Bengali Story Hiyar Majhe 2024l বাংলা অনুগল্প হিয়ার মাঝে l

By raateralo.com

Published on:

Bengali Story Hiyar Majhe l বাংলা অনুগল্প হিয়ার মাঝে l

Bengali Story Hiyar Majhe l বাংলা অনুগল্প হিয়ার মাঝে: আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করতে চলেছি বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য সৃষ্টি – “হিয়ার মাঝে”। বাংলা অনুগল্পের জগতে এই গল্পটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা পাঠকদের হৃদয় স্পর্শ করতে সক্ষম। বাংলা সাহিত্য সর্বদাই আমাদের মনোজগতে বিভিন্ন রঙের ছোঁয়া দিয়ে যায় এবং “হিয়ার মাঝে” তার ব্যতিক্রম নয়। এই গল্পটি এক গভীর মানবিক অনুভূতির প্রতিচ্ছবি, যেখানে প্রেম, আবেগ, এবং জীবনদর্শনের মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায়।

আসুন, আমরা একসঙ্গে ডুব দিই এই অনন্য অনুগল্পের মধ্যে, যেখানে প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি শব্দ আমাদের মনোজগতে এক গভীর প্রভাব ফেলে। “হিয়ার মাঝে” গল্পের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখতে শিখি, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং অনুভূতির সাথে মিল রেখে আমাদের সমৃদ্ধ করে তোলে।

চলুন তবে, শুরু করা যাক আমাদের এই সাহিত্যিক যাত্রা, এবং পরিচিত হই “হিয়ার মাঝে” গল্পের অন্দরমহলের সাথে।

Bengali Story Hiyar Majhe l বাংলা অনুগল্প হিয়ার মাঝে

“বাতাসে বহিছে প্রেম…..বসন্ত এসে গেছে।।”
ফোনটা বাজতেই চোখে আলতো ঘুমের রেশ কাটল দিয়ার। এত দূরের পথ ট্রেনে যাতায়াতের পথে ঘুম এসে যায়। !! শুভ্র ফোন করছে। ফোনটা ধরেই দিয়ার চোখটা ছলছল করল।
ওপার থেকে শুভ্রর কন্ঠ,”আজ কয়েকটা কাজ এসে গেছে রে, আজ যেতে পারব না, আমরা অন‍্যদিন দেখা করে নেব।”
দিয়া বললো,”তোর জন্য এতটা পথ এসেও দেখা করব বললাম, তোর আজই কাজ আসতে হল?”
শুভ্র-“কী করব বল, আমি তোর কথায় না করেছি কখনো?”
দিয়া-“কিন্তু আজ ১৪ফেব্রুয়ারি।”


শুভ্র-“দিয়া তুমি জানো, আমি এসব বিদেশি ন‍্যাকামিতে বিশ্বাসী নই। আমি যাব বলেছিলাম কারণ তুমি চেয়েছো দেখা করতে, কিন্তু কাজ এসে গেলে কী করব?”শুভ্র কোনো সিরিয়াস কথা বলার সময় দিয়াকে তুমি সম্বোধন করে। তবে শুভ্র সেদিন এসেছিল। ভ‍্যালেন্টাইন’স ডে সেলিব্রেট করতে নয়, দুঃখে, রাগে দিয়া সেদিন শুভ্রকে আঘাত করে বেশ কিছু কথা বলেছিল, শুভ্র জানত সেগুলো দিয়ার শুধু রাগের মাথায় বলা কথা, তবুও আদ‍্যপ্রান্ত বাঙালিয়ানায় ভরপুর শুভ্র এসেছিল, তার বয়সে পরিণত অথচ মনের দিক থেকে কিশোরী বান্ধবীর মান ভাঙাতে। মান ভেঙেছিল দেখা মাত্রই। কিন্তু দিয়া বুঝেছিল শুভ্রকে ওইদিন ওই কথাগুলো বলা তার ঠিক হয়নি।

সেই প্রথম আর শেষ ভ‍্যালেন্টাইন’স ডে-তে দেখা করার আবদার করে দিয়া। তারপর কেটে গেছে অনেক বছর। ভালোবাসার দিন আলাদাভাবে পালন করার কথা মনে হয়নি আর। আজ বড্ড মনে পড়ছে ফেলে আসা এই দিনগুলো শুভ্রর, বড্ড বেশি করে মনে পড়ছে, দিয়ার কথা শ্লোকের কথা।

শুভ্র সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের ট‍্যাক্স ডিপার্টমেন্টে কর্মরত। সল্টলেকে বাড়ি, মা আর ছেলের সংসার। শুভ্র শান্ত, সংযমী, ধীর স্থির মানুষ। অনেক ছোটোবেলায় বাবাকে হারায় শুভ্র, তারপর থেকে সংসারের যাবতীয় দায়দায়িত্ব ওর কাঁধে, শুভ্র যত্নসহকারে তা পালনও করে। এসব কিছুর মধ্যে ঠিক যে বয়সে মানুষ প্রেম করে সেই বয়সে প্রেমটা করা হয়ে ওঠেনি ওর। তবে আমার মতো আমার গল্পের এই নায়কটির মতেও প্রেমের কোনো বয়স হয় না, ঠিক যেমন ভালোবাসার কোনো দিন হয় না।

তাই প্রেম নিয়ে তার অতো মাথা ব‍্যথা ছিল না কোনোদিন, একটা খাঁটি বন্ধু চেয়েছিল সে। আর সেই বন্ধুর দেখা মিলেছিল শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসবে। শান্তিনিকেতনে দোল দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে শুভ্রর বহুদিনের। হঠাৎ করে সে সুযোগও হয়ে যায় স্কুলের বন্ধুদের দৌলতে। সেই বসন্তের দিনেই প্রভাত ফেরীতে দিয়ার সাথে প্রথম দেখা।

খোঁপায় লাল পলাশ, পরনে হলুদ শাড়ি, গালে আলতো আবিরের ছোঁয়ায় দিয়ার সেই রূপ, শুভ্রর মনে আঁচড় কেটে যায়। নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল- গানের তালে দিয়াকে দেখে ফুলে আগুন লাগুক না লাগুক আমার গল্পের নায়কটির মনে প্রেমের নিভন্ত শিখা যে প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল তা বুঝে যায় জিয়ান। ওহহহহহ!! জিয়ানের কথা তো বলাই হয়নি আপনাদের। জিয়ান দিয়ার মাসতুতো দাদা, দাদা ঠিক নয় দিয়া আর জিয়ান ওই এক-দুবছরের ছোটো বড়ো। জিয়ান আবার শুভ্রর ছোটোবেলার বন্ধুও।জিয়ান আর জিয়ানের স্ত্রী সৃষ্টি দুজনেই এক সাংঘাতিক ট‍্যালেন্টের অধিকারী, ট‍্যালেন্টের নাম ঘটকালি। বলাই বাহুল্য, শুভ্রর মনের সুপ্ত অগ্নিশিখায় দায়িত্ব সহকারে ঘি ঢালার কাজ এই দুজনই করেছিলেন। দিয়ার সাথে আলাপ পর্ব শান্তিনিকেতনেই শুরু।

নায়কের কথা অনেক বলা হল, এবার আসি নায়িকার প্রসঙ্গে। দিয়া, নামটার মতোই মিষ্টি মেয়ে। দিয়া সুন্দরী, হাসিখুশি, দোষের মধ্যে একটা একটু অভিমানী, আর রাগীও বলা যায়। যখন শুভ্রর সাথে প্রথম দেখা, তখন দিয়ার জীবনে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে, পাল্টে গেছে দিয়াও, তখন দিয়া বর্ধমানের কালনার এক কলেজের অধ‍্যাপিকা। তাই শুভ্র এই পাল্টে যাওয়া দিয়াকেই প্রথম দেখেছিল। শুভ্রর দেখা দিয়াকে শুভ্রর কিছুটা ডিপ্রেসড, কিছুটা আপসেট লেগেছিল,তবু ভালো লেগেছিল।

পরে জিয়ানের কাছে দিয়ার সম্পর্কে জানতে পারে শুভ্র। স্নাতকোত্তর শেষের পরই দিয়াকে সুপাত্রের সাথে পাত্রস্থ করেন দিয়ার মা-বাবা। লাভ ম‍্যারেজ নয়, অ‍্যারেঞ্জড, তবে কথা হয় বিয়ের পর দিয়া পি.এইচ.ডি টা করবে,আর দিয়ার নাচ, সেটা তো ওর প্রাণ, ওটা যেন করতে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর কোনো কথাই রাখার দায় তো দূর, দিয়ার ওপর চলতে থাকে অত‍্যাচার মানসিক, শারীরিক। অবশেষে, সিদ্ধান্ত নিতে হয় দিয়াকে।

হিয়ার মাঝে বাংলা অনুগল্প l Bengali short story Hiyar Majhe

জিয়ানের কাছে দিয়ার অতীতের সামান‍্য বিবরণ শুনেই শুভ্র থামিয়ে দেয় জিয়ানকে, বলে, “দ‍্যাখ কারুর ব‍্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বেশি কৌতুহল দেখানো আমার অপছন্দ। আমার কারুর অতীত নিয়েও তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই, যদি না সেই অতীত বর্তমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর মানুষটা ভালো হওয়া চাই, ব‍্যাস।” জিয়ান আর কিছু কথা বলে না, কিন্তু জিয়ানের মাথার বাল্ব জ্বলে ওঠে একটু দেরিতে। দুদিন পরে, হঠাৎ খেয়াল হয়, কী হল কেসটা, শুভ্র সেদিন দিয়ার প্রসঙ্গে কেন বলল যে কারোর অতীত নিয়ে ওর মাথাব‍্যাথা নেই, তাহলে কী ও দিয়াকে….!!! ওহহহহহহহ!!! ইউরেকা!!! জিয়ানের চিৎকার শুনে ছুটে আসে সৃষ্টি, বলে,”হলোটা কী? সকাল সকাল কিছু খেলে নাকি?

চেঁচামেচি করছো কেন?” জিয়ান বলে,”একটা কাজে তোমার হেল্প চাই সৃষ্টি। আমাদের শুভ্রবাবুর মনে দিয়াকে নিয়ে একটু একটু আগ্রহ জেগেছে, ওই আগ্রহটা প্রেমের রূপ পায় কিনা চেষ্টা করব আমরা। আমি দিয়াকে বোঝাব আর তুমি শুভ্রকে।” সৃষ্টি পুরোটা শুনে বলে,”দিয়া মানে, আমাদের দিয়া দিদি?বাহহহহহ!!এতো দারুন ব‍্যাপার। কিন্তু দিয়া দির সব কথা জানে শুভ্র?সে নিয়ে ওর…।” সৃষ্টিকে থামিয়ে দিয়ে জিয়ান বলে,”শুভ্র তেমন মানুষ নয়,তাও আমি ওকে সব বলেছি, ওর সেটা নিয়ে কোনো সমস‍্যা হবে বলে আমার মনে হয় না।” সৃষ্টি শুনেই বলে,”বাহহহ!! শুভ্র আমার ননদাই, হেব্বি মজা হচ্ছে শুনে আমার।” জিয়ান শুনে বলে,”ব‍্যাস গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল।” সৃষ্টি হেসে বলে,”দাঁড়াও, কাঁঠালও ফলবে আর গোঁফে তেলও দেব মানে তুমি দেবে।”

শুরু হয় দুদিকে দুজনের কাউন্সিলিংয়ের কাজ। জিয়ান শুরু করল দিয়াকে নিয়ে আর ওদিকে সৃষ্টি শুভ্রকে। কথার ধাঁধায়, যুক্তির প‍্যাঁচে লোককে বোঝানোয় এই জুটির অর্থাৎ জিয়ান ও সৃষ্টির জুড়ি মেলা ভার। অবশেষে যেমন কথা তেমন কাজ। শুভ্র ও দিয়া অবশেষে রাজি হয় একে অপরের সাথে কথা বলতে। ফেসবুক ছিল কথা শুরুর প্রথম মাধ‍্যম। তারপর ফোন, ফোন থেকে দেখা। প্রথম যেদিন দিয়া দেখা করতে আসে, পরনে নীলচে-সবুজ শাড়ি। শুভ্রর মনে হয় কোনো এক অপরূপা সুন্দরী তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, যদিও দিয়াকে শুভ্র আগেই দেখেছে। তবুও সেদিন যেন আরও নতুন করে দিয়ার সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করল। কথা বলতে বলতে কখন যে সময় কেটে গেল, বুঝতে পারে না ওরা।

ওদিকে দিয়া, মনকে যতই বজ্র আটুনিতে আটকে রাখতে চায়, মন বাঁধন ভাঙার ততই চেষ্টা চালাতে থাকে। শুভ্রর ভাবনা চিন্তা, কথা বলা, খেয়াল রাখা সবকিছুই যেন দিয়ার মনের বাইরের কঠিন আচ্ছাদনকে ভাঙতে থাকে। আসল দিয়া, প্রাণোচ্ছল, স্বতঃস্ফূর্ত দিয়া ফিরে আসে, যে দিয়া হারিয়ে গেছিল, ঢেকে নিয়েছিল নিজেকে এক অদৃশ্য মেকি আবরণে, যাতে তার মনের খবর কেউ না পায়। শুভ্র সেই মিথ্যে আবরণকে ভেদ করতে থাকে। দিয়া তার মনের যে কথাগুলো কখনো কাউকে বলতে পারত না, অবলীলাক্রমে শুভ্রকে বলতে থাকে। শুভ্রও চুপ করে শুনতে থাকে। শুভ্র বা দিয়া কেউ কাউকে ভালোবাসি বলেনি, দিয়ার জন্মদিনের দিন শুভ্র রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আলতো করে দিয়ার আঙ্গুলগুলো ধরে, ব‍্যাস সেই থেকে পথ চলার শুরু। চলতে চলতে আজ এখানে। জিয়ান, সৃষ্টির উদ‍্যোগে বিয়ের তোরজোড় শুরু হয়।

এইভাবেই শুরু হয় আমার নায়ক নায়িকা, অর্থাৎ দুই বন্ধুর পথ চলা, চলার পথে বাধাকে একসাথে অতিক্রম করে নতুনভাবে জীবনকে দেখা। ইতিমধ্যে তাদের জীবনে আসে শ্লোক, শুভ্র দিয়ার সন্তান। শ্লোককে বড়ো করতে করতে ওদেরও বয়সও যে বেড়ে চলে খেয়ালই থাকে না ওদের। শ্লোক যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন একদিন দিয়া বসে গল্পের বই পড়ছে এমন সময় শ্লোক গুটি গুটি পায়ে পিছন থেকে এসে দিয়ার চোখে হাত চেপে দিয়াকে একটা গোলাপ দিয়ে বলে,”হ‍্যাপি ভ‍্যালেন্টাইনস ডে মাম মাম।” দিয়া বলে,”তবে রে পাকা ছেলে!দাঁড়া তোর হচ্ছে! স্কুলের থেকে শিখেছিস এসব?” শ্লোক কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,” বন্ধুরা বলল,”এই দিনে যে মেয়েকে সবচেয়ে ভালোবাসি, তাকে লাল গোলাপ দিতে হয় আর হ‍্যাপি ভ‍্যালেন্টাইনস ডে বলতে হয়।”

ইতিমধ্যে মা-ছেলের কথোপকথন শুনে শুভ্রও এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। শ্লোকের কথাগুলো শুনে দিয়া-শুভ্র দুজনেই ওকে জড়িয়ে ধরে হেসে ওঠে। দিয়া আবার শুভ্রকে বলে,”দেখেছো তুমি না দিলে কী হবে আমার ছেলে আমায় কত্তো ভালোবাসে।” সেইদিন থেকে আজ অবধি শ্লোক যেখানেই থাকুক এইদিনে দিয়ার পাওনা গোলাপ ঠিক চলে আসে দিয়ার কাছে, সে মণিপুরে ভারত -মায়ানমার সীমান্ত হোক বা শ্রীনগরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তই হোক, ১৩ ই ফেব্রুয়ারি রাতেই পৌঁছে যায় গোলাপ। শ্লোক মা-বাবার অনেক বারন সত্বেও ভারতীয় সেনাদলে যোগদান করেছে।

আজ ক‍্যালেন্ডারে ১৪ফেব্রুয়ারি ২০৪৪। পাগলী বউটার ছেলেমানুষিগুলো, পুরোনো কথাগুলো, শ্লোকের দুষ্টুমিগুলো, পাকামিগুলো কেমন চলমান ছবির মতো ভেসে ওঠে শুভ্রর চোখের সামনে। কতগুলো বছর পার করে ফেললাম একসাথে আমরা দিয়া, মনে আছে তোর সেই ছেলেমানুষীগুলো, কত বড়ো হয়ে গেলি তুই, থুরী বড়ো না বুড়ি হয়ে গেলি। নার্সিং হোমের বেডে শুয়ে থাকা দিয়ার হাত দুটো আলতো কাঁপা হাতে চেপে ধরে শুভ্র। দিয়া তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

এ বছর শ্লোকের গোলাপ আসেনি, কাল সারাদিন পাগলের মত ফোন করে গেছে ওর ফোনে দিয়া আর শুভ্র, খালি শুনেছে নট রিচেবল। শ্লোকের বন্ধুদেরও ফোনে পায়নি। দিয়া বারবার বলে গেছে, কিছু হয়নি তো ওর। সারারাত বারান্দায় চেয়ারে ফোন হাতে বসে অপেক্ষা করেছে।

বাংলা অনুগল্প l হিয়ার মাঝে গল্প l Hiyar Majhe Bengali story

রাতেই দিয়ার একটা ম‍্যাসিভ অ‍্যাটাক হয়ে গেছে।
সকালে পাড়ার লোকজনের সাহায‍্যে নার্সিং হোমে নিয়ে যায় শুভ্র। চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে কেবিন থেকে করিডোরে বের হয় শুভ্র। মনে মনে বিড়বিড় করে ওঠে, “আমি যে একা থাকতে বড্ড ভয় পাই দিয়া। বাবানকেও(শ্লোকের ডাকনাম) ফোনে পাচ্ছিনা, কী চাস তোরা মা-ছেলে, আমার কী কষ্ট হয় না কোনো, আমিও তো মানুষ!” হঠাৎ একটা পদধ্বনি ভেসে আসে কানে। ঝাপসা চোখে তাকায় শুভ্র, করিডোরের দরজায়, দরজা দিয়ে দৌড়ে আসে লম্বা, সুঠাম, সপ্রতিভ, খাঁকি রঙের পোশাক পরা শ্লোক। শুভ্রর মনে হয় যেন সেই ছোট্ট শ্লোক ছোটোবেলায় স্কুলব‍্যাগ পিঠে যেমন ছুটে আসত শুভ্রর দিকে, ঠিক তেমন।
শ্লোক কাছে আসতে শুভ্র বলে,”তুই ঠিক আছিস বাবান?”


-“বাবাই I am perfectly alright.. কিন্তু মাম মামের হঠাৎ কী হল?”
-” তোকে সাতদিন ফোনে পাচ্ছিনা আমরা,তোর মা আশায় ছিল প্রতিবারের মতো ১৩ তারিখ তোর গোলাপটা ঠিক আসবে, সেটাও না আসায়, বোধ হয় মানসিক এই চাপ আর সহ‍্য করতে পারেনি তোর মাম মাম।”
-“বাবাই তোমরা জানো আমি সব জায়গায় ফোন নিতে পারি না,সব জায়গায় টাওয়ারও থাকে না। পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বাবাই, দুই দেশ এখন একসাথে জঙ্গি দমনে হাত মিলিয়েছে, বিগত সাতদিনে আমরা জঙ্গিদের প্রায় সকল ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করে এসেছি। তাই ভেবেছিলাম এবার আর কুরিয়রে নয়, নিজে হাতে গোলাপটা দেব মাম মামকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এর নিহত সেনাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন হয়েছে আজ। তাই তো আসতে দেরি হল। আসলে আমারই ভুল, আমি পারিনি জানাতে।”
-“চল ভিতরে।”

শ্লোক ভিতরে ঢোকে,” মাম্মা, দ‍্যাখো আমি কিন্তু কথা রেখেছি। এবার ওঠো তুমি প্লিজ। অনেক হল।” এই বলে শ্লোক তার মামমামের হাতে গোলাপটা রাখে। শ্লোকের চোখের জল দিয়ার হাতে পড়তেই দিয়ার হাতটা কেঁপে ওঠে।

কী ভাবছেন দিয়া বেঁচে ফিরে ফিরে এল, আর আমার গল্প ফুরোলো। জন্ম মৃত‍্যু থাক না কালের নিয়মে। প্রার্থনা শুধু সবকিছুর ঊর্ধ্বে অনুভূতিগুলো চিরস্থায়ী হোক। শীত, গ্রীষ্ম বা বসন্ত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ ভালোবাসা হোক চিরন্তন, কোনো নির্দিষ্ট দিনে নয়, প্রেম জাগুক হৃদয়ে, জাগুক প্রাণে, শুধু প্রেমিক রূপে নয়, সকল শত্রুতা বিদ্বেষ ভুলে তৈরি হোক নতুন পৃথিবী।

Acer Nitro V Gaming Laptop 13th Gen Intel Core i5-13420H with RTX 2050 Graphics 4 GB VRAM, 144Hz Display (16 GB DDR5/1 TB SSD/Windows 11 Home/Wi-Fi 6),15.6″(39.6cms) FHD ANV15-51

raateralo.com

Leave a Comment