Inspirational Quotes by Sister Nivedita 2024 | লোকমাতা নিবেদিতার ২৮টি অনুপ্রেরণামূলক বাণী

By raateralo.com

Published on:

Inspirational Quotes by Sister Nivedita

Inspirational Quotes by Sister Nivedita 2024: লোকমাতা নিবেদিতা বা ভগিনী নিবেদিতা ১৮৬৭ সালের অক্টোবর মাসে আয়ারল্যান্ডের টাইরন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ব্রহ্মচর্য গ্রহণের পূর্বে এনার নাম ছিল মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। ইনি স্বামী বিবেকানন্দের একজন শিষ্য ছিলেন। শ্রী অরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জগদীশচন্দ্র বসুদের মত ব্যক্তির সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

ইনি একদিকে ছিলেন যেমন সমাজ সংস্কারক ও সমাজ সেবিকা তেমনি অপরদিকে ছিলেন একজন শিক্ষক ও লেখক। এমনকি সবশেষে ইনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। অবশেষে ইনি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাত্র ৪৪ বছর বয়সে। এনার কিছু উপদেশ নীচে উল্লেখ করা হলো।- 

Inspirational Quotes by Sister Nivedita l লোকমাতা নিবেদিতার অনুপ্রেরণামূলক বাণী

“মনন করে, চিন্তা ভাবনা করে নিজের উন্নয়নের পথ খুঁজে নিতে হয়। সেটিকে সক্রিয়তায় আনতে হয়, অতীতের ভুল ভ্রান্তি থেকে সংশোধনের শিক্ষা নিয়ে।”

“নিজের জাতীয় ভাবকে বিশ্বভাবের অংশরূপে আত্মগত করতে হবে। সেই জন্য প্রয়োজন হলে ভাঙ্গতে হবে বাহ্যিক আচারের বন্ধন। কিন্তু তা যেন ব্যক্তিগত স্বার্থে না করা হয়। – বিশ্বসেবাই প্রকৃত স্বদেশসেবা।”

“মনের সকল অংশকে একই লক্ষ্যে একাগ্র করো। দিবারাত্রি তোমার একমাত্র চিন্তা হোক সেই কর্ম যা সম্পাদন করবে বলে হাত লাগিয়েছ। – ত্রুটিহীন সেবাই তোমার অনুক্ষণের ধ্যান জ্ঞান হোক। তাহলেই নতুন যুগের নতুন ঋষির অভ্যুদয় ঘটবে, সর্বত্র হাটে বাজারে ক্ষেতে, খামারে, পৌরপ্রতিষ্ঠানে ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে।”

“একবার আত্মনিবেদনে সক্রিয় হলে, হৃদয় ও মনের সব দিলেও মনে হয় যেন কিছুই দেওয়া হলো না । সমর্পণই যেখানে প্রকৃত লক্ষ্য, সেখানে দেওয়ার “পরিমাণ” বিচারের বিষয় হতে পারে না।”

“শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে, তার লক্ষ্য শুধু নিজের উন্নতি নয়। ব্যক্তি, দেশ ও ধর্মের প্রতি দৃষ্টি রেখে যে কল্যাণময় শিক্ষা, তা-ই তাকে যথার্থ মানুষ রূপে গড়ে দেশ সেবায় নিযুক্ত করে। এই দেশপ্রেম যখন হৃদয়ে দৃঢ় হয়ে আদর্শ ও সংস্কৃতিতে উন্নত মস্তকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় তখনই অপরাপর জাতির মহত্ত্ব ও উচ্চ আদর্শের মর্ম গ্রহণ করা সম্ভব হয়। তা না হলে আন্তর্জাতিকতার দোহাই দিয়ে অপর জাতির অনুকরণ চরিত্রকে নিকৃষ্টই করে তোলে।”

“এগিয়ে চলো। তোমার ভাগ্যে যা (কর্মগত) ভার বহনের দায়িত্ব পড়েছে তা মানুষের মত বহন করো। তোমার হাতের সামনে যে কাজ এসে পড়েছে, তা পূর্ণশক্তির সঙ্গে সম্পন্ন করো। ভয় পেয়ো না। কিছু চেয়ো না। কোনো (স্বার্থ) পরিকল্পনা করো না। পরমের ইচ্ছাকে তোমার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে দাও, যেমন একটি খোলের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের জল বয়ে যায় ঠিক তেমনি করে। পরাজয় থেকে পালিয়ে যেয়ো না; হতাশাকে আলিঙ্গন করো। সুখ ও আরাম থেকে ব্যথা বেদনা (মূলবোধে) পৃথক নয়। — ব্রহ্মচর্যের মধ্যেই সমস্ত শক্তি ও মহত্ত প্রচ্ছন্ন রয়েছে।”

“এমন জীবনের ধারণা করো, যেখানে (মানবিক মর্যাদায়) সকলে, সমান স্বার্থে সম- প্রয়োজনে ও সহযোগিতায় কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ।”

“ঈশ্বরের জন্য ব্যাকুলতাই জীবনের সামগ্রিক অর্থ। আমার সেই প্রিয়তমই এই বাতায়নের মধ্য দিয়ে দেখছেন, দ্বারে ডাক দিচ্ছেন। তাঁর কোনো অভাব নেই, তবুও তিনি মানুষের অভাবের সাজ গ্রহণ করে আসেন, যাতে তাঁর সেবায় সুযোগ লাভ করি। তাঁর ক্ষুধা নেই, তবুও তিনি প্রার্থী হয়ে আসেন, যাতে তাঁকে দিতে পারি। তিনি সাক্ষাৎ করতে আসেন, যাতে তাঁকে আসন দিতে পারি। আমার যা কিছু সবই যে তাঁর। একান্তভাবেই তাঁর। আমার “আমিত্ব” কে সম্পূর্ণ লোপ করে তিনি সেইখানে প্রকাশিত হোন—এই প্রার্থনা।”

“যদি জাতীয় জীবন ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহের মূল্যায়নের কোনো চূড়ান্ত মানদণ্ড থাকে, তাহলে সেটি হলো নৈতিকতা। ধন-সম্পদ, শিল্পপ্রসার বা ভোগ-সুখ-উপকরণের প্রাচুর্যও সেই মানদণ্ড হতে পারে না।”

“ব্যক্তি-জীবনকে অবলম্বন করে নৈর্ব্যক্তিক জীবনের ধারা প্রবাহিত হয়ে চলে।”

“যে সংগ্রামকে ভালোবাসে, সে বীর, কিন্তু সেই সংগ্রামে যেন নীচতা ও তিক্ততা না থাকে, (সত্যনিষ্ঠ) সংগ্রামের আহ্বান এলে যেন নিদ্রাভিভূত থেকো না।”

“যদি আমরা আর কিছু শিখতে নাও পারি, আমরা যেন নিজেকে বিলিয়ে দিতে, ত্যাগ করতে ও সেবা করতে শিখি। অন্তর থেকে আমরা যেন দেনা-পাওনার শেষ রেশটুকুও নির্মূল করতে পারি। আত্মানুশীলনের জন্যই নয়, পরন্তু (মানব কল্যাণের) আদর্শের জন্য আমাদের ভালোমন্দ সর্বস্ব নিয়ে নিবেদন করতে পারি। প্রেমের জন্যই প্রেম। কর্মের জন্যই কর্ম, সনাতন আধ্যাত্মিক আদর্শের এই হলো শ্রেষ্ঠ বার্তা।”

“কে কোনো বিশেষ কর্মধারা গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে কিছু আসে যায় না। তিনিই প্রকৃত বীর যিনি যথোপযুক্ত কাজের র দ্বারা তথা নিজেকে নিবেদনের মাধ্যমে ঐকান্তিক দেশভক্তির পরিচয় দেন।”

“যদি কোনো জাতীয় একটি বিশেষ শ্রেণী, (নিজেদের স্বার্থ) বিশেষ কোনো ভাবধারা থেকে সর্বপ্রকার মানসিক পুষ্টি সঞ্চয় করে এবং অন্যান্য শ্রেণী অন্য ভাবধারায় গড়ে ওঠে, তবে সেই জাতির অন্তর্লোকে যে ঐক্য বিদ্যমান, সেটিকে বৃহত্তর জীবনে কোথাও কার্যকরী করা যায় না। প্রয়োজন হলো দেশগতভাবে সকলের মধ্যে সর্বজনীন ঐক্যবোধের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে সমস্ত জাতির জন্য শিক্ষা।”

“যারাই ন্যায়ের পথ রোধ করে দাঁড়ায়, দারুণ আঘাত তাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী। ইতিহাসে দেখা যায়, এমন এক একটা সময় আসে যখন নির্মম নিষ্ঠুর শক্তিমানরাও কম্পিত হয়ে ওঠে, ঈশ্বরের করুণার জন্য প্রার্থনায় চিৎকার করে। কিন্তু তারা তা লাভ করতে পারছে না কিছুতেই।”

“যে শিক্ষা চিত্তবৃত্তির উন্মেষ সাধন করতে গিয়ে নম্রতা ও কমনীয়তা বিনষ্ট করে তা প্রকৃত শিক্ষা নয়। – শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হলো মানসিক ও আধ্যাত্মিক বৃত্তিগুলির পরস্পরের সহযোগিতার বিকাশ সাধন।”

“স্বার্থবোধহীন ত্যাগই প্রকৃত ত্যাগ। যার ত্যাগে অহং – অভিমান বা কামনার ছায়া স্পর্শ করে, তার মূল্যবান দানও ধূলি-মুষ্টি দানের মত তুচ্ছ হয়ে যায় ৷”

“স্বার্থশূন্য মানুষ বজ্রতুল্য। তাই সেই স্বার্থহীনতার সাধনা করতে হবে যাতে দিব্যায়িত ব্রজের মত হয়ে ওঠা যায়। কীভাবে সাধনা করতে হবে সেটি প্রশ্ন নয়। তার জন্য হিসাব-নিকাশও প্রয়োজন নেই। প্রথমে প্রয়োজন শুধু “অহং” সমাপন। যখন কোনো মানুষ মানব-কল্যাণে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিবেদন করে সে দেবতার হাতের বজ্রের মত শক্তিসম্পন্ন হয়।”

“প্রাচীন জীর্ণ সামাজিক নিয়ম বা প্রথাকে আঁকড়ে থাকাকেই নৈতিকতা বলে না, বরং অনেক সময় এইভাবে প্রাচীনকে ধরে রাখার প্রয়াস দুর্বলতারই কারণ। সত্যকারের নৈতিকতা হলো অগ্নিময় ইচ্ছাশক্তি, অগ্নির মত বিশুদ্ধতা, অগ্নিশিখার মত চরিত্র এবং দুর্বার আত্মাহুতি প্রদানের ক্ষমতা।”

“শিক্ষাকে যথার্থ কার্যকরী করতে হলে নিম্নতম ও সাধারণ জ্ঞানলাভ থেকে উচ্চতম ও পরমজ্ঞান অর্জন পর্যন্ত সর্ববিদ্যা সর্বস্তরে প্রসারিত করতে হবে। লৌকিক বা অপরাবিদ্যার মত সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষার প্রয়োজন একান্ত ভাবেই।”

“আগে কাজ, তারপর তত্ত্বকথা। প্রথমতঃ প্রয়োজন পারস্পরিক প্রীতি ও (নৈতিক) আনুগত্য। দ্বিতীয়তঃ সেই সব ভাব ও উপদেশ আবশ্যক যা ভ্রাতৃত্ববোধের কাঠামোয় বুদ্ধিগত দৃঢ়তা ও গভীরতা এনে দিতে পারবে।”

“সংকটে ভীত, নিরপত্তার জন্য সুযোগসন্ধানীর ধর্মাচরণ প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছু নয়। ‘আধ্যাত্মিকতার’ ছদ্মবেশ পরে ঘৃণ্য স্বাচ্ছন্দ্যের সন্ধানী তথা জীবন-সংগ্রামের ক্ষেত্র থেকে কাপুরুষের মত পলায়নকারীর ‘দেশপ্রেম’ ছলনা মাত্র।”

“সত্যকেই কেন্দ্র করে যে চলে, উৎসাহ ও উদ্দীপনা হয় তার অফুরন্ত পাথেয়। নৈরাশ্য তার প্রতিবন্ধকতা করতে পারে না।”

” ‘বহু ও এক’ যথার্থই অভিন্ন সত্তা হওয়ায়, শুধু সকল উপাসনা পদ্ধতিই নয়, সকল কর্মপদ্ধতি, প্রচেষ্টা তথা সমস্ত সৃষ্টিকাৰ্যই সমানভাবে সত্য উপলব্ধিরই বিভিন্ন পন্থা। অতএব লৌকিক ও আধ্যাত্মিক এই ভেদবোধ সাধকের চেতনায় টিকে থাকতে পারে না, তাই কায়িক পরিশ্রমও উপাসনা – প্রার্থনা হয়ে যায়। তখন জয় করা মানে হয় আসক্তি জয় বা ত্যাগ। বস্তুতঃ সমগ্র জীবনই তখন পরিণত হয় আধ্যাত্মিক সাধনায়।”

“মানুষের শিক্ষার আদর্শ হবে মন, বুদ্ধি, হৃদয়ের উন্নতি সাধন। শিক্ষার লক্ষ্য হবে পরস্পরের মধ্যে এবং অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাক্ষাৎ যোগসূত্র স্থাপন। শিক্ষার প্রকৃত সার্থকতা বাইরের জ্ঞান ও শক্তি আহরণে নয়, নিজের ভেতরের শক্তিকে সম্যক বিকশিত করে তোলার সাধনাই তার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ।”

“আত্মত্যাগেই প্রেমের জাগরণ, আবার প্রেমেই ত্যাগের উৎপত্তি ও বিস্তার। ত্যাগ মানে নিঃস্ব হওয়া নয়, অক্ষয় সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ার পথই ত্যাগ। সংসারের ভয়ে পালিয়ে যাওয়াও ত্যাগ নয়, বরং জগৎ সংসারে জয়ী হওয়ার একমাত্র উপায়ই আত্মত্যাগ।”

“প্রচণ্ড প্রলোভনের সম্মুখীন যে মানুষ, তার জ্ঞানে একটি ‘নিখুঁত ও বাস্তবিক সত্য’ মতবাদের (পুঁথিগত বিদ্যারূপী) অস্ত্র থাকলেই শুধু হয় না। সেই মতবাদের সত্যতা, অসত্যতা ছাড়াও একটি অন্য প্রশ্ন আছে, তা হলো, সেই মতবাদের তত্ত্ব তার জীবনে কতটা কার্যকরী, সে ওটির প্রতি কতটা অনুগত ও আন্তরিকভাবে কতটা গ্রহণ করেছে। তদনুপাতেই ওই তত্ত্বটি তার কাজে লাগে।”

“আমরা কি নিজেদের তথা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে পরদুঃখকাতরতা ফুটিয়ে তুলতে পারি না। এই ভাব, সকল মানুষের দুঃখ, সামাজিক দুরাবস্থা এবং ধর্মাচরণ কত বিপন্ন দশায় আছে তা জানতে আগ্রহ জাগাবে। এই অনুভূতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু শক্তিশালী কর্মীর উত্থান হবে যারা কর্মের জন্যই কর্ম করবে এবং দেশ ও মানুষের সেবার জন্য মৃত্যুবরণে পর্যন্ত প্রস্তুত থাকবে।”

raateralo.com

Leave a Comment