Gangadhorer Bipod by Bibhutibhushan Bandopadhyay 2024: বাঙালি সাহিত্যের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলী বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, যা তার সমৃদ্ধ গল্পকথন এবং মানবিক আবেগের গভীর অনুসন্ধানের জন্য সুপরিচিত। এমনই একটি মনোমুগ্ধকর কাহিনী হলো “গঙ্গাধরের বিপদ” (Gangadhorer Bipod)। এই গল্পটি অত্যন্ত চমকপ্রদভাবে রহস্য, নাটক এবং অতিপ্রাকৃত উপাদানের সমন্বয় ঘটিয়েছে। গঙ্গাধর নামক প্রধান চরিত্রের চোখ দিয়ে বিভূতিভূষণ এমন একটি কাহিনী তুলে ধরেছেন যা পাঠকদের রুদ্ধশ্বাস করে রাখে এবং মানবিক জটিলতার গভীরে প্রবেশ করায়। এই গল্পের মাধ্যমে পাঠকরা একদিকে যেমন রোমাঞ্চ অনুভব করবেন, তেমনই অন্যদিকে মানবিকতার নানান দিকের সঙ্গে পরিচিত হবেন।
Gangadhorer Bipod by Bibhutibhushan Bandopadhyay
Table of Contents
অনেকদিন আগেকার কথা। কলকাতায় তখন ঘোড়ার ট্রাম চলে। সে সময় মসলা-পোস্তায় গঙ্গাধর কুণ্ডর ছোটখাট একখানা মসলার দোকান।
গঙ্গাধরের দেশ হুগলি জেলা, চাঁপাডাঙ্গার কাছে। অনেক দিনের দোকান, যে সময়ের কথা বলচি গঙ্গাধরের বয়েস তখন পঞ্চাশের ওপর। কিন্তু শরীরটা তার ভালো যাচ্ছিল না। নানারকম অসুখে ভুগতো প্রায়ই। তার ওপর ব্যবসায়ে কিছু লোকসান দিয়ে লোকটা একেবারে মুষড়ে পড়েছিল। দোকানঘরের ভাড়া দু-মাসের বাকি, মহাজনদের দেনা ঘাড়ে—দুপুর বেলা দোকানে বসে থেলো হুঁকো হাতে নিয়ে নিজের অদৃষ্টের কথা ভাবছিল। আজ আবার সন্ধ্যের সময় গোমস্তা ভাড়া নিতে আসবে বলে শাসিয়ে গিয়েচে। কি বলা যায় তাকে!
এক পুরোনো পরিচিত মহাজনের কথা মনে পড়ে গেল। তার নাম খোদাদাদ, পেশোয়ারী মুসলমান, মেটেবুরুজে থাকে। আগে গঙ্গাধরের লেনদেন ছিল তার সঙ্গে। কয়েকবার টাকা নিয়েছে, শোধও করেছে, কিন্তু সুদের হার বড় বেশী বলে ইদানীং বছর কয়েক গঙ্গাধর সেদিকে যায় নি।
ভেবেচিন্তে সে মেটেবুরুজেই রওনা হ’ল। সুদ বেশি বলে আর উপায় কি? টাকা না আনলেই নয় আজ সন্ধ্যের মধ্যে।
মেটেবুরুজে গিয়ে খোদাদাদ খাঁয়ের নতুন বাসা খুঁজে বার করতে, টাকা নিতে দেরি হয়ে গেল। খিদিরপুরের কাটিগঙ্গা পার হয়ে এসে ট্রাম ধরবে, হনহন করে হেটে আসচে, এমন সময়ে একজন লোক তাকে বললে, ‘এ সাহেব, ইধার শুনিয়ে তো জরা…’
সন্ধে হয়ে গিয়েছে। যেখান থেকে লোকটা তাকে ডাকলে সেখানে কতকগুলো গাছপালার বেশ একটা অন্ধকার। স্থানটা নির্জন, তার ওপর আবার তার সঙ্গে রয়েচে টাকা। গঙ্গাধরের মনে একটু সন্দেহ যে না হ’ল এমন নয়। কিন্তু উপায় নেই, লোকটা এগিয়ে এলো। ওই গাছগুলোর তলায় সে যেন তারই প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়েছিল।
লোকটা খুব লম্বা, মাথায় ঝাঁকড়া চুল ঘাড়ের ওপর পড়েছে, মুখটা ভালো দেখা যাচ্ছে না। পরনে ঢিলে ইজের ও আলখাল্লা। সে কাছে এসে সুর নিচু করে হিন্দিতে ও ভাঙা বাংলায় মিলিয়ে বললে, ‘বাবু, সস্তায় মাল কিনবেন?’ গঙ্গাধর আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘কি মাল?’
লোকটা চারিদিকে চেয়ে বললে, ‘এখানে কথা হবে না বাবু, পুলিস ঘুরচে, আমার সঙ্গে আসুন…’
ঝুপসি গাছের তলায় এক জায়গায় অন্ধকার খুব ঘন। সেখানে গিয়ে লোকটা বললে, ‘জিনিসটা কোকেন। খুব সস্তায় পাবেন। ডিউটি-ছুট মাল। লুকিয়ে দেব!’
গঙ্গাধর চমকে উঠলো। সে কখনো ও ব্যবসা করেনি। ডিউটি-ছুট কোকেন—কি সর্বনেশে জিনিস! ভালো লোকের পাল্লায় সে পড়েছে! না, সে কিনবে না।
লোকটা সম্ভবতঃ পাঞ্জাবী মুসলমান। বাংলা বলতে পারে। তবে বেশ একটু বাঁকা। অনুনয়ের সুরে বললে, ‘বাবু, আপনি নিন। আপনার ভালো হবে। সিকি কড়িতে দেবো। আমার মুশকিল হয়েছে আমি মাল বিক্রির লোক খুঁজে পাচ্ছিনে। ঘরে ঘরে বেড়াচ্ছি কত জায়গায়, আবার সব জায়গায় তো যেতে পারিনে, পুলিসের ভয় তো আছে? কেউ কথা কইচে না আমার সঙ্গে; সেই হয়েছে আরও মুশকিল। হঠাৎ শহরে এত পুলিসের ভয় হ’ল যে কেন বাবু, তা বুঝিনে। আগে যারা এ ব্যবসা করতো, তাদের কাছে যাচ্ছি, তারা আমার দিকে চেয়েও দেখচে না। আপনি গররাজি হবেন না বাবু। মাল দেখুন পরে দামদস্তুর হবে…’
লোকটার গলার সরে একটা কি শক্তি ছিল, গঙ্গাধরের মন খানিকটা ভিজলো। কোকেনের ব্যবসাতে মানুষ রাতারাতি বড় লোক হয়েছে বটে। বিনা সাহসে বিপদ এড়িয়ে চলে বেড়ালে কি লক্ষীলাভ হয়? দেখাই যাক না।
হঠাৎ গঙ্গাধর চেয়ে দেখলে যে লোকটা নেই সেখানে। এই তো দাঁড়িয়েছিল, কোথায় গেল আবার? পাছে কেউ শোনে এই ভয়ে বেশী জোরে ডাকতেও পারবে না। চাপা গলায় বাঙালী-হিন্দিতে ডাকলে, ‘কোথায় গিয়া, ও খাঁসাহেব?’
এদিকে ওদিকে চাওয়ার পর সামনে চাইতেই দীর্ঘাকৃতি আলখাল্লাধারী খাঁসাহেবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। গঙ্গাধর বললে, ‘জলদি চলো, অনেক দূর যানে হোগা।’
কি একটা যেন ঢাকবার জন্যে লোকটি প্রাণপণে চেষ্টা করছে। আমার সঙ্গে এসো, মাল দেখাবো।’
দু’জনে কাটিগঙ্গার ধারে ধারে অনেক দূর গেল। যে সময়ের কথা বলচি, তখন ওদিকে অত লোকজন ছিল না। মাঝে মাঝে জোয়ার নেমে যাওয়াতে বড় বড় ভড় ও নৌকো কাদার ওপর পড়ে আছে, দু-একটা করাতের কারখানা, তাও দূরে দূরে জলের ধারে নোনা চাঁদাকাঁটার বন, পেছনে অনেক দূরে খিদিরপুর বাজারের আলো দেখা যাচ্ছে।
পথে যেতে যেতে খাঁসাহেব একটা বড় অদ্ভুত, প্রশ্ন করলে। গঙ্গাধরের দিকে চেয়ে বললে, ‘আমায় দেখতে পাচ্ছ তো?’
‘কেন পাবো না। এমন বয়েস এখনো হয়নি যে এই সন্ধেবেলাতেই চোখে ঠাওর হবে না।’
একবার গঙ্গাধর জিজ্ঞেস করলে, ‘তোমার ডেরা কোথায়, খাঁসাহেব?’
লোকটা চকিতে পেছনে ফিরে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বললে, ‘কেন, সে তোমার কি দরকার? পুলিসে ধরিয়ে দেবে ভেবে থাকো যদি, তবে ভালো হবে না জেনো। মাল দেবো, তুমি টাকা দেবে, মাল নিয়ে চলে যাবে। আমার বাসার খোঁজে তোমার কি কাজ?’
লোকটার চোখের চাউনি অদ্ভুত! গঙ্গাধর অস্বস্তি বোধ করলো। খুব ভালো দেখা যায় না, কিন্তু ওর দুই চোখে যেন ইস্পাতের ছুরি ঝলসে উঠলো। না, তার সঙ্গে টাকা রয়েছে। এ-অবস্থায় একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত অজ্ঞাতকুলশীল লোকের সঙ্গে একা এই সন্ধেবেলাতে সে এতদূর এসে পড়েছে? লোভে মানুষের জ্ঞান থাকে না। তার ভেবে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু যখন এসেইচে, তখন আর চারা নেই। বাড়বে বই কমবে না। ছুরি বার করে বসলে তখন আর উপায় থাকবে না।
অনেক দূর গিয়ে মাঠের মধ্যে একটা গুদামঘর। একটা গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে, গুদামঘরের দরজা থেকে একটু দূরে। তার ওপর গঙ্গাধরকে বসতে বলে লোকটা কোথায় চলে গেল। গঙ্গাধর বসে চারিধারে চেয়ে দেখলে গুদামঘরের আশেপাশে সর্বত্র আগাছার অনুচ্চ জঙ্গল, নিকটে কোথাও লোকজনের সাড়াশব্দ নেই।
অন্ধকার হলেও মাঠের মধ্যে বলে অন্ধকার তত ঘন নয়। সেই পাতলা অন্ধকারে চেয়ে দেখে গঙ্গাধরের মনে হল গুদামঘরটা পুরোনো এবং যেন অনেককাল অব্যবহার্য হয়ে পড়ে আছে। বাঁশের বেড়া খসে পড়েছে জায়গায় জায়গায়, চালের খোলা উড়ে গিয়েছে মাঝে মাঝে, সামনের দোরটা উই-ধরা, ভেঙে পড়তে চাইচে যেন।
গঙ্গাধরের কেমন একটা ভয় হ’ল। কেন সে এখানে এলো এই সন্ধ্যায়? এরকম জায়গায় একা মানুষে আসে, বিশেষ করে এতগুলো টাকা সঙ্গে করে? সে আসতো না কখনই, সে কলকাতায় আজ নতুন নয়, তার ওপরে ঝুনো ব্যবসাদার, বাঙলা দেশ থেকে নতুন আসেনি। ওই লোকটির কথার সরে কি জাদু আছে? গঙ্গাধরকে যেন টেনে এনেচে, সাধ্য ছিল না যে সে ছাড়ায়। একথা এখন তার মনে হ’ল।
হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে খাঁসাহেবের মূর্তি দেখা গেল। লোকটার যাওয়া-আসা এমন নিঃশব্দ ও এমন অদ্ভুত ধরনের, যেন মনে হয় অন্ধকারে ওর চেহারা মিলিয়ে গিয়েছিল, আবার ফুটে বেরুলো। কোথাও যে চলে গিয়েছিল এমন মনে হয় না। পাকা আর। ঝুনো খেলোয়াড় আর কি!
খাঁসাহেব দোর খুলে গুদামঘরে ঢুকলো। গঙ্গাধরকেও যখন পেছনে আসতে বললে তখন ভয়ে গদাধরের হাত-পা ঝিমঝিম করচে, বুক ঢিপঢিপ করচে। এই অন্ধকার গুদামঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ঠিক ও লোকটা ওর ওই লম্বা হাতে গলা টিপে ধরবে কিংবা ছুরি বুকে বসাবে সেই ফন্দিতে এতদূর ভুলিয়ে এনেছে। লোকটা নিশ্চয়ই জানতো যে তার কাছে টাকা আছে, অনুসন্ধান রেখেছিল। কে জানে খোদাদাদ খাঁয়ের লোক কিনা! গঙ্গাধরের কপালে বিন্দু বিন্দু, ঘাম দেখা দিলে। একবার সে ভাবলে, দৌড়ে পালাবে? কিন্তু সে বড়ো মানুষ, এই জোয়ান পাঞ্জাবী মুসলমানের সঙ্গে দৌড়ের পাল্লায় তার পক্ষে পেরে ওঠা অসম্ভব।
কলের পুতুলের মতো গঙ্গাধর গুদামঘরের মধ্যে ঢুকল। আশ্চর্য! গুদামের ওদিকের দেওয়ালটা যে একেবারে ভাঙা। গুদামের সর্বত্র দেখা যাচ্ছে সেই অস্পষ্ট অন্ধকার। এক জায়গায় দুটো খালি পিপে ছাড়া কোথাও কিছু নেই। মাকড়সার জাল সর্বত্র, অন্ধকারে দেখা যায় না বটে, কিন্তু নাকে মুখে লাগে। একটা কি রকম ভ্যাপসা গন্ধ গুদামের মধ্যে, মেজেটা স্যাঁতসেতে, কতকাল এর মধ্যে যেন মানুষ ঢোকেনি।
এদিকে আবার খাঁসাহেব কোথায় গেল? লোকটা থাকে থাকে যায় কোথায়? অল্পক্ষণ…মিনিট দুই হবে, কেউ কোথাও নেই, শুধ, গঙ্গাধর একলা…আবার সেই ভয়টা হ’ল। কেমন এক ধরনের ভয়…যেন বুকের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে। এই বা কি রকম ভয়? আর গুদামঘরটার মধ্যে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ার যেন একটা স্রোত বইছে মাঝে মাঝে।
মিনিট-দুই পরেই খাঁসাহেব—এই তো আধ-অন্ধকারের মধ্যে সামনেই দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ একটা অদ্ভুত কথা বললে খাঁসাহেব। বললে, ‘তুমি কালা নাকি? এতক্ষণ কথা বলচি, শুনতে পাচ্ছি না? কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন? কোকেন যে জায়গায় আছে বললাম, তা দেখতে পেয়েছ? শাবলের চাড় দিয়ে তুলতে বললাম পিপে দুটো। হাঁ করে সঙের মতো দাঁড়িয়ে কেন?’
বা রে! এত কথা কখন বলেচে লোকটা? পাগল নাকি? গঙ্গাধর কেমন ভ্যাবাচাকা হয়ে গিয়েছে, মূঢ়ের মতো দৃষ্টিতে চেয়ে বললে, ‘কখন তুমি দেখালে কোকেনের জায়গা, কই কোথায় শাবল?’
কথা বলতে বলতে গঙ্গাধর সম্মুখস্থ খাঁসাহেবের মুখের দিকে চাইলে। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল তার বিভ্রান্ত, বিমূঢ়, আতঙ্কাকুল দৃষ্টির সামনে খাঁসাহেবের মুখ, গলা, বুক, হাত-পা, সারা দেহটা যেন চুরচুর হয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে…সব যেন ভেঙে বাতাসে উড়ে উড়ে যাচ্ছে, খাঁসাহেব প্রাণপণে দাঁতমুখ খামটি করে বিষম মনের জোরে তার দেহের চূর্ণায়মান অণুগুলো যথাস্থানে ধরে রাখবার জন্যে চেষ্টা করছে। কিন্তু পেরে উঠচে না…সব ভেঙে গেল, গুঁড়িয়ে গেল, উড়ে গেল…এক…দুই…তিন… চার…
আর কোথায় খাঁসাহেব? চারিপাশের অন্ধকারের মধ্যে সে মিশিয়ে গিয়েচে, একটা ঠাণ্ডা কনকনে বাতাসের ঝাপটা এলো কোথা থেকে, সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গাধর আর্তরবে চিৎকার করে গুদামঘরের স্যাঁতসেতে মেঝের ওপর মূর্ছিত হয়ে পড়ে গেল।
একটা দেশ ভড় কাছে কোথায় বাঁধা ছিল, তার মাঝিরা এসে গঙ্গাধরকে অচেতন অবস্থায় তাদের ভড়ে নিয়ে যায়। তারাই তাকে দোকানে পৌঁছে দেয়। গঙ্গাধরের টাকা ঠিক ছিল, কানাকড়িও খোয়া যায়নি। তবে শরীর শুধরে উঠতে সময় নিয়েছিল, অনেকদিন পর্যন্ত অন্ধকারে সে একা কিছুতেই থাকতে পারতো না।
মাস দুই পরে মেটেবুরুজে খোদাদাদ খাঁর কাছে টাকা শোধ দিতে গিয়ে গঙ্গাধর টাকা নিয়ে যাবার দিন কি ঘটনা ঘটেছিল সেটা বললে। খোদাদাদ খাঁ গল্প শুনে গম্ভীর হয়ে গেল।
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘সাহজী, ও হ’ল আমীর খাঁ। চোরাই কোকেনের খুব বড় ব্যবসাদার ছিল। আজ বছর পনেরো আগেকার কথা, রমজান মাসে বেশ কিছু মাল হাতে পায়। তক্তাঘাটের কাছে একখানা জাহাজ ভিড়েছিল, সেখান থেকে রাতারাতি সরিয়ে ফেলে। জাহাজের লোকের সঙ্গে ষড় ছিল। কোথায় সে মাল রাখতো কেউ জানে না। সেই মাসের মাঝামাঝি সে খুন হয়। কে বা কেন খুন করলে জানা যায়নি, কেউ ধরা পড়েনি। তবে দলের লোকই তাকে খুন করেছিল এটা বোঝা কঠিন নয়। এই পর্যন্ত আমীর খাঁর ঘটনা আমি জানি। আমার মনে হয় আমীর খাঁ সেই থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মাল বিক্ৰী করার জন্যে। ওর পুরোনো কোকেনের বাক্স হয়েছে দোজখের বোঝ। তা বাবু, সেই গুদাম ঘরটা কোথায় দেখাতে পারবে?’
গঙ্গাধর অন্ধকারে কোথা দিয়ে সেখানে গিয়েছিল তা তার মনে নেই, মনে থাকলেও সে যেতো না।
পথে আসতে আসতে গঙ্গাধরের মনে পড়লো, পুরোনো ভাঙা গুদামঘরটার অস্পষ্ট অন্ধকারের মধ্যে আমীর খাঁয়ের মুখের সেই হতাশ ও অমানুষিক চেষ্টা করেও হেরে যাবার দৃষ্টিটা। হতভাগ্য এতদিনেও কি বোঝেনি সে মারা গিয়েছে?…কে উত্তর দেবে। ভগবান তার আত্মাকে শান্তি দিন।