Raater Alo

Famous Poems by Jibanananda Das 2024 | জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত কবিতা

Famous Poems by Jibanananda Das 2024 জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত কবিতা

Famous Poems by Jibanananda Das 2024: নিঃসন্দেহে জীবনানন্দ দাশ আমাদের কাছে এক অসাধারণ রোমান্টিক কবি হিসেবে পরিচিত, তবে তাঁর সাহিত্যকর্ম শুধুমাত্র রোমান্টিক কবিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি রচনা করেছেন প্রকৃতি, সমাজ, হাস্যরস ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গে সমৃদ্ধ কবিতা। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, সামাজিক বাস্তবতা ও হাসির মেলবন্ধনে তাঁর কবিতা সবসময় আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাঁর কবিতায় গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সুক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে যা পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়।

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও জীবনবোধের গভীরতা, সমাজের বিভিন্ন দিক এবং হাস্যরসের অনন্য মিশ্রণ পাওয়া যায়। তাঁর কবিতায় জীবনের প্রতিটি রূপের স্বরূপ উঠে এসেছে এবং পাঠকদের অন্তরে তিনি বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন। প্রকৃতির মাঝে, সমাজের চলমান ঘটনায় এবং হাসির পরিপূর্ণতায় তাঁর কবিতা আজও প্রাসঙ্গিক ও মনোমুগ্ধকর।

এইসব বিবেচনায়, আমরা তাঁর লেখা সেরা ২০টি কবিতা সংগ্রহ করেছি। যদিও তাঁর সমস্ত কবিতা আমাদের হৃদয়ে অবিচ্ছেদ্যভাবে গাঁথা রয়েছে, এই বিশেষ ২০টি কবিতা তাঁর সৃষ্টির অনন্যতা ও বৈচিত্র্য তুলে ধরেছে। এই সংকলন পাঠকদের জন্য জীবনানন্দ দাশের কবিতার মাধুর্য ও গভীরতাকে আরও নিবিড়ভাবে অনুভব করার সুযোগ করে দেবে।

Famous Poems by Jibanananda Das 2024 | জীবনানন্দ দাশ এর কবিতা

Table of Contents

আবার আসিব ফিরে

-জীবনানন্দ দাশ

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙ্গায়;

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা বায়; – রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে 

আলেয়া

-জীবনানন্দ দাশ

প্রান্তরের পারে তব তিমিরের খেয়া
নীরবে যেতেছে দুলে নিদালি আলেয়া!
-হেথা, গৃহবাতায়নে নিভে গেছে প্রদীপের শিখা,
ঘোমটায় আঁখি ঘেরি রাত্রি-কুমারিকা
চুপে চুপে চলিতেছে বনপথ ধরি!
আকাশের বুকে বুকে কাহাদের মেঘের গাগরী
ডুবে যায় ধীরে ধীরে আঁধার সাগরে!
ঢুলু-ঢুলু তারকার নয়নের পরে
নিশি নেমে আসে গাঢ়-স্বপনঙ্কুল!
শেহালায় ঢাকা শ্যাম বালুকার কূল
বনমালীর সাথে ঘুমায়েছে কবে!
বেণুবনশাখে কোন্‌ পেচকের রবে
চমকিছে নিরালা যামিনী!
পাতাল-নিলয় ছাড়ি কে নাগকামিনী
আঁকাবাঁকা গিরিপথে চলিয়াছে চিত্রা অভিসারিকার প্রায়!
শ্মশানশয্যায়
নেভ-নেভ কোন্‌ চিতা-স্ফুলিঙ্গেরে ঘিরে
ক্ষুধিত আঁধার আসি জমিতেছে ধীরে!
নিদ্রার দেউলমূলে চোখ দুটি মুদে
স্বপ্নের বুদ্‌বুদে


বিলসিছে যবে ক্লান্ত ঘুমন্তের দল-
হে অনল-উন্মুখ, চঞ্চল
উন্নমিত আঁখিদুটি মেলি
সন্তরি চলিছ তুমি রাত্রির কুহেলি
কোন্‌ দূর কামনার পানে!
ঝলমল দিবা অবসান
বধির আঁধারে
কান্তারের দ্বারে
একি তব মৌন নিবেদন!
-দিগভ্রান্ত-দরদী-উন্মন!
পল্লীপসারিণী যবে পণ্যরত্ন হেঁকে গেছে চ’লে
তোমার পিঙ্গল আঁখি ওঠে নি তো জ্বলে
আকাঙ্কার উলঙ্গ উল্লাসে!
জনতায়-নগরীর তোরণের পাশে,
অন্তঃপুরিকার বুকে, মণিসৌধসোপানের তীরে,
মরকত-ইন্দ্রনীল-অয়স্কান- খনির তিমিরে
যাও নি তো কভু তুমি পাথেয় সন্ধানে!
ভাঙা হাটে-ভিজা মাঠে-মরণের পানে
শীত প্রেতপুরে


একা একা মরিতেছ ঘুরে
না জানি কী পিপাসার ক্ষোভে!
আমাদের ব্যর্থতায়, আমাদের সকাতর কামনায় লোভে
মাগিতে আস নি তুমি নিমেষের ঠাঁই!
-অন্ধকার জলাভুমি কঙ্কালের ছাই,
পল্লীকান্তারের ছায়া-তেপান্তর পথের বিস্ময়
নিশীথের দীর্ঘশ্বাসময়
করিয়াছে বিমনা তোমারে!
রাত্রি-পারাবারে
ফিরিতেছ বারম্বার একাকী বিচরি!
হেমন্তের হিম পথ ধরি,
পউষ, আকাশতলে দহি দহি দহি
ছুটিতেছ বিহ্বল বিরহী
কত শত যুগজন্ম বহি!
কারে কবে বেসেছিলে ভালো
হে ফকির, আলেয়ার আলো!
কোন্‌ দূরে অস-মিত যৌবনের স্মৃতি বিমথিয়া
চিত্তে তব জাগিতেছে কবেকার প্রিয়া!
সে কোন্‌ রাত্রির হিমে হয়ে গেছে হারা!
নিয়েছে ভুলায়ে তারে মায়াবী ও নিশিমরু,
আঁধার সাহারা!


আজও তব লোহিত কপোলে
চুম্বন-শোণিমা তার উঠিতেছে জ্ব’লে
অনল-ব্যথায়!
চ’লে যায়-মিলনের লগ্ন চ’লে যায়!
দিকে দিকে ধূমাবাহু যায় তব ছুটি
অন্ধকারে লুটি লুটি লুটি!
ছলাময় আকাশের নিচে
লক্ষ প্রেতবধূদের পিছে
ছুটিয়া চলিছে তব প্রেম-পিপাসার
অগ্নি অভিসার!
বহ্নি-ফেনা নিঙাড়িয়া পাত্র ভরি ভরি,
অনন্ত অঙ্গার দিয়া হৃদয়ের পান্ডুলিপি গড়ি,
উষার বাতাস ভুলি, পলাতকা রাত্রির পিছনে
যুগ যুগ ছুটিতেছ কার অন্বেষণে।

Famous Poems by Jibanananda Das 2024 | জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত কবিতা

আরো পড়ুন: ধূসর পাণ্ডুলিপি – জীবনানন্দ দাশ

আলোপৃথিবী

-জীবনানন্দ দাশ

ঢের দিন বেঁচে থেকে দেখেছি পৃথিবীভরা আলো
তবুও গভীর গ্লানি ছিল কুরুবর্ষে রোমে ট্রয়ে;
উত্তরাধিকার ইতিহাসের হৃদয়ে
বেশি পাপ ক্রমেই ঘনালো।

সে গরল মানুষ ও মনীষীরা এসে
হয়তো বা একদিন ক’রে দেবে ক্ষয়;
আজ তবু কন্ঠে বিষ রেখে মানবতার হৃদয়
স্পষ্ট হতে পারে পরস্পরকে ভালবেসে।

কোথাও রয়েছে যেন অবিনশ্বর আলোড়নঃ
কোনো এক অন্য পথে- কোন্‌ পথে নেই পরিচয়;
এ মাটির কোলে ছাড়া অন্য স্থানে নয়;
সেখানে মৃত্যুর আগে হয় না মরণ।

আমাদের পৃথিবীর বনঝিরি জলঝিরি নদী
হিজল বাতাবী নিম বাবলার সেখানেও খেলা
করেছে সমস্ত দিন; হৃদয়কে সেখানে করে না অবহেলা
ফেনিল বুদ্ধির দৌড়;- আজকের মানবের নিঃসঙ্গতা যদি

সেসব শ্যামল নীল বিস্তারিত পথে
হ’তে চায় অন্য কোনো আলো কোনো মর্মের সন্ধানী,
মানুষের মন থেকে কাটবে না তা হ’লে যদিও সব গ্লানি
তবু আলো ঝল্কাবে অন্য এক সূর্যের শপথে।

আমাদের পৃথিবীর পাখালী ও নীলডানা নদী
আমলকী জামরুল বাঁশ ঝাউয়ে সেখানেও খেলা
করেছে সমস্ত দিন;- হৃদয়কে সেখানে করে না অবহেলা
বুদ্ধির বিচ্ছিন্ন শক্তি;- শতকের ম্লান চিহ্ন ছেড়ে দিয়ে যদি

নরনারী নেমে পড়ে প্রকৃত ও হৃদয়ের মর্মরিত হরিতের পথে-
অশ্রু রক্ত নিস্ফলতা মরণের খণ্ড খণ্ড গ্লানি
তাহ’লে রবে;- তবু আদি ব্যথা হবে কল্যাণী
জীবনের নব নব জলধারা- উজ্জ্বল জগতে।

বনলতা সেন

-জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে – সব নদী – ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

জীবনানন্দ দাশের কবিতা সংকলন l জীবনানন্দ দাশ সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনা

বাংলার মুখ

-জীবনানন্দ দাশ

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল – একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।

ভিখিরী

-জীবনানন্দ দাশ

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি আহিরীটোলায়,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি বাদুড়বাগানে,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো–
তবে আমি হেঁটে চ’লে যাবো মানে মানে।
–ব’লে সে বাড়ায়ে দিলো অন্ধকারে হাত।
আগাগোড়া শরীরটা নিয়ে এক কানা যেন বুনে যেতে চেয়েছিলো তাঁত;
তবুও তা নুলো শাঁখারীর হাতে হয়েছে করাত।
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি মাঠকোটা ঘুরে,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি পাথুরিয়াঘাটা,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো
তাহলে ঢেঁকির চাল হবে কলে ছাঁটা।
বলে সে বাড়ায়ে দিলো গ্যাসলাইটে মুখ।
ভিড়ের ভিতরে তবু — হ্যারিসন রোডে —আরো গভীর অসুখ,
এক পৃথিবীর ভুল; ভিখিরীর ভুলে : এক পৃথিবীর ভুলচুক।

বিবেকানন্দ

-জীবনানন্দ দাশ

জয়, তরুণের জয়!
জয় পুরোহিত আহিতাগ্নিক, জয় জয় চিন্ময়!
স্পর্শে তোমার নিশা টুটেছিল, উষা উঠেছিল জেগে
পূর্ব তোরণে, বাংলা আকাশে , অরুণ-রঙিন মেঘে;
আলোকে তোমার ভারত, ইশয়া-জগৎ গেছিল রেঙে।

হে যুবক মুসাফের,
স্থবিরের বুকে ধ্বনিলে শ্‌ঙ্খ জাগরণপর্বের!
জিঞ্জির-বাঁধা ভীত চকিতেরে অভয় দানিলে আসি,
সুপ্তের বুকে বাজালে তোমার বিষাণ হে সন্ন্যাসী,
রক্ষের বুকে বাজালে তোমার কালীয়দমন বাঁশি!

আসিলে সবসাচী,
কোদন্ডে তব নব উল্লাসে নাচিয়া উঠিল প্রাচী!
টঙ্কারে তব দিকে দিকে শুধু রণিয়া উঠিল জয়,
ডঙ্কা তোমার উঠিল বাজিয়া মাভৈঃ মন্ত্রময়;
শঙ্কাহরণ ওহে সৈনিক, নাহিক তোমার ক্ষয়!

তৃতীয় নয়ন তব
ম্লান বাসনার মনসিজ নাশি জ্বালাইত উৎসব!
কলুষ-পাতকে, ধূর্জটি, তব পিনাক উঠিত রুখে,
হানিতে আঘাত দিবানিশি তুমি ক্লেদ-কামনার বুকে,
অসুর-আলয়ে শিব-সন্ন্যাসী বেড়াতে শঙ্খ ফুঁকে!

কৃষ্ণচক্র সম
ক্লৈব্যের হৃদে এসেছিলে তুমি ওগো পুরুষোত্তম,
এসেছিলে তুমি ভিখারির দেশে ভিখারির ধর মাগি
নেমেছিলে তুমি বাউলের দলে, হে তরুণ বৈরাগী!
মর্মে তোমার বাজিত বেদনা আর্ত জীবের লাগি।

হে প্রেমিক মহাজন,
তোমার পানেতে তাকাইল কোটি দরিদ্রনারায়ণ;
অনাথের বেশে ভগবান এসে তোমার তোরণতলে
বারবার যবে কেঁদে কেঁদে গেল কাতর আঁখির জলে,
অর্পিলে তব প্রীতি-উপায়ন প্রাণের কুসুমদলে।

কোথা পাপী? তাপী কোথা?
ওগো ধ্যানী. তুমি পতিত পাবন যজ্ঞে সাজিলে হোতা!
শিব-সুন্দর-সত্যের লাগি শুরু করে দিলে হোম,
কোটি পঞ্চমা আতুরের তরে কাঁপায়ে তুলিলে ব্যোম,
মন্ত্রে তোমার বাজিল বিপুল শানি- স্বসি- ওঁ!

সোনার মুকুট ভেঙে
ললাট তোমার কাঁটার মুকুটে রাখিলে সাধক রেঙে!
স্বার্থ লালসা পাসরি ধরিলে আত্মাহুতির ডালি,
যঞ্জের যূপে বুকের রুধির অনিবার দিলে ঢালি,
বিভাতি তোমার তাই তো অটুট রহিল অংশুমালী!

দরিয়ার দেশে নদী!
বোধিসত্ত্বের আলয়ে তুমি গো নবীন শ্যামল বোধি!
হিংসার রণে আসিলে পথিক প্রেম-খঞ্জর হাতে,
আসিলে করুণাপ্রদীপ হসে- হিংসার অমারাতে,
ব্যাধি মন্বন্তরে এলে তুমি সুধাজলধরি সংঘাতে!

মহামারী ক্রন্দন
ঘুটাইলে তুমি শীতল পরশে, ওগো সুকোমল চন্দন!
বজ্রকঠোর, কুসুমদুল, আসিলে লোকোত্তর;
হানিলে কুলিশ কখন ও ঢালিলে নির্মল নির্ঝর,
নাশিলে পাতক, পাতকীর তুমি অর্পিলে নির্ভর।

চক্রগদার সাথে
এনেছিলে তুমি শঙ্খ পদ্ম, হে ঋষি, তোমার হাতে;
এনেছিলে তুমি ঝড় বিদ্যুৎ পেয়েছিলে তুমি সাম,
এনেছিলে তুমি রণ-বিপ্লব-শানি- কুসুমদাম;
মাভৈঃ শঙ্খে জাগিছে তোমার নরনারায়ণ-নাম!

জয়, তরুণের জয়!
আত্মহুতির রক্ত কখনও আঁধারে হয় না লয়!
তাপসের হাড় বজ্রের মতো বেজে উঠে বারবার!
নাহি রে মরণে বিনাশ, শ্মশানে নাহি তার সংহার,
দেশে দেশে তার বীণা বাজে-বাজে কালে কালে ঝঙ্কার!

জীবনানন্দ দাশের সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা l Celebrated poems by Jibanananda Das l জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা

বিকেলের আলোয়

-জীবনানন্দ দাশ

রাতের কিনারে বসে নয়
বিকেলের আলোয় স্বপ্ন দেখলামঃ
কোন্‌ এক সুদূর মরুভূমিতে চলে গেছি
সেখানে গভীর জোছনারাতে
বালির গায়ে বালুকণার শব্দ
(পৃথিবীর পাতা ঝরার মতো)
স্ফটিকের নির্জন আলোর মতো বাতাস
কুমারীর নির্মল মসৃণ দেহের মতো।
কয়েকটি প্রেত উড়ে বেড়াচ্ছে সেখানে
মানুষের শব্দে চমকে হাওয়ার ভিতর হারিয়ে গিয়ে।
মরণের কতশত শতাব্দীর পর
সেই ধূসর পরিধি খুঁজে পাব আমিঃ
তার সেই হাত আমার জিভকে আচ্ছন্ন করবে
স্ফটিক আলোর মতো বাতাসের অনন্ত নিস্তব্ধতার ভিতর?

বুনো হাঁস

-জীবনানন্দ দাশ

পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে-
জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাঁদের আহবানে
বুনো হাঁস পাখা মেলে- শাঁই শাঁই শব্দ শুনি তার;
এক-দুই-তিন চার-অজস্র-অপার-

রাত্রির কিনার দিয়ে তাহাদের ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া
এঞ্জিনের মতো শব্দে; ছুটিতেছে-ছুটিতেছে তারা।

তারপর পড়ে থাকে নক্ষত্রের বিশাল আকাশ,
হাঁসের গায়ের ঘ্রাণ-দু-একটা কল্পনার হাঁস;

মনে পড়ে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা স্যানালের মুখ;
উড়ুক উড়ুক তারা পউষের জ্যোৎস্নায় নীরবে উড়ুক

কল্পনার হাঁস সব—পৃথিবীর সব ধ্বনি সব রং মুছে গেলে পর
উড়ুক উড়ুক তারা হৃদয়ের শব্দহীন জোছনার ভিতর।

দীপ্তি

-জীবনানন্দ দাশ

তোমার নিকট থেকে
যত দূর দেশে
আমি চলে যাই
তত ভালো।
সময় কেবলই নিজ নিয়মের মতো- তবু কেউ
সময়স্রোতের ‘পরে সাঁকো
বেঁধে দিতে চায়;
ভেঙ্গে যায়;
যত ভাঙ্গে তত ভালো।
যত স্রোত বয়ে যায়
সময়ের
সময়ের মতন নদীর
জলসিঁড়ি, নীপার, ওডার, রাইন, রেবা, কাবেরীর
তুমি তত বহে যাও,
আমি তত বহে চলি,
তবুও কেহই কারু নয়।
আমরা জীবন তবু।
তোমার জীবন নিয়ে তুমি
সূর্যের রশ্মির মতো অগণন চলে
রৌদ্রের বেলার মতো শরীরের রঙ্গে
খরতর নদী হয়ে গেলে
হয়ে যেতে।
তবু মানুষী হয়ে
পুরুষের সন্ধান পেয়েছ;
পুরুষের চেয়ে বড় জীবনের হয়তো বা।

আমিও জীবন তবু-
ক্বচিৎ তোমার কথা ভেবে
তোমার সে শরীরের থেকে ঢের দূরে চলে গিয়ে
কোথাও বিকেলবেলা নগরীর উৎসারণে উচল সিঁড়ির
উপরে রৌদ্রের রঙ জ্বলে ওঠে- দেখে
বুদ্ধের চেয়েও আরো দীন সুষমার সুজাতার
মৃত বৎসরে বাঁচায়েছে
কেউ যেন;
মনে হয়,
দেখা যায়।

কেউ নেই-স্তব্ধতায়; তবুও হৃদয়ে দীপ্তি আছে

দিন শেষ হয় নি এখনও।
জীবনের দিন- কাজ
শেষ হতে আজও ঢের দেরি।
অন্ন নেই। হ্রৃদয়বিহীনভাবে আজ
মৈত্রেয়ী ভূমার চেয়ে অন্নলোভাতুর।
রক্তের সমুদ্র চারি দিকে;
কলকাতা থেকে দূর
গ্রিসের অলিভ বন
অন্ধকার।
অগণন লোক মরে যায়;
এম্পিডোক্লেসের মৃত্যু নয়-
সেই মৃত্যু ব্যসনের মতো মনে হয়।
এ ছাড়া কোথাও কোনো পাখি
বসন্তের অন্য কোনো সাড়া নেই
তবু এক দীপ্তি রয়ে গেছে।

Famous Poems by Jibanananda Das l Jibanananda Das best poems l Notable works of Jibanananda Das

দুজন

-জীবনানন্দ দাশ

আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু – একই আলো পৃথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?- বলে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠ সূর্য সহমর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ তার ভরে গেছে।


দুজনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবী ও আকাশের পাশে
আবার প্রথম এল- মনে হয়-যেন কিছু চেয়ে -কিছু একান্ত বিশ্বাসে।
লালচে হলদে পাতা অনুষঙ্গে জাম বট অশ্বথের শাখার ভিতরে
অন্ধকারে নড়ে-চড়ে ঘাসের উপর ঝরে পড়ে;
তারপর সান্ত্বনায় থাকে চিরকাল।


যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে-ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছেঃ
সেই ব্যপ্ত প্রান্তরে দুজন; চারিদিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে;-চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরী;
ঘুঘুর পালক যেন ঝরে গেছে-শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উচুঁ করে ঘুমাবে সে শিশিরের জলে;
ঝরিছে মরিছে সব এইখানে-বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে।
নারী তার সঙ্গীকেঃ’পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি;-তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল;-একদিন হৃদয়ে আঘাত ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝ’রে গেছে; আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না।
হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ আমাদের-প্রেমের অপূর্ব শিশু আরক্ত বাসনা
ফুরোত না যদি, আহা, আমাদের হৃদয়ের থেকে-‘

এই বলে ম্রিয়মাণ আঁচলের সর্বস্বতা দিয়ে মুখ ঢেকে
উদ্বেল কাশের বনে দাঁড়িয়ে রইল হাঁটুভর।
হলুদ রঙের শাড়ি, চোরকাঁটা বিঁধে আছে, এলোমেলো অঘ্রাণের খড়
চারি দিকে শূণ্য হতে ভেসে এসে ছুঁয়ে ছেনে যেতেছে শরীর;
চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত, ঝরিছে শিশির;-
প্রেমিকের মনে হলঃ’এই নারী-অপরূপ-খুঁজে পাবে নক্ষত্রের তীরে
যেখানে রব না আমি, রবে না মাধুরী এই, রবে না হতাশা,
কুয়াশা রবে না আর-জনিত বাসনা নিজে-বাসনার মতো ভালোবাসা
খুঁজে নেবে অমৃতের হরিণীর ভিড় থেকে ইপ্সিতেরে তার।’

একদিন জলসিড়ি নদীর ধারে

-জীবনানন্দ দাশ

একদিন জলসিড়ি নদীটির পারে এই বাংলার মাঠে
বিশীর্ন বটের নীচে শুয়ে রব- পশমের মত লাল ফল
ঝরিবে বিজন ঘাসে-বাঁকা চাঁদ জেগে রবে- নদীটির জল
বাঙ্গালি মেয়ের মত বিশালাক্ষী মন্দিরের ধূসর কপাটে
আঘাত করিয়া যাবে ভয়ে ভয়ে-তারপর যেই ভাঙ্গা ঘাটে
রূপসীরা আজ আর আসে নাকো,পাট শুধু পচে অবিরল,
সেইখানে কলমির দামে বেধে প্রেতনীর মত কেবল
কাঁদিবে সে সারা রাত-দেখিব কখন কারা এসে আমকাঠে

সাজায়ে রেখেছে চিতাঃ বাংলার শ্রাবনের বিস্মিত আকাশ
চেয়ে রবে; ভিজে পেচা শান্ত স্নিগ্ধ চোখ মেলে কদমের বনে
শোনাবে লক্ষ্মীর গল্প-ভাসানের গান নদী শোনাবে নির্জনে;
চারিদিকে বাংলার ধানী শাড়ি-শাদা শাখা-বাংলার ঘাস
আকন্দ বাসকলতা ঘেরা এক নীল মঠ-আপনার মনে
ভাঙ্গিতেছে ধীরে ধীরে-চারিদিকে জীবনের এই সব আশ্চর্য উচ্ছ্বাস-

একদিন পৃথিবীর পথে

-জীবনানন্দ দাশ

একদিন পৃথিবীর পথে আমি ফেলিয়াছি, আমার শরীর
নরম ঘাসের পথে হাঁটিয়াছে; বসিয়াছে ঘাসে
দেখিয়াছে নক্ষত্রের জোনাকিপোকার মতো কৌতুকের অমেয় আকাশে
খেলা করে; নদীর জলের গন্ধে ভরে যায় ভিজে স্নিগ্ধ তীর
অন্ধকারে; পথে পথে শব্দ পাই কাহাদের নরম শাড়ির,
স্লান চুল দেখা যায়; সান্ত্বনার কথা নিয়ে কারা আসে –
ধূসর কড়ির মতো হাতগুলো — নগ্ন হাত সন্ধ্যার বাতাসে
দেখা যায়: হলুদ ঘাসের কাছে মরা হিম প্রজাপতিটির

সুন্দর করুণ পাখা পড়ে আছে — দেখি আমি; — চুপে থেমে থাকি;
আকাশে কমলা রঙ ফুটে ওঠে সন্ধ্যায় — কাকগুলো নীল মনে হয়;
অনেক লোকের ভিড়ে ডুবে যাই — কথা কই — হাতে হাত রাখি;
করুণ বিষন্ন চুলে কার যেন কোথাকার গভীর বিষ্ময়
লুকায়ে রয়েছে বুঝি… নক্ষত্রের নিচে আমি ঘুমাই একাকী;
পেঁচার ধূসর ডানা সারারাত জোনাকির সাথে কথা কয়।

এখানে আকাশ নীল

-জীবনানন্দ দাশ

এখানে আকাশ নীল- নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম শাদা- রং তার আশ্বিনের আলোর মতন;
আকন্দফুলের কালো ভীমরুল এইখানে করে গুঞ্জরণ
রৌদ্রের দুপুর ভ’রে;- বারবার রোদ তার সুচিক্বণ চুল
কাঁঠাল জামের বুকে নিঙড়ায়ে;- দহে বিলে চঞ্চল আঙুল
বুলায়ে বুলায়ে ফেরে এইখানে জাম লিচু কাঁঠালের বন,
ধনপতি, শ্রীমন্তের, বেহুলার, লহনার ছুঁয়েছে চরণ;
মেঠো পথে মিশে আছে কাক আর কোকিলের শরীরের ধূল,

কবেকার কোকিলের জানো কি তা? যখন মুকুন্দরাম, হায়,
লিখিতেছিলেন ব’সে দু’পহরে সাধের সে চন্ডিকামঙ্গল,
কোকিলের ডাক শুনে লেখা তাঁর বাধা পায়- থেমে থেমে যায়;-
অথবা বেহুলা একা যখন চলেছে ভেঙে গাঙুড়ের জল
সন্ধ্যার অন্ধকারে, ধানক্ষেতে, আমবনে, অস্পষ্ট শাখায়
কোকিলের ডাক শুনে চোখে তার ফুটেছিল কুয়াশা কেবল।

হাজার বছর শুধু খেলা করে

-জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো :
চারিদিকে চিরদিন রাত্রির নিধান-
বালির উপরে জ্যেৎস্না- দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো; দ্বারকার- দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত ম্লান
শরীরে ঘুমের ঘ্রাণ আমাদের- ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন :
‘মনে আছে?’ শুধালো সে- শুধালাম আমি শুধু, ‘বনলতা সেন?’

Jibanananda Das poetry collection l জীবনানন্দ দাশের আইকনিক কবিতা

হিন্দু-মুসলমান

-জীবনানন্দ দাশ

মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে-পুণ্য ভারতপুরে
পূজার ঘন্টা মিশিছে হরষে নমাজের সুরে-সুরে!
আহ্নিক হেথা শুরু হয়ে যায় আজান বেলার মাঝে,
মুয়াজ্জেনদের উদাস ধ্বনিটি গগনে গগনে বাজে,
জপে ঈদগাতে তসবি ফকির, পূজারী মন্ত্র পড়ে,
সন্ধ্যা-উষার বেদবাণী যায় মিশে কোরানের স্বরে;
সন্ন্যাসী আর পীর
মিলে গেছে হেথা-মিশে গেছে হেথা মসজিদ , মন্দির!

কে বলে হিন্দু বসিয়া রয়েছে একাকী ভারত জাঁকি?
-মুসলমানের হসে- হিন্দু বেঁধেছে মিলন-রাখী;
আরব মিশর তাতার তুর্কী ইরানের চেয়ে মোরা
ওগো ভারতের মোসলেমদল, তোমাদের বুক-জোড়া!
ইন্দ্র প্রস্থ ভেঙেছি আমরা, আর্যাবর্ত ভাঙি
গড়েছি নিখিল নতুন ভারত নতুন স্বপনে রাঙি!
নবীন প্রাণের সাড়া
আকাশে তুলিয়া ছুটিছে মুক্ত যুক্তবেণীর ধারা!

রুমের চেয়েও ভারত তোমার আপন, তোমার প্রাণ!
হেথায় তোমার ধর্ম অর্থ, হেথায় তোমার ত্রাণ;
হেথায় তোমার আশান ভাই গো, হেথায় তোমার আশা;
যুগ যুগ ধরি এই ধূলিতলে বাঁধিয়াছ তুমি বাসা,
গড়িয়াছ ভাষা কল্পে-কল্পে দরিয়ার তীরে বসি,
চক্ষে তোমার ভারতের আলো-ভারতের রবি, শশী,
হে ভাই মুসলমান
তোমাদের তরে কোল পেতে আছে ভারতের ভগবান!

এ ভারতভূমি নহেকো তোমার, নহকো আমার একা,
হেথায় পড়েছে হিন্দুর ছাপ- মুসলমানের রেখা,
হিন্দু মনীষা জেগেছে এখানে আদিম উষার ক্ষণে,
ইন্দ্রদ্যুম্নে উজ্জয়িনীতে মথুরা বৃন্দাবনে!
পাটলিপুত্র শ্রাবস্তী কাশী কোশল তক্ষশীলা।
অজন্তা আর নালন্দা তার রটিছে কীর্তিলীলা!
ভারতী কমলাসীনা
কালের বুকেতে বাজায় তাহার নব প্রতিভার বীণা!

এই ভারতের তখতে চড়িয়া শাহানশাহার দল
স্বপ্নের মণিপ্রদীপে গিয়েছে উজলি আকাশতল!
গিয়েছে তাহার কল্পলোকের মুক্তার মালা গাঁথি
পরশে তাদের জেগেছে আরব উপন্যাসের রাতি!
জেগেছে নবীন মোগল-দিল্লি-লাহোর-ফতেহপুর
যমুনাজলের পুরানো বাঁশিতে বেজেছে নবীন সুর!
নতুন প্রেমের রাগে
তাজমহলের তরুণিমা আজও উষার আরুণে ‌জাগে!

জেগেছে হেথায় আকবরী আইন-কালের নিকষ কোলে
বারবার যার উজল সোনার পরশ উঠিল জ্বলে।
সেলিম, সাজাহাঁ- চোখের জলেতে এক্‌শা করিয়া তারা
গড়েছে মীনার মহলা স্তম্ভ কবর ও শাহদারা!
ছড়ায়ে রয়েছে তন্দ্রাবিহীন-অপলক, অপরূপ!
যেন মায়াবীর তুড়ি
স্বপনের ঘোরে ত্বব্ধ করিয়া রেখেছে কনকপুরী!

মোতিমহলের অযুত রাত্রি, লক্ষ দীপের ভাতি
আজিও বুকের মেহেরাবে যেন জ্বালায়ে যেতেছে বাতি-
আজিও অযুত বেগম-বাঁদীর শষ্পশয্যা ঘিরে
অতীত রাতের চঞ্চল চোখ চকিতে যেতেছে ফিরে!
দিকে দিকে আজও বেজে ওঠে কোন্‌ গজল-ইলাহী গান!
পথহারা কোন্‌ ফকিরের তানে কেঁদে ওঠে সারা প্রাণ!
-নিখিল ভারতময়
মুসলমানের স্বপন-প্রেমের গরিমা জাগিয়া রয়!

এসেছিল যারা ঊষর ধুসর মরুগিরিপথ বেয়ে,
একদা যাদের শিবিরে সৈন্যে ভারত গেছিল ছেয়ে,
আজিকে তাহারা পড়শি মোদের, মোদের বহিন-ভাই;
আমাদের বুকে বক্ষে তাদের ,আমাদের কোলে ঠাঁই
কাফের যবন টুটিয়া গিয়াছে ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা,
মোস্‌লেম্‌ বিনা ভারত বিকল, বিফল হিন্দু বিনা
মহামৈত্রীর গান
বাজিছে আকাশে নব ভারতের গরিমায় গরীয়ান!

জীবনানন্দ দাশের জনপ্রিয় কবিতা l Jibanananda Das most famous works l প্রখ্যাত জীবনানন্দ দাশের কবিতা

যাত্রী

-জীবনানন্দ দাশ

মানুষের জীবনের ঢের গল্প শেষ
হ’য়ে গেলে র’য়ে যায় চারি দিক ঘিরে এই দেশ;
নদী মাঠ পাখিদের ওড়াওড়ি গাছের শিয়রে
কমলা রঙের ঢেউয়ে এসে কিছুক্ষণ খেলা করে।

মনে হয় কোথাও চিহ্নিত এই রৌদ্র ছিল কবে;
মানুষ সার্থক ময়- তবু সার্থকতর হবে;
মনে হত কাজ ক’রে কথা ব’লে গ্রন্থ মিলিয়ে,
মননের তীর থেকে আরো দূরে তীরতটে গিয়ে।

সময় নিজেই তবু সব চেয়ে গভীর বিপ্লবী;
ফুরিয়ে ফেলেছে সেই দিন রাত্রি সেরা সত্য-উদ্ঘাটন সবি;
সেদিনের হৃদয়ের উষ্ণ উত্তেজিত স্থির
ক’রে ফেলে অন্য নব কলেবরে গড়েছে শরীর।

বাহিরে ভিতরে লীন হয়ে থাকে মন,
শান্ত- আরো শান্ত হয় অন্তঃকরণ;
পুরোনো দিনের স্তম্ভ দু-চারটে পশ্চিমের আঁধারের কাছে;
নব সূর্যে সম্মেলনে- যাত্রা যাত্রা যাত্রা যাত্রা আছে।

কবিতা

-জীবনানন্দ দাশ

আমাদের হাড়ে এক নির্ধূম আনন্দ আছে জেনে
পঙ্কিল সময়স্রোতে চলিতেছে ভেসে;
তা না হ’লে সকলি হারায়ে যেতো ক্ষমাহীন রক্তের- নিরুদ্দেশে।
হে আকাশ, একদিন ছিলে তুমি প্রভাতের তটিনীর;
তারপর হ’য়ে গেছ দূর মেরুনিশীথের স্তব্ধ সমুদ্রের।
ভোরবেলা পাখিদের গানে তাই ভ্রান্তি নেই,
নেই কোনো নিস্ফলতা আলোকের পতঙ্গের প্রাণে।
বানরী ছাগল নিয়ে যে- ভিক্ষুক প্রতারিত রাজপথে ফেরে-
আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে-
খুঁজে পায় জিজ্ঞাসার মানে।


চামচিকা যার হয় নিরালোকে ওপারের বায়ুসন্তরণে;
প্রান্তরের অমরতা জেগে ওঠে একরাশ প্রাদেশিক ঘাসের উন্মেষে;
জীর্ণতম সমাধির ভাঙ্গা ইঁট অসম্ভব পরগাছা ঘেঁষে
সবুজ সোনালিচোখ ঝিঁঝিঁ-দম্পতির ক্ষুধা করে আবিষ্কার
একটি বাদুড় দূর স্বোপার্জিত জ্যোৎস্নার মনীষায় ডেকে নিয়ে যায়
যাহাদের যতদূর চক্রবাল আছে লভিবার।
হে আকাশ, হে আকাশ,
একদিন ছিলে তুনি মেরুনিশীথের স্তব্ধ সমুদ্রের মতো;
তারপর হ’য়ে গেছ প্রভাতের নদীটির মতো প্রতিভার!

কুড়ি বছর পরে

-জীবনানন্দ দাশ

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা যদি হয়
আবার বছর কুড়ি পরে-
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে
কার্তিকের মাসে-
তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে- তখন হলুদ নদী
নরম নরম শর কাশ হোগলায়- মাঠের ভিতরে !

অথবা নাইকো ধান ক্ষেতে আর,
ব্যস্ততা নাই আর,
হাঁসের নীড়ের থেকে খড়
পাখির নীড় থেকে খড়
ছড়াতেছে; মনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল !
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি, কুড়ি, বছরের পার,-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার !
হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু- সরু- কালো কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা জামের
ঝাউয়ের-আমেরঃ
কুড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে !

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার !
তখন হয়তো মাঠে হামাগুড়ি দিয়ে পেচা নামে-
বাবলার গলির অন্ধকারে
অশথের জানালার ফাকে
কোথায় লুকায় আপনাকে !
চোখের পাতার মতো নেমে চুপি কোথায় চিলের ডানা থামে-
সোনালি সোনালি চিল- শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছর পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে !

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা l Iconic poems of Jibanananda Das

মানুষ যা চেয়েছিল

-জীবনানন্দ দাশ

গোধূলির রঙ লেগে অশ্বত্থ বটের পাতা হতেছে নরম;
খয়েরী শালিখগুলো খেলছে বাতাবীগাছে—তাদের পেটের শাদা রোম
সবুজ পাতার নীচে ঢাকা প’ড়ে একবার পলকেই বার হয়ে আসে,
হলুদ পাতার কোলে কেঁপে-কেঁপে মুছে যায় সন্ধ্যার বাতাসে।
ও কার গোরুড় গাড়ি র’য়ে গেছে ঘাসে ঐ পাখা মেলে ফরিঙের মতো।

হরিণী রয়েছে ব’সে নিজের শিশুর পাশে বড়ো চোখ মেলে;
আঁকা-বাঁকা শিং তাদের মেরুর গোধূলির
মেঘগুলো লেগে আছে; সবুজ ঘাসের ’পরে ছবির মতন যেন স্থির;
দিঘির জলের মতো ঠান্ডা কালো নিশ্চিত চোখ;
সৃষ্টির বঞ্চনা ক্ষমা করবার মতন অশোক
অনুভূতি জেগে ওঠে মনে।…
আঁধার নেপথ্যে সব চারিদিকে—কূল থেকে অকূলের দিকে নিরুপণে
শক্তি নেই আজ আর পৃথিবীর—তবু এই স্নিগ্ধ রাত্রি নক্ষত্রে ঘাসে;
কোথাও প্রান্তরে ঘরে অথবা বন্দরে নীলাকাশে;
মানুষ যা চেয়েছিল সেই মহাজিজ্ঞাসার শান্তি দিতে আসে।

Powered By:

নীলিমা

-জীবনানন্দ দাশ

রৌদ্র ঝিল্‌মিল,
উষার আকাশ, মধ্য নিশীথের নীল,
অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে বারে
নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে!
-উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূম্রের কুণ্ডলী,
উগ্র চুল্লিবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জ্বলি,
আরক্ত কঙ্করগুলো মরুভূর তপ্তশ্বাস মাখা,
মরীচিকা-ঢাকা!


অগণন যাত্রিকের প্রাণ
খুঁজে মরে অনিবার, পায় নাকো পথের সন্ধান;
চরণে জড়ায়ে গেছে শাসনের কঠিন শৃঙ্খল-
হে নীলিমা নিষ্পলক, লক্ষ বিধিবিধানের এই কারাতল
তোমার ও মায়াদণ্ডে ভেঙেছ মায়াবী।
জনতার কোলাহলে একা ব’সে ভাবি
কোন্ দূর জাদুপুর-রহস্যের ইন্দ্রজাল মাখি
বাস্তবের রক্ততটে আসিলে একাকী!
স্ফটিক আলোকে তব বিথারিয়া নীলাম্বরখানা
মৌন স্বপ্ন-ময়ূরের ডানা!
চোখে মোর মুছে যায় ব্যাধবিদ্ধ ধরণীর রুধির-লিপিকা
জ্বলে ওঠে অন্তহারা আকাশের গৌরী দীপশিখা!
বসুধার অশ্রু-পাংশু আতপ্ত সৈকত,
ছিন্নবাস, নগ্নশির ভিক্ষুদল, নিষ্করুণ এই রাজপথ,
লক্ষ কোটি মুমূর্ষুর এই কারাগার,
এই ধূলি-ধূম্রগর্ভ বিস্তৃত আঁধার
ডুবে যায় নীলিমায়-স্বপ্নায়ত মুগ্ধ আঁখিপাতে,
-শঙ্খশুভ্র মেঘপুঞ্জে , শুক্লাকাশে, নক্ষত্রের রাতে;
ভেঙে যায় কীটপ্রায় ধরণীর বিশীর্ণ নির্মোক,
তোমার চকিত স্পর্শে, হে অতন্দ্র দূর কল্পলোক!

পলাতকা

-জীবনানন্দ দাশ

পাড়ার মাঝারে সব চেয়ে সেই কুদুঁলি মেয়েটি কই!
কতদিন পরে পল্লীর পথে ফিরিয়া এসেছি ফের
সারাদিনমান মুখখানি জুড়ে ফুটিত যাহার খই
কই কই বালা আজিকে তোমার পাই না কেন গো টের!

তোমার নখের আঁচড় আজিও লুকায়ে যায় নি বুকে,
কাঁকন-কাঁদানো কণ্ঠ তোমার আজিও বাজিছে কানে!
যেই গান তুমি শিখায়ে দিছিলে মনের সারিকা শুকে
তাহারই ললিত লহরী আজিও বহিয়া যেতেছে প্রাণে!

কই বালা কই!-প্রণাম দিলে না!- মাথায় নিলে না ধূলি
-বহুদিন পরে এসেছি আবার বনতুলসীর দেশে!
কুটিরের পথে ফুটিয়া রয়েছে রাঙ্গা রাঙ্গা জবাগুলি-
উজান নদীতে কোথায় আমার জবাটি গিয়েছে ভেসে!

প্রার্থনা

-জীবনানন্দ দাশ

আমাদের প্রভু বীক্ষণ দাওঃ মরি নাকি মোরা মহাপৃথিবীর তরে?
পিরামিড যারা গড়েছিলো একদিন- আর যারা ভাঙে- গড়ে;-
মশাল যাহারা জ্বালায় যেমন জেঙ্গিস যদি হালে
দাঁড়ায় মদির ছায়ার মতন- যত অগণন মগজের কাঁচা মালে;
যে-সব ভ্রমণ শুরু হ’লো শুধু মার্কোপোলোর কালে,
আকাশের দিকে তাকায়ে মোরাও বুঝেছি যে-সব জ্যোতি
দেশলাইকাঠি নয় শুধু আর- কালপুরুষের গতি;
ডিনামাইট দিয়ে পর্বত কাটা না-হ’লে কী করে চলে,-
আমাদের প্রভু বিরতি দিয়ো না; লাখো-লাখো যুগ রতিবিহারের ঘরে
মনোবীজ দাওঃ পিরামিড গড়ে- পিরামিড ভাঙে গড়ে।

সোনালী ডানার শঙ্খচিল

-জীবনানন্দ দাশ

মনে পড়ে সেই কলকাতা–সেই তেরোশো তিরিশ–
বস্তির মতো ঘর,
বৌবাজারের মোড়ে দিনমান
ট্রাম করে ঘরঘর।
আমাদের কিছু ছিল না তখন
ছিল শুধু যৌবন,
সাগরের মতো বেগুনি আকাশে
সোনালি চিলের মন।

ছেঁড়া শাড়ি পরে কাটাইতে দিন
বাঁটনা হলুদ মাখা
বিভারানী বোস, তোমার দু হাতে
ছিল দুটো শাদা শাঁখা,
শাদা শাঁখা শুধু তোমার দু হাতে
জুটিত না তেল চুলে,
তবুও আমরা দিতাম আকাশে
বকের পাখনা তুলে।

জুটিত না কালি কলমে আমার
কাগজে পড়িত টান,
তোমার বইয়ের মার্জিনে, বিভা,
লিখিতাম আমি গান।
পাশের বাড়ির পোড়া কাঠ এনে
দেয়ালে আঁকিতে ছবি।
আমি বলিতাম–’অবন্তী-বিভা’,
তুমি শুধাইতে ‘ঈগল কবি’

চক্ষে তোমার মিঙ্ যুগ ভাসে
কাঙড়ার ছবি ঐ নীল চোখে
আমার হৃদয়ে অনুরাধাপুর
পুরানো ফরাসি গানের বোকে
সেদিন আমার পথে পথে হাঁটা
সেও তম্বুরা মান্ডলিন
তোমার সেদিন ঘর সিঁড়ি ভাঙা
বাংলার পট, পুরোনো চীন।

পৃথিবীর মুখে তুড়ি দিয়ে দিয়ে
দুইটি হৃদয় সেই
ডাল তেল নুন জোটে না যাদের
জামা-শাড়ি কিছু নেই,
তবুও আকাশ জয়ের বাসনা
দু:খের গুলি সে যেন ঢিল,
আমরা দুজনে বেগুনি আকাশে
সোনালি ডানার শঙ্খচিল—

শরীরের ক্ষুধা মাটির মতন
স্বপ্ন তখন সোনার সিঁড়ি,
মানুষ থাকুক সংসারে পড়ে
আমরা উড়িব পৃথিবী ছিঁড়ি।

সকাল হয়েছে: চাল নাই ঘরে,
সন্ধা হয়েছে: প্রদীপ নাই,
আমার কবিতা কেউ কেনে নাকো?
তোমার ছবিও ঘুঁটের ছাই?

ছ মাসের ভাড়া পড়ে আছে না কি?
ঘরে নাই তবু চাল কড়ি নুন?
আকাশের নীল পথে পথে তবু
আমার হৃদয় আত্তিলা হূণ
আকাশের নীল পথ থেকে পথে
জানালার পর জানালা খুলে
ভোরের মুনিয়াপাখির মতন
কোথায় যে দিতে পাখনা তুলে।

সংসার আজ শিকার করেছে
সোনালি চিলেরা হল শিকার,
আজ আমি আর কবিতা লিখি না
তুমিও তো ছবি আঁকো না আর।
তবুও শীতের শেষে ফাল্গুনে
মাতাল যখন সোনালি বন
তেরোশো তিরিশ—দারিদ্র্য সেই
ফিরে চাই আজ সে যৌবন।

ফিরে চাই আমি তোমারে আবার
আমার কবিতা, তোমার ছবি—
শুধাতাম আমি ‘অনুরাধাপুর’—
শুধাইতে তুমি ‘শকুন কবি’।
সেই-যে আকাশ খোঁজার স্বপ্ন
দুখের ছররা—সে যেন ঢিল,
আমরা দুজনে বেগুনি আকাশে
সোনালি ডানার শঙ্খচিল।

Exit mobile version