ভেতরে যার ক্ষত, বাইরে তাকে অক্ষত দেখানোর পাপ আমি করতে চাই নে।
অভাব জয় করাই জীবনের সফলতা-তাকে স্বীকার করে তার গোলামী করাটাই কাপুরুষতা।
• জীবনটা সত্যিই তো আর ছেলেখেলা নয়। ভগবানের এত বড়ো দান তো এজন্য আসেনি।
• কেবল চাইলেই তো মেলে না, পাবার উপায় করতে হয়।
• সংসারে যারা শুধু দিলে, পেলে না কিছুই, যারা বঞ্চিত, যার দুর্বল, মানুষ হয়েও মানুষ যাদের চোখের জলের হিসাব নিলে না, নিরুপায় দুঃখময় জীবনে যারা কোনোদিন ভেবেই পেলে না, সমস্ত থেকেই কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই-এদের কাছেই কি ঋণ আমার কম? এদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে, এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে।
• অপরকে বিচার করিতে বসিয়া কোনো মানুষকেই কখনও বলিতে শুনি নাই, যে অন্তর্যামী নয়, কিম্বা তাহার ভ্রম প্রমাদ কখনও হয়। সবাই কহে, মানুষ চিনিতে তাহার জোড়া নাই এবং এ বিষয়ে সে একটা পাকা জহুরী। অথচ সংসারে কে কবেই যে নিজের মনটাকেই চিনিতে পারিয়াছে, তাহাই তো জানি না।
• বিদ্যা না থাকলেই অবিদ্যা এসে জোটে। তার ফলেই মানুষ যা জানে না তাই অপরকে বেশি করে বোঝাতে চায়।
• নারীর এক জাতীয় রূপ আছে যাহাকে যৌবনের অপর প্রান্তে না পৌঁছিয়া পুরুষ কোনোদিন দেখিতে পায় না।
• প্রায় কোনো দেশেই পুরুষ নারীর যথার্থ মূল্য দেয় নাই।
• ছেলে বয়সের একটা মস্ত দোষ এই যে, অনেক বই পড়ার অভিমানটা এদের পেয়ে বসে। তাই নিজের লেখার মধ্যে নিজের কিছুই থাকে না, থাকে শুধু মুখস্থ করা পরের কথা। থাকে কারণে অকারণে যেখানে সেখানে গুঁজে দেওয়া বিদ্যার বাচালতা।
• বিরাগ-বিদ্বেষ নিয়ে বিচার করতে গেলে কেবল একপক্ষই ঠকে না, অন্য পক্ষও ঠকে।
• বড় দুঃখ ছাড়া কোনোদিন কোনো বড় জিনিস লাভ করা যায় না।
যে লোক দাবী করতে ভয় পায়, পরের দাবী মেটাতেই তার জীবন কাটে।
• আমাদের দেশের লোক বই পড়েন বটে, কিন্তু পয়সা খরচ করে কিনে পড়েন না।
• পুরুষেরা যাহা ইচ্ছা করে, যাহা ধর্ম বলিয়া প্রচার করে, নারী তাহাই বিশ্বাস করে এবং পুরুষের ইচ্ছাকেই নিজের ইচ্ছা বলিয়া ভুল করে এবং ভুল করিয়া সুখী হয়। হইতে পারে ইহাতে নারীর গৌরব বাড়ে, কিন্তু সে গৌরবে পুরুষের অগৌরব চাপা পড়ে না।
অর্থশালী পুরুষের যে কোনো দেশেই বয়সের অজুহাতে বিবাহ আটকায় না, বাংলাদেশে তো নয়ই।
• ভালো বক্তার কাছে জনতা যুক্তিতর্ক চাহে না, যাহা মন্দ তাহা কেন মন্দ এ খবরের তাহাদের আবশ্যক হয় না। শুধু মন্দ যে কত মন্দ অসংখ্য বিশেষণ যোগে ইহাই শুনিয়া তাহারা চরিতার্থ হইয়া যায়।
যেখানে ফেলে যাওয়াই মঙ্গল সেখানে আঁকড়ে থাকাতেই অকল্যাণ।
পৃথিবীর আকর্ষণ তো চিরদিনই আছে কিন্তু সে আকর্ষণে আত্মসমর্পণ করতে গাছের পাকা ফলটিই পারে, কাঁচায় পারে না। তার আঁশ শাঁস পৃথিবীর রসেই থাকে, স্বর্গের রসে পাকে না। সুন্দর ফুল রূপ দিয়ে, গন্ধ দিয়ে, মধু দিয়ে, মৌমাছি টেনে এনে ফলে পরিণত হয়, সেই ফল আবার ঠিক সময়ে মাটিতে পড়ে অঙ্কুরে পরিণত হয়। এ তার প্রকৃতি, এই তার প্রবৃত্তি, এই তার স্বর্গীয় প্রেম। বিশ্বজুড়ে এই যে অবিচ্ছিন্ন সৃষ্টির খেলা, রূপের খেলা চলেছে, স্বর্গীয় নয় বলে এতে দুঃখ করবার বা লজ্জা পাবার তো কিছু দেখিনে।
সর্বপ্রকার মতকেই শ্রদ্ধা করতে পারেন কে জানেন? যার নিজের মতের বালাই নেই। শিক্ষার দ্বারা বিরুদ্ধ মতকে নিঃশব্দে উপেক্ষা করা যায়।
• পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব সতীত্বের চেয়ে বড়।
• মনের বার্ধক্য আমি তাকেই বলি… যে মন সুমুখের দিকে চাইতে পারে না, যার অবসন্ন, জরাগ্রস্ত মন ভবিষ্যতের সমস্ত আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে কেবল অতীতের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চায়।
• সমাজে নারীর স্থান অবনত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের স্থান আপনি নামিয়া আসে।