Bengali Romantic Love Story Dure oi megher kole 2025 l দূরে ঐ মেঘের কোলে – একটি বাংলা রোমান্টিক প্রেমের গল্প 2025 | Sristika & Aahnik Love Story

By raateralo.com

Updated on:

Bengali Romantic Love Story Dure oi megher kole 2025

সৃষ্টিকা ও আহ্নিকের কাহিনী ‘দূরে ঐ মেঘের কোলে’ (Bengali Romantic Love Story Dure oi megher kole)—একটি আবেগঘন বাংলা রোমান্টিক গল্প, যেখানে ভালোবাসা, অপেক্ষা এবং প্রতিশ্রুতি একসাথে মিশে যায়। পড়ুন এক হৃদয়স্পর্শী প্রেমের গল্প।

Bengali Romantic Love Story Dure oi megher kole 2025

পর্ব ১: অচেনা শহরে দেখা

আকাশটা আজ একটু বেশি মেঘলা। শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, এক অদ্ভুত ছন্দে হেঁটে চলেছে সৃষ্টিকা। নতুন চাকরি, নতুন শহর—সবকিছু যেন একটা অজানা গল্পের শুরু। হঠাৎ করেই এক বুক জোরালো হাওয়া এসে তার চুলগুলো এলোমেলো করে দিল। সৃষ্টিকা একটু থেমে দাঁড়াল। ঠিক তখনই, রাস্তার অপর পাশে চোখে পড়ল একটা চেনা মুখ… অথবা অচেনা, কিন্তু অদ্ভুতভাবে আপন।

আহ্নিক।

লম্বা গড়ন, শান্ত চেহারা, চোখে এক রকম গভীরতা। সেই চোখে যেন কত কথা, কত অনুভূতি জমে আছে।

তাদের চোখাচোখি হলো। মুহূর্তটা যেন থমকে গেল। কেউ কিছু বলল না, তবুও যেন অনেক কথা বিনিময় হয়ে গেল।

সৃষ্টিকার মনে পড়ল ছোটবেলার সেই গল্প—দূরে ঐ মেঘের কোলে কেউ থাকে… যে হঠাৎ করে জীবনে আসে, না বলে, না চেয়ে। আহ্নিক কি তবে সেই কেউ?

পর্ব ২: পুরনো দিনের চিঠি

সৃষ্টিকা কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেল। আহ্নিক কি সত্যিই তাকিয়েছিল তার দিকে? না কি এটা নিছকই কল্পনা? নিজেকে সামলে নিয়ে সে একটু এগিয়ে গেল, কিন্তু পেছন থেকে ভেসে এল একটা কণ্ঠ—

“এই… আপনি কি সৃষ্টিকা?”

সে থমকে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে ঘুরে তাকিয়ে দেখল, আহ্নিক ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে। চোখে একরাশ আশ্চর্যতা, কিন্তু মুখে একটুকরো হাসি।

“আমি আহ্নিক… তোমার স্কুলের সিনিয়র। মনে নেই?”

সৃষ্টিকা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। নামটা যেন কোথাও শুনেছে, কোনো পুরনো ডায়েরির পাতায়, হয়তো কোনো স্কুল ম্যাগাজিনের পাশে লেখা একটা চিঠির মধ্যে। হ্যাঁ, এখন মনে পড়ছে… আহ্নিক! সেই ছেলেটা যে স্কুল ম্যাগাজিনে তার একটা কবিতা পড়ে তাকে অনুপ্রেরণামূলক একটা চিঠি লিখেছিল।

“তুমি… সেই চিঠি লিখেছিলে?” সৃষ্টিকার কণ্ঠে হালকা কম্পন।

আহ্নিক মাথা নাড়ল, চোখে একরাশ লাজুক অনুভব।

“হ্যাঁ… ভেবেছিলাম তুমি কোনোদিন মনে রাখবে না। অথচ এতগুলো বছর পর… এমনভাবে দেখা হবে, ভাবিনি।”

দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল। কোনো কথা নেই, তবুও কত কিছু বলা হয়ে গেল।

সৃষ্টিকা জানত না, এই হঠাৎ করে দেখা হয়ে যাওয়া কি আবার কোনো পুরনো স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনবে? নাকি নতুন কোনো গল্পের শুরু?

আহ্নিক একটু ধীরে বলল,
“চলো, কফি খেতে যাই? পুরনো দিনের গল্পগুলো আবার খুলে বসি…”

সৃষ্টিকা মুচকি হাসল।
“চলো, তবে আজ শুরু হোক আবার একটা নতুন চিঠি—এই আধুনিক শহরের পাতায়…”

পর্ব ৩: কফির কাপ আর কিছু না-বলা কথা

সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। শহরের একটি শান্ত কফিশপে বসে আছে সৃষ্টিকা আর আহ্নিক। জানালার পাশে বসে তারা, বাইরে নরম আলো, ভেতরে হালকা জ্যাজ মিউজিক।

সৃষ্টিকা কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
“তুমি এখন কোথায় আছো? কী করো?”

আহ্নিক হালকা হাসল।
“আমি এখন একটা ডিজাইন ফার্মে কাজ করি। তবে সময় পেলেই কবিতা লিখি… এখনো।”

সৃষ্টিকার চোখে আলো ফুটল।
“তুমি এখনো লেখো? সত্যি বলছি, তোমার সেই চিঠিটার ভাষা আমি আজও ভুলিনি।”

আহ্নিক একটু চুপ করে থাকল। তারপর বলল,
“তুমি জানো, ওই চিঠিটার পরে আমি তোমার জন্য একটা কবিতা লিখেছিলাম… কিন্তু কখনো পাঠাতে পারিনি।”

সৃষ্টিকার হৃদয় ধীরে ধীরে কাঁপছিল। সে জানে না কেন, কিন্তু এই কথা শুনে তার বুকের ভিতর যেন এক অজানা সুর বাজল।

“তুমি কি… এখনো সেই কবিতা মনে রেখেছো?” সৃষ্টিকা জিজ্ঞেস করল।

আহ্নিক হেসে বলল,
“হয়তো মনে রেখেছি… কিংবা ভুলতে পারিনি।”

এক মুহূর্তের নীরবতা… কফির কাপ আর দু’টি চঞ্চল চোখের ভাষা যেন একে অপরকে খুঁজে ফিরছিল।

সৃষ্টিকার মনে হচ্ছিল, এই শহরের কোলাহলের মধ্যেও যেন এক শান্তির স্পর্শ আছে—এই আহ্নিক নামের ছেলেটির পাশে।

“তাহলে কি আমরা… আবার একসাথে কিছু শুরু করতে পারি?” সৃষ্টিকা নিজের অজান্তেই বলে ফেলল।

আহ্নিক তাকিয়ে রইল। তারপর ধীরে বলে উঠল—
“দূরে ঐ মেঘের কোলে যদি আবার একটুকরো রোদ নামে… তবে কেন নয়?”

পর্ব ৪: ফোনকলের ও পারে…

কফিশপের সেই সন্ধ্যাটা যেন বহুদিনের অভিমানকে মুছে দিয়ে, নতুন করে একটা অনুভবের গল্প বুনে দিয়েছিল সৃষ্টিকা ও আহ্নিকের মধ্যে। দু’জনেই বুঝেছিল, সময় অনেক কিছু বদলালেও কিছু সম্পর্কের সূতোগুলো ঠিক আগের মতোই জড়িয়ে থাকে।

কিন্তু সৃষ্টিকার মনে এক অজানা টানাপোড়েন। সে জানে, বাস্তব আর কল্পনার মাঝখানে একটা বড় ফারাক আছে। আজকের এই দেখা, এই কথাবার্তা—সবকিছুই কি তবে শুধুই মুহূর্তের আবেগ?

রাতে সৃষ্টিকা ঘুমোতে পারছিল না। ঘরের জানালায় বাইরে তাকিয়ে ছিল সে, আকাশে চাঁদটা আজ বড় নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছিল।

ঠিক তখনই… ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল “আহ্নিক”।

সৃষ্টিকা একটু থমকে গেল। ধীরে ধীরে কলটা ধরল।

আহ্নিক: “তুমি ঘুমাওনি এখনো?”
সৃষ্টিকা: “না… তুমি?”
আহ্নিক: “ঘুম আসছে না… আজ তোমার সঙ্গে দেখা করার পর থেকে মনে হচ্ছে, এতগুলো বছর কোথায় হারিয়ে ছিলাম আমি…”
সৃষ্টিকা: “আমিও তাই ভাবছিলাম… এই দেখা হঠাৎ হলেও, অনেক পুরনো কিছু জাগিয়ে তুলল মনে…”

একটু নীরবতা।
তারপর আহ্নিক ধীরে বলল—
“তুমি জানো, আমি এই শহরে চিরকাল থাকব না। কয়েক মাসের জন্য এসেছি। কিন্তু তোমাকে আবার পেয়ে… মনে হচ্ছে মনটা এখানেই আটকে যাচ্ছে।”

সৃষ্টিকা চুপ করে গেল। একদিকে একটা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাওয়া মানুষ, আর অন্যদিকে সেই মানুষটার চলে যাওয়ার অস্থায়ী বাস্তবতা।

“তবে?” — সৃষ্টিকা প্রশ্ন করল।

“তবে… যতদিন আছি, তোমার পাশে থাকতে চাই। যদি তুমি চাও…” — আহ্নিকের কণ্ঠে মৃদু কাঁপুনি।

সৃষ্টিকা জানত না কী উত্তর দেবে। কিন্তু একটাই কথা সে মনে মনে বলল—

“দূরে ঐ মেঘের কোলে, যদি ভালোবাসা সত্যিই বাসা বাঁধে, তবে সময় বা দূরত্ব কোনো বাধা নয়।”

পর্ব ৫: সীমারেখার ধারে দাঁড়িয়ে

তারপরের কয়েকটা দিন যেন আলাদা রকম কেটেছিল। শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো হঠাৎ করেই সৃষ্টিকার কাছে অন্যরকম হয়ে উঠেছিল। আহ্নিকের সঙ্গে কফির কাপে ভেসে আসা গল্প, হেঁটে যাওয়া নদীর ধারে, বইয়ের পাতায় ভাগাভাগি করে নেওয়া কবিতা—সবকিছু যেন একটা শান্ত, ধীরে বয়ে যাওয়া সময়ের অংশ।

সৃষ্টিকা বুঝতে পারছিল—সে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। একজন মানুষের, এক নির্ভরতার, এক অদ্ভুত ভালো লাগার।

আহ্নিকও যেন আস্তে আস্তে তার মনে জায়গা করে নিচ্ছিল। কিন্তু ঠিক তখনই সেই সীমারেখা আবার তাদের সামনে এসে দাঁড়াল।

এক বিকেলে আহ্নিক বলল—
“আমার এখানে থাকার সময় শেষ প্রায়… আগামী সপ্তাহেই চলে যেতে হবে।”

সৃষ্টিকার বুকটা ধক করে উঠল।
সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল—
“জানতাম… কিন্তু ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি।”

আহ্নিকের চোখে ছিল অপরাধবোধ, আর অদ্ভুত একটা অসহায়তা।
“আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও, তাই শেষ মুহূর্তে কিছু না বলে চলে যেতে চাইনি।”

সৃষ্টিকা তাকিয়ে রইল জানালার বাইরের দিকে। আকাশে মেঘ জমছে। হয়তো বৃষ্টি নামবে।
“তুমি কি ফিরবে কোনোদিন?”

আহ্নিক একটু থেমে বলল—
“যদি ফিরতে পারি… তাহলে আমি ঠিক এই কফিশপেই বসে থাকব। জানালার পাশে, এক কাপ কফি নিয়ে। তুমি আসবে?”

সৃষ্টিকার চোখ ভিজে এল।
“আমি রোজ আসব… যদি জানি তুমি ফিরবে।”

একটি অসম্পূর্ণ কথার ভেতরেও এত গভীর অনুভূতি থাকতে পারে—তা হয়তো তারাই বোঝে, যারা ‘দূরে ঐ মেঘের কোলে’ ভালোবাসার ঘর খোঁজে।

পর্ব ৬: বিদায়ের দিন

শহরের আকাশটা আজ অদ্ভুত নীরব। যেন মেঘগুলোও থেমে গেছে কারো অপেক্ষায়।
সৃষ্টিকা চুপচাপ বসে আছে জানালার ধারে। কাল আহ্নিক চলে যাবে। এই চিন্তাটা তাকে শূন্য করে দিচ্ছে।

মোবাইল স্ক্রিনে লেখা—
“কাল সকাল ৯টার ফ্লাইট। তুমি আসবে?”
প্রেরক: আহ্নিক

সৃষ্টিকা উত্তর দিল না। কী বলবে, বুঝতে পারল না।

সকালের আলো ফুটতেই সে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে পড়ল। সময়টা ৮টা ২০। সে দৌঁড়ে পৌঁছাল এয়ারপোর্টে, তাড়াহুড়ো করে কাউন্টার খুঁজছিল, চোখে জল আর ভেতরে অদ্ভুত একটা কান্না।

ঠিক তখনই… সামনে আহ্নিক। হ্যান্ড ব্যাগ কাঁধে ঝুলছে, মুখে সেই চিরচেনা শান্ত হাসি।

“জানতাম তুমি আসবে…” — আহ্নিক বলল।

সৃষ্টিকার চোখে জল জমে এল।
“তুমি… ফিরবে তো?”

আহ্নিক এগিয়ে এসে তার হাতে একটা ছোট্ট খাম দিল।

“প্লেন যখন আকাশে উঠবে, তখন খুলে পড়বে।”

আর কিছু না বলে আহ্নিক ধীরে ধীরে চলে গেল চেক-ইনের দিকে। সৃষ্টিকা তাকিয়ে রইল… বিদায়ের রঙ যে এতটা নিঃশব্দ, এতটা কষ্টের হয়, সে জানত না।

বাড়ি ফিরে এসে সে চুপচাপ বসে খামটা খুলল।

ভিতরে একটা ছোট্ট চিঠি—
“তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত, আমার জীবনের একেকটা কবিতা। ফিরে আসব… যদি তুমি এখনো জানালার ধারে অপেক্ষা করো। দূরে ঐ মেঘের কোলে যদি আবার রোদ নামে—তুমি জানবে, আমি ঠিক ফিরে এসেছি।”

সৃষ্টিকার চোখে অশ্রুর রেখা, আর মনে একটুকরো প্রতীক্ষা।

শেষ পর্ব: ফিরে আসা

বছরখানেক কেটে গেছে। শহরের রাস্তাগুলো বদলে গেছে, কিন্তু সৃষ্টিকার অভ্যেস বদলায়নি।
সে রোজ বিকেলে সেই পুরোনো কফিশপে যায়। জানালার ধারে বসে, এক কাপ কফি হাতে—অপেক্ষায় থাকে।

প্রথমদিকে বন্ধুরা বলত, “তুমি পাগল হয়ে গেছো!”
কিন্তু সৃষ্টিকা জানত, কিছু অপেক্ষা পাগলামির জন্য নয়, বরং ভালোবাসার জন্য হয়।

একদিন হঠাৎ করে আকাশে আবার মেঘ জমল। সৃষ্টিকা জানত না, কেন আজ মনটা একটু বেশি ধুকপুক করছে।

কফিশপে ঢুকে সে জানালার ধারে বসতেই, অদ্ভুতভাবে মনে হল… কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।

চোখ তুলে দেখল—দাঁড়িয়ে আছে আহ্নিক। ঠিক যেমনটা প্রতিশ্রুতি ছিল তার, এক কাপ কফি হাতে, মুখে সেই শান্ত হাসি।

সৃষ্টিকা বিশ্বাসই করতে পারছিল না। উঠে দাঁড়ানোর আগেই আহ্নিক এগিয়ে এল।

“তুমি এখনো জানালার ধারে বসো…”
“তুমি এখনো ফিরলে…” — সৃষ্টিকার গলায় কাঁপুনি।

“তোমার জন্যই ফিরেছি। কারণ দূরে ঐ মেঘের কোলে আমার ঠিকানা নেই… আমার ঠিকানা শুধু তোমার পাশে।”

চোখের জল হাসিতে মিশে গেল। শব্দহীন অভিমান, অপেক্ষা, চিঠি, কফির কাপ—সব এক মুহূর্তে মিলিয়ে গেল।

তাদের গল্পের আর কোনো শেষ নেই—তারা গল্পেই থেকে গেল।

শেষ কথা:

ভালোবাসা সবসময় কাছে আসার গল্প নয়, বরং কখনো কখনো অপেক্ষা, প্রতিশ্রুতি আর ফিরে আসার শক্তি।“দূরে ঐ মেঘের কোলে” শুধু একটা গল্প নয়—এটা একটুকরো হৃদয়ের লেখা।


আপনাদের কেমন লাগল সৃষ্টিকা ও আহ্নিকের গল্প? আপনি কি কখনো এমন কারো জন্য অপেক্ষা করেছেন?কমেন্টে আপনার অনুভব জানান। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না!

আরো পড়ুন: শঙ্খ বাজানোর উপকারিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশটি প্রেমের কবিতা

একজন মেয়ের জীবনে প্রিয়জন বেঁছে নেওয়ার গল্প

বাংলা নতুন অনুগল্প – ” জীবনসঙ্গীনি”

raateralo.com

Leave a Comment