Raater Alo

7 Timeless Poems of RabindranathTagore l রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭টি কালজয়ী কবিতা

7 Timeless Poems of RabindranathTagore

7 Timeless Poems of RabindranathTagore: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি শুধু বাংলা সাহিত্যের নয়, বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, তাঁর সৃষ্টির ভাণ্ডার অসীম এবং অবিস্মরণীয়। কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক—তাঁর সৃষ্টিশীলতার প্রতিটি শাখাই অনন্য এবং কালজয়ী। তবে তাঁর কবিতাগুলি বিশেষভাবে আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম, মানবতা, এবং জীবন দর্শনের এক অপূর্ব মেলবন্ধন আমরা খুঁজে পাই। এই ব্লগে, আমরা তুলে ধরব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭টি কালজয়ী কবিতা (7 Timeless Poems of RabindranathTagore), যা যুগে যুগে পাঠকদের মুগ্ধ করেছে এবং করবে। চলুন, রবীন্দ্রনাথের কবিতার সেই অনির্বচনীয় জগতে প্রবেশ করি এবং তাঁর শব্দের জাদুতে মুগ্ধ হই।

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়–
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা–
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (নৈবেদ্য  হতে সংগ্রহীত)

যদি তোর   ডাক শুনে কেউ না আসে   তবে   একলা চলো রে।

যদি তোর   ডাক শুনে কেউ না আসে   তবে   একলা চলো রে।

একলা চলো,   একলা চলো,   একলা চলো,   একলা চলো রে ॥

যদি   কেউ কথা না কয়,   ওরে ওরে ও অভাগা,

যদি   সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে   সবাই করে ভয়–

                   তবে   পরান খুলে

ও তুই   মুখ ফুটে তোর মনের কথা   একলা বলো রে ॥

যদি   সবাই ফিরে যায়,   ওরে ওরে ও অভাগা,

যদি   গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়–

                   তবে   পথের কাঁটা

ও তুই   রক্তমাখা চরণতলে   একলা দলো রে ॥

যদি   আলো না ধরে,   ওরে ওরে ও অভাগা,

যদি   ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে   দুয়ার দেয় ঘরে–

                   তবে   বজ্রানলে

আপন   বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে   একলা জ্বলো রে ॥

কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো!

কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো!

বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো।

     রয়েছে দীপ না আছে শিখা,

     এই কি ভালে ছিল রে লিখা–

ইহার চেয়ে মরণ সে যে ভালো।

বিরহানলে প্রদীপখানি জ্বালো।

বেদনাদূতী গাহিছে, “ওরে প্রাণ,

তোমার লাগি জাগেন ভগবান।

     নিশীথে ঘন অন্ধকারে

     ডাকেন তোরে প্রেমাভিসারে,

দুঃখ দিয়ে রাখেন তোর মান।

তোমার লাগি জাগেন ভগবান।’

গগনতল গিয়েছে মেঘে ভরি,

বাদল-জল পড়িছে ঝরি ঝরি।

     এ ঘোর রাতে কিসের লাগি

     পরান মম সহসা জাগি

এমন কেন করিছে মরি মরি।

বাদল-জল পড়িছে ঝরি ঝরি।

বিজুলি শুধু ক্ষণিক আভা হানে,

নিবিড়তর তিমির চোখে আনে।

     জানি না কোথা অনেক দূরে

     বাজিল প্রাণ গভীর সুরে,

সকল গান টানিছে পথপানে।

নিবিড়তর তিমির চোখে আনে।

কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো!

বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো।

     ডাকিছে মেঘ, হাঁকিছে হাওয়া,

     সময় গেলে হবে না যাওয়া,

নিবিড় নিশা নিকষঘন কালো।

পরান দিয়ে প্রেমের দীপ জ্বালো।

সোনার তরী

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।

     কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।

            রাশি রাশি ভারা ভারা

            ধান কাটা হল সারা,

            ভরা নদী ক্ষুরধারা

                    খরপরশা।

     কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

     একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,

     চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।

            পরপারে দেখি আঁকা

            তরুছায়ামসীমাখা

            গ্রামখানি মেঘে ঢাকা

                    প্রভাতবেলা–

     এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।

     গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,

     দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

            ভরা-পালে চলে যায়,

            কোনো দিকে নাহি চায়,

            ঢেউগুলি নিরুপায়

                    ভাঙে দু-ধারে–

     দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,

     বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।

            যেয়ো যেথা যেতে চাও,

            যারে খুশি তারে দাও,

            শুধু তুমি নিয়ে যাও

                    ক্ষণিক হেসে

     আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।

     যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।

     আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে।

            এতকাল নদীকূলে

            যাহা লয়ে ছিনু ভুলে

            সকলি দিলাম তুলে

                    থরে বিথরে–

     এখন আমারে লহ করুণা করে।

     ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী

     আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।

            শ্রাবণগগন ঘিরে

            ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,

            শূন্য নদীর তীরে

                    রহিনু পড়ি–

     যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

  ফাল্গুন  ১২৯৮  শিলাইদহ।  বোট

Exit mobile version