Best Poems by Rudra Goswami 2024l রুদ্র গোস্বামীর সেরা কবিতা

By raateralo.com

Updated on:

Best Poems by Rudra Goswami

Best Poems by Rudra Goswami: রুদ্র গোস্বামী, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাবান কবি, তাঁর অনবদ্য কবিতার মাধ্যমে পাঠকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে গেছেন। প্রেম, প্রকৃতি, জীবন ও মানবতার নানা দিক নিয়ে তাঁর রচিত কবিতাগুলি পাঠকদের মনে অনুরণন তোলে। তাঁর লেখনীতে আমরা খুঁজে পাই জীবনের গভীর সত্য এবং মানুষের আন্তরিক অনুভূতির প্রতিচ্ছবি।

এই ব্লগে আমরা রুদ্র গোস্বামীর সেরা ৫টি কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছি, যা তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। প্রতিটি কবিতাই এক একটি মণিমুক্তার মত, যা পাঠকদের মনকে আকর্ষিত করে এবং ভাবনার গভীরে নিয়ে যায়।

আসুন, আমরা একসাথে ডুব দিই রুদ্র গোস্বামীর কবিতার জগতে এবং তাঁর সেরা সৃষ্টিগুলির মাধ্যমে জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করি।

আমাদের এই সংগ্রহটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন এবং আপনার প্রিয় রুদ্র গোস্বামীর কবিতা কোনটি তাও শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার মতামত আমাদের ভবিষ্যতে আরো ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে সহায়তা করবে।

Best Poems by Rudra Goswami 2024l রুদ্র গোস্বামীর সেরা কবিতা

প্রেমিক হতে গেলে – রুদ্র গোস্বামী

ওই যে ছেলেটাকে দেখছ, পছন্দ মতো ফুল ফুটল না বলে
মাটি থেকে উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো গাছটাকে?
ছেলেটার ভীষণ জেদ , ও কখনও প্রেমিক হতে পারবে না।

এই তো সেদিন কাঁচের জানালা দিয়ে রোদ ঢুকছিল বলে
কাঁচওয়ালার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কী বকা!
কাঁচওয়ালাতো থ’!
সাদা কাঁচে রোদ ঢুকবে না এমন আবার হয়!

ছেলেটার খুব জেদ, ও শুধু দেখে আর চেনে
বুঝতে জানে না।
প্রেমিক হতে গেলে ঋতু বুঝতে হয়
যেমন কোন ঋতুটার বুক ভরতি বিষ
কোন ঋতুটা ভীষণ একা একা, কোন ঋতুটা প্লাবন
কোন ঋতুতে খুব কৃষ্ণচূড়া ফোটে
ছেলেটা ঋতুই জানে না
ও শুধু দেখে আর চেনে, বুঝতে জানে না।

ছেলেটা কখনো প্রেমিক হতে পারবে না
প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয়।
ছায়ার মতো শান্ত হতে হয়।
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না।
তারা শুধু আকাশ হতে চায়।

বৃষ্টি সোনা তোকে – রুদ্র গোস্বামী

বৃষ্টি বৃষ্টি
জলে জলে জোনাকি
আমি সুখ যার মনে
তার নাম জানো কী ?

মেঘ মেঘ চুল তার
অভ্রের গয়না
নদী পাতা জল চোখ
ফুলসাজ আয়না।

বৃষ্টি বৃষ্টি
কঁচুপাতা কাঁচ নথ
মন ভার জানালায়
রাতদিন দিনরাত।

ঘুম নেই ঘুম নেই
ছাপজল বালিশে
হাঁটুভাঙা নোনা ঝিল
দুচোখের নালিশে।

বৃষ্টি বৃষ্টি
জলেদের চাঁদনি
দে সোনা এনে দে
মন সুখ রোশনি।

অসুখ – রুদ্র গোস্বামী

আজকাল কি যে উল্টোপাল্টা বায়না শিখেছে ও
যখন তখন এসে বলবে, ওর একটা আকাশ চাই।
আর আমিও বোকার মতো সব কাজ ফেলে
ওর চোখের মাপের আকাশ খুঁজতে থাকি!
শুধু কী তাই! তাতেও আবার ওর আপত্তি।
এটাতে বলে মেঘ ভরতি তো ওটাতে একঘেয়ে আলো।
গোধূলি আকাশ দেখলেই ও আবার লজ্জায় মরে যায়।
আমার হয়েছে জ্বালা, মেঘ থাকবে না রোদ থাকবে না
এমন একটা আকাশ, আমি কোত্থেকে খুঁজে আনব?
গোলাপ হবে অথচ কাঁটা হবে না!
রঙটাও আবার লাল? এমন আবার হয় নাকি!
একটা কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না,
ভালবাসা বুকে এসে বসলেই মানুষ কেন পাখি হতে চায়!

ঘর – রুদ্র গোস্বামী

মেয়েটা পাখি হতে চাইল
আমি বুকের বাঁদিকে আকাশ পেতে দিলাম।

দু-চার দিন ইচ্ছে মতো ওড়াওড়ি করে বলল,
তার একটা গাছ চাই।
মাটিতে পা পুঁতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
এ ডাল সে ডাল ঘুরে ঘুরে ,
সে আমাকে শোনালো অরণ্য বিষাদ।

তারপর টানতে টানতে
একটা পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে নিয়ে এসে বলল,
তারও এমন একটা পাহাড় ছিল।
সেও কখনো পাহারের জন্য নদী হোতো।

আমি ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে মেয়েটিকে বললাম,
নদী আর নারীর বয়ে যাওয়ায় কোনও পাপ থাকে না।

সে কিছু ফুটে থাকা ফুলের দিকে দেখিয়ে
জানতে চাইল,
কি নাম ?
বললাম গোলাপ।

দুটি তরুণ তরুণীকে দেখিয়ে বলল,
কি নাম ?
বললাম প্রেম।

তারপর একটা ছাউনির দিকে দেখিয়ে
জিজ্ঞেস করলো,
কি নাম ?
বললাম ঘর।

এবার সে আমাকে বলল,
তুমি সকাল হতে জানো ?
আমি বুকের বাঁদিকে তাকে সূর্য দেখালাম ।

একটি মেয়ের জন্য – রুদ্র গোস্বামী

একা ফুটপাথ
আলো ককটেল
ভিজে নাগরিক রাত পদ্য।

তুই হেঁটে যাস
কাঁচ কুয়াশায়
জল ভ্রূণ ভাঙা চাঁদ সদ্য।

আমি প্রশ্ন
তুই বিস্ময়
চোখ চশমার নীচে বন্ধ।

ঠোঁট নির্বাক
চাওয়া বন্য
আমি ভুলে যাই দ্বিধা দ্বন্দ্ব।

জাগা রাত্রি
ঘুম পস্তায়
মোড়া রূপকথা পিচ রাস্তা

পোষা স্বপ্ন
ছিঁড়ে ছারখার
প্রিয় রিংটোন লাগে সস্তা।

তুই সত্যি
আরও সত্যি
তুই শিশিরের কুঁড়ি পদ্ম।

বাকি মিথ্যে
সব মিথ্যে
চেনা চার দেয়ালের গদ্য।

মশাল – রুদ্র গোস্বামী

কন্যা সন্তান প্রসব করার অপরাধে
আসামের যে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ?
আজ তার মৃত্যু বার্ষিকী।
যে কবি সেদিন তার নিরানব্বইতম কবিতাটি
মেয়েটাকে উৎসর্গ করেছিলেন,
তিনি এখন তার প্রিয় পাঠিকার অনুরোধে লিখছেন বসন্ত গল্প।
যে সংবাদপত্র গুলো সেদিন ফলাও করে ছেপেছিল
মেয়েটার গনগনে আর্তনাদ ,
তাদের প্রত্যেকটা ক্যামেরার ফ্লাশ
আজ তাক করে দাঁড়িয়ে আছে বুদ্ধিজীবী সম্বর্ধনা মঞ্চ ।
যে অধ্যাপক তার অনুগত ছাত্রদের বলেছিলেন,
– “আগুন জ্বালো।”
তিনি তার সদ্য বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে
এইমাত্র চলে গেলেন সাচ্ছন্দ মধুচন্দ্রিমা যাপনে ।
তুমি কেমন আছো যুবক ?
তুমি কি মশাল জ্বেলেছো ?

ফিরে দেখা – রুদ্র গোস্বামী

ইচ্ছে হলে চলেই যাবি জানি
তবু মিথ্যে নাহয় হাত বাড়িয়ে দিস
তোর কাছে যে ইচ্ছে গুলো রাখা
আর একটিবার ছুঁয়ে দেখতে দিস

একটু না হয় ভিজতে দিলি তুই
অবাধ্য সেই নোনতা জলের ছাঁটে
ভালবাসা যেমনি করে রোজ
প্রেমিক ছেলের আঙুল ছুঁয়ে হাঁটে

হারিয়ে যাবো এমন বোকা নই
তুই বলবি, এটাই আমার দোষ
অন্য হাতের টান পড়লে সুতোয়
তুইও জানি মন্দ প্রেমিক নোস।

ছটা দশের মিনি – রুদ্র গোস্বামী

আজকাল একলা হলেই একটা মিনি বাসের চাকা
মাথার মধ্যে বনবন ঘুরতে থাকে।
ছটা দশ, ডালহৌসি থেকে শিয়ালদা।
কন্ডাকটরের বাজখাই চিৎকার সেন্ট্রাল, সেন্ট্রাল,
হঠাৎ একটা যান্ত্রিক ঝাকুনি! একটা ধাতব শব্দে
দলা পাকিয়ে যায় আমার মাথার মধ্য বয়সি ঘিলু।

ছিটকে পড়া বাইফোকালের আড়ালেও আমি
স্পষ্ট দেখতে পাই, রক্তে ভেসে যাচ্ছে একটা
কি ভীষণ পরিচিত মুখ!
অসহ্য যন্ত্রণায় কানে হাত চেপে,
তলপেটে লাথি খাওয়া নেড়ি কুকুরের
মত চিৎকার করে উঠি ,
– নীলা আ আ আ …

মা ছুটে আসেন, ছোট’কা আসে, মনি মা আসে।
ছোট্ট টুবলুটা পাঁচ বাই সাত বিছানার দখল
আঁকড়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
ইদানিং ডক্টরের আনাগোনা বেড়েছে বাড়িতে।
ঘরের আনাচে কানাচে কান পাতলেই শুনতে পাই,
আমার এ্যালজাইমা হয়েছে।
আমি নাকি ভুলে গেছি আমার অতীত!
এক সময় আমার একুশ সেলাই মাথায়
স্মৃতি বলে নাকি কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

অথচ পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞান মিথ্যে প্রমানিত করে
আমি ভুলতে পারিনা নীলাকে।
আমি ভুলতে পারিনা, বাসের প্লাস্টিক হাতলে
আমার হাতের উপর নীলার হাত,
আমার বুকে ঝুঁকে পড়া ওর নিঃশ্বাস।
ওর সুগন্ধি রুমাল, লিপস্টিকের দাগ
ওর আনমনা পাখির মতো চোখ!

যারা জানে নীলা আর নেই, কোত্থাও নেই।
তারা কখনো জানতেই পারেনি,
নীলা কি বিচ্ছিরি ভাবে ছড়িয়ে আছে
আমার একুশ সেলাই মাথায়,
বুকে, ঠোঁটে, হাতে।

যেতে পারবে? – রুদ্র গোস্বামী


এই যে তুমি বার বার চলে যাই বলো
ধরো তুমি চলে গেছো
খানিকক্ষণ পর ফিরে এসে যদি দেখো
কষ্টে ভিজে যাচ্ছে আমার বুক
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
তুমি কি তখন মুখ লুকাতে পারবে?
বলো পারবে?

ধরো এসে দেখো যদি
হাতে আমার ভেজা রুমাল, আর
তখনও অপেক্ষায় আমি,যাইনি কোথাও
যদি বলি, এলে কেন?
চাই না তোমায়, চলে যাও যেখানে ছিলে
আমাকে জড়িয়ে না ধরে তখন তুমি পারবে?
বলো পারবে?

এই যে আমাদের কাছে
আমিও আসি আর তুমিও আসো
এ কথা তো জানে দশজনে
ভালবাসাবাসি কতখানি আছে তোমার আমার
এতো ভালবাসা ছেড়ে
তুমি কি কোথাও যেতে পারবে?
বলো যেতে পারবে?

আমার চোখে বৃষ্টি ভিজছে খুব – রুদ্র গোস্বামী

ভীষণ একলা হয়ে যাচ্ছি আরও দূর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর

আয় একটিবার তুই সন্ধ্যা নামার আগে
আয় একটিবার তুই বুকের বারান্দায়
আয় একটি বার তুই অভিমানে রাগে
আয় একটিবার তুই বাকবিতণ্ডায়

তোকে বুঝতে থাকার চেষ্টায়
আমি পেরুচ্ছি রোদ্দুর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর

আমার চোখে বৃষ্টি ভিজছে খুব
ক্লান্ত পাতায় ঘুমের আফসোস
আয় একটিবার তুই স্বপ্ন দেখার রঙ
আয় একটিবার তুই ঠোঁটের শব্দকোষ

একলা আমার লাগছে ভীষণ ভয়
আমি নিজের কাছেই বাড়াচ্ছি বিস্ময়

তোকে ভুলতে থাকার চেষ্টা
আমার হারিয়ে দিচ্ছে সুর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর

raateralo.com

Leave a Comment