সোনালী রোদ্দুরে – শুভ্রা ও শিশিরের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প (পর্ব ১-১২)

By raateralo.com

Updated on:

সোনালী রোদ্দুরে – শুভ্রা ও শিশিরের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প

“সোনালী রোদ্দুরে” একটি আবেগঘন বাংলা রোমান্টিক প্রেমের গল্প, যেখানে শুভ্রা ও শিশিরের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কলেজ জীবনের রোদ-বৃষ্টি ছুঁয়ে। গল্পে প্রেম, দূরত্ব, অপেক্ষা ও পরিণয়ের মিশ্রণে গড়ে ওঠে এক অনন্য ভালোবাসার পরিণতি।

সোনালী রোদ্দুরে – একটি বাংলা রোমান্টিক প্রেমের গল্প


পর্ব – ১: প্রথম দেখা

শীতের শেষভাগে, কলকাতার আকাশ তখন ঝকঝকে নীল। সকালবেলার মৃদু রোদ গায়ে মেখে কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকল শুভ্রা। চুল খোলা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে একরাশ আত্মবিশ্বাস। সদ্য ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হয়েছে সে।

শুভ্রা জানত না, সেদিনের সেই রোদ্দুরে তার জীবনে এক নতুন ছায়া নামবে—শিশির।

শিশির ফাইনাল ইয়ার-এর ছাত্র। সাহিত্যের প্রেমিক, লেখালিখিতে আগ্রহ, আর ক্যাম্পাসে সবার প্রিয়। সে যখন প্রথম শুভ্রাকে দেখল, লাইব্রেরির সিঁড়ির ধারে, তখন তার মুখে খেলে গেল এক অদ্ভুত হাসি। যেন বহুদিনের পরিচিত কেউ হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

পর্ব – ২: কাছাকাছি আসা

কয়েকদিনের মধ্যেই শুভ্রা বুঝে গেল, শিশিরের চোখে কিছু একরকম কৌতূহল আছে তার প্রতি। আর শিশির? সে তো শুভ্রার প্রতিটি গতিবিধি লক্ষ্য করে। একদিন সাহস করে লাইব্রেরিতে বই নিতে যাওয়ার সময় শুভ্রার পাশে এসে দাঁড়াল শিশির।

“আপনি কি ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ খুঁজছেন?”
শুভ্রা একটু চমকে উঠে তাকাল।
“হ্যাঁ… আপনি কিভাবে জানলেন?”
“আপনার চোখ বলছে,” হেসে উত্তর দিল শিশির।

সেদিন থেকেই কথাবার্তার শুরু। সাহিত্যের আলোচনায়, কবিতার পংক্তিতে তারা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগল।

পর্ব – ৩: মেঘলা দুপুরে হাত ছুঁয়ে যাওয়া

একদিন হঠাৎ বিকেলে কলেজের ক্যাম্পাসে বৃষ্টি নেমে এল। সবাই দৌড়ে ছুটল আশ্রয়ের খোঁজে। শুভ্রা আর শিশির তখন একসাথে দাঁড়িয়ে ছিল পুরনো অডিটোরিয়ামের বারান্দায়।

বৃষ্টির শব্দে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল দু’জন। হঠাৎ শিশির বলল, “তুমি জানো শুভ্রা, এই রকম দিনে আমার খুব প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।”

শুভ্রার গাল রাঙা হয়ে উঠল। সে কিছু বলল না, শুধু হালকা হাসল। আর সেই মুহূর্তেই শিশিরের আঙুল ছুঁয়ে গেল শুভ্রার আঙুল।

শুভ্রা থমকে গেল, কিন্তু হাত সরাল না।
বৃষ্টির ফোঁটার নিচে তাদের দুটি হৃদয় যেন এক ছাদের নিচে এসে দাঁড়াল—সোনালী রোদ্দুরে।

পর্ব – ৪: নাম না-জানা অনুভূতি

বৃষ্টির দিনে সেই স্পর্শের পর শুভ্রা অনেকক্ষণ কথা বলেনি। তার ভিতরটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে ছিল। শিশিরও বুঝতে পারছিল—এই সম্পর্ক আর বন্ধুত্বের সীমায় থাকছে না।

সেদিনের পর তারা দু’জনেই একটু সাবধানী হয়ে উঠল। তবে দূরত্বটা শুধুই শারীরিক, অনুভবের বাঁধন আরও জোরালো হয়ে উঠল।

একদিন ক্যাম্পাসের বটগাছের নিচে বসে শিশির বলল,
“তুমি জানো, কোনো কোনো সম্পর্ক বুঝে নেওয়া যায় না… শুধু অনুভব করতে হয়।”
শুভ্রা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি অনুভব করছি, শিশির। অনেক কিছু। কিন্তু নাম দিতে পারছি না।”

পর্ব – ৫: কবিতার ভাষায় প্রেম

শিশির প্রতিদিন নতুন একটি করে কবিতা লিখে শুভ্রার জন্য নিয়ে আসে। সে কখনও মুখে কিছু বলে না, কিন্তু কবিতার পঙক্তিগুলোই যেন তার মনের কথা বলে দেয়।

“তুমি এক বৃষ্টিভেজা রোদ্দুর,
যাকে ছুঁতে গেলে আকাশ ছুঁয়ে যায়…”

শুভ্রা প্রতিটি কবিতা পড়ে, সংরক্ষণ করে রাখে, আর চুপচাপ হেসে ফেলে।

একদিন সে নিজেই শিশিরকে একটি চিরকুট দেয়—
“তোমার কবিতায় আমি নিজেকে খুঁজে পাই।”

শিশির সেই চিরকুট নিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আর মনে মনে বলে, “তোমার কথাই তো লিখি আমি, শুভ্রা।”

পর্ব – ৬: রোদ-ছায়ার খেলা

কলেজে ফেস্টের দিন। শুভ্রা মঞ্চে কবিতা পাঠ করছিল। শিশির দর্শকসারিতে বসে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল তার দিকে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভ্রা তার নিজের লেখা একটি কবিতা পড়ছিল—

“তোমার চোখে আমি এক পৃথিবী দেখি,
যেখানে শুধু আমি আর তুমি।
বাকিরা যেন আবছা ধোঁয়া…”

শুভ্রার চোখ শিশিরের চোখের সঙ্গে মিলল। দুই হৃদয় আবার একবার বলল— এটাই তো প্রেম।

ফেস্ট শেষে তারা দু’জন রোদে ভেজা মাঠে হাঁটছিল। শিশির ধীরে ধীরে বলল,
“শুভ্রা, আজকে তুমিই ছিলে আমার কবিতা।”

শুভ্রা আর কিছু বলল না, শুধু শিশিরের পাশে হেঁটে যেতে যেতে তার আঙুলটা আবার শিশিরের হাত খুঁজে নিল।

পর্ব – ৭: কিছু না-বলা কথা

কলেজজীবনের শেষ সেমিস্টার। শিশিরের পড়াশোনার চাপ বেড়ে গেছে। প্লেসমেন্ট, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, আর ঘরের দায়িত্ব—সব মিলিয়ে সে কিছুটা গম্ভীর হয়ে উঠেছে। শুভ্রা সেটা বুঝতে পারছে, কিন্তু কিছু বলছে না।

একদিন শুভ্রা শিশিরকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি আমায় এড়িয়ে চলছো?”
শিশির কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“না শুভ্রা, আমি তোমায় এতটাই ভালোবাসি, যে নিজের দুঃশ্চিন্তা তোমার উপর চাপিয়ে দিতে চাই না।”

শুভ্রা মুচকি হেসে বলল,
“ভালোবাসা যদি শুধু আনন্দের অংশ পায়, তবে সে পূর্ণতা পায় না, শিশির। আমি আছি—তোমার সবটুকুর পাশে।”

পর্ব – ৮: বিদায়ের সিঁড়ি

শিশিরের কলেজ জীবন শেষ। শেষ দিনের ক্লাস, বন্ধুদের বিদায়, আর সেই পরিচিত করিডোরের স্মৃতি—সব যেন বুকটাকে ভারি করে তুলছে।

সেদিন বিকেলে ক্যাম্পাসের সেই পুরনো বটগাছের নিচে দু’জন আবার দেখা করল।

শিশির বলল,
“কলেজ শেষ, এখন আমাদের পথটা একটু আলাদা হবে। আমি চাকরির জন্য বাইরে যাচ্ছি…”
শুভ্রা চুপচাপ বসে থাকল। তারপর বলল,
“পথ আলাদা হতে পারে, গন্তব্যটা তো একই থাকলে হয়।”

দু’জনেই বুঝতে পারছিল—এই গল্পটা সহজ নয়, কিন্তু শেষও নয়।

পর্ব – ৯: সোনালী রোদ্দুরে প্রতিশ্রুতি

বিদায়ের আগের দিন শিশির শুভ্রাকে একটা খাম দিল। ভিতরে একটা চিঠি আর একটা কবিতা।

চিঠিতে লেখা—
“তুমি আমার গল্পের সেরা চরিত্র, শুভ্রা। আমি যাচ্ছি, কিন্তু ফিরে আসব—তোমার কাছে, আমাদের অসমাপ্ত কবিতার কাছে।”

কবিতার পঙক্তিতে ছিল:

“যদি একদিন খুব রোদ উঠে,
আর তুমি ছায়া খুঁজো—
আমি হবো সেই ছায়ার নিচে,
তোমার অপেক্ষায়।”

শুভ্রা চোখের জল মুছে সেই খামটা বুকের কাছে টেনে বলল,
“আমি অপেক্ষা করব, শিশির।
সোনালী রোদ্দুরে, আবার একদিন দেখা হবে… ঠিক হবে।”

পর্ব – ১০: দূরত্বের দিনগুলি

শিশির এখন বেঙ্গালুরুতে চাকরি করছে, আর শুভ্রা কলকাতায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়, মাঝে মাঝে হয় না।

মোবাইলের স্ক্রিনে শিশিরের মেসেজ পড়ে শুভ্রার চোখে জল আসে—
“আজ বিকেলে এখানে বৃষ্টি হচ্ছে। তোমার কথা খুব মনে পড়ছে।”

শুভ্রা নিজের ডায়েরিতে লেখে,
“দূরত্ব আমাদের আলাদা করে না, বরং প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে আরও ভালোবাসতে শেখায়।”

পর্ব – ১১: পুরনো ক্যাম্পাসে ফিরে দেখা

দুই বছর পর শিশির কলকাতায় এল। এক পুরনো বন্ধুর বিয়েতে যোগ দিতে এসেই দেখা করতে চাইল শুভ্রার সঙ্গে।

তারা আবার সেই কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে গেল। সব কিছু বদলে গেছে—ক্যাম্পাসে নতুন মুখ, নতুন ভবন, কিন্তু সেই পুরনো বটগাছটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

শুভ্রা এসে বলল,
“তুমি জানো? এই গাছটা আমাদের স্মৃতির মতোই—সময় গেছে, কিন্তু সে একই রকম রয়ে গেছে।”

শিশির উত্তর দিল,
“আর তুমি? তুমিও কি একই রকম আছো?”

শুভ্রা এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল,
“আমি আরও বেশি তোমার হয়ে উঠেছি।”

পর্ব – ১২: স্বপ্নে ছুঁয়ে ফেরা

শুভ্রা এখন কলকাতার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছে। আর শিশির স্থায়ীভাবে ফিরেছে, নিজের একটি ছোট ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে।

দু’জন আবার নিয়মিত দেখা করতে শুরু করে, পুরনো স্বপ্নগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে থাকে।

একদিন শিশির বলল,
“চলো, এবার আমাদের গল্পটা পরিণতি দিই। অনেক পাতা লেখা হয়েছে—এবার শেষ অধ্যায়টাও লিখে ফেলি।”

শুভ্রার চোখ ছলছল করে উঠল, সে আস্তে করে মাথা নাড়ল।

সমাপ্তি:

সোনালী রোদ্দুরে মিলনের গল্প
একটি ছোট গার্ডেন পার্টি, কিছু কাছের মানুষ আর সন্ধ্যার আলোয় বসে থাকা শুভ্রা ও শিশির।

শিশির শুভ্রার হাত ধরে বলল,
“তুমি ছিলে আমার কবিতা, গল্প, স্বপ্ন—এবার তুমি হও আমার বাস্তব।”

শুভ্রা হাসল, আর বলল,
“তুমি ছিলে আমার সোনালী রোদ্দুর। এখন তুমি আমার ছায়াও।”

গল্প শেষ হলো না—এটা এক নতুন শুরুর নাম।
শুভ্রা ও শিশিরের ভালোবাসার গল্প, রোদ্দুরে লেখা সেই অক্ষয় কবিতা।

raateralo.com

Leave a Comment