Rishi Aurobindo Quotes in Bengali l ঋষি অরবিন্দের বানী – শান্তি, শিক্ষা, জীবনদর্শন নিয়ে শ্রী অরবিন্দের বাণী

By raateralo.com

Updated on:

Rishi Aurobindo Quotes in Bengali

 অরবিন্দ ঘোষ এর বাণী (Rishi Aurobindo Quotes in Bengali): ভারতকে স্বাধীন করতে গুটিকয়েক মানুষ বিদ্রোহে নামেননি  , নেমেছেন হাজারও মানুষ। নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ছেড়ে ঝাঁপ দিয়েছেন এই অগ্নি বলাকার। দেশ মাতাকে পরাধীনতার শিকল থেকে উদ্ধার করতে কোনো কিছু না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নতুন সূর্যের দিকে। আর তাদেরই মধ্যে একজন ব্যক্তি হলেন ঋষি  অরবিন্দ ঘোষ (Aurobindo Ghose)। তাঁর বর্ণময় জীবন তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।

Rishi Aurobindo Quotes in Bengali

•স্থূল জগতে যেমন heredity প্রধান সত্য, সূক্ষ্মজগতে তেমনিই পূর্বজন্মবাদ প্রধান সত্য।

• হোঁচট খাওয়ার অর্থ হল সুষ্ঠুভাবে পথ চলার রহস্যটি শিখে ওঠা।

• বাধা সহজে সম্পূর্ণ যায় না। খুলতে খুলতে, চেতনা বাড়তে বাড়তে শরীর চেতনা পর্যন্ত যখন রূপান্তরিত হয়, তখন বাধা সম্পূর্ণ চলে যায়।

আমরা ভগবানকে অন্তর্যামী ও আত্মস্থ বুঝিয়া অন্তরে তাঁহাকে অন্বেষণ করি, য়ুরোপ ভগবানকে জগতের রাজা বুঝিয়া বাহিরে তাহাকে দেখে ও উপাসনা করে।

আত্মজ্যোতিতে আলোকিত সৎস্বরূপের প্রকাশকেই ভাব বা বিজ্ঞান বলা যায়। ইহা মনের চিন্তা বা কল্পনা নহে। ইহা কার্যসাধক বা ফলপ্রসূ আত্মসংবিদ।

• বস্তুত যাহাকে আমরা স্বপ্নহীন নিদ্রা বলি, তাহাতে আমরা অবচেতনার ঘনতর এবং গভীরতর স্তরে চলিয়া যাই; তথায় চেতনা এমনভাবে নিমজ্জিত আচ্ছন্ন এবং অস্পষ্ট, এমন অসাড় এবং গুরুভাব হইয়া পড়ে যে তাহা আর ওপরে উঠিয়ে আমাদের বাহ্যজ্ঞান রূপে ফুটিয়া উঠিতে পারে না, সেখানেও আমরা স্বপ্ন দেখি, কিন্তু স্বপ্নের যে অস্পষ্টতর মূর্তিকে আমাদের অবচেতনের সেই অংশ ধরিতে বা ধরিয়া রাখিতে পারে না, যাহার কাজ স্বপ্নকে লিপিবদ্ধ করা।

• সত্যের সোজা পথ খোলা অন্তরে যা সমর্পণ করা হয় সেই অবস্থায় সহজ সরলভাবে ওপরে মায়ের কাছে গিয়ে সত্যের সঙ্গে মিলিত হয়, সত্যময় হয়ে যায়।

• প্রকৃতির মধ্যে থাকিয়া প্রকৃতি বর্জন অসম্ভব। যদি কোমলতা পরিত্যাগ করি, কঠোরতা হৃদয়কে অভিভূত করিবে-যদি বাহিরে দুঃখের স্পন্দন নিষেধ করি দুঃখ ভিতরে জমিয়া থাকিবে এবং অলক্ষিতে প্রাণকে শুকাইয়া দিবে।

বাক্য হল শক্তিপূর্ণ-এমনকি সাধারণ লিখিত বাক্যেরও কিছু শক্তি থাকে। বাক্য দিব্যপ্রেরণা থেকে এলে তার শক্তি আরো বেশি হয়।

যেমন রাজসিক অহঙ্কার আছে, তেমনি সাত্ত্বিক অহঙ্কারও আছে। যেমন পাপ মানুষকে বদ্ধ করে, তেমনিই পুণ্যও বদ্ধ করে। সম্পূর্ণ বাসনাশূন্য হইয়া অহঙ্কার ত্যাগপূর্বক ভগবানকে আত্মসমর্পণ না করিলে পূর্ণ স্বাধীনতা নাই।

• যদি মনোময় জীবনে পৌছিয়া যে অন্নময় জীবন আমাদের ভিত্তি তাহাকে প্রত্যাখ্যান বা তাচ্ছিল্য করিয়া বসি অথবা আধ্যাত্মিক জীবনের আকর্ষণে যদি প্রাণময় ও মনোময় জীবনকে বিসর্জন দিয়া ফেলি তবে আমাদের মধ্যে ভগবানকে পূর্ণরূপে ফুটাইয়া তোলা হয়।

ঋষি অরবিন্দের প্রজ্ঞাপূর্ণ উক্তি l Rishi Aurobindo Ghosh Quotes

• শান্তি সত্য ইত্যাদি আগে ভিতরে স্থাপিত হয়, তারপর বাহিরে কার্যে পরিণত হয়।

• সৃষ্টি ও স্রষ্টা, এক ছাড়া অন্য কিছু হইতে পারে না, সৃষ্টি স্রষ্টার আত্মসত্তা, চিৎশক্তি এবং আনন্দ স্বরূপেরই একটা ছন্দ, একটা খেলা, একটি ঘূর্তি বা পরিণতি।

• ব্রহ্মতেজই সত্ত্বগুণের মুখ্যফল, ক্ষত্রতেজ ব্রহ্মতেজের ভিত্তি। আঘাত পাইলে শান্ত ব্রহ্মতেজ হইতে ক্ষত্রত্রেদের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়, চারিদিক জ্বলিয়া উঠে। যেখানে ক্ষত্রতেজ নাই সেখানে ব্রহ্মতেজ টিকিতে পারে না।

• ভ্রাতৃত্ব সাম্যের প্রতিষ্ঠা, ভ্রাতৃত্বের অবর্তমানে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। ভ্রাতৃভাব থাকিলে ভ্রাতৃত্ব। য়ুরোপে ভ্রাতৃভাব নাই, য়ুরোপে সাম্য ও স্বাধীনতা কলুষিত, অপ্রতিষ্ঠিত, অসম্পূর্ণ-এইজন্য য়ুরোপে গণ্ডগোল ও বিপ্লব নিত্য অবস্থা হইয়া দাঁড়াইতেছে। আমাদের দেশে ও য়ুরোপে মুখ্য প্রভেদ এই যে, আমাদের জীবন অন্তর্মুখী, য়ুরোপের জীবন বহির্মুখী। আমরা ভাবকে আশ্রয় করিয়া পাপপুণ্য ইত্যাদির বিচার করি, য়ুরোপ কর্মকে আশ্রয় করিয়া পাপপুণ্য ইত্যাদির বিচার করে।

• জীবন হল শান্তভাবে বসে মাকে স্মরণ করে মায়ের কাছে নিজেকে খুলে রাখ- ধ্যানের নিয়ম এই।

• আদর্শ সমাজ মনুষ্য-সমষ্টির অন্তরাত্মা ভগবানের বাহন, জগন্নাথের যাত্রার রথ। ঐক্য, স্বাধীনতা, জ্ঞান, শান্তি সেই রথের চারিচক্র।

• যখন চেতনা বিশাল ও বিশ্বময় হয় আর সমস্ত বিশ্বেই মাকে দেখা যায় তখন অহং আর থাকে না, থাকে শুধু মায়ের কোলে তোমার আসল সত্তা, মায়ের সন্তান মায়ের অংশ।

ঋষি অরবিন্দের বানী l জীবনদর্শন নিয়ে শ্রী অরবিন্দের বাণী

• চিন্তা হল অন্তরাত্মার মদিরা, কথা হল ভূঙ্গার; ভোজনশালা, জ্ঞানীর অন্তরাত্মা হল ভোক্তা।

• আমরা দেখিতে পাই যে স্মৃতিরূপে এই বৃত্তি বা ক্রিয়াপদ্ধতিকে মন দুইভাবে প্রয়োগ করে- আত্মস্মৃতিরূপে এবং অনুভবের স্মৃতিরূপে।

• রাজনীতিও ধর্ম, কাব্য রচনাও ধর্ম, চিত্র লিখনও ধর্ম, মধুর গানে পরের মনোরঞ্জন সম্পাদনও ধর্ম। যাহার মধ্যে স্বার্থ নাই, তাহাই ধর্ম, সেই কর্ম বড় হউক, ছোট হউক।

• দর্শনশাস্ত্র মন সম্বন্ধে কতকগুলি আন্দাজমাত্র। ধর্ম কিন্তু প্রত্যক্ষানুভূতির ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রত্যক্ষদর্শন, যা জ্ঞানের একমাত্র ভিত্তি-তারই ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেক দর্শন অনন্ত সত্যের এক একটি দিক, বুদ্ধির সম্মুখে শৃঙ্খলিতভাবে উপস্থিত করে। অনন্ত ব্রহ্মের অনন্ত বিকাশ, অনন্ত ব্রহ্মে পৌঁছিবার পথও অগণ্য।

• কৃপা ও দয়া স্বতন্ত্র ভাব, এমনকি কৃপা দয়ার বিরোধী ভাবও হইতে পারে।…সমগ্র মানবজাতির বা দেশের দুঃখমোচন করিতে উঠিলাম, সেই ভাব দয়ার। রক্তপাতের ভয়ে, প্রাণীহিংসার ভয়ে সেই পুণ্যকার্যে বিরত হইলাম, জগতের জাতির দুঃখের চিরস্থায়িতার সায় দিলাম, এই ভাব কৃপার। কাতরতা দয়া নহে, কৃপা। দয়া বলবানের ধর্ম, কৃপা দুর্বলের ধর্ম।

• সূক্ষ্মদৃষ্টির চরম পরিণামকে দিব্যচক্ষু বলে, তাহার প্রভাবে দূরস্থ, গুপ্ত বা অন্যলোকগত বিষয় সকল আমাদের জ্ঞানগোচর হয়।

• ধর্মের উদ্দেশ্য ভগবৎপ্রাপ্তি। ভগবৎপ্রাপ্তির দুই মার্গ, বিদ্যাকে আয়ত্ত করা এবং অবিদ্যাকে আয়ত্ত করা। দুইটিই আত্মজ্ঞান ও ভগবদ্দর্শনের উপায়। বিশ্বের মূল তথ্য চৈতন্য এবং চৈতন্যেই শক্তি।

• কি করে চিনবে তুমি জ্ঞান যখন আসবে, হে জিজ্ঞাসু? কি করে চিনবে তুমি আলো যখন ফুটে উঠবে, হে সাক্ষী? আমি শুনব আমার অন্তরে ভগবানের কণ্ঠ জ্ঞানে বিনয়ে আমি ভরে উঠব আমি হয়ে উঠব তরু যেন আলো আহরণ করব খাদ্যের মতো, পান করব তার মধুময় অমৃতরস।

• জাতীয় মহত্ত্ব কেবল ক্ষত্রতেজের ওপর প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না, চতুর্বর্ণের চতুর্বিধ তেজেই সেই মহত্ত্বের প্রতিষ্ঠা। বেদের বৈশ্বদেব্য জ্ঞান ও দেবজীবন সাধনা, উপনিষদের আত্মজ্ঞান ও ব্রহ্মপ্রাপ্তির সাধনা দুইটি সমন্বয়ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বপুরুষ ও বিশ্বশক্তির নানা দিক, ব্রহ্মের সকল তত্ত্বকে একত্র করিয়া বৈশ্বদেব্য, সর্ব্বম ব্রহ্মের অনুভূতি ও অনুশীলন তাহার মূল কথা।

• একই সত্তা, একই শক্তি, একই আনন্দ, আত্মশক্তি বা আত্মরূপায়ণের নানা বিচিত্র লীলায় সদা রত থাকিয়া

বিভিন্ন বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হইয়া প্রত্যেকের ভিতর হইতে যেন বলে ‘এই ত আমি।”

• আমরা দেশকালাতীত নহি, আমরা জগৎ মিথ্যা বলিবার অধিকারী নহি। দেশকালের মধ্যে জগৎ মিথ্যা নহে, জগৎ সত্য।

• আত্মাই হইয়া উঠিয়াছে পতঙ্গ বা পক্ষী বা পশু বা মানব, অথচ এই সমস্ত পরিবর্তন এবং রূপান্তরের মধ্যে আত্মা আত্মাই আছে, কেননা অন্তহীন বৈচিত্র্য এবং বহুত্বরূপে সেই পরম একই আপনাকে অনন্তভাবে প্রকাশ করিতেছেন।

• আত্মা ব্রহ্মের সেই বিভাব যাহার মধ্যে আমরা যুগপৎ জীবভূত। বিশ্বাত্মক এবং বিশ্বাতীত স্বরূপের অন্তরঙ্গ অনুভব।

FAQ :

অরবিন্দের মতে শিক্ষার লক্ষ্য কি?

শ্রী অরবিন্দ জোর দিয়েছিলেন যে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য আধ্যাত্মিক বিকাশকে উৎসাহিত করা। তাঁর মতে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে তাঁকে আলাদা করার কিছু উপাদান রয়েছে। তার নিজের কথায় – “শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্রমবর্ধমান আত্মাকে নিজেরাই এমনভাবে আঁকতে সাহায্য করা যে এটি সর্বোত্তম এবং এটি একটি মহৎ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।”

অরবিন্দের দর্শন কি?

অরবিন্দের জীবন দর্শন হল আদর্শবাদ, বাস্তববাদ, প্রকৃতিবাদ এবং বাস্তববাদের সংশ্লেষণ। তাঁর মতে, জ্ঞান (জ্ঞান), ভক্তি (ভক্তি) এবং কর্ম (কর্ম নীতি) মানুষকে ঐশ্বরিক পথে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আধ্যাত্মিকতা, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তির সংশ্লেষণ একটি সুস্থ ব্যক্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।

অরবিন্দ আশ্রম পুদুচেরিতে কেন?

ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল কিন্তু পন্ডিচেরি ছিল নিরপেক্ষ । তাই তিনি সেখানে তাঁর আশ্রম স্থাপনের জন্য নির্দেশিত হন।

শ্রী অরবিন্দের মতে চেতনা কি?

— শ্রী অরবিন্দ, দি লাইফ ডিভাইন, পৃ. 86. চেতনা শুধুমাত্র নিজের এবং জিনিস সম্পর্কে সচেতনতার শক্তি নয়, এটি একটি গতিশীল এবং সৃজনশীল শক্তিও রয়েছে বা আছে । এটি তার নিজস্ব প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করতে পারে বা প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে পারে; এটা শুধুমাত্র শক্তির জবাব দিতে পারে না, কিন্তু নিজের থেকে বাহিনী তৈরি বা বের করে দিতে পারে।

অরবিন্দ ঘোষের বিপ্লবী দলের নাম কি?

যুগান্তর , যার অর্থ “নতুন যুগ”, অরবিন্দ ঘোষ, তার ভাই বারীন ঘোষ, রাজা সুবোধ মালিক এবং ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদের একটি দল ছিল। অনুশীলন সমিতির প্রচারের জন্য তারা একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তৈরি করছিলেন, পত্রিকাটি পরবর্তীতে যুগান্তর নামে জনপ্রিয় হয়।

শ্রী অরবিন্দের মতে সত্তার তিন প্রকার কি কি?

শ্রী অরবিন্দ তিন ধরনের সত্তাকে সনাক্ত করেন: বাহ্যিক সত্তা, অভ্যন্তরীণ সত্তা এবং মানসিক সত্তা ।

Also Read : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ কয়েকটি বানী

raateralo.com

Leave a Comment