Best Love Poems by Kazi Nazrul Islam 2024 l কাজী নজরুল ইসলামের সেরা প্রেমের কবিতা

By raateralo.com

Updated on:

Best Love Poems by Kazi Nazrul Islam 2024

Best Love Poems by Kazi Nazrul Islam 2024 l কাজী নজরুল ইসলামের সেরা প্রেমের কবিতা: বাংলা সাহিত্যের জগতে কাজী নজরুল ইসলাম একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। বিদ্রোহী কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক—তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্র ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। তবে নজরুলের প্রেমের কবিতাগুলো এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে পাঠকের হৃদয়ে। তাঁর প্রেমের কবিতাগুলোতে প্রেমের মাধুর্য, ব্যথা, আবেগ ও উত্তাপ গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

নজরুলের প্রেমের কবিতায় আমরা পাই মানবিক অনুভূতির নানাবিধ রূপ। কখনো সেখানে প্রেমিকের ব্যথিত হৃদয়, কখনো বা পরম শূন্যতার অনুভব। কখনো আবার প্রেমিকের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসার জয়গান। নজরুলের প্রেমের কবিতা পাঠককে এক অন্যরকম আবেগের জগতে নিয়ে যায়, যেখানে প্রেমই প্রধান সুর, আর প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের গভীরতা ও কোমলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এই ব্লগে আমরা কাজী নজরুল ইসলামের সেরা প্রেমের কবিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করব, যেখানে আমরা তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে প্রেমের বহুবিধ রূপ ও তার গভীরতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। নজরুলের প্রেমের কবিতার অনন্যতা ও সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ে এক অমলিন ছাপ ফেলে যাবে। তাই আসুন, আমরা ডুব দিই নজরুলের প্রেমের কবিতার অমৃতধারায়।

Best Love Poems by Kazi Nazrul Islam 2024 l কাজী নজরুল ইসলামের সেরা প্রেমের কবিতা

নিজেকে মোহিত

আমি তাকে খুঁজি
যে আমার নিজের চেয়েও আমার কাছের। আমার জ্বলন্ত কামনায়
আমি তার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি ।

স্কাইলার্কের মতো, অদম্য তৃষ্ণায়, সে আমার মনের
শুষ্ক আকাশে জলের জন্য ছুটে বেড়ায় চাকোরের মতো

সে আমার স্বপ্নে চুরি করে নরম, চাঁদের আলো রাতে।

আমার মনের সবুজ পাতায়
আমি তাকে অন্ধকার কল্যাণময় মেঘের মতো দেখি..
তীক্ষ্ণ বিদ্যুতের ঝলকানিতে আমি
তাকে গর্জন উচ্চস্বরে গর্জে উঠতে দেখি।

আমি আমার তৈরি কুঁজোতে বসে
আমার প্রেয়সীকে মালা দিয়েছি;
কিন্তু হঠাৎ করেই আমি জেগে উঠি
এবং খুঁজে পাই, হায়, আমার নিজের গলায়।

কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত প্রেমের কবিতা l নজরুলের সেরা প্রেমের কবিতা

আমার দূরের বন্ধু


বন্ধু আমার! থেকে থেকে কোন্‌ সুদূরের বিজন পুরে

       ডাক দিয়ে যাও ব্যথার সুরে?

আমার অনেক দুখের পথের বাসা বারে বারে ঝড়ে উড়ে,

       ঘর-ছাড়া তাই বেড়াই ঘুরে।।

     তোমার বাঁশীর উদাস কাদন

     শিথিল করে সকল বাঁধন

     কাজ হ’ল তাই পথিক সাধন,

       খুঁজে ফেরা পথ-বঁধরে,

       ঘুরে’ ঘুরে’ দূরে দূরে।।

হে মোর প্রিয়! তোমার বুকে একটুকুতেই হিংসা জাগে,

তাই তো পথে হয় না থামা-তোমার ব্যথা বক্ষে লাগে!

    বাঁধতে বাসা পথের পাশে

    তোমার চোখে কান্না আসে

    উত্তরী বায় ভেজা ঘাসে

     শ্বাস ওঠে আর নয়ন বুঝে,

     বন্ধু, তোমার সুরে সুরে।।

মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী

মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী,

দেব খোঁপায় তারার ফুল ।

কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির,

চৈতী চাঁদের দুল ।

কন্ঠে তোমার পরাবো বালিকা,

হংস-সারির দুলানো মালিকা ।

বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব,

মেঘ রং এলো চুল ।

জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে

মাখাব তোমার গায়,

রামধনু হতে লাল রং ছানি,

আলতা পরাব পায় ।

আমার গানের সাত-সুর দিয়া,

তোমার বাসর রচিব প্রিয়া ।

তোমারে ঘেরিয়া গাহিবে আমার,

কবিতার বুলবুল ।।

গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু

গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু
আজ স্বপ্ন ছড়াতে চায়,
হৃদয় ভবাতে চায়।
মিতা মোর কাকলী কুহু–
সুব শুধু যে ঝবাতে চায়,
আবেশ ছড়াতে চায়
প্রাণে মোর।
মৌমাছিদের মিতালি–
পাখায় বাজায় গীতালি,
মীড়-দোলনো সুরে আমার
কণ্ঠে মালা পরাতে চায়।
বাতাস হোল খেয়ালী
শোনায় কি গান হেঁয়ালী,
কে জানে গো তার বাঁশী আজ–
কি সুর প্রাণে ধরাতে চায়।

অনেক ছিল বলার

অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।

পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।

আজকে মহাসাগর-স্রোতে

চলেছি দূর পারের পথে

ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।

গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।

কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।

আসতে যদি হে অতিথি

ছিল যখন শুকা তিথি

ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।

অনামিকা

কোন নামে ডাকব তোমায়

নাম-না-জানা- অনামিকা

জলে স্থলে গগনে-তলে

তোমার মধুর না যে লিখা।

গীষ্মে কনক-চাঁপার ফুলে

তোমার নামের আভাস দুলে

ছড়িয়ে আছে বকুল মূলে

তোমার নাম হে নিকা।

বর্ষা বলে অশ্রুজলের মানিনী সে বিরহিনী।

আকাশ বলে, তরিতে লতা, ধরিত্রী কয় চাতকিনী।

আষাঢ় মেঘে রাখলো ঢাকি

নাম যে তোমার কাজল আঁখি

শ্রাবণ বলে, যুঁই বেলা কি?

কেকা বলে মালবিকা।

শারদ-প্রাতে কমল বনে তোমার নামে মধু পিয়ে

বানীদেবীর বীণার সুরে ভ্রমর বেড়ায় গুনগুনিয়ে!

তোমার নামের মিল মিলিয়ে

ঝিল ওঠে গো ঝিলমিলিয়ে

আশ্বিণ কয়, তার যে বিয়ে

গায়ে হলুদ শেফালিকা।

নদীর তীরে বেনুর সুরে তোমার নামের মায়া ঘনায়,

করুণা আকাশ গ’লে তোমার নাম ঝরে নীহার কণায়

আমন ধানের মঞ্জরীতে

নাম গাঁথা যে ছন্দ গীতে

হৈমন্তী ঝিম্ নিশীতে

তারায় জ্বলে নামের শিখা।

ছায়া পথের কহেলিকায় তোমার নামের রেণু মাখা,

ম্লান মাধুরী ইন্দুলেখায় তোমার নামের তিলক আঁকা।

মোর নামে হয়ে উদাস

ধুমল হোলো বিমল আকাশ

কাঁদে শীতের হিমেল বাতাস

কোথায় সুদূর নীহারিকা।

তোমার নামের শত-নোরী বনভূমির গলায় দোলে

জপ শুনেছি তোমার নামের মুহহুমুর্হু বোলে।

দুলালচাঁপার পাতার কোলে

তোমার নামের মুকুল দোলে

কুষ্ণচুড়া, হেনা বলে

চির চেনা সে রাধিকা।

বিশ্ব রমা সৃষ্টি জুড়ে তোমার নামের আরাধনা

জড়িয়ে তোমার নামাবলী-হৃদয় করে যোগসাধনা।

তোমার নামের আবেগ নিয়া

সিন্ধু উঠে হিল্লোলিয়া

সমীরনে মর্মরিয়া

ফেরে তোমার নাম -গীতিকা।

অভিশাপ

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে –

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

ছবি আমার বুকে বেঁধে

পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে

ফিরবে মরু কানন গিরি,

সাগর আকাশ বাতাস চিরি’

যেদিন আমায় খুঁজবে –

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,

কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, –

জাগবে হঠাৎ চমকে!

ভাববে বুঝি আমিই এসে

ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,

ধরতে গিয়ে দেখবে যখন

শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!

বেদনাতে চোখ বুজবে –

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,

ব’লবে সবাই – “সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?”

আসবে ভেঙে কান্না!

প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,

কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!

প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি

অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি

ঘন ঘন মুছবে –

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,

তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ –

কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!

শিউলি ঢাকা মোর সমাধি

প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!

বুকের মালা ক’রবে জ্বালা

চোখের জলে সেদিন বালা

মুখের হাসি ঘুচবে –

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

সন্ধ্যাতারা

ঘোম্‌টা-পরা কাদের ঘরের বৌ তুমি ভাই সন্ধ্যাতারা?

তোমার চোখে দৃষ্টি জাগে হারানো কোন্‌ মুখের পারা।।

 সাঁঝের প্রদীপ আঁচল ঝেঁপে

 বঁধুর পথে চাইতে বেঁকে

 চাউনিটি কার উঠছে কেঁপে

  রোজ সাঁঝে ভাই এমনি ধারা।।

কারা হারানো বধূ তুমি অস-পথে মৌন মুখে

ঘনাও সাঁঝে ঘরের মায়া গৃহহীনের শূন্য বুকে।

 এই যে নিতুই আসা-যাওয়া,

 এমন কর”ণ মলিন চাওয়া,

 কার তরে হায় আকাশ-বধু

  তুমিও কি আজ প্রিয়-হারা।।

কবি-রাণী

তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তো আমি কবি। 

আমার এ রূপ-সে যে তোমায় ভালোবাসার ছবি।। 

আপন জেনে হাত বাড়ালো- 

আকাশ বাতাস প্রভাত-আলো, 

বিদায়-বেলার সন্ধ্যা-তারা 

পুবের অরুণ রবি,- 

তুমি ভালোবাস ব’লে ভালোবাসে সবি? 

আমার আমি লুকিয়েছিল তোমার ভালোবাসায়, 

তুমিই আমার মাঝে আসি’ 

অসিতে মোর বাজাও বাঁশি, 

আমার পূজার যা আয়োজন 

তোমার প্রাণের হবি। 

আমার বাণী জয়মাল্য, রাণি! তোমার সবি।। 

তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি। 

আমার এ রূপ-সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি।।

অ-নামিকা

তোমারে বন্দনা করি 

স্বপ্ন-সহচরী 

লো আমার অনাগত প্রিয়া, 

আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া! 

তোমারে বন্দনা করি…. 

হে আমার মানস-রঙ্গিণী, 

অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা-সঙ্গিনী! 

তোমারে বন্দনা করি…. 

নাম-নাহি-জানা ওগো আজো-নাহি-আসা! 

আমার বন্দনা লহ, লহ ভালবাসা…. 

গোপণ-চারিণী মোর, লো চির-প্রেয়সী! 

সৃষ্টি-দিন হ’তে কাঁদ’ বাসনার অন্তরালে বসি’- 

ধরা নাহি দিলে দেহে। 

তোমার কল্যাণ-দীপ জ্বলিলে না 

দীপ-নেভা বেড়া-দেওয়া গেহে। 

অসীমা! এলে না তুমি সীমারেখা-পারে! 

স্বপনে পাইয়া তোমা’ স্বপনে হারাই বারে বারে 

অরুপা লো! রহি হ’য়ে এলে মনে, 

সতী হ’য়ে এলে না ক’ ঘরে। 

প্রিয় হ’য়ে এলে প্রেমে, 

বধূ হয়ে এলে না অধরে! 

দ্রাক্ষা-বুকে রহিলে গোপনে তুমি শিরীন্‌ শরাব, 

পেয়ালায় নাহি এলে!- 

‘উতারো নেকার’- 

হাঁকে মোর দুরন্ত কামনা! 

সুদুরিকা! দূরে থাক’-ভালোবাসা-নিকটে এসো না। 

তুমি নহ নিভে যাওয়া আলো, নহ শিখা। 

তুমি মরীচিকা, 

তুমি জ্যোতি।- 

জন্ম-জন্মান্তর ধরি’ লোকে-লোকান্তরে তোমা’ করেছি আরতি, 

বারে বারে একই জন্মে শতবার করি! 

যেখানে দেখেছি রূপ,-করেছি বন্দনা প্রিয়া তোমারেই স্মরি’। 

রূপে রূপে, অপরূপা, খুঁজেছি তোমায়, 

পবনের যবনিকা যত তুলি তত বেড়ে যায়! 

বিরহের কান্না-ধোওয়া তৃপ্ত হিয়া ভরি’ 

বারে বারে উদিয়াছ ইন্দ্রধনুসমা, 

হাওয়া-পরী 

প্রিয় মনোরমা! 

ধরিতে গিয়োছি-তুমি মিলায়েছ দূর দিগ্বলয়ে 

ব্যথা-দেওয়া রাণী মোর, এলে না ক’ কথা কওয়া হ’য়ে। 

চির-দূরে থাকা ওগো চির-নাহি-আসা! 

তোমারে দেহের তীরে পাবার দুরাশা 

গ্রহ হ’তে গ্রহান্তরে ল’য়ে যায় মোরে! 

বাসনার বিপুল আগ্রহে- 

জন্ম লভি লোকে-লোকান্তরে! 

উদ্বেলিত বুকে মোর অতৃপ্ত যৌবন-ক্ষুধা 

উদগ্র কামনা, 

জন্ম তাই লভি বারে বারে, 

না-পাওয়ার করি আরাধনা!…. 

যা-কিছু সুন্দর হেরি’ ক’রেছি চুম্বন, 

যা-কিছু চুম্বন দিয়া ক’রেছি সুন্দর- 

সে-সবার মাঝে যেন তব হরষণ 

অনুভব করিয়াছি!-ছুঁয়েছি অধর 

তিলোত্তমা, তিলে তিলে! 

তোমারে যে করেছি চুম্বন 

প্রতি তরুণীর ঠোঁটে 

প্রকাশ গোপন। 

যে কেহ প্রিয়ারে তার চুম্বিয়াছে ঘুম-ভাঙা রাতে, 

রাত্রি-জাগা তন্দ্রা-লাগা ঘুম-পাওয়া প্রাতে, 

সকলের সাথে আমি চুমিয়াছি তোমা’ 

সকলের ঠোঁটে যেন, হে নিখিল-প্রিয়া প্রিয়তমা! 

তরু, লতা, পশু, পাখী, সকলের কামনার সাথে 

আমার কামনা জাগে,-আমি রমি বিশ্ব-কামনাতে! 

বঞ্চিত যাহারা প্রেমে, ভুঞ্জে যারা রতি- 

সকলের মাঝে আমি-সকলের প্রেমে মোর গতি! 

যে-দিন স্রষ্টার বুকে জেগেছিল আদি সৃষ্টি-কাম, 

সেই দিন স্রষ্টা সাথে তুমি এলে, আমি আসিলাম। 

আমি কাম, তুমি হ’লে রতি, 

তরুণ-তরুণী বুকে নিত্য তাই আমাদের অপরূপ গতি! 

কী যে তুমি, কী যে নহ, কত ভাবি-কত দিকে চাই! 

নামে নামে, অ-নামিকা, তোমারে কি খুঁজিনু বৃথাই? 

বৃথাই বাসিনু ভালো? বৃথা সবে ভালোবাসে মোরে? 

তুমি ভেবে যারে বুকে চেপে ধরি সে-ই যায় স’রে। 

কেন হেন হয়, হায়, কেন লয় মনে- 

যারে ভালো বাসিলাম, তারো চেয়ে ভালো কেহ 

বাসিছে গোপনে। 

সে বুঝি সুন্দরতর-আরো আরো মধু! 

আমারি বধূর বুকে হাসো তুমি হ’য়ে নববধূ। 

বুকে যারে পাই, হায়, 

তারি বুকে তাহারি শয্যায় 

নাহি-পাওয়া হ’য়ে তুমি কাঁদ একাকিনী, 

ওগো মোর প্রিয়ার সতিনী।…. 

বারে বারে পাইলাম-বারে বারে মন যেন কহে- 

নহে, এ সে নহে! 

 কুহেলিকা! কোথা তুমি? দেখা পাব কবে? 

জন্মেছিলে জন্মিয়াছ কিম্বা জন্ম লবে? 

কথা কও, কও কথা প্রিয়া, 

হে আমার যুগে-যুগে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া! 

কহিবে না কথা তুমি! আজ মনে হয়, 

প্রেম সত্য চিরন্তন, প্রেমের পাত্র সে বুঝি চিরন্তন নয়। 

জন্ম যার কামনার বীজে 

কামনারই মাঝে সে যে বেড়ে যায় কল্পতরু নিজে। 

দিকে দিকে শাখা তার করে অভিযান, 

ও যেন শুষিয়া নেবে আকাশের যত বায়ু প্রাণ। 

আকাশ ঢেকেছে তার পাখা 

কামনার সবুজ বলাকা! 

প্রেম সত্য, প্রেম-পাত্র বহু-আগণন, 

তাই-চাই, বুকে পাই, তবু কেন কেঁদে ওঠে মন। 

মদ সত্য, পাত্র সত্য নয়! 

যে-পাত্রে ঢালিয়া খাও সেই নেশা হয়! 

চির-সহচরী! 

এতদিনে পরিচয় পেনু, মরি মরি! 

আমারি প্রেমের মাঝে রয়েছ গোপন, 

বৃথা আমি খুঁজে মরি’ জন্মে জন্মে করিনু রোদন। 

প্রতি রূপে, অপরূপা, ডাক তুমি, 

চিনেছি তোমায়, 

যাহারে বাসিব ভালো-সে-ই তুমি, 

ধরা দেবে তায়! 

প্রেম এক, প্রেমিকা সে বহু, 

বহু পাত্রে ঢেলে পি’ব সেই প্রেম- 

সে শরাব লোহু। 

তোমারে করিব পান, অ-নামিকা, শত কামনায়, 

ভৃঙ্গারে, গোলাসে কভু, কভু পেয়ালায়!

বিজয়িনী

হে মোর রাণি!    তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে।

আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।

   আমার সমর-জয়ী অমর তরবারী

     দিনে দিনে ক্লানি- আনে, হ’য়ে ওঠে ভারী,

   এখন এ ভার আমার তোমায় দিয়ে হারি,

   এই হার-মানা-হার পরাই তোমার কেশে।।

     ওগো জীবন-দেবী।

     আমায় দেখে কখন তুমি ফেললে চোখের জল,

আজ বিশ্বজয়ীর বিপুল দেউল তাইতে টলমল!

আজ বিদ্রোহীর এই রক্ত-রথের চূড়ে,

বিজয়িনী!    নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে,

   যত তৃণ আমার আজ তোমার মালায় পূরে’,

          আমি বিজয়ী আজ নয়ন-জলে ভেসে।।

পলাতকা

কোন্‌ সুদূরের চেনা বাঁশীর ডাক শুনেছিস্‌ ওরে চখা?

ওরে আমার পলাতকা!

তোর প’ড়লো মনে কোন্‌ হারা-ঘর,

স্বপন-পারের কোন্‌ অলকা?

ওরে আমার পলাতকা!

তোর জল ভ’রেছে চপল চোখে,

বল্‌ কোন্‌ হারা-মা ডাকলো তোকে রে?

ঐ গগন-সীমায় সাঁঝের ছায়ায়

হাতছানি দেয় নিবিড় মায়ায়-

উতল পাগল! চিনিস্‌ কি তুই চিনিস্‌ ওকে রে?

যেন বুক-ভরা ও গভীর স্নেহে ডাক দিয়ে যায়, “আয়,

ওরে আয় আয় আয়,

কেবল আয় যে আমার দুষ্টু খোকা!

ওরে আমার পলাতকা!’’

দখিন্‌ হাওয়ায় বনের কাঁপনে-

দুলাল আমার! হাত-ইশারায় মা কি রে তোর

ডাক দিয়েছে আজ?

এতকদিনে চিন্‌লি কি রে পর ও আপনে!

নিশিভোরেই তাই কি আমার নামলো ঘরে সাঁঝ!

ধানের শীষে, শ্যামার শিসে-

যাদুমণি! বল্‌ সে কিসে রে,

তুই শিউরে চেয়ে ছিঁড়লি বাঁধন!

চোখ-ভরা তোর উছলে কাঁদন রে!

তোরে কে পিয়ালো সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে!

যেন আচম্‌কা কোন্‌ শশক-শিশু চ’ম্‌কে ডাকে হায়,

“ওরে আয় আয় আয়

আয় রে খোকন আয়,

বনে আয় ফিরে আয় বনের চখা!

ওরে চপল পলাতকা’’।।

আশা

হয়ত তোমার পাব’ দেখা,

যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।।

    ঐ সুদূরের গাঁয়ের মাঠে,

    আ’লের পথে বিজন ঘাটে;

    হয়ত এসে মুচকি হেসে

     ধ’রবে আমার হাতটি একা।।

ঐ নীলের ঐ গহন-পারে ঘোম্‌টা-হারা তোমার চাওয়া,

আনলে খবর গোপন দূতী দিক্‌পারের ঐ দখিনা হাওয়া।।

    বনের ফাঁকে দুষ্টু তুমি

    আসে- যাবে নয়্‌না চুমি’

    সেই সে কথা লিখছে হেতা

     দিগ্বলয়ের অরুণ-লেখা।

আপন-পিয়াসী

আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন

      খুঁজি তারে আমি আপনার,

    আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি

      আমারি তিয়াসী বাসনায়।।

আমারই মনের তৃষিত আকাশে

কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,

কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে

 নিশীথে স্বপনে জোছনায়।।

আমার মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,

অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলি-উজল অভিরাম।।

    আমারই রচিত কাননে বসিয়া

    পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া,

    সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া,

     আপনারি গলে দোলে হায়।।

বিদায়-বেলায়

তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না,

       জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না।

   ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না,

       শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।।

   হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা,

   আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।

    ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ

     দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।

     চলার তোমার বাকী পথটুকু-

     পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক-

   হায়,  অমন ক’রে ও অকর”ণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না,

       ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।।

    দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি

      তব ব্যথা কেউ বোঝে না,

        তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী,

     পথে ফেরে যারা পথ-হারা,

     কোন গৃহবাসী তারে খোঁজে না,

     বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি?

   দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি শুধু ধূ-ধূ মাঠে পথিকে?

   এ যে মিছে অভিমান পরবাসী! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে!

    তবে জান কি তোমার বিদায়- কথায় 

     কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায়

    আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়-

     পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক!

   কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো

      মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না,

   ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।।


Perfect Sound, Anytime: BQYA 2.4 GHz Lavalier Mic with Plug & Play for USB Devices

BQYA 2.4 ghz Omnidirectional Lavalier Wireless Mic Noise cancallation Plug & Play with three receiver Lapel Mic System for Andriod/Type-c/iPhone/Laptop and all USB Devices (1 Year Warranty)

MI 80 cm (32 inches) A Series HD Ready Smart Google LED TV L32MA-AIN (Black)

Anytime: BQYA 2.4 GHz Lavalier Mic with Plug & Play for USB Devices Best Love Poems by Kazi Nazrul Islam Love Poems by Kazi Nazrul Islam Perfect Sound কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রেমের কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবিতা সংগ্রহ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা প্রেমের থিম কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় প্রেমের কবিতা কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা কাজী নজরুল ইসলামের রোমান্টিক কবিতা কাজী নজরুল ইসলামের সেরা প্রেমের কবিতা কাজী নজরুলের প্রেমের কবিতার জনপ্রিয়তা কাজী নজরুলের প্রেমের কবিতার বৈশিষ্ট্য কাজী নজরুলের প্রেমের কবিতার সংকলন নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা নজরুল ইসলামের সেরা কবিতা প্রেম নজরুল ইসলামের সেরা প্রেমের কবিতা নজরুলের প্রেমের কবিতা বিশ্লেষণ নজরুলের প্রেমের কবিতার উদাহরণ নজরুলের প্রেমের কবিতার তালিকা নজরুলের প্রেমের কবিতার সমালোচনা নজরুলের প্রেমের সেরা কবিতা নজরুলের সেরা প্রেমের কবিতা প্রেমের কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম

raateralo.com

Leave a Comment