Raater Alo

এক শিক্ষক ও সাইকেল চোরের কাহিনী (True Incident) l A story of a Teacher and a Bicycle thief l 2024

এক শিক্ষক ও সাইকেল চোরের কাহিনী (True Incident) 2024: অবশ্যই সত্য ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের এই গল্প, “এক শিক্ষক ও সাইকেল চোরের কাহিনী”, আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। জীবনের নানান অভিজ্ঞতা মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটায়, যা আমাদের মনের গভীরে একটা আলাদা ছাপ ফেলে যায়। এই গল্পের মূল চরিত্র একজন শিক্ষক, যিনি একদিন হঠাৎ করেই এক সাইকেল চোরের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা পেয়েছিলেন।

এই ঘটনাটি শুধু একজন শিক্ষকের জীবনেই নয়, আমাদের সবার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করতে পারে। এটি একটি সাধারণ ঘটনার অসাধারণ রূপান্তর, যা বিশ্বাস, মানবতা এবং ক্ষমার পাঠ শেখায়। চলুন, এই অনন্য ঘটনার মাধ্যমে আমরা আরও একবার প্রমাণিত হই যে, মানব হৃদয়ের গভীরতা এবং উদারতা সত্যি অসীম।

এক শিক্ষক ও সাইকেল চোরের কাহিনী (True Incident)

সুপ্রিয় বাবু প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।। বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব পাঁচ  কিলোমিটার।।একদম নির্জন রাস্তার উপর দিয়ে যেতে হয়, তার স্কুলে।।বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তায়,, কোনোরকম যানবাহন ছিলো না।। সুপ্রিয়  বাবু ভালো  মানুষ,, প্রায় প্রতিদিন ওনাকে কেউ না কেউ,, বাইক অথবা সাইকেলে লিফট দিয়ে দিতেন।। ভাগ্য খারাপ হলে,, সেদিন দুই-পায়ের উপর ভরসা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।।

“এত নির্জন জায়গায় কেনো যে সরকার স্কুল খোলে ?” রোজ সকালে স্কুলে বের হওয়ার আগে,সুপ্রিয়  বাবু এটাই মনে করেন।।

একটু একটু করে পরিশ্রমের টাকা জমিয়ে ,, সুপ্রিয়  বাবু একটা বেটারী সাইকেল  কেনেন।।

সাইকেল কেনার পরেই তিনি শপথ নিলেন,, প্রতিদিন কাউকে না কাউকে লিফট দেবেন।। কাউকে মানা করবেন না।। কারণ,, তিনি জানতেন,, যখন কেউ লিফট দিতে মানা করে,, তখন ভীষণ লজ্জায় পড়ে যেতে হয়।।

সুপ্রিয় বাবু যখনই স্কুলে যেতেন,, কাউকে না কাউকে পিছনে বসিয়ে নিতেন।। ফেরার সময় ও যে কোনো মানুষকে লিফট দিতেন।।

একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে,, একজন অচেনা ব্যাক্তি হাত দেখান।। সুপ্রিয়  বাবু সাইকেল থামিয়ে,, তাকে পিছনে বসিয়ে নেন।।

কিছুদুর যাওয়ার পর,, অজ্ঞাত পরিচয় মানুষটি সুপ্রিয় বাবু পিঠে ছুরি ঠেকিয়ে বলে — “কাছে যতো টাকা আছে,, আর এই সাইকেল আমাকে দিয়ে দাও।। নাহলে তোমাকে মেরে ফেলবো।।”

সুপ্রিয় বাবু ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন।। টাকা পয়সা তেমন কিছু ছিলো না।। কিন্তু,, অনেক কষ্ট করে সাইকেল তা কিনেছিলো শেষে ওটা দিয়ে দিতে হল।

যাইহোক,, নিরুপায় সুপ্রিয় বাবু,, অজ্ঞাত পরিচয় মানুষটিকে সাইকেল দিয়ে বললেন,  “সাইকেল নিয়ে যান,, কিন্তু,, আমার একটা অনুরোধ রইলো।।”

চোর বলে: “বলুন।।”

সুপ্রিয় বাবু বললেন: “তুমি কোনদিন কাউকে বলবেনা,, এই সাইকেল কোথা থেকে এবং কিভাবে তুমি পেয়েছো।। আমিও থানায় রিপোর্ট করবো না।।”

চোর আশ্চর্য হয়ে বললো – “কিন্তু কেনো??”

সুপ্রিয় বাবু বললেন – “দেখো,, এই রাস্তা নির্জন।। এমনিতেই সবাই ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করে।। তারপর,, সবাই যদি জানতে পারে,, এই রাস্তায় সাইকেল  ছিনতাই হয়েছে,, তাহলে কেউ আর কাউকে লিফট দেবে না।। “

চোরের মায়া হলো।। ভাবলো সুপ্রিয় বাবু সৎ এবং সজ্জন মানুষ।। কিন্তু,, পেট তো আর শুনবে না।। সাইকেল করে চোর চম্পট দিলো।।

পরেরদিন সকালে,, সুপ্রিয়  বাবু দরজা খুলে দেখেন,, দরজার সামনে তার সাইকেল রয়েছে।।

সুপ্রিয় বাবু খুশী হয়ে গেলেন।। কিছুটা আশ্চর্য হয়ে সাইকেলের  কাছে গিয়ে দেখেন— .

সাইকেলের ক্যারিয়ার এ  একটা কাগজ রয়েছে।।

কাগজে লেখা——
“মাষ্টারমশাই,, এটা ভাববেন না যে,, আপনার জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে,, আমার মন বিগলিত হয়ে পড়েছে।।”

” আপনার সাইকেল  নিয়ে প্রথমে চোরাই মাল খরিদকারীর কাছে গেলাম।। উনি দেখেই বললেন – “আরে,, এটা তো মাষ্টার মশাইয়ের সাইকেল না ??”

” বললাম,, হ্যাঁ,, ঠিক বলেছেন,, মাষ্টার মশাই আমাকে বিশেষ কাজে বাজারে পাঠিয়েছেন,, বলে ,, ততক্ষণাৎ সেখান থেকে চম্পট দিলাম।।”

” সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি,, মিষ্টির দোকানে কিছু খেতে গেলাম।। দোকানদার বললো — “আরে মাষ্টার মশাইয়ের সাইকেল  নিয়ে কোথায় ঘুরছো??”

— “বললাম,, হ্যাঁ,, মাষ্টার মশাইয়ের বাড়িতে অতিথি এসেছে,, তাই মিষ্টি কিনতে এলাম।।”

— “রাস্তায় যার সঙ্গে দেখা,, সেই বলছে,, মাষ্টার মশাইয়ের সাইকেল দেখ দেখ ……”

“ভাবলাম এলাকার বাইরে কোথাও গিয়ে বিক্রি করতে হবে।। এলাকার বর্ডারে পুলিশ চেকিং চলছিলো।।

পুলিশ বললো – “আরে,, মাষ্টার মশাইয়ের সাইকেলটা  নিয়ে কোথায় চলেছো ??”

– “পুলিশ আমার দিকে তেড়ে আসছে দেখে,, কোনো রকমে সাইকেল  নিয়ে চলে এলাম।। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে,, আমার বারোটা বাজিয়ে দিতো।।”

-” মহাশয়,, এটা আপনার সাইকেল নাকি,, মুকেশ আম্বানির ফরচুনার সেটাই বুঝতে পারলাম না।। গোটা এলাকার মানুষ চেনে,, এটা মাষ্টার মশাইয়ের সাইকেল ।।”

— “আপনার জিনিস,, আপনার কাছেই রেখে গেলাম।। এটা চুরি করে,, কতো মারাত্মক ভুল করে ফেলেছি,, আপনাকে বোঝাতে পারবো না।।”

— “এই ভুলের খেসারত বাবদ,, আপনার সাইকেল এ একটা বেটারী টর্চ লাগিয়ে দিলাম আপনার রাত হলে আস্তে আর অসুবিধা হবেনা।”

চিঠিটা পড়ে সুপ্রিয় বাবু হেসে উঠলেন।। বললেন – “ভালো কাজ করলে,, অবশ্যই ভালো প্রতিদান পাওয়া যাবে, সাময়িক কালের জন্যে খারাপ কাটলেও সেই খারাপ দীর্ঘস্থায়ী কখনোই হবেনা।  অপর কেউ খারাপ করছে বলে আপনিও করবেন তাহলে আপনার আর ওনার মধ্যে তফাৎ কি রইবে বলুন।

সৃষ্টি কর্তার শ্রেষ্ট জীব হলো মানুষ তাই প্রতিটা মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতা রাখা উচিত তাহলেই সমাজ ভালো থাকবে আমাদের এই ধরণী ভালো থাকবে। ভালো কাজ করুন সব ভালোই হবে। 

Exit mobile version