Raater Alo

সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ l Samaresh Majumdar Quotes 2024

সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ

সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ: সমরেশ মজুমদার একজন জনপ্রিয় বাঙ্গালী লেখক এবং উপন্যাসিক। তিনি ১০ মার্চ ১৯৪২ (২৬ ফাল্গুন, ১৩৪৮ বাংলা) সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার অনিমেষ সিরিজের গল্প গুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই সিরিজের দ্বিতীয় উপন্যাস কালবেলা সাহিত্য একাডেমী পুরুষ্কার লাভ করে ১৯৮৪ সালে। গোয়েন্দা চরিত্র অর্জুন তার জনপ্রিয় একটি সৃষ্টি। তার লেখনীতে উত্তর বঙ্গের বেশ প্রভাব রয়েছে এবং তা তার অনেক উপন্যাসেই তার প্রমাণ মিলে। তিনি তার গল্প, উপন্যাসের মাধ্যমে যে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতেন তাতে উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক অনেক কিছুই উঠে আসতো। তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাস গুলোর মধ্যে রয়েছে – উত্তরাধিরকার, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিনী, সাহকাহনসহ বেশ কিছু উপন্যাস।পাশাপাশি তার নানামুখী, ব্যতিক্রমধর্মী বাণী মানুষের মনকে আলোকিত করেছে। মনে দাগ কাটা সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ নিয়েই আজকের আয়োজন।

সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ l Samaresh Majumdar Quotes 2024

পাঠক মনে জনপ্রিয় সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ

সমরেশ মজুমদারের উক্তি গুলো বেশি ভাগই তার লেখা গল্প, উপন্যাস থেকে নেয়া। তিনি তার গল্প, এবং গল্পের চরিত্রের মাধ্যমে মনে দাগ কাটা অসংখ্য বাণী করে গিয়েছেন। নীচে তার কিছু উপস্থাপন করা হল।

“ছাইটা হলো স্মৃতি, আগুনটা হলো বর্তমান”।

“মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়”।

“নিজের বোকামি বুঝতে পারার পর কারো দুঃখ হয়, কারো হাসি পায়।”

“ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা”।

“একটি একা মেয়ে ইচ্ছে করলেই বাজার যেতে পারে, ডাক্তার এর সঙ্গে দেখা করে ওষুধ আনতে পারে। কিন্তু এসব করণীয় কাজ কেউ আন্তরিকতার সাথে করে দিলে একধরনের আরাম হয়, মনের আরাম।”

“পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুদ, যাকে তুমি সবচেয়ে বেশী ভালবাস সেই তোমার দু:খের কারন হবে।”

উপরোক্ত সমরেশ মজুমদারের উক্তি “জ্যো‌ৎস্নায় বর্ষার মেঘ” শীর্ষক উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

“তুমি যদি জিততে চাও তাহলে তোমাকে নির্মম হতে হবে। অভিযানে বেরিয়ে দলের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিযান বাতিল হয়না, অসুস্থকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেই উপায় না থাকলে তাকে ফেলে রেখেই এগোতে হবে। এক্ষেত্রে দয়ামায়া ইত্যাদি ব্যাপারগুলো খবই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। কোনও কোনও মানুষ জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সময় এমনই কঠোর হন। তাদের নিষ্ঠুর বলা হয়। ইতিহাস ওইসব মানুষের জন্য শেষ পর্যন্ত জাযগা রাখে।”

উপরোক্ত সমরেশ মজুমদারের উক্তি ‘মনের মত মন’ শীর্ষক উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আরো পড়ে নিতে পাড়েন, আলোচিত এবং জনপ্রিয়>> রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি

গর্ভধারিণী উপন্যাস থেকে সংগ্রহীত সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয়  কিছু বাণী l সমরেশ মজুমদারের প্রেমের উক্তি

“পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না চাইলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদিপ বলেছিল, বাঙ্গালী মল মুত্র এবং বীর্য ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে জানে না”।

“নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েগুলো তাদের সব রকম কনজারভেটিভ ধারনা বুকে পুষে রেখে এমন ভাবভঙ্গী করে যেন পৃথিবীর সব ছেলেই তাদের দিকে হামলে পরেছে”।

‘মেয়েরা যেমন হয়’ উপন্যাস থেকে কিছু উক্তি l সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যের উক্তি

“মেয়েরা গণেশের মত, মা দূর্গার চারপাশে পাক দিয়ে যে জগত দেখে তাতেই তৃপ্তি আর পুরুষরা কার্তিকের মত সারা পৃথিবী ঘুরে আসে অথচ কি দেখে তা তারাই জানে না।”

“মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে তাকে ঘৃনা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ রেখে যায়।”

‘সাতকাহন’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহীত সমরেশ মজুমদারের উক্তি সমূহ l সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস থেকে উক্তি

“স্বাধীনতার জন্য যোগ্য হতে হবে তারপর বাইরের স্বাধীনতা আদায় করতে হবে।”

“শাসন শুনতে যতই খারাপ লাগুক, যে মানুষের জীবনে শাসন মানুষ থাকে না তার মত অভাগা আর কে আছে।”

“বিজ্ঞজনেরা বলে কখনও কাউকে ভালবাসলে তাকে বিয়ে করো না । ভালবাসা হল বেনারসী শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।”

“বিষয় সম্পত্তি মানুষকে নির্লজ্জ করে । বিশেষ করে আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে এবং সামনে কোন নির্দিষ্ট উপায় না থাকলে সে অসহায় হয়ে পড়ে । তরুণ বয়সে যা সহনীয় হয় যৌবন পেরিয়ে তা হয়ে দাঁড়ায় পীড়াদায়ক। তখন ডুবন্ত মানুষের পায়ের মতো মানুষের মন কিলবিল করতে থাকে একটু শক্ত জমির জন্য। ন্যায়, নীতি, স্নেহ, ভালবাসা ইত্যাদির ওপর নিজেকে স্তোক দেয়া পোশাক পড়িয়ে দিতে সে মোটেই দেরি করে না”।

“ভালবাসা কখনো কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মায় । কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে হয়তো সেই নম্রতা সইতে শেখায় । সয়ে গেলে একসময় ভালবাসা তৈরি হয়ে যায়।“

“মুখের উপর মনের কথা স্পষ্ট উচ্চারণ না করলে দুঃখগুলো দূরে থাকে”।

“প্রেমের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বোধহয় তার শেকড় মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে না”।

“মানুষ যখন কোন কিছুকে মরীয়া হয়ে আঁকড়ে ধরে তখন তার ওপর প্রচণ্ড নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । কিন্তু কোন কারণে অকৃতকার্য হলে সে দিশেহারা হয়ে যায় তা থেকে নতুন করে উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব”।

“যে নিজের চোখের জল ফেলে না অথচ ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হয় তার কষ্ট সবাই বুঝতে পারেনা”।

“মানুষের পায়ের তলায় শেকড় আছে । পুরনো জায়গা থেকে শেকড় তুলে নিতে তার যেমন বেশি সময় লাগে না তেমনি নতুন জায়গায় সেই শেকড় বসে যেতেও দেরি হয় না”।

“মরে যাওয়া মানুষ জীবিতদের মনে যে প্রতিক্রিয়া রেখে যায় তার দায় বইতে হয় অনেকদিন কারো কারো ক্ষেত্রে সারাজীবন”।

“পৃথিবীর অর্ধেক কাজ যুক্তি দিয়ে হয় না”।

“মেয়েরা হল জমির মত । তাদের চারপাশে নদীর স্রোত । ভাল বাঁধ না দিলে সেই জমি নদী গ্রাস করে নেবেই । আর বাঁধ ভেঙে মেয়েদের পক্ষে নদীর সঙ্গে লড়াই করা কতটা সম্ভব তা সময় বিচার করবে”।

“কোন মানুষের যদি জেদ, পরিশ্রম, সততা এবং সেই সঙ্গে প্রতিভা থাকে জীবন তাকে সাফল্য দেবেই।”

“সব কিছু মনের মত মেলে না, মানিয়ে নিতে হয় । মেনে নিলে একসময় ঠিক সুখ ফিরে আসে।”

“প্রতিটি সংসারের নিজস্ব কিছু সমস্যা থাকে । বাইরে থেকে দেখলে আঁচ করা যায় না।”

“বিয়ের পর প্রথম কিছুটা দিন যে কোন নতুন বউ নতুনই থাকে । তখন তার সঙ্গে একটু দূরত্ব রেখে কথা বলা, তিক্ততা এড়িয়ে চলা হয় । কিন্তু কয়েকটা দিন কাটলেই কখন সবার অজান্তে সে নিজের হয়ে যায় একসঙ্গে না থাকলেও।”

“বিজ্ঞজনেরা বলে জীবনযাপন বড় সহজ ব্যাপার যদি মানিয়ে চলতে পার । হংসের মত দুধটুকু খেয়ে জল ফেলে দাও, গায়ে মেখো না । কিংবা দুটোকে মিলিয়ে মিশিয়ে জটিল করতে যেও না । সংসারে থাকবে সন্ন্যাসীর মত । স্পর্শ করবে কিন্তু ধরবে না । এই আলগাভাব যে যত ভাল রাখতে পারবে তার তত ঝামেলা কম।”

“আকাঙ্ক্ষার জিনিস পাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে শিশুরা যেমন হেলায় ফেলে রাখে ঠিক তেমনি করে ভালবাসা ফেলে রাখতে নেই । কারণ ভালবাসা প্রতিমুহূর্তে প্রতিপালিত হতে চায় তাকে আগলে রাখতে হয়।”

সমরেশ মজুমদারের উক্তি গুলোর মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং তথকালীন সমাজ ব্যবস্থার নির্মম অবকাঠামো এবং নিয়মনীতির কথা তুলে ধরেছেন। উন্মোচন করেছেন সমাজের চারিত্রিক মুখোশ। সমরেশ মজুমদার বেঁচে থাকবেন তাঁর গল্পে, উপন্যাসে, তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর উক্তিতে, বাণীতে।

এই আর্টিকেলটি লিখার সময় সাহায্য নেয়া হয়েছে সমরেশ মজুমদারের বিভিন্ন বই, উইকিপিডিয়া, এবং বিভিন্ন বাংলা ব্লগ থেকে।

Exit mobile version