Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024 l রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা l

By raateralo.com

Published on:

Short Poems by Rabindranath Tagore 2024 l রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা l

Short Poems by Rabindranath Tagore 2024: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা গুলির মধ্যে আমরা এখানে কিছু বাছাই করা কবিতা তুলে ধরেছি যেগুলি আমার কাছে খুব প্রিয়। আশা করি আপনাদের সকলের কাছে ততটাই জনপ্রিয় যতটা আমার কাছে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও আনন্দদায়ক।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সকলের জন্য নানান কবিতা লিখেছেন। তার সকল কবিতায় আমাদের কাছে খুব প্রিয়, তারই মধ্যে এই ছোট কবিতা গুলি আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

Short Poems by Rabindranath Tagore 2024l রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা l

জন্মকথা

খোকা মাকে শুধায় ডেকে–

“এলেম আমি কোথা থেকে,
কোন্খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে ।”

মা শুনে কয় হেসে কেদে

খোকারে তার বুকে বেধে,_
“ইচ্ছ। হয়ে ছিলি মনের মাঝারে ॥

ছিলি আমার পুতুল-খেলায়,
প্রভাতে শিবপৃজার বেলায়
তোরে আমি ভেঙেছি আর গড়েছি।
তুই আমার ঠাকুরের সনে
ছিলি পুজার সিংহাসনে,
তারি পুজায় তোমার পুজ। করেছি ॥

আমার চিরকালের আশায়,
আমার সকল ভালবাসায়
আমার মায়ের দ্িদিমায়ের পরানে
পুরানো এই মোদের ঘরে
গৃহদেবীর কোলের পরে
কতকাল-যে লুকিয়েছিলি কে জানে ॥

যৌবনেতে যখন হিয়।

_. উঠেছিল প্রস্ফুটিয়া,

তুই ছিলি সৌরভের মতো মিলায়ে,
আমার তরুণ অঙ্গে অঙ্গে
জড়িয়ে ছিলি সঙ্গে সঙ্গে

তোর লাবণ্য কোমলত। বিলায়ে ॥

সব দেবতার আদরের ধন,
নিত্যকালের তুই পুরাতন,
তুই প্রভাতের আলোর সমবয়সী,-
তুই জগতের স্বপ্ন হতে
এসেছিস আনন্দ-শ্রোতে
নৃতন হয়ে আমার বুকে বিলসি ॥

নিনিমেষে তোমায় হেরে
তোর রহস্য বুঝিনে রে,
সবার ছিলি আমার হলি কেমনে ।
ওই’দেহে এই দেহ চুমি?
মায়ের খোক। হয়ে তুমি
মধুর হেসে দেখা দিলে ভুবনে ॥

হারাই হারাই ভয়ে গো তাই
বুকে চেপে রাখতে-যে চাই,
কেঁদে মরি একটু সরে দাড়ালে।
জানি না কোন্‌ মায়ায় ফেঁদে
বিশ্বের ধন রাখব বেঁধে
আমার এ ক্ষীণ বানু তুটির আড়ালে ॥”

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

লুকোচুরি

আমি যদি ছুষ্টমি ক’রে
টাপার গাছে চাপা হয়ে ফুটি,
ভোরের বেল মা গো, ডালের পরে
কি পাতায় করি লুটোপুটি ।
তবে তুমি আমার কাছে হারে,
তখন কি মা, চিনতে আমায় পারো ।
তুমি ডাকো “খোকা কোথায় ওরে 1”
আমি শুধু হাসি চুপটি ক’রে।
তখন তুমি থাকবে যে-কাজ নিয়ে
সবই আমি দেখব নয়ন মেলে ।
স্নানটি ক’রে চাপার তলা দিয়ে
আসবে তুমি পিঠেতে চুল ফেলে 7৮

এখান দিয়ে পুজার ঘরে যাবে,

দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে +
তখন তুমি বুঝতে পারবে ন। সে
তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে),

দুপুরবেলা মহাভারত-হাতে
বসবে তুমি সবার খাওয়া হোলে ৮
গাছের ছায়া ঘরের জানালাতে
পড়াবে এসে তোমার পিঠে কোলে 7
আমি আমার ছোট্র ছায়াখানি
দোলাব তোর বইয়ের পরে আনি”
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার চোখে খোকার ছায়া ভাসে ॥

সন্ধ্যেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে
যখন তুমি যাবে গোয়াল ঘরে,
তখন আমি ফুলের খেল। খেলে
টুপ ক’রে মা, পড়ব ভূঁয়ে ঝরে।
আবার আমি তোমার খোকা হব,
“গল্প বলো” তোমায় গিয়ে কব।
তুমি বলবে “ছুষ্টং ছিলি কোথা”।
আমি বলব, “বলব ন। সে-কথা। ॥”

ঘুমচোরা

কে নিল খোকার ঘুম হরিয়া।

মা তখন জল নিতে ও পাড়ার দীঘিটিতে
গিয়াছিল ঘট কাখে করিয়া ।–

তখন রোদের বেল! সবাই ছেড়েছে খেল’,
৪পারে নীরব চখা-চখীরা,

শালিক থেমেভে ঝোপে শুধু পায়রার খোপে
বকাবকি করে সখা-সখিরা |

তখন রাখাল ছেলে পাঢুনি ধুলায় ফেলে
ঘুমিয়ে পড়েছে বটতলাতে ;

বাশ-বাগানের ছায়ে এক-মনে এক পায়ে
খাড়া হয়ে আছে বক জলাতে।

সেই ফাকে ঘ্ুমচোর ঘরেতে পশিয়া মোর
ঘুম নিয়ে উড়ে গেল গগনে,

মা এসে অবাক রয়, দেখে খোকা ঘরময়
হামাগুড়ি দিয়ে ফিরে সঘনে।

আমার খোকার ঘুম নিল কে।
যেথা পাই সেই চোরে বাধিয়। আনিব ধ’রে
সে-লোক লুকাবে কোথা ত্রিলোকে।

যাব সে-গুহার ছায়ে কালে পাথরের গায়ে
কুলু কুলু বহে যেথা ঝরনা ।

যাব সে বকুল বনে নিরিবিলি যে-বিজনে
ঘুঘুরা করিছে ঘর-করনা ।

যেখানে সে-বুড়ো বট নামায়ে দিয়েছে জট,
বিল্লী ডাকিছে দিনে ছুপুরে,

যেখানে বনের কাছে বন-দেবতার। নাচে
টাদনিতে রুনুঝুনু নৃপুরে,

যাব আমি ভরা সাঝে সেই বেণুবন-মাঝে
আলো! যেথ1! রোজ জ্বালে জোনাকি,

শুধাব মিনতি ক’রে আমাদের ঘুম-চোরে
তোমাদের আছে জানাশোনা কি।

কে নিল খোকার ঘুম চুরায়ে।
কোনোমতে দেখা তার পাই যদি একবার
লই তবে সাধ মোর পুরায়ে ।
দেখি তারাস্থীস! খুঁজি? কোথা ঘুম করে পুজি,
এ চোরা-ধন রাখে কোন্‌ আড়ালে ।
নব তার, ভাবিতে হবে না আর
খোকার চোখের ঘ্বুম হারালে ।

ডান! ছুটি বেঁধে তা”রে নিয়ে যাব নদী-পাঁরে
সেখানে সে বসে এক কোণেতে

জলে শর-কাঠি ফেলে মিছে মাছ-ধর! খেলে,
দিন কাটাইবে কাশ-বনেতে ।

যখন সাঝের বেল। ভাঙিবে হাটের মেল!
ছেলের! মায়ের কোল ভরিবে,

সারারাত টিটি-পাখি টিটকারি দিবে ডাকি–

“ঘুম-চোরা কার ঘুম হরিবে ।”

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

অপযশ

বাছারে তোর চক্ষে কেন জল ।
কে তোরে যে কী বলেছে
আমায় খুলে বল্‌।
লিখতে গিয়ে হাতে-মুখে
মেখেছ সব কালী,
নোংরা বলে তাই দিয়েছে গালি ?
ছিছি উচিত এ কি।
পূর্ণশশী মাখে মসী-_
নোংর! বলুক দেখি।

বাছারে, তোর সবাই ধরে দোষ ।
আমি দেখি সকল-তাতে
এদের অসন্তোষ ।
খেলতে গিয়ে কাপড়খান।
ছিড়ে খুঁড়ে এলে,
তাই কি বলে লক্ষমীছাড়া ছেলে ।
ছিছি কেমন ধারা ।
ছেড়া মেঘে প্রভাত হাসে
সেকি লক্ষমীভাড়া ।

কান দিয়ো না তোমায় কে কী বলে,
তোমার নামে অপবাদ যে
ক্রমেই বেড়ে চলে ।
মিষ্টি তুমি ভালবাসো
তাই কি ঘরে পরে,
লোভী বলে তোমায় নিন্দে করে।
ছি ছি হবে কী।
তোমায় যারা ভালবাসে
তারা তবে কী।

বিচার

আমার খোকার কত-যে দোষ
সে-সব আমি জানি,
লোকের কাছে মানি বা নাই মানি।
ছুষ্টামি তার পারি কিংবা
নারি থামাতে,
ভালোমন্দ বোঝাপড়া
তাতে আমাতে।
বাহির হতে তুমি তারে
যেমনি করো দৃষী,
যত তোমার খুশি;
সে-বিচারে আমার কী বা হয়।
খোকা বলেই ভালবাসি
ভালো বলেই নয়।
খোক। আমার কতখানি
সেকি তোমরা বোঝো ।
তোমরা শুধু দোষ গুণ তার খোজো!।
আমি তারে শাসন করি
বুকেতে বেঁধে,
আমি তারে কাদাই যে গো
আপনি কেদে ।

বিচার করি শাসন করি
করি তারে দূষী।
আমার যাহা খুশি ।
তোমার শাসন আমরা মানিনে গো ।
শাসন করা তারেই সাজে
সোহাগ করে যে গো ॥

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

চাতুরি

আমার খোকা করে গো যদি মনে
এখনি উড়ে পারে সে যেতে
পারিজাতের বনে ।
যায় না সেকি সাধে ।
মায়ের বুকে মাথাটি থুয়ে
সে ভালবাসে থাকিতে শুয়ে,
মায়ের যুখ ন1! দেখে যদি
পরান তার কাদে।

আমার খোক। সকল কথ জানে ।
কিন্ত তার এমন ভাষা,
কে বোঝে তার মানে।
মৌন থাকে সাথে ?

মায়ের মুখে মায়ের কথ!

শিখিতে তাঁর কী আকুলতা,,

তাকায় তাই বোবার মতো এ
মায়ের মুখচাদে ।

খোকার ছিল রতনমণি কত-_
তবু সে এল কোলের পরে
ভিখারিটির মতো ।
এমন দশ সাধে ?
দীনের মতো করিয়। ভান,
কাড়িতে চাহে মায়ের প্রাণ
তাই সে এল বসনহীন
সন্যাসীর ছাদে ॥

খোক। যে ছিল বাঁধন-বাধাহারা
যেখানে জাগে নূতন চাদ
ঘুমায় শুকতারা।
ধর সে দিল সাধে ?
অমিয়মাখ! কোমল বুকে
হারাতে চাহে অসীম সুখে,
মুকতি চেয়ে বাধন মিঠা
মায়ের মায়া-ফাদে ॥

আমার খোকা কাদিতে জানিত না;
হাসির দেশে করিত শুধু

স্রখের আলোচনা ।

কাদিতে চাহে সাধে?
মধুমুখের হাসিটি দিয়া
টানে সে বটে মায়ের হিয়া,
কান্না! দিয়ে ব্যথার ফাসে

ছিগুণ বলে বাধে ॥

নির্লিপ্ত

বাছা, রে মোর বাছা ;
ধুলির পরে হরষ ভরে
লইয়। তৃণগাছ’
আপন মনে খেলিছ কোণে,
কাটিছে সারা বেলা ।
হাসি গো দেখে এ ধুলি মেখে
এ তৃণ লয়ে খেলা ॥।

আমি যে কাজে রত,
লইয়া খাতা ঘুরাই মাথা।
হিসাব করি কত ;

আকের সারি হতেছে ভারি
কাটিয়া যায় বেলা,

ভাবিছ দেখি মিথ্যা এ কী
সময় নিয়ে খেল! ।

বাছা রে মোর বাছা,
খেলিতে ধূলি গিয়েছি ভুলি
লইয়ে তৃণগাছ।।
কোথায় গেলে খেলনা মেলে
ভাবিয়া কাটে বেলা,
বেড়াই খুঁজি করিতে পুঁজি
সোনারুপার টেল!।

যা পাও চারিদিকে
তাহাই ধরি তুলিছ গড়ি
মনের সুখটিকে
না পাই যারে চাহিয়া তারে
আমার কাটে বেলা,
আশাতীতেরি আশায় ফিরি
ভাসাই মোর তেল ॥

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

কেন মধুর

রঙিন খেলনা দিলে ও রাঙা হাতে
তখন বুঝি রে বাছা, কেন যে প্রাতে
এত রং খেলে মেঘে, জলে রং উঠে জেগে,
কৈন এত রং লেগে ফুলের পাতে»
রাঙা খেল! দেখি যবে ও রাড হাতে ॥
গান গেয়ে তোরে আমি নাচাই যবে
আপন হৃদয়-মাঝে বুঝি রে তবে,
পাতায় পাতায় বনে ধ্বনি এত কী কারণে,
ঢেউ বহে নিজ মনে তরল রবে,
বুঝি তা তোমারে গান শুনাই যবে ॥


যখন নবনী দিই লোলুপ করে
হাতে মুখে মেখে চুকে বেড়াও ঘরে,
তখন বুঝিতে পারি স্বাছু কেন নদীবারি,
ফল মধু-রসে ভারি কিসের তরে,
যখন নবনী দিই লোলুপ করে ॥
যখন চুমিয়ে তোর বদনখানি
হাঁসিটি ফুটায়ে তুলি, তখনি জানি
আকাশ কিসের সুখে আলো দেয় মোর মুখে,
বায়ু দিয়ে যায় বুকে অম্বত আনি-_
বুঝি তা চুমিলে তোর বদনখানি ॥

 খোকার রাজ্য

খোকার মনের ঠিক মাঝখানটিতে
আমি যদি পারি বাস নিতে-_

তবে আমি একবার
জগতের পানে তার

চেয়ে দেখি বসি সে-নিভৃতে ॥
তার রবি শশী তারা
জানিনে কেমন ধার!

সভ। করে আকাশের তলে,
আমার খোকার সাথে
গোপন দিবসে রাতে

শুনেছি তাদের কথা চলে ।
শুনেছি আকাশ তারে
নামিয়ে মাঠের পারে

লোভায় রঙিন ধনু হাতে,
আসি শালবন “পরে
মেঘের। মন্ত্রণ। করে

খেল। করিবারে তার সাথে ।
যারা আমাদের কাছে
নীরব গম্ভীর আছে,

আশার অতীত যার। সবে,

খোকারে তাহারা এসে
ধরা দিতে চায় হেসে
কত রঙে কত কলরবে

খোকার মনের ঠিক মাঝখান ঘে’সে

যে-পথ গিয়েছে স্যষ্টিশেষে__
সকল উদ্দেশহারা
সকল ভূগোল-ছাড়া

অপবূপ অসম্ভব দেশে ;
যেথা! আসে রাত্রিদিন
সব ইতিহাসহীন

রাজার রাজত্ব হতে হাওয়া,
তারি যদি এক-ধারে
পাই আমি বসিবারে

দেখি কার করে আসা-যাওয়া ।
তাহার! অদ্ভুত লোক
নাই কারে হুঃখ শোক,

নেই তারা কোনে! কমে কাজে,
চিন্তাহীন মৃত্যুহীন
ভলিয়াছে চিরদিন

খোকাদের গল্পলোক-মাঝে ॥

সেথ। ফুল গাছপালা
নাগকন্যা রাজবাল।
মানুষ রাক্ষস পশু পাখি,
যাহ] খুশি তাই করে,
সত্যেরে কিছু না ডরে
সংশয়েরে দিয়ে যায় ফাকি ।

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

ভিতরে ও বাহিরে

খোকা থাকে জগৎমায়ের
অস্তঃপুরে,

তাই সে শোনে কত-যে গান
কতই সুরে ।

নানান রঙে রাঙিয়ে দিয়ে
আকাশ পাতাল

মা রচেছেন খোকার খেলা-
ঘরের চাতাল।

তিনি হাসেন, যখন তরু-
লতার দলে

খোকার কাছে পাতা নেক্ডে
প্রলাপ বলে ।

সকল নিয়ম উড়িয়ে দিয়ে
সূর্য শশী

খোকার সাথে হাসে, ঘেন
এক-বয়সী ।

সত্য বুড়ো নানা রঙের
মুখোস পরে

শিশুর সনে শিশুর মতো!
গল্প করে।

চরাচরের সকল কম
করে হেলা

আ-যে আসেন খোকার সঙ্গে
করতে খেলা ।

খোকার জন্তে করেন স্থষ্টি
যা ইচ্ছে তাই,__

কোনো নিয়ম কোনো বাধা-
বিপত্তি নাই ।

বোবাদেরও কথ! বলান
খোকার কানে,

অসাড়কেও জাগিয়ে তোলেন
চেতন প্রাণে ।

ভিতরে ও বাহিরে গু

খোকার তরে গল্প রচে
বষ। শরৎ,

খেলার গৃহ হয়ে ওঠে
বিশ্বজগতৎ ।

খোকা তারি মাঝখানেতে
বেড়ায় ঘুরে

খোকা থাকে জগৎমায়ের
অন্তঃপুরে ।

আমরা থাকি জগৎপিতার
বিচ্যালয়ে,__

উঠেছে ঘর পাথর-গাথ।
দেয়াল লয়ে।

জ্যোতিষশাস্ত্রমতে চলে
সুর্য শশী,

নিয়ম থাকে বাগিয়ে লয়ে
রশারশি ।

এমনি ভাবে দাড়িয়ে থাকে
বৃক্ষ লতা,

যেন তার। বোঝেই নাকো
কোনোই কথ।।

চাপার ভালে চাপা ফোটে
এমনি ভানে

যেন তারা সাত ভায়েরে
কেউ না জানে।

মেঘেরা চায় এমনি তরো।
আবোধ ভাবে,

যেন তারা জানেই নাকো!
কোথায় যাবে ।

ভাঙা পুতুল গড়ায় ভুয়ে
সকাল বেলা,

যেন তারা কেবল শুধু
মাটির ঢেলা 1-.

দীঘি থাকে নীরব হয়ে
দিবারাত্র__

নাগকন্যের কথ। যেন
গল্লপমাত্র ।

স্রখ ছুঃখ এমনি বুকে
চেপে রহে-_

যেন তারা কিছুমাত্র
গল্প নহে।

যেমন আছে তেমনি থাকে
যে যাহা তাই-_

আর যে কিছু হবে, এমন
ক্ষমত। নাই ।

বিশ্ব-গুরুমশায় থাকেন
কঠিন হয়ে,

আমর থাকি জগৎপিতার
বিগ্ভালয়ে ।

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

মাস্টার বাবু

আমি আজ কানাই মাস্টার
পোড়ে মোর বেড়াল ছানাটি।

আমি ওকে মারিনে মা, বেত
মিছি মিছি বসি নিয়ে কাঠি।
রোজ রোজ দেরি করে আসে,
পড়াতে দেয় না ও তো মন,
ডান পা! ভুলিয়ে তোলে হাই
যত আমি বলি “শোন শোন্‌।৮
দিন রাত খেলা খেল খেলা,
লেখায় পভায় ভারি হেলা
৬তীামি বলি–চ ছ জ ঝ এ,
ও কেবল বলে মিয়ে? মিয়ে।।

প্রথম ভাগের পাতা খুলে
আমি ওরে বোঝাই মা, কত-_
চুরি করে খাসনে কখনো
ভালো হোস গোপালের মতো ।।
যত বলি সব হয় মিছে
কথা যদি একটিও শোনে ।
মাছ যদি দেখেছে কোথাও
কিছুই থাকে না আর মনে |. ২
চড়াই পাখির দেখা! পেলে
ছুটে যায় সব পড়া ফেলে ।

যদি বলি চছজবঝঞ,
ছৃষ্টমি ক’রে বলে মিয়ে ।

আমি ওরে বলি বার বার,
পড়ার সময় তুমি পোড়ো-_
তার পরে ছুটি হয়ে গেলে
খেলার সময় খেলা কোরো ।
ভালো মানুষের মতো থাকে,
:. আড়ে আড়ে চায় মুখপানে,
এমনি সে ভান করে, যেন
যা বলি বুঝেছে তার মানে।
একটু স্বযোগ বোঝে যেই
কোথা যায় আর দেখা নেই।
আমি বলি-চ ছজঝঞ,
ও কেবল বলে- মিয়ে। মিয়ো )

লুকোচুরি

আমি যদি ছুষ্টমি ক’রে
টাপার গাছে চাপা হয়ে ফুটি,
ভোরের বেল মা গো, ডালের পরে
কি পাতায় করি লুটোপুটি ।
তবে তুমি আমার কাছে হারে,
তখন কি মা, চিনতে আমায় পারো ।
তুমি ডাকো “খোকা কোথায় ওরে 1”
আমি শুধু হাসি চুপটি ক’রে।
তখন তুমি থাকবে যে-কাজ নিয়ে
সবই আমি দেখব নয়ন মেলে ।
স্নানটি ক’রে চাপার তলা দিয়ে
আসবে তুমি পিঠেতে চুল ফেলে 7৮

এখান দিয়ে পুজার ঘরে যাবে,

দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে +
তখন তুমি বুঝতে পারবে ন। সে
তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে),

দুপুরবেলা মহাভারত-হাতে
বসবে তুমি সবার খাওয়া হোলে ৮
গাছের ছায়া ঘরের জানালাতে
পড়াবে এসে তোমার পিঠে কোলে 7
আমি আমার ছোট্র ছায়াখানি
দোলাব তোর বইয়ের পরে আনি”
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার চোখে খোকার ছায়া ভাসে ॥

সন্ধ্যেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে
যখন তুমি যাবে গোয়াল ঘরে,
তখন আমি ফুলের খেল। খেলে
টুপ ক’রে মা, পড়ব ভূঁয়ে ঝরে।
আবার আমি তোমার খোকা হব,
“গল্প বলো” তোমায় গিয়ে কব।
তুমি বলবে “ছুষ্টং ছিলি কোথা”।
আমি বলব, “বলব ন। সে-কথা। ॥”

Captivating Short Poems by Rabindranath Tagore 2024

দুঃখহারী

মনে করো তুমি থাকবে ঘরে
আমি যেন যাব দেশান্তরে ।
ঘাটে আমার বাধা আছে তরী
জিনিসপত্র সব নিয়েছি ভরি,
ভালো ক’রে দেখ. তো৷ মনে করি,
কী এনে মা, দেব তোমার তরে।

চাস কি মা, তুই এত এত সোনা ।
সোনার দেশে করব আনাগোনা ।
সোনামতী নদী-তীরের কাছে
সোনার ফসল মাঠে ফলে আছে,
সোনার চাপা ফোটে সেথায় গাছে,
না কুড়িয়ে আমি তো ফিরব না।

পরতে কি চাস মুক্তে। গেঁথে হারে।
জাহাজ বেয়ে যাব সাগর-পারে।
সেখানে মা, সকাল বেলা হোলে
ফুলের পরে মুক্তোগুলি দোলে,
টুপটুপিয়ে পড়ে ঘাসের কোলে,
যত পারি আনব ভারে ভারে ।

দাদার জন্তে আনব মেঘে-ওড়।
পক্ষীরাজের বাচ্ছ। ছুটি ঘোড়া ।

বাবার জন্তে আনব আমি তুলি

কনক-লতার চারা! অনেকগুলি,

তোর তরে মা, দেবে। কৌটা খুলি”
সাত-রাজার-ধন মানিক একটি জোড়া ।

পুজার সাজ

আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি,
পুজার সময় এল কাছে ।
মধু বিধু ছুই ভাই ছুটাছুটি করে তাই,
আনন্দে দু-হাত তুলি নাচে।

পিত। বমি ছিল দ্বারে দু-জনে শুধাল তারে-_
“কী পোষাক আনিয়াছ কিনে ।”

পিত। কহে “আছে আছে, তোদের মায়ের কাছে
দেখিতে পাইবি ঠিক দিনে ।”

সবুর সহে না আর জননীরে বারবার
কহে, “মাগো, ধরি তোর পায়ে
বাব! আমাদের তরে কী কিনে” এনেছে ঘরে

একরার দে না মা, দেখায়ে

ব্যস্ত দেখি হাসিয়া ম! ছু-খানি ছিটের জাম!
দেখাল করিয়া আদর ;

মধু কহে_-“আর নেই ” মা কহিল, “আছে এই
এক জোড়া ধুতি ও চাদর ।”

রাগিয়। আগুন ছেলে, কাপড় ধুলায় ফেলে
কাদিয়া কহিল, “চাহি নামা,
রায়বাবুদের গুপি; পেয়েছে জরির টুপি,

লক টিনের জামা
ফুলকাটা। সচিনের মা। রে

মা কিল, “মধু, ছি ছি, কেনকাদে। মিছামিছি
গরীব-যে তোমাদের বাপ,

এবার হয়নি ধান কত গেছে লোকসান
পেয়েছেন কত ছুখ তাপ।

তবু দেখো বহু ক্লেশে তোমাদের ভালবেসে
সাধ্যমতো! এনেছেন কিনে,

সে-জিনিস অনাদরে ফেলিলি ধূলির পরে
এই শিক্ষা হোলো এতদিনে !”

বিধু বলে, “এ কাপড় পছন্দ হয়েছে মোর
এই জাম! পরাস আমারে ”

মধু শুনে আরে রেগে ঘর ছেড়ে দ্রতবেগে

গেল রায়বাবুদের দ্বারে ।

সেথ। মেলা লোক জড়ো রায়বাবু ব্যস্ত বড়ো
দালান সাজাতে গেছে রাত।
মধু যবে এক কোণে দাড়াইল ম্লান মনে

চোখে তার পড়িল হঠাৎ ।

কাছে ডাকি স্েহ-ভয়ে কহেন করুণ স্বরে
তারে ছুই বাহুতে বীধিয়া__

“কী রে মধু, হয়েছে কী। তোরে যে শুকৃনো দেখি ।”

/ শুনি মধু উঠিল কাদিয়া /

কহিল, “আমার তরে বাবা আনিয়াছে ঘরে
শুধু এক ছিটের কাপড় |”

শুনি রায়মহাশয় হাসিয়। মধুরে কয়,
“সেজন্য ভাবনা কী বা তোর ।

ছেলেরে ডাকিয়া চুপি কহিলেন, “ওরে গুপি,
তোর জাম! দে তুই মধুরে।”

গুপির সে-জাম। পেয়ে মধু ঘরে যায় ধেয়ে,
হাসি আর মুখে নাহি ধরে ।

বুক ফুলাইয়া চলে সবারে ডাকিয়া বলে
“দেখে। কাকা, দেখো চেয়ে মামা,
ওই আমাদের বিধু ছিট পরিয়াছে শুধু,
প মোর গায়ে সাটিনের জামা ”

মা শুনি কহেন আসি লাজে অশ্রজলে ভাসি
কপালে করিয়। করাঘাত-_

“হই হুঃখী হই দীন কাহারো রাখি না খণ,
কারো কাছে পাতি নাই হাত ।

তুমি আমাদেরি ছেলে ভিক্ষা লয়ে অবহেলে
অহংকার করো ধেয়ে ধেয়ে।
ছেড়া ধুতি আপনার ঢের বেশি দাম তার

ভিক্ষা-করা সাটিনের চেয়ে।

আয় বিধুঃ আয় বুকে চুমো খাই টাদমুখে
তোর সাজ সব চেয়ে ভালো ।
দরিদ্র ছেলের দেহে দরিদ্র বাপের স্পেহে

ছিটের জামাটি করে আলো ”

Short Poems by Rabindranath Tagore

Short Poems by Rabindranath Tagore

সূর্য ও ফুল

পরিপূর্ণ মহিমার আগ্েয় কুসুম
স্র্ধ ধায় লভিবারে বিশ্রামের ঘুম ।
ভাঙা এক ভিত্তি-পরে ফুল শুভ্রবাস,
চারিদিকে শুভ্রদূল করিয়া বিকাশ
মাথা তুলে চেয়ে দেখে স্নীল বিমানে
আমর আলোকময় তপনের পারন।
ছোটো মাথা ছুলাইয়া কহে ফুল গাছে-_
“লাবণ্য-কিরণ-ছট। আমারো তো। আছে ॥

বিসর্জন (bisorjon)

যে তোরে বাসেরে ভালো, তারে ভালোবেসে বাছা,

         চিরকাল সুখে তুই রোস্‌।

বিদায়! মোদের ঘরে রতন আছিলি তুই,

          এখন তাহারি তুই হোস্‌।

আমাদের আশীর্বাদ নিয়ে তুই যা রে

এক পরিবার হতে অন্য পরিবারে।

সুখ শান্তি নিয়ে যাস্‌ তোর পাছে পাছে,

দুঃখ জ্বালা রেখে যাস্‌ আমাদের কাছে।

হেথা রাখিতেছি ধরে, সেথা চাহিতেছে তোরে,

         দেরী হ’ল, যা’ তাদের কাছে।

প্রাণের বাছাটি মোর, লক্ষ্মীর প্রতিমা তুই,

          দুইটি কর্তব্য তোর আছে।

একটু বিলাপ যাস আমাদের দিয়ে,

তাহাদের তরে আশা যাস সাথে নিয়ে;

এক বিন্দু অশ্রু দিস আমাদের তরে,

হাসিটি লইয়া যাস তাহাদের ঘরে।

Short Poems by Rabindranath Tagore

তারা ও আঁখি (tara o akhi)

কাল সন্ধ্যাকালে ধীরে সন্ধ্যার বাতাস

বহিয়া আনিতেছিল ফুলের সুবাস।

রাত্রি হ’ল, আঁধারের ঘনীভূত ছায়ে

পাখিগুলি একে একে পড়িল ঘুমায়ে।

প্রফুল্ল বসন্ত ছিল ঘেরি চারি ধার

আছিল প্রফুল্লতর যৌবন তোমার,

তারকা হাসিতেছিল আকাশের মেয়ে,

ও আঁখি হাসিতেছিল তাহাদের চেয়ে।

দুজনে কহিতেছিনু কথা কানে কানে,

হৃদয় গাহিতেছিল মিষ্টতম তানে।

রজনী দেখিনু অতি পবিত্র বিমল,

ও মুখ দেখিনু অতি সুন্দর উজ্জ্বল।

সোনার তারকাদের ডেকে ধীরে ধীরে,

কহিনু, “সমস্ত স্বর্গ ঢাকলো এর শিরে!”

বলিনু আঁখিরে তব “ওগো আঁখি-তারা,

ঢালো গো আমার পরে প্রণয়ের ধারা।”

ছুটি (chhuti)

দাও-না ছুটি,

               কেমন করে বুঝিয়ে বলি

                   কোন্‌খানে।

        যেখানে ওই শিরীষবনের গন্ধপথে

                   মৌমাছিদের কাঁপছে ডানা সারাবেলা।

        যেখানেতে মেঘ-ভাসা ওই সুদূরতা,

               জলের প্রলাপ যেখানে প্রাণ উদাস করে

সন্ধ্যাতারা ওঠার মুখে,

    যেখানে সব প্রশ্ন গেছে থেমে–

        শূন্য ঘরে অতীত স্মৃতি গুন্‌গুনিয়ে

               ঘুম ভাঙিয়ে রাখে না আর বাদলরাতে।

           যেখানে এই মন

        গোরুচরা মাঠের মধ্যে স্তব্ধ বটের মতো

           গাঁয়ে-চলা পথের পাশে।

         কেউ বা এসে প্রহরখানেক বসে তলায়,

পা ছড়িয়ে কেউ বা বাজায় বাঁশি,

    নববধূর পাল্‌কিখানা নামিয়ে রাখে

           ক্লান্ত দুই পহরে;

        কৃষ্ণ-একাদশীর রাতে

    ছায়ার সঙ্গে ঝিল্লিরবে জড়িয়ে পড়ে

          চাঁদের শীর্ণ আলো।

যাওয়া-আসার স্রোত বহে যায় দিনে রাতে–

ধরে-রাখার নাই কোনো আগ্রহ,

    দূরে রাখার নাই তো অভিমান।

        রাতের তারা স্বপ্নপ্রদীপখানি

           ভোরের আলোয় ভাসিয়ে দিয়ে

               যায় চলে, তার দেয় না ঠিকানা।

अटल बिहारी वाजपेई की प्रसिद्ध कविताएँ

raateralo.com

Leave a Comment