Popular Quotes of Bengali Novels l বাংলা উপন্যাসের জনপ্রিয় উক্তি 2024

By raateralo.com

Updated on:

Popular Quotes of Bengali Novels l বাংলা উপন্যাসের জনপ্রিয় উক্তি 2024

Popular Quotes of Bengali Novels: বাংলা সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারে অগণিত উপন্যাস রয়েছে, যেগুলো আমাদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছে। সেইসব উপন্যাসের মধ্য থেকে অনেক উক্তি আমাদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে প্রেরণা দেয়, আমাদের ভাবায় এবং কখনো কখনো আমাদের দুঃখ-ব্যথা ভুলিয়ে রাখে।

আজকের এই ব্লগে আমরা সেইসব জনপ্রিয় উক্তির সন্ধানে বেরিয়েছি, যা বাংলা উপন্যাসকে করেছে অমর, আর আমাদের জীবনে এনেছে একটি নতুন অর্থ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও অনেক মহান লেখকের অমর সৃষ্টি থেকে তুলে ধরবো কিছু অমূল্য রত্ন।

চলুন, একবার ফিরে দেখা যাক সেই মনোমুগ্ধকর উক্তিগুলো, যা আমাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলিকে প্রকাশ করে এবং আমাদের চিন্তার জগতে একটি নতুন আলোর সঞ্চার করে।

১. বিজ্ঞজনেরা বলে কখনও কাউকে ভালবাসলে তাকে বিয়ে করো না । ভালবাসা হল বেনারসী শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।

-সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)

২.

মৃত্যু মুক্তি দেয় না যাহাকে

প্রেম তার মহামুক্তি।—নতুন শরীর

মুক্তি নয়, মুক্তির আভাষ।

-মানিক বন্দোপাধ্যায়(দিবারাত্রির কাব্য)

৩.

“যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে,

এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়!

কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি

বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল

ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন।

পূর্বেরটা ব্যথা দেয়।

কিন্তু শেষেরটা ব্যথাও দেয়, অপমান ও করে।”

___শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন)

৪.

মনে পড়বে কেন?

যে সবসময় মন জুড়ে থাকে তাকে বাহিরে থেকে মনে পড়বে কেন?

____সমরেশ মজুমদার

৫.

‘দুঃখের সান্ত্বনা যে ঈশ্বর কোথায় কত

জায়গায় রেখেছেন তা সব সময় জানতে

পারি নে বলেই আমরা কষ্ট পাই।”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (গোরা)

৬.

পৃথিবীতে সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস আমরা যাহা কিছু পাই তাহা বিনামূল্যেই পাইয়া থাকি , তাহার জন্য দরদস্তুর করিতে হয় না । মূল্য চুকাইতে হয় না বলিয়াই জিনিসটা যে কত বড়ো তাহা আমরা সম্পূর্ণ বুঝিতেই পারি না”

-রবিঠাকুর (পরিচয়/ ভগিনী নিবেদিতা)

৭.

মানুষ ‘ঘর ঘর’ করে গলা শুকায়। একখানা ঘর আর কতখানিই বা আশ্রয় দেয় মানুষকে, যদি না ঘরের লোক আপন হয়। -শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

৮.

একটা কথা বলো অপু। সাজগোজ করে যদি বেরোও তাহলে কি আজকাল পুরুষের এডমিরেশন পাওনা? দু-চার জোড়া মুগ্ধ চোখ কি তোমার দিকে চেয়ে থাকে না?

অপর্ণা রাগ করার চেস্টা করলো।ভ্রুকুটি করেও হেসে ফেলে বলে, আমি আজকাল সাজি নাকি?পুরুষদের লক্ষ করতেও আমার বয়ে গেছে।

একটু লক্ষ কোরো অপু। যদি দেখ যে, পুরুষের চোখ এখনো তোমাকে লক্ষ করছে তাহলে নিশ্চিতভাবে জেনো, তোমার যৌবন যায়নি।

যে পুরুষটিকে নিয়ে আছি সে লক্ষ করলেই হল। আর আমার কাউকে চাই না।

আমার চোখ তো ভুল চোখ। সেই যে ট্রামগাড়িতে ভয়ে আধমরা যুবতীটিকে দেখেছিলাম, চারদিকে টিয়ার গ্যাস,গুলি আর ট্রামের মধ্যে পড়ে থাকা লাশের ভয়ংকর অবস্থায়, দেখেই আমার ভেতরে যে একটা উথাল-পাথাল হয়েছিল, আজও তোমাকে দেখলে ঠিক সেরকমটি হয়। কই, পাল্টাওনি তো তুমি! আমার চোখে তোমার বয়স বাড়ে না, যৌবন যায় না। তাই বলছি আমার চোখ হল ভুল চোখ।

-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (পার্থিব)

৯.

এই যে আমি তোমাকে দেখছি, দেখে মন ভরে যাচ্ছে, না দেখতে পেলে বুক টনটন করে, বেঁচে থাকাটা বিবর্ণ হয়ে যায়।

এই অনুভূতি কি ভালোবাসা নয়?

-সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)

১০.

যা ভালো বলে মনে হয়, জীবন যাতে

পরিপূর্ণ মনে হয়–

তা কেন দুদিনও

টেকে না? অমৃত বলে যা মনে হয়, তা থেকে

বিষ ওঠে কেন?

-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

১১.

বাইরের পৃথিবীতে আমরা শুধু আপন মনের প্রতিবিম্বটাই দেখি, দেখতে চাই। তাই সঠিক দেখাটা কদাচিৎ সম্ভব হয় জীবনে।

-শহীদুল্লাহ কায়সার (সংশপ্তক)

১২.

আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত আর ছোট ছোট দুঃখ কষ্টগুলোকে অযথা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখি আমরা। আর সত্যিকার বড় বড় দুঃখ যা তোর আমার ব্যক্তিগত কষ্ট বা দুঃখ নয়, যা বিশাল মানব গোষ্ঠীরই দুঃখ সে সব হয় আমাদের স্পর্শ করে না, অথবা কিছুক্ষণের জন্য ব্যথিত হয়েও ভুলে যাই সহজে।

-শহীদুল্লাহ কায়সার (সংশপ্তক)

১৩.

ছুরি দিয়ে কেটে-কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও, জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে, হাসি আছে, অশ্রু আছে।

-জহির রায়হান (বরফ গলা নদী)

১৪.

মন খারাপ মানুষের কখন লাগে আর কেন লাগে- তার কি কোনো নিয়ম আছে? কিছুর মধ্যে কিছু না- সব ঠিক- সব ভালো… হঠাৎ শ্রীযুক্ত মন খারাপ এসে হাজির হলেন, যেন আর নড়বেন না এখান থেকে। তা লোক কিন্তু উনি তত খারাপ নন, মানে- মন খারাপ হওয়াটাই যে খারাপ তা কিন্তু ঠিক না- আমার তো বেশ ভালোই লাগে একেক সময়।

… আর মন খারাপের ভালো লাগাটা বলতে হয়- মানে, বলতে চায় মানুষ, কিন্তু বলতে পারে না। আর পারে না বলেই কি গান বানায়, কবিতা লেখে?

– বুদ্ধদেব বসু (তিথিডোর)

১৫.

কুমুদ বলিল, কী জানো জয়া, সবাই নিজেকে ভোলায়। খিদে-তেষ্টা পেলে তা মেটানো, ঘুম পেলে ঘুমানো, এসব ছাড়া জীবনটা আমাদের বানানো, নিজেকে ভোলানোর জন্য ছাড়া বানানের কষ্ট কে স্বীকার করে? বেশিরভাগ মানুষের এটা বুঝবারও ক্ষমতা থাকে না, সারাজীবনে ভুলও কখনও ভাঙে না। বুঝতেই যদি না পারা যায়, ভুল আর তবে কিসের ভুল? কেউ কেউ টের পেয়ে যায়, তাদের হয় কষ্ট। জীবনকে যারা বুঝে, বিশ্লেষণ করে বাঁচতে চায় এইজন্য তারা বড় দুঃখী। বড় যা-কিছু আঁকড়ে ধরতে চায় দেখতে পায় তা-ই ভুয়ো। এইজন্য এই ধরনের লোকের মনে জীবন থেকে বড় কিছু প্রত্যাশা থাকা বড় খারাপ-যতবড় প্রত্যাশা থাকে ততবড় দুঃখ পায়।

-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (পুতুল নাচের ইতিকথা)

১৬.

এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়।

জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা..

-মাহমুদুল হক (কালো বরফ)

১৭.

সকলের ভেতরেই বোধহয় এইরকম আরো একটা আলাদা সংসার পাতা থাকে, সেখানে সে তার খেলার পুতুলের জন্য নিজের যথাসর্বস্ব দ্যায়, এক টুকরো ভাঙা কাচের জন্য বুক ভরে কাঁদে, নিছক কাগজের নৌকা ডুবে গেলে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়…

-মাহমুদুল হক (কালো বরফ)

১৮.

স্বর্গে বাস করেই মানুষ স্বর্গের জন্য কাঁদে, নরকে বাস করে অস্থির থাকে নরকের ভয়ে।

-মাহমুদুল হক (কালো বরফ)

১৯.

আসলে জীবন মানেই শৈশব; জীবনভর মানুষ এই একটা ঐশ্বর্যই ভাঙ্গিয়ে খায়, আর কোনো পুঁজিপাট্টা নেই তার।

-মাহমুদুল হক (জীবন আমার বোন)

২০.

“স্বাধীনতার জন্য যোগ্য হতে হবে তারপর বাইরের স্বাধীনতা আদায় করতে হবে।”

-সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)

২১.

ভালোবাসা হলো সকালের মতো। স্বার্থর লম্বা ছায়া সূর্য ওঠা মাত্র ছোট হতে আরম্ভ করে। সূর্য যখন মাথার ওপর তখন ছায়া পায়ের তলায়। ভালোবাসার পূর্ণতা তখনই হয়ে যায়। তারপর যত বেলা গড়ায়, ছায়া লম্বা হয়, তত ভালোবাসার আয়ু ফুরিয়ে আসে। পৃথিবীতে সবকিছুর মত ভালোবাসার আয়ু বড় ক্ষণস্থায়ী। ভালোবাসাহীন সম্পর্ক বয়ে চলা যে কি কষ্টকর‍!

-সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)

২২.

কেননা চিঠিযুগ শেষ য়ে গেছে অনেক আগেই, থেমে গেছে কুউউ ঝিকঝিক।

-ইমতিয়ার শামীম ( আমাদের চিঠিযুগ কুউ ঝিকঝিক

২৩.

যে জীবন তাঁর নয়, যে জীবন তাঁর কখনো হবে না তাকে সিংহাসনে বসিয়ে মানুষ মাঝে মাঝে এরকম ধূলায় পরে কাঁদে।

-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (মানবজমিন)

২৪.

কত সুন্দর মুখ, কত সুন্দর শরীর, কত প্রতিভা,

কতমেধা, কত অতৃপ্ত বাসনা, কত লোভ, কত

আসক্তি মৃত্যুতে শেষ হয়ে যায়।

– শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (রূপ)

২৫.

“আজ যদি স্মৃতিভ্রষ্ট হই, কি করে বুঝবো যে তুমি রিয়া? বস্তুর চতুর্থ মাত্রা হলো সময়। আইনস্টাইন বলেছিলেন। কিন্তু বস্তুর আরো কত মাত্রা আছে।পঞ্চম মাত্রা হলো স্মৃতি, নইলে বুঝবো কি করে কোনটা কী? ষষ্ঠ মাত্রা হলো ইমাজিনেশন, পারসোন্যাল ভিশন। চারদিকে এই যে এত বস্তুপুঞ্জ দেখছো, সে সবই আমাদের কল্পনার রঙে রঙিন। নইলে কিছুই নয়।”

-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (পার্থিব)

২৬.

“বস্তুর পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম মাত্রাতেই থেমে থাকে না তার প্রকৃত পরিচয়। আমাদের অজ্ঞাত আরো বহু মাত্রা হয়তো রয়ে গেছে। আমরা কতটুকু জানি? অবিরত নানা মতবাদ, নানা দর্শন মানুষকে আবিল করে দেয়। মানুষের মন সবসময়েই জারিত হচ্ছে অন্যের ভাবনাচিন্তার প্রভাবে। সে যা দেখে, যা বোধ করে, যা বোঝে সবই ওই সব মতবাদ ও প্রভাবের দ্বারা চালিত হয়। যদি মানুষের মন রিক্ত থাকতো, যদি হাঁসের পালকের মতো ঝেড়ে ফেলতে পারতো সব প্রভাব তবে কি সে বস্তুর স্বরূপকে ধরতে পারতো? আমি তাই প্রথম মানবের কথা ভাবি৷ একমাত্র সে-ই অনাবিল চোখ ও মন নিয়ে দেখেছিলো এই বস্তুবিশ্বকে। আমি আজ ঠিক তার মতো মন আর চোখ চাই।”

-শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (পার্থিব)

২৭.

সব মানুষের মধ্যে একটি খোকা থাকে যে মনের কবিত্ব,মনের কল্পনা,মনের সৃষ্টিছাড়া অবাস্তবতা,মনের পাগলামিকে লইয়া সময়ে-অসময়ে এমনিভাবে খেলা করিতে ভালবাসে।

-মানিক বন্দোপাধ্যায় (পদ্মা নদীর মাঝি)

২৮.

মানুষ কি চায় — উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ভোঁতা — এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো — রস ঢুকিতে পায় না।

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (আরণ্যক)

২৯.

জীবন বড় মধুময় শুধু এইজন্য যে, এই মাধুর্যের অনেকটাই স্বপ্ন ও কল্পনা দিয়া গড়া। হোক না স্বপ্ন মিথ্যা, কল্পনা বাস্তবতার লেশশূন্য; নাই বা থাকিল সবসময় তাহাদের পিছনে স্বার্থকতা; তাহারাই যে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তাহারা আসুক, জীবনে অক্ষয় হোক তাহাদের আসন; তুচ্ছ স্বার্থকতা, তুচ্ছ লাভ।

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (পথের পাঁচালী)

৩০.

চাপা পড়ে যাওয়া আর ভুলে যাওয়া এক জিনিস নয়। মানুষের মনের মন্দিরে অনেক কক্ষ, এক এক কক্ষে এক এক প্রিয় অতিথির বাস। সে কক্ষ সেই অতিথির হাসিকান্নার সৌরভে ভরা, আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারে না। প্রেমের এ অতিথিশালা বড় অদ্ভুত, অতিথি যখন দূরে থাকে তখনও যে কক্ষ সে একবার অধিকার করেছে সে তারই এবং তারই চিরকাল। আর কেউ সে কক্ষে কোনো দিন কোনো কালে ঢুকতে পারে না। সে যদি আর ফিরেও না আসে কখনো, চিরদিনের জন্যই চলে যায় এবং জানিয়ে দিয়েও যায় যে সে ইহজীবনের মতই চলে যাচ্ছে–তখন তার সকল স্মৃতির সৌরভ সুদ্ধ সে ঘরের কবাট বন্ধ করে দেওয়া হয়–তারই নাম লেখা থাকে সে দোরের বাইরে। তার নামেই উৎসর্গীকৃত সে ঘর আর-কারো অধিকার থাকে না দখল করবার।

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (দেবযান)

৩১.

ছাদের আলসের দিব্যি চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় অবস্থায় সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেয়ে স্ফটিক প্রস্তর হয়ে ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো।

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (চাঁদের পাহাড়)

৩২.

যদিও তুমি আমাকে অনুক্ষণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো, আমি তোমাকে অমৃত করে দিলাম। আমার মনের হিজলের শাখা থেকে মুক্ত করে আমার একান্ত পাখিকে আমি চিরকালের, আকাশের করে দিলাম।

-বুদ্ধদেব গুহ (হলুদ বসন্ত)

৩৩.

মৃত্যুকে কে চিনতে পারে, গরীয়সী মৃত্যুমাতাকে? পথপ্রদর্শক মায়ামৃগের মতো জীবনের পথে পথে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে সে, অপূর্ব রহস্যভরা তার অবগুণ্ঠন কখনো খোলে শিশুর কাছে, কখনো বৃদ্ধের কাছে…তেলাকুচো ফুলের দুলুনিতে অনন্তের সে সুর কানে আসে…কানে আসে বনৌষধির কটুতিক্ত সুঘ্রাণে, প্রথম হেমন্তে বা শেষ শরতে। বর্ষার দিনে এই ইছামতীর কূলে কূলে ভরা ঢলঢল রূপে সেই অজানা মহাসমুদ্রের তীরহীন অসীমতার স্বপ্ন দেখতে পায় কেউ কেউ, কত যাওয়া-আসার অতীত ইতিহাস মাখানো ঐ সব মাঠ, ঐ সব নির্জন ভিটের ঢিপি–কত লুপ্ত হয়ে যাওয়া মায়ের হাসি ওতে অদৃশ্য রেখায় আঁকা। আকাশের প্রথম তারাটি তার খবর রাখে হয়তো…

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (ইছামতি)

৩৪.

দুঃখকে বাদ দিয়ে জগতে সুখ নেই–প্রকৃত সুখের অবস্থা গভীর দুঃখের পরে… দুঃখের পূর্বের সুখ অগভীর, তরল, খেলো হয়ে পড়ে। দুঃখের পরে যে সুখ–তার নির্মল ধারায় আত্মার স্নানযাত্রা নিষ্পন্ন হয়, জীবনের প্রকৃত আস্বাদ মিলিয়ে দেয়। জীবনকে যারা দুঃখময় বলেছে, তারা জীবনের কিছুই জানে না, জগৎটাকে দুঃখের মনে করা নাস্তিকতা। জগৎ হোলো সেই আনন্দময়ের বিলাস-বিভূতি। তবে দেখার মতো মন ও চোখ দরকার।

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (ইছামতি)

৩৫.

আনন্দ আত্মার ধর্ম, মন যত আত্মার কাছে যাবে, তত সে বেশি আনন্দ পাবে–আত্মার থেকে দূরে যত যাবে, বিষয়ের দিকে যাবে, তত দুঃখ পাবে। বাইরে কোথাও আনন্দ নেই, আনন্দ শান্তির উৎস রয়েছে মানুষের নিজের মধ্যে। মানুষ চেনে না, বাইরে ছোটে। নাভিগন্ধে মত্ত মৃগ ছুটে ফেরে গন্ধ অন্বেষণে। তারা সুখ পায় না।

-বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (ইছামতি)

৩৬.

অমিত বলে, “মেয়ে বিয়ে করত সেই পুরাকালে, লক্ষণ মিলিয়ে। আমি চাই পাত্রী আপন পরিচয়েই যার পরিচয়, জগতে যে অদ্বিতীয়।”

সিসি বলে, “তোমার ঘরে এলেই তুমি হবে প্রথম, সে হবে দ্বিতীয়, তোমার পরিচয়েই হবে তার পরিচয়।”

অমিত বলে, “আমি মনে মনে যে মেয়ের ব্যর্থ প্রত্যাশায় ঘটকালি করি সে গরঠিকানা মেয়ে। প্রায়ই সে ঘর পর্যন্ত এসে পৌঁছয় না। সে আকাশ থেকে পড়ন্ত তারা, হৃদয়ের বায়ুমণ্ডল ছুঁতে-না-ছুঁতেই জ্বলে ওঠে, বাতাসে যায় মিলিয়ে, বাস্তুঘরের মাটি পর্যন্ত আসা ঘটেই ওঠে না।”

-শেষের কবিতা (রবিঠাকুর)

৩৭.

ছেঁড়া পদ্ম আর ভাঙা বাঁশি। বাঁশির সুরেই কি পদ্মের জন্ম হয়? একজোড়া পদ্ম তবে ভেসে যায় দরিয়ায়।এক বুকঝিম করা ভালোবাসা নিয়ে পানি বহে যায়, দরিয়ায়। দরিয়ায় সবকিছু ডুবে যায়, মানুষের মনে কিন্তু কিছুই ডোবে না। সব ভেসে রয়।

-সৈয়দ শামসুল হক (বুকঝিম এক ভালোবাসা)

৩৮.

চোখ খুললেই কি আর জগত দেখা যায়? চোখ বন্ধ করলেই কি দেখা যায় অতীত?

-সৈয়দ শামসুল হক (বুকঝিম এক ভালোবাসা)

৩৯.

কাফনের কাপড়ে কর্পূর পানি ছিটিয়ে দিল। সাথে একটু গোলাপ নির্যাস। এ যেন পাক হয়ে সাফ হয়ে গন্ধ মেখে নতুন পোশাকে কোনো এক আনন্দ যাত্রা। অথবা এ এক অন্তিম আকুতি মানুষের আজন্ম সৌন্দর্য কামনার। সুন্দর হয়ে পবিত্র হয়ে, সারাক্ষণ খোসবু দিয়ে নিজেকে ঘিরে রাখা, এমন করে যে বাঁচা সে কয়টি মানুষের ভাগ্যে ঘটে? হয়ত তাই সবারই আকাঙ্খা শেষ যাত্রার সময় পৃথিবীর শেষ দিনটিতে সব কাদা কালি ধুয়ে মুছে আতর মেখে নতুন পোশাকে ওরা সাজুক। সেজে গুঁজে যাত্রা করুক।

-শহীদুল্লাহ কায়সার (সংশপ্তক)

৪০.

সোহিনী, তুমি আমার কাছে অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা। অর্ধেক কষ্ট, অর্ধেক সুখ। অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী। তোমাকে নিয়ে আমি কি করবো! তোমার টানা টানা কালো চোখের অতল চাউনী আমাকে আকুল করে। তোমার মুখের দীপ্তি মেঘ-ভাঙা চাঁদের হঠাৎ ছড়িয়ে-যাওয়া জোছনার মতো আমার মনের গভীরে সুবর্ণ তরঙ্গ জাগিয়ে তোলে। দিঘল চিকন কালো কেশরাশি যখন তুমি আলুলায়িত করো,হাওয়া-লাগা চারাগাছের মতো আমি কেমন আন্দোলিত হয়ে উঠি।”

-আহমদ ছফা (অর্ধেক নারী,অর্ধেক ঈশ্বরী)

৪১.

মাটির মানুষের জগতে হিংস্রতা এবং হানাহানি দেখে আকাশের পাখির জগতে আমি আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেও হিংস্রতা এবং জাতিবৈরিতার প্রকোপ দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং মানুষের মতো কর্তব্য পালন করার জন্য আমার মানুষের কাছে ফিরে না গিয়ে উপায় কী? আমি বৃক্ষ নই, পাখি নই, মানুষ। ভালো হোক, মন্দ হোক, আনন্দের হোক, বেদনার হোক আমাকে মানুষের মতো মানুষের সমাজে মনুষ্যজীবনই যাপন করতে হবে। মনুষ্যলীলার করুণ রঙ্গভূমিতে আমাকে নেমে আসতে হবে। তথাপি আমার জীবন আমি একেবারে অর্থহীন মনে করিনে। আমার প্রাণে পুষ্পের আঘ্রাণ লেগেছে, জীবনের একেবারে মধ্যবিন্দুতে বৃক্ষজীবনের চলা অচলার ছন্দদোলা গভীরভাবে বেজেছে, বিহঙ্গজীবনের গতিমান স্পন্দন বারংবার আমার চিন্তা-চেতনা অসীমের অভিমুখে ধাবমান করেছে। এই পুষ্প, এই বৃক্ষ, এই তরুলতা, এই বিহঙ্গ আমার জীবন এমন কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছে, আমার কোন একাকীত্ব, কোন বিচ্ছিন্নতা আমি অনুভব করতে পারিনে। সকলে আমার মধ্যে আছে, আমি সকলের মধ্যে রয়েছি।

-আহমদ ছফা (পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ)

৪২.

নাম ডাকতে ডাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন ডেপুটি জেলার সাহেব। এক সময়ে বিরক্তির সাথে বললেন, উহ্‌ এত ছেলেকে জায়গা দেবো কোথায়। জেলখানা তো এমনিতে ভর্তি হয়ে আছে।

ওর কথা শুনে কবি রসুল চিৎকার করে উঠলো, জেলখানা আরো বাড়ান সাহেব। এত ছোট জেলখানায় হবে না।

আর একজন বললো, এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো।

-আরেক ফাল্গুন (জহির রায়হান)

Famous quotes from Bengali novels l বাংলা উপন্যাসের প্রেরণাদায়ী উক্তি

★“আমি যে অধিকার ওকে দিতে পারিনি, সে অধিকার আমি উপভোগ করি কোন সুখে?? ”

-মেমসাহেব(নিমাই ভট্টাচার্য)

★“যে তামাশা করিয়া উত্তর দিতে পারেনা, সে তো অন্তত হাসিমুখে সেটা উপভোগ করিতেও পারে!! ”

-গৃহদাহ(শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

★“একটা সত্যকার অপরাধ অনেক মিথ্যা অপরাধের বোঝা বয়ে আনে।”

-গৃহদাহ(শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

★“মেয়েদের মানসিক প্রস্তুতি শুরু হয় ছেলেদেরও আগে। তারা তাদের কচি চোখেও পৃথিবীর নোংরামি দেখতে পায়। সে নোংরামির বড় শিকার তারাই।”

-নন্দিত নরকে(হুমায়ূন আহমেদ)

★“স্মৃতি সে সুখেরই হোক,বেদনারই হোক সবসময়ই করুণ। ”

-নন্দিত নরকে

★“শরীরের সঙ্গে শরীরের পরিচয়ের আগের যে প্রেম সেটার মত ভালো আর কিছু নেই।”

-কোথাও কেউ নেই(হুমায়ূন আহমেদ)

★“আহ কি চমৎকার শব্দ-আমি আছি। আমি আছির মতো সুন্দর আর কোনো শব্দ কি বাংলা ভাষায় আছে?”

-কোথাও কেউ নেই।

★“যাহা জটিল ও দুর্বোধ্য,তাহা বিশদভাবে পরিষ্কার করিয়া বুঝিয়ে বলিবার সময় ও সুবিধা না হওয়া পর্যন্ত একেবারে না বলাই ভাল।”

-চরিত্রহীন(শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

  • যাকে বাধা মেনে চলতে হবে , সে যদি বুদ্ধিকে মেনে চলতে চায় তবে ঠোকর খেয়ে খেয়ে তার কপাল ভাঙবেই। (স্ত্রীর পত্র -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
  • দুই বৎসরের পড়াশুনার পরীক্ষা কেমন করে লােকের একটা রাতের অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়।(চরিত্রহীন-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • এ শিক্ষাপ্রণালী কলের প্রণালী , ইহাতে মন খাটে না , ছেলেরা তােতাপাখি বনিয়া যায় । (শিক্ষা-সংস্কার-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
  • শিক্ষা বিদ্যা বুদ্ধি জ্ঞান উন্নতি —যা কিছু ,সব সুখের জন্য যেমন করেই দেখ না কেন,নিজের সুখ বাড়ানাে ছাড়া এসকল আর কিছুই নয়। (দেবদাস-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় )
  • আমার সঙ্গে যাহার বােঝাপড়ার কোন সম্পর্ক নাই তাহাকে বুঝিতে চেষ্টা করাই ধষ্টতা । কিন্তু পৃথিবীতে দৈবাৎ এমন এক একটি মানুষ মেলে , দৃষ্টিপাত মাত্রই যাহার সঙ্গে সমন্ধ স্থির হইয়া যায় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( নৌকাডুবি )
  • যাহা জটিল ও দুর্বোধ্য , তাহা বিশদভাবে পরিষ্কার করিয়া বুঝাইয়া বলিবার সময় ও সুবিধা না হওয়া পর্যন্ত একেবারে না বলাই ভাল। ইহাতে অধিকাংশ সময়ে সুফলের পরিবর্তে কুফলই ফলে।(চরিত্রহীন-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • হৃদয়ের জগতেও একটা বসন্তের হাওয়া আছে : সে কোন্ স্বর্গ থেকে আসে,গলির মােড় থেকে আসে না । (স্ত্রীর পত্র – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
  • মানুষ এমনি দুঃসময়ের মাঝে আশা – নিরাশার কূলকিনারা যখন দেখিতে পায় না , তখন দুর্বল মন বড় ভয়ে ভয়ে আশার দিকটাই চাপিয়া ধরিয়া থাকে । যেটা হইলে তাহার মঙ্গল , সেইটাই আশা করে । ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই দিক পানেই নিতান্ত উৎসুক নয়নে চাহিয়া দেখিতে চাহে ।( দেবদাস – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • অনাবশ্যক আবর্জনা ঘরের আশেপাশে অনায়াসে স্থান পায় , কেননা মানুষ তাকে ভুলে যায় (স্ত্রীর পত্র – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
  • অনাদর-জিনিসটাই ছাইয়ের মতাে,সে ছাই আগুনকে হয়তাে ভিতরে ভিতরে জমিয়ে রাখে কিন্তু বাইরে থেকে তার তাপটাকে বুঝতে দেয় না।আত্মসন্মান যখন কমে যায় তখন অনাদরকে তাে অন্যায্য বলে মনে হয় না। সেইজন্যে তার বেদনা নেই। (স্ত্রীর পত্র -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
  • সতর্ক এবং অভিজ্ঞ লােকদিগের স্বভাব এই যে , তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোন দ্রব্যের দোষগুণ সম্বন্ধে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে না — সবটুকুর বিচার করিয়া , সবটুকুর ধারণা করিয়া লয় না ; দুটো দিক দেখিয়া চারিদিকের কথা কহে না । কিন্তু আর একরকমের লােক আছে , যাহারা ঠিক ইহার উলটা । কোন জিনিস বেশীক্ষণ ধরিয়া চিন্তা করার ধৈর্য । ইহাদের নাই , কোনকিছু হাতে পড়িবামাত্র স্থির করিয়া ফেলে — ইহা ভাল কিংবা মন্দ ; তলাইয়া দেখিবার পরিশ্রমটুকু ইহারা বিশ্বাসের জোরে চালাইয়া লয় । (দেবদাস-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • টাকা রােজকার —আর উন্নতি এক নয়।(পন্ডিতমশাই-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • মিথ্যে তিলকে তাল করে কষ্ট পাবেন না । (চরিত্রহীন-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • সকল লােক যে জগতে কাজ করিতে পারে না তাহা নহে , বরঞ্চ অনেক সময় বেশী কাজ করে।অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন হইলে ইহাদিগকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে দেখিতে পাওয়া যায় । আর না হইলে অবনতির গভীর কন্দরে চিরদিনের জন্য শুইয়া পড়ে ; আর উঠিতে পারে না , আর বসিতে পারে না , আর আলােকের পানে চাহিয়া দেখে না ; নিশ্চল , মৃত জড়পিণ্ডের মতাে পড়িয়া থাকে। (দেবদাস- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • জোর করিয়ে প্রতিজ্ঞা করানটা কি ভাল , না , তাতে বিশেষ লাভ আছে ? আজকার প্রতিজ্ঞা কাল হয়ত থাকবে না ।(দেবদাস-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • অখ্যাতি করতেও তােমরা,সুখ্যাতি করতেও তােমরা।তােমাদের যা বলবার —অনায়াসে বল; কিন্তু তারা তা পারে না।নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে।পারে না ; পারলেও , তা সবাই বােঝে না।কেননা , বড় অস্পষ্ট হয় তােমাদের মুখের কাছে চাপা পড়ে যায়।তার পরে অখ্যাতিটাই লােকের মুখে মুখে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।(দেবদাস-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • যাহার আশা আছে , সে একরকম করিয়া ভাবে; আর যাহার আশা নাই , সে অন্যরকম ভাবে । পূর্বোক্ত ভাবনার মধ্যে সজীবতা আছে , সুখ আছে , তৃপ্তি আছে , দুঃখ আছে , উৎকণ্ঠা আছে ; তাই মানুষকে শ্রান্ত করিয়া আনে — বেশীক্ষণ ভাবিতে পারে না । কিন্তু আশাহীনের সুখ নাই , দুঃখ নাই , উৎকণ্ঠা নাই , অথচ তৃপ্তি আছে । (দেবদাস-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
  • ভুল হইতে , বেসুর হইতে , অক্ষমতা হইতে আনন্দ পাইবার শক্তি ভালােবাসারই আছে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( নৌকা ডুবি )

  1. “এ সংসারে বিশেষ দুঃখ এই যে, মরিবার উপযুক্ত সময়ে কেহ মরে না। অসময়ে সবাই মরে।” -কৃষ্ণকান্তের উইল/বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  2. “যাহাকে ভালবাসি, সে যদি ভালো না বাসে, এমনকি ঘৃণা ও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়, কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। পূর্বের টা ব্যাথাই দেয়, কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমান ও করে। আবার এ ব্যাথার প্রতিকার নাই, এ অপমানের নালিশ নাই। যাহার ভালবাসিবার কথা নহে, সে ভালবাসে না – ইহাতে কাহার ও কি বলিবার থাকে ! তাই, এই না থাকাতে লাঞ্ছনা এত বেশী বাজে – বেদনার হেতু খুঁজিয়া মিলে না বলিয়াই ব্যাখ্যা এমন অসহ্য হইয়া পড়ে।” -চরিত্রহীন/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  3. “যাকে তাকে গছিয়ে দেওয়ার নামই বিবাহ নয় ! মনের মিল না হলে বিবাহ করাই ভুল” -অনুপমার প্রেম/শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  4. “বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সট বুক কি -বলে না -বলে সেটা অবান্তর, জীবনে কাজে লাগে বাজারের গাইড বুক” -দেশে বিদেশে/সৈয়দ মুজতবা আলী
  5. “জ্ঞানীরা বলেন,’একবার ঠকলে ঠকের দোষ, দুইবার ঠকলে তোমার দোষ” -দেশে বিদেশে/সৈয়দ মুজতবা আলী
  6. “স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি, তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয়। নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হবার বিষয়টা কেন যেন তারা ভাবতেই চায় না” -চোখের বালি/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

raateralo.com

Leave a Comment