চাণক্য নীতি এর প্রভাবশালী একটি উক্তি: “যে কেউ নিজেকে সংস্কৃত করলে সে একটি ভারতবর্ষই সংস্কৃত করে।” এই উক্তিটি প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্বপূর্ণতা সঠিকভাবে বোঝায়।
প্রাচীন ভারতের মহান চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, এবং শিক্ষক চাণক্য, যিনি কৌটিল্য নামেও পরিচিত, তাঁর অমূল্য রচনা চাণক্য নীতি দিয়ে আমাদের জীবনে অসংখ্য দিকনির্দেশনা এবং উপদেশ দিয়ে গেছেন। চাণক্য নীতি, বা চাণক্যের নীতিশাস্ত্র, বিশেষত বাংলা ভাষায় অনূদিত ‘Chanakya Niti Bengali‘ প্রতিটি বাঙালি পাঠকের কাছে এক অপার জ্ঞানের ভান্ডার। এই ব্লগে, আমরা চাণক্য নীতির মাধ্যমে মানুষ চেনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব, যা আমাদের জীবনযাত্রায় অনুসরণ করতে পারে অসামান্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
চাণক্য, যিনি কৌটিল্য এবং বিষ্ণুগুপ্ত নামেও পরিচিত, প্রাচীন ভারতের একজন অসামান্য রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষক ছিলেন। তার জীবনকাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী নির্দেশ করে, এবং তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান উপদেষ্টা এবং পরামর্শদাতা ছিলেন। চাণক্য তার অসাধারণ রাজনৈতিক চতুরতা, কূটনীতি এবং শাসন কৌশলের জন্য প্রশংসিত। তার লেখা ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থটি প্রাচীন ভারতের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক বিন্যাস এবং সামরিক কৌশলের ওপর এক অসামান্য পাঠ। এই গ্রন্থে তিনি রাজা এবং তার রাজ্যের সঠিক পরিচালনা, ন্যায়বিচার, আর্থিক পরিচালনা, স্পাইং, এবং যুদ্ধনীতি সম্পর্কে গভীর ও সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করেন। চাণক্য নীতি, আরেকটি প্রধান রচনা, জীবনের বিভিন্ন দিক ও মানব সম্পর্কে গভীর উপদেশ প্রদান করে। চাণক্যের উপদেশ এবং দর্শন আজও নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা, এবং ব্যক্তিগত উন্নতিতে মানুষকে প্রেরণা দেয়।
Table of Contents
Raateralo.com
মানুষ চেনার উপায়: চাণক্যের দৃষ্টিতে
চাণক্য নীতি বলে, মানুষের প্রকৃত চরিত্র বোঝার জন্য বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। এই নীতিগুলো যুগে যুগে মানুষের সত্যিকারের অন্তরের দিক চেনাতে সাহায্য করে।
১. সংকটের সময়ে পরীক্ষা
চাণক্য বলেছেন, মানুষের আসল চরিত্র সংকটের সময়ে বেরিয়ে আসে। কেউ যদি দুর্দিনে আপনার পাশে দাঁড়ায়, তাহলে বুঝবেন সে আপনার আসল বন্ধু।
২. অর্থের লেনদেনে চরিত্রের পরীক্ষা
চাণক্য নীতি অনুযায়ী, অর্থের লেনদেনের সময়ে মানুষের চরিত্রের আসল রূপ ফুটে ওঠে। যে ব্যক্তি অর্থ প্রদানে সততা দেখায় এবং ঋণ গ্রহণে দায়িত্বশীল থাকে, তাকে বিশ্বাস করা যায়।
৩. বিপদে সহায়তা
একজন মানুষের আসল চরিত্র তখন বেরিয়ে আসে যখন তিনি অন্যের বিপদে সহায়তা করেন। চাণক্য মতে, স্বার্থপরতা বাদ দিয়ে যে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে, সেই সত্যিকারের মানুষ।
৪. কথা ও কাজে সামঞ্জস্য
মানুষের কথা এবং কাজে সামঞ্জস্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। চাণক্য বলেছেন, যার কথা ও কাজে মিল রয়েছে, সেই ব্যক্তি সত্যিকারের বিশ্বাসী এবং সম্মানের যোগ্য।
৫. ব্যক্তিত্বের প্রকাশ
একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব তার আচার-আচরণ, পোশাক, এবং কথোপকথনে প্রকাশ পায়। চাণক্য নীতি মতে, সুশৃঙ্খল ও ভদ্র ব্যবহার একজন মানুষের আত্মসম্মানের পরিচায়ক।
চাণক্য নীতির মূল বৈশিষ্ট্য
চাণক্য নীতি মানুষের চরিত্র, নৈতিকতা, আদর্শ, শাসন পদ্ধতি, সমাজ বিন্যাস, অর্থনীতি, শিক্ষা, এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর দর্শন ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ সম্বলিত। এই নীতিগুলি এখনও আমাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক এবং অনুসরণীয়।
- চরিত্র নির্মাণ: চাণক্য নীতি মনে করে, একজন মানুষের আসল পরিচয় তার চরিত্রে। সৎ চরিত্র ও উচ্চ নৈতিকতাই একজন ব্যক্তির সফলতা এবং সম্মানের মূল চাবিকাঠি।
- রাজনীতি ও শাসন: চাণক্য শাসনতন্ত্রে নীতি ও ন্যায়ের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, একজন শাসকের উচিত প্রজাদের স্বার্থে কাজ করা এবং সুশাসনের মাধ্যমে রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
- অর্থনীতি: চাণক্য অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার উপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, সমৃদ্ধি এবং স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের জন্য সুচিন্তিত ও বিবেচনাপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অপরিহার্য।
- শিক্ষা ও জ্ঞান: চাণক্যের মতে, শিক্ষা এবং জ্ঞান হল মানুষের প্রকৃত সম্পদ। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি সঠিক নৈতিক দিকনির্দেশনা ও জীবনের সঠিক পথ চিনতে সহায়তা করে।
শিক্ষা সম্পর্কে চানক্য নীতি II শিক্ষায় সাফল্য পেতে চাণক্যের পরামর্শ II চানক্য নীতি অনুযায়ী ছাত্রদের করণীয় II
সময়ের মধ্যে কাজ পূর্ণ করুন
চাণক্য নীতি অনুযায়ী যে কোনও কাজ পূর্ণ করার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। তাই পড়ুয়াদের নিজের সমস্ত কাজ সঠিক সময়ের মধ্যে করার উপদেশ দেন আচার্য চাণক্য।
শৃঙ্খলাবদ্ধতা
শৃঙ্খলাবদ্ধতার বিষয় ছাত্রদের সঠিক ধারণা থাকা উচিত। প্রত্যেকটি ছাত্রকে শিক্ষা জীবনে অনুশাসনের গুরুত্ব বোঝা উচিত। যে পড়ুয়ারা অনুশাসন ও শৃঙ্খলাবদ্ধতার গুরুত্ব স্বীকার করেন, তাঁদের সাফল্য লাভের জন্য অধিক সংঘর্ষ করতে হয় না। এমন ছাত্ররা সহজে নিজের লক্ষ্য লাভ করতে পারেন।
কুসঙ্গ এড়িয়ে যান
কুসঙ্গে ফাঁদে পড়লে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অপচয় হয়। আচার্য চাণক্য জানাচ্ছেন যে, ছাত্রদের সবসময় কুসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ কুসঙ্গ পড়ুয়াদের জীবন ধ্বংস করে দেয়। ছাত্রজীবনের ওপর বন্ধুদের সঙ্গ বিশেষ প্রভাব ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রদের খাঁটি ও সৎ বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা উচিত।
আসক্তি ত্যাগ করুন
আচার্য চাণক্য বলেন, পড়ুয়াদের নেশার আসক্তি থেকে দূরে থাকা উচিত। বদঅভ্যাস সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি যে কোনও ধরনের আসক্তি বিশেষত মাদকাসক্তি শরীর, মন ও অর্থ ধ্বংস করে। এ ছাড়াও এর ফলে মান-সম্মানহানি হয়। নানান সমস্যায় জীবন জড়িয়ে যায়। মাদকাসক্তি বা কুঅভ্যাস কেরিয়ার ধ্বংস করতেও বিলম্ব করে না।
আলস্য ত্যাগ করুন
চাণক্য নীতি অনুযায়ী আলস্য পড়ুয়াদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই আলস্য ত্যাগ করা উচিত। আচার্য চাণক্য জানান যে, একবার লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর, তা পূরণের জন্য দিন-রাত এক করে দেওয়া উচিত। সাফল্য লাভ না-করার জন্য সেই লক্ষ্যই হতে হবে পড়ুয়াদের ধ্যান-জ্ঞান।
বেশি হাসি-ঠাট্টা না করা
চাণক্যের মতে, যে ছাত্রছাত্রীরা বেশি কথা বলে, হাসি-ঠাট্টা করে, তারা ধীরে ধীরে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা মতভেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিক্ষার্থীর উচিত তার সীমার মধ্যে থেকে হাসি-ঠাট্টা করা। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ চাণক্য নীতি অনুযায়ী, যে ছাত্র রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে জ্ঞানী হয়েও একজন অজ্ঞের মতোই থেকে যায়। কারণ মানুষ রেগে গেলে তার চিন্তাভাবনা ও বোঝার ক্ষমতা কমে যায়। তাই বিদ্যার্থীদের উচিত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা।
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ
চাণক্য নীতি অনুযায়ী, যে ছাত্র রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে জ্ঞানী হয়েও একজন অজ্ঞের মতোই থেকে যায়। কারণ মানুষ রেগে গেলে তার চিন্তাভাবনা ও বোঝার ক্ষমতা কমে যায়। তাই বিদ্যার্থীদের উচিত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা।
লোভ থেকে দূরে থাকা
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে লোভ থাকা উচিত নয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর লোভ সংবরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের একটাই জিনিসের প্রতি লোভ থাকা উচিত আর তা হল জ্ঞান অর্জন। সাজগোজ না করা আচার্য চাণক্যের মতে, ছাত্রজীবনে সাজগোজ, মেকআপ থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারণ যে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র সাজ-সজ্জায় মনোনিবেশ করে, তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ থাকে না।
Chanakya Niti for Money: চাণক্যের এই ৬ নীতি মেনে চললেই বছরভর ভরা থাকবে সিন্দুক! অর্থ উপার্জনে চানক্য নীতি II
১) আচার্য চাণক্যের মতে, যে ব্যক্তি দান-ধ্যান এবং বিনিয়োগের আকারে অর্থ ব্যবহার করেন, তিনি সঙ্কটের সময়েও খুব সুখে জীবন অতিবাহিত করেন। আর যাঁরা অযথা অর্থ ব্যয় করেন, তাঁদেরকে জীবনে দুর্দশা ও দারিদ্র্যের সম্মুখীন হতে হয়।
২) চাণক্য বলেছেন, অর্থ সঞ্চয় করতে চাইলে সর্বপ্রথম অপচয় বন্ধ করুন। যাঁরা কম খরচ করেন, তাঁদের আমরা কৃপণ বলি ঠিকই, কিন্তু খারাপ সময়ে তাঁদের কৃপণতাই সবচেয়ে কাজ দেয়। জীবনে যতই সঙ্কট আসুক না কেন তাঁরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করেন।
৩) অর্থ উপার্জনের কিছু অংশ দাতব্য কাজে বিনিয়োগ করলে, ধন-সম্পদ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। দানের চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই। অসহায় ব্যক্তিকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করলে, দেবী লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়া যায়।
৪) চাণক্যের মতে, অর্থ খুব ভেবেচিন্তে ব্যয় করা উচিত। যতটা প্রয়োজন ততটাই অর্থ ব্যবহার করা ভালো।
৫) চাণক্য নীতি অনুসারে, সর্বদা ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা উচিত। যাঁদের ভবিষ্যতের জন্য কোনও বিনিয়োগ বা পরিকল্পনা নেই, তাঁদেরকে পরবর্তীকালে আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয়।
৬) বাড়ির সকলের সঙ্গে ভালোবেসে কথা বলা উচিত। গুরুজন এবং মহিলাদের সর্বদা সম্মান করে চলা উচিত। যে পরিবারে কলহ, বাদ-বিবাদ থাকে না, সেখানে সর্বদা মা লক্ষ্মী বিরাজ করেন।
চাণক্য নীতি: Chanakya Niti Bengali – রোজ সকালে করুন এই ৫ কাজ, লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য অবধারিত। সাফল্য অর্জনে চানক্য নীতি II সাফল্য অর্জনে চাণক্য নীতি I
চাণক্যের মতে, সাফল্য সেই ব্যক্তির কাছে আসে যিনি নির্ধারিত পথে চলেন। জীবনে লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়ার জন্য চাণক্য নানা উপদেশ দিয়েছেন। প্রতিদিন সকালে যদি চাণক্যের এই ৫টি উপদেশ মেনে চলতে পারেন, তাহলে সাফল্য অবধারিত।
raateralo.com
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা – আপনার জীবনের মূল লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে চাইলে ২৪ ঘণ্টার একটি মুহূর্তও নষ্ট করবেন না। বেশি রাত জাগবেন না এবং রোজ সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। তাহলেই আপনি সারা দিনের কাজ সময়মতো সম্পন্ন করতে পারবেন।
সারা দিনের পরিকল্পনা করুন – সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে একটুও সময় নষ্ট করবেন না। অলসতা ত্যাগ করে সারা দিনের জন্য একটা সুন্দর প্ল্যান করে নিন। যে ব্যক্তিরা সারা দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন, তারা জীবনে সফল হন।
আজকের কাজ, আজই করুন – চাণক্যের মতে, হারানো টাকা ফিরে পাওয়া গেলেও, কেটে যাওয়া সময় কোনও অবস্থাতেই ফিরে আসে না। তাই, আগামীকালের জন্য কোনও কাজ স্থগিত করবেন না। আজকের সব কাজ আজই সম্পন্ন করুন। সময়কে সম্মান করে চললে প্রতিটি কাজেই সাফল্য পাবেন।
ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করুন – আজকের এই ব্যস্ততার যুগে মানুষ নিজের খাওয়াদাওয়ার দিকে ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারেন না। কিন্তু সুস্থ থাকতে হলে সময়মতো খাওয়াদাওয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। তবেই পুরো উদ্যমে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন এবং সাফল্য পাবেন।
স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিন – শরীর অসুস্থ থাকলে জীবনের কোনও লক্ষ্যই পূরণ হবে না। তাই ফিট থাকতে প্রতিদিন সকালে হাঁটাচলা, যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন করুন। সুস্থ-সবল থাকলে পূর্ণ শক্তিতে সব কাজ করতে পারবেন।
Chanakya Niti: জীবনে এমন চরম ভুল কোনওদিন নয়! ঈশ্বরও মাফ করবেন না আপনাকে I Chanakya Niti : সন্তান হিসেবে পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য
সফল সন্তানের বাবা-মায়ের পরিচয় অনেক বড় হয়ে থাকে। বর্তমান সমাজে, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কে ফাটল ধরার নানা উদাহরণ পাওয়া যায়। এমনটার আভাসও দিয়েছেন আচার্য চাণক্য।
পিতা-মাতা হওয়া জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ। পৃথিবীর স্বর্গসুখ পাওয়া যায় এই সন্তানসুখেই। আচার্য চাণক্যের মতে, সন্তান ধারণের সুখের চেয়েও বেশি সুখ বয়ে আসে, যখন সন্তানরা বাবা-মায়ের নাম বিশ্বের প্রতিটি কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়ে ও বিখ্যাত হয়ে ওঠে। সবসময় বাবা-মায়েরা চায় সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। যে কাজই করুক না কেন, তাতেই সফল হয়ে ওঠে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই করে থাকেন, তাতে সন্তান যেন আরাম ও সুখশান্তি পেয়ে থাকে। সফল সন্তানের বাবা-মায়ের পরিচয় অনেক বড় হয়ে থাকে। বর্তমান সমাজে, বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কে ফাটল ধরার নানা উদাহরণ পাওয়া যায়। এমনটার আভাসও দিয়েছেন আচার্য চাণক্য।
মা, বাবা ও সন্তানদের সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ভাগ করে দিয়েছেন চাণক্য়। তিনি জানিয়েছেন, একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী, তা যদি ছোট থেকেই শিক্ষার মাধ্যমে বোঝানো হয়, তা পাপের বোঝা কোনও ভাবেই মাথায় এসে চেপে বসে না। এমন কিছু করবেন না যাতে সেই পাপ ঈশ্বরও কখনও ক্ষমা করতে পারবেন না।
জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ
চাণক্য নীতি বলেছেন যে একজন মানুষ অস্ত্রের চেয়ে তার কথায় অন্যকে বেশি আহত করতে পারেন। তিক্ত ও কটূ কথা এমন একটি জিনিস যা স্পর্শ না করেই অন্যকে আক্রমণ করা যায়। চাণক্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি তার জিহ্বার শক্তি নিজের বাবা-মার জন্য ব্যবহার করে তার চেয়ে বড় পাপ জীবনে আর কিছু হতে পারে না। এ কথার তাৎপর্য হল, যে ব্যক্তি পিতা-মাতার জন্য খারাপ কথা ও খারাপ ব্যবহার করেন, তিনিই হলেন সবচেয়ে বড় পাপী বা মহাপাপী হিসেবে গণ্য হোন।
এই ভুল ক্ষমারও অযোগ্য়
পিতা-মাতাকে ঈশ্বরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সন্তানের সুখের জন্য মা-বাবা সারাজীবন মাথা ঠুকে যেতে পারেন। চাণক্য বলেছেন, তীর থেকে নিক্ষিপ্ত তীর যেমন ফিরে আসে না, তেমনি জিভ দিয়ে বলা কথাও ফেরত নেওয়া যায় না। প্রায়শই একজন ব্যক্তি রাগ করে বাবা-মায়ের সঙ্গেও কটু কথা বলে, কিন্তু যখন পরিবেশ ও মানুষের রাগ পড়ে গিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হয়, তখন আফসোস ছাড়া মানুষের আর কিছুই বাকি থাকে না। মনে রাখা দরকার, একটি ভুল বাক্য বা শব্দ তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে আঘাত করতে পারে। এই অবস্থায় ক্ষমা করলেও এই ভুলকে ঈশ্বরও কখনও ক্ষমা করেন না।
Chanakya Niti For Decision Making: সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথায় রাখুন ৪ চাণক্য নীতি, সাফল্য গ্যারান্টি
যে কোনও বাধাই পেরোতে পারবেন চাণক্য নীতি মেনে চললে। মানুষকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। চাণক্যের বলা পরামর্শগুলি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নিন
আচার্য চাণক্য বলেছেন যে সাফল্য পেতে হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নিতে শিখতে হবে। চাণক্য মনে করেন যে কখনও কখনও লোকেরা আপনার সরল প্রকৃতির সুবিধা নিয়ে ফেলেন। সেজন্য একটু বুদ্ধিমান হওয়া এবং ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
অর্থ-ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ
চাণক্য নীতি অনুসারে,যতই অর্থের প্রাচুর্য থাকুক না কেন, অযথা অর্থ ব্যয় করা এড়িয়ে চলা উচিত। ভবিষ্যতে কঠিন সময় এড়াতে অর্থ জমিয়ে রাখুন। অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস আপনার ভবিষ্যতের জন্য উপকারী হবে। সঞ্চিত অর্থ থাকলে আপনি সহজেই যে কোনও সংকটের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।
লোভ থেকে দূরে থাকুন
লোভের কারণে অনেক সময় মানুষই ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে চলেন। যে কারণে তাঁকে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সঠিক-বেঠিক চিন্তা করুন। লোভের বশবর্তী হয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। লোভ পরিহার করে সিদ্ধান্ত নিন।
কঠোর পরিশ্রমে সাফল্য
চাণক্য নীতি অনুসারে, কঠোর পরিশ্রম এবং গুণ কোনও ব্যক্তিকে অর্থ উপার্জনে সাফল্য দেয়। তাঁর কখনও অর্থ, সুখ এবং সম্পদের অভাব হয় না। টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদের চেয়ে ভালো গুণের মাধ্যমেই মানুষ ধনী হয়। তাই কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে সৎ গুণই রাখা দরকার। তাহলেই মিলবে সাফল্য।
Disclaimer: এই আর্টিকেলটি সাধারণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা। Raateralo এর সত্যতা যাচাই করেনি এবং কাউকে মানতে বাধ্য করছে না।
চাণক্য নীতি দর্পণ সারাংশ:
১) যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না এবং শুধু অভিযোগ করে যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।
২) সকল উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর। সেজন্যে সবচেয়ে অধিক মনোযোগ দেয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে। তহবিল তসরুপ বা অর্থ আত্মসাতের চল্লিশটি পদ্ধতি আছে। জিহ্বা’র ডগায় বিষ রেখে যেমন মধুর আস্বাদন করা সম্ভব নয়, তেমনি কোন রাজ কর্মচারীর পক্ষে রাজার রাজস্বের সামান্য পরিমাণ না খেয়ে ফেলার ঘটনা অসম্ভব ব্যাপার। জলের নিচে মাছের গতিবিধি যেমন জল পান করে বা পান না করেও বোঝা সম্ভব নয়, অনুরূপ রাজ কর্মচারীর তহবিল তসরুপও দেখা অসম্ভব। আকাশের অতি উঁচুতেও পাখির উড্ডয়ন দেখা সম্ভব, কিন্তু রাজ কর্মচারীর গোপন কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সমভাবে অসম্ভব।”
৩) বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নিচ কারো থেকে জ্ঞান এবং নিচু পরিবার থেকে শুভলক্ষণা স্ত্রী – এসব গ্রহণ করা সঙ্গত।
৪) মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।
৫) যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্যে কোনকিছুই জয় করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।
৬) বিরাট পশুপালের মাঝেও শাবক তার মাকে খুঁজে পায়। অনুরূপ যে কাজ করে অর্থ সবসময় তাকেই অনুসরণ করে।
৭) মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন।
১) অতি পরিচয়ে দোষ আর ঢাকা থাকে না।
২) অধমেরা ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান চায়। উত্তমেরা শুধু মান চায়। মানই মহতের ধন।
৩) অনেকে চারটি বেদ এবং ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও আত্মাকে জানে না, হাতা যেমন রন্ধন-রস জানে না।
৪) অন্তঃসার শূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয় না, মলয়-পর্বতের সংসর্গে বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না।
৫) অবহেলায় কর্মনাশ হয়, যথেচ্ছ ভোজনে কুলনাশ হয়, যাচ্ঞায় সম্মান-নাশ হয়, দারিদ্র্যে বুদ্ধিনাশ হয়।
৬) অভ্যাসহীন বিদ্যা, অজীর্ণে ভোজন, দরিদ্রের সভায় কালক্ষেপ এবং বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা বিষতুল্য।
৭) অহংকারের মত শত্রু নেই।
৮) আকাশে উড়ন্ত পাখির গতিও জানা যায়, কিন্তু প্রচ্ছন্নপ্রকৃতি-কর্মীর গতিবিধি জানা সম্ভব নয়।
৯) আদর দেওয়ার অনেক দোষ, শাসন করার অনেক গুণ, তাই পুত্র ও শিষ্যকে শাসন করাই দরকার, আদর দেওয়া নয়।
১০) আপদের নিশ্চিত পথ হল ইন্দ্রিয়গুলির অসংযম, তাদের জয় করা হল সম্পদের পথ, যার যেটি ঈপ্সিত সে সেই পথেই যায়।
১১) আড়ালে কাজের বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু সামনে ভাল কথা বলে, যার উপরে মধু কিন্তু অন্তরে বিষ, তাকে পরিত্যাগ করা উচিত।
১২) ইন্দ্রিয়ের যে অধীন তার চতুরঙ্গ সেনা থাকলেও সে বিনষ্ট হয়।
১৩) উপায়জ্ঞ মানুষের কাছে দুঃসাধ্য কাজও সহজসাধ্য।
১৪) উৎসবে, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে, রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।
১৫) ঋণ, অগ্নি ও ব্যাধির শেষ রাখতে নেই, কারণ তারা আবার বেড়ে যেতে পারে।
১৬) একটি দোষ বহু গুণকেও গ্রাস করে।
১৭) একটি কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়, তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও বংশ দগ্ধ হয়।
১৮) একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়, তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়।
১৯) একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুণী পুত্র বরং ভাল। একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না।
২০) কর্কশ কথা অগ্নিদাহের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
২১) খেয়ে যার হজম হয়, ব্যাধি তার দূরে রয়।
২২) গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী হয়।
২৩) গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও জন্মায় তাতে কিছু আসে যায় না। নীচকুলে জন্মেও যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়, তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন।
২৪) গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন, তবে পৃথিবীতে এমন কোনও জিনিস নেই, যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে।
২৫) গৃহে যার মা নেই, স্ত্রী যার দুর্মুখ তার বনে যাওয়াই ভাল, কারণ তার কাছে বন আর গৃহে কোনও তফাৎ নেই।
২৬) চন্দন তরুকে ছেদন করলেও সে সুগন্ধ ত্যাগ করে না, যন্ত্রে ইক্ষু নিপিষ্ট হলেও মধুরতা ত্যাগ করে না, যে সদ্বংশজাত অবস্থা বিপর্যয়েও সে চরিত্রগুণ ত্যাগ করে না।
২৭) তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয়: নিজের পত্নীতে, ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু অধ্যয়ন, জপ, আর দান এই তিন বিষয়ে যেন কোনও সন্তোষ না থাকে।
২৮) দারিদ্র্য, রোগ, দুঃখ, বন্ধন এবং বিপদ- সব কিছুই মানুষের নিজেরই অপরাধরূপ বৃক্ষের ফল।
২৯) দুর্জনের সংসর্গ ত্যাগ করে সজ্জনের সঙ্গ করবে। অহোরাত্র পুণ্য করবে, সর্বদা নশ্বরতার কথা মনে রাখবে।
৩০) দুর্বলের বল রাজা, শিশুর বল কান্না, মূর্খের বল নীরবতা, চোরের মিথ্যাই বল।
৩১) দুষ্টা স্ত্রী, প্রবঞ্চক বন্ধু, দুর্মুখ ভৃত্য এবং সর্প-গৃহে বাস মৃত্যুর দ্বার, এ-বিষয়ে সংশয় নেই।
৩২) ধর্মের চেয়ে ব্যবহারই বড়।
৩৩) নানাভাবে শিক্ষা পেলেও দুর্জন সাধু হয় না, নিমগাছ যেমন আমূল জলসিক্ত করে কিংবা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও কখনও মধুর হয় না।
৩৪) পরস্ত্রীকে যে মায়ের মত দেখে, অন্যের জিনিসকে যে মূল্যহীন মনে করে এবং সকল জীবকে যে নিজের মত মনে করে, সে-ই যথার্থ জ্ঞানী।
৩৫) পাপীরা বিক্ষোভের ভয় করে না।
৩৬) পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে, দশ বছর অবধি তাদের চালনা করবে, ষোল বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করবে।
৩৭) পুত্র যদি হয় গুণবান, পিতামাতার কাছে তা স্বর্গ সমান।
৩৮) পুত্রকে যারা পড়ান না, সেই পিতামাতা তার শত্রু। হাঁসদের মধ্যে বক যেমন শোভা পায় না, সভার মধ্যে সেই মূর্খও তেমনি শোভা পায় না।
৩৯) বইয়ে থাকা বিদ্যা, পরের হাতে থাকা ধন একইরকম। প্রয়োজন কালে তা বিদ্যাই নয়, ধনই নয়।
৪০) বিদ্বান সকল গুণের আধার, অজ্ঞ সকল দোষের আকর। তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য।
৪১) বিদ্যাবত্তা ও রাজপদ এ-দুটি কখনও সমান হয় না। রাজা কেবল নিজদেশেই সমাদৃত, বিদ্বান সর্বত্র সমাদৃত।
৪২) বিদ্যা ব্যতীত জীবন ব্যর্থ, কুকুরের লেজ যেমন ব্যর্থ, তা দিয়ে সে গুহ্য-অঙ্গও গোপন করতে পারে না, মশাও তাড়াতে পারে না।
৪৩) বিদ্যাভূষিত হলেও দুর্জনকে ত্যাগ করবে, মণিভূষিত হলেও সাপ কি ভয়ঙ্কর নয়?
৪৪) বিদ্যার চেয়ে বন্ধু নাই, ব্যাধির চেয়ে শত্রু নাই। সন্তানের চেয়ে স্নেহপাত্র নাই, দৈবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বল নাই।
৪৫) বিনয়ই সকলের ভূষণ।
৪৬) বিষ থেকেও অমৃত আহরণ করা চলে, মলাদি থেকেও স্বর্ণ আহরণ করা যায়, নীচজাতি থেকেও বিদ্যা আহরণ করা যায়, নীচকুল থেকেও স্ত্রীরত্ন গ্রহণ করা যায়।
৪৭) ভোগবাসনায় বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়।
৪৮) মিত ভোজনেই স্বাস্থ্যলাভ হয়।
৪৯) যশবানের বিনাশ নেই।
৫০) যারা রূপযৌবনসম্পন্ন এবং উচ্চকুলজাত হয়েও বিদ্যাহীন, তাঁরা সুবাসহীন পলাশ ফুলের মত বেমানান।
৫১) যে অলস, অলব্ধ-লাভ তার হয় না।
৫২) যে গাভী দুধ দেয় না, গর্ভ ধারণও করে না, সে গাভী দিয়ে কী হবে! যে বিদ্বান ও ভক্তিমান নয়, সে পুত্র দিয়ে কী হবে!
৫৩) রাতের ভূষণ চাঁদ, নারীর ভূষণ পতি, পৃথিবীর ভূষণ রাজা, কিন্তু বিদ্যা সবার ভূষণ।
৫৪) শাস্ত্র অনন্ত, বিদ্যাও প্রচুর। সময় অল্প অথচ বিঘ্ন অনেক। তাই যা সারভূত তারই চর্চা করা উচিত। হাঁস যেমন জল-মিশ্রিত দুধ থেকে শুধু দুধটুকুই তুলে নেয়, তেমনি।
৫৫) সত্যনিষ্ঠ লোকের অপ্রাপ্য কিছুই নাই।
৫৬) সত্যবাক্য দুর্লভ, হিতকারী-পুত্র দুর্লভ, সমমনস্কা-পত্নী দুর্লভ, প্রিয়স্বজনও তেমনি দুর্লভ।
৫৭) সাপ নিষ্ঠুর খলও নিষ্ঠুর, কিন্তু সাপের চেয়ে খল বেশি নিষ্ঠুর। সাপকে মন্ত্র বা ওষধি দিয়ে বশ করা যায়, কিন্তু খলকে কে বশ করতে পারে?
৫৮) সুবেশভূষিত মূর্খকে দূর থেকেই দেখতে ভাল, যতক্ষণ সে কথা না বলে ততক্ষণই তার শোভা, কথা বললেই মূর্খতা প্রকাশ পায়।
৫৯) হাতি থেকে একহাজার হাত দূরে, ঘোড়া থেকে একশ হাত দূরে, শৃঙ্গধারী প্রাণী থেকে দশহাত দূরে থাকবে। অনুরূপ দুর্জনের কাছ থেকেও যথাসম্ভব দূরে থাকবে।
একজন আদর্শ পুরুষের মধ্যে কোন গুণগুলি থাকা উচিত? মহিলারা তাঁর প্রিয় পুরুষের মধ্যে কোন গুণগুলি খোঁজেন? জেনে নিন এই সম্পর্কে কী বলেছেন চাণক্য।
একজন মানুষের চরিত্র সম্পর্কে জানা যায় তাঁর ব্যবহার ও কথাবার্তা থেকে। সব মহিলাই তাঁর জীবনে এমন একজন পুরুষকে চান, যাঁর মধ্যে নানা গুণ রয়েছে। চাণক্য বলেছেন যে কোনও কোনও বিশেষ গুণ পুরুষদের মধ্যে সব সময় খোঁজেন মহিলারা। একজন আদর্শ পুরুষের মধ্যে কোন গুণগুলি থাকা উচিত এবং মহিলারা তাঁর প্রিয় পুরুষের মধ্যে কোন গুণগুলি খোঁজেন? জেনে নিন এই সম্পর্কে কী বলেছেন চাণক্য।
সততা
চাণক্য বলেছেন যে ব্যক্তি তাঁর আচার, ব্যবহার ও মানসিকতায় সত্ নন, তাঁর প্রতি কোনও মহিলা আকৃষ্ট হন না। কারণে যে কোনও সম্পর্কের মূল ভিত্তি হল সততা। যে সম্পর্কের মধ্যে সততা নেই, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সেই সম্পর্ক কখনোই সুখী ও স্থায়ী হতে পারে না। সত্ ব্য়ক্তি কখনোই তাঁর স্ত্রী বা প্রেমিকাকে ঠকান না। তাই সত্ পুরুষের প্রতি মহিলারা আকৃষ্ট হন সহজেই। আর এই আকর্ষণ কখনোও ফিকে হয় না।
সুন্দর ব্যবহার
পুরুষদের সুন্দর ভদ্র ব্যবহার সব মহিলারাই দারুণ পছন্দ করেন। যে পুরুষের ব্যবহার সুন্দর, মনের দিক থেকেও তিনি সুন্দর। তাই এই ভদ্র পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হন মহিলারা। নিজের সুন্দর কথা দিয়ে এরা মহিলাদের হৃদয় জয় করে নেন সহজেই। অন্যদিকে রুক্ষ কর্কশ ব্যবহার যে পুরুষদের, তাঁদের থেকে দূরেই থাকতে চান যে কোনও মহিলাই।
ভালো শ্রোতা
আমরা সবাই নিজের কথা বলতে ভালোবাসি। কিন্তু অন্যের কথা মন দিয়ে শুনি ক’জন? তাই যে পুরুষ ভালো শ্রোতা হন, তাঁকে পছন্দ করেন সব মহিলাই। মহিলারা এমন কাউকে চান, যিনি তাঁদের মনের কথা মন দিয়ে শুনবেন। তাই মহিলাদের মন জয় করতে শুধু নিজের কথা বললেই হবে না, অন্যের কথা ধৈর্য্য ধরে শোনারও ক্ষমতা থাকা চাই।
ভুল করলে ক্ষমা চাওয়ার ক্ষমতা
ভুল কমবেশি আমরা সবাই করে থাকি। কিন্তু তিনিই আদর্শ মানুষ, যিনি নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে পারেন। আমরা অনেকেই ভুল করেও ইগোর কারণে ক্ষমতা চাইতে ইতস্তত বোধ করি। যে পুরুষ নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে কুণ্ঠা বোধ করেন না, তাঁর প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়েন মহিলারা।
Chanakya Niti: জীবনে সাফল্য পেতে এই ৫ ত্যাগ করা জরুরি, জানুন চাণক্যের পরামর্শ
চাণক্য, ভারতীয় ঐতিহাসিক ব্যক্তির একজন প্রসিদ্ধ রাজনীতিবিদ এবং বিচারক, যার উপদেশ এখনো আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। তাঁর পরামর্শের মধ্যে জীবনে সাফল্য অর্জনের প্রধান মূল হিসেবে এই ৫ ত্যাগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। তার অনুসারে, সাফল্য অর্জনে এই ত্যাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি মূল উপায়। চলুন জেনে নেয়া যাক, জীবনে সাফল্য পেতে এই ৫ ত্যাগ করা জরুরি, জানুন চাণক্যের পরামর্শ
ভয়
আপনার সামনে যদি কোনও বড় লক্ষ্য থাকে, তাহলে প্রথমদিকে ব্যর্থতার সম্ভাবনাও বেশি হয়। আপনার মনের ভয়ই হল এই ব্যর্থতার কারণ। চাণক্য নীতি অনুসারে ভয় আমাদের মনের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে চান, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ভয় পেলে চলবে না। নিজে সঠিক পরিকল্পনা করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলুন।
লোকের কথা
কোনও কাজও বড় বা ছোট হয় না। চাণক্য বলেছেন, যে কাজে আপনি আগ্রহী এবং যে কাজ করার ক্ষমতা আপনার মধ্যে রয়েছে, সেই কাজে নিজের পুরো মনপ্রাণ লাগিয়ে দিন। কে কী বলল তাতে কান দেবেন না। লোকের কথায় কান দিলে ক্ষতি বই লাভ হয় না।
নেগেটিভ চিন্তা
একজন সাধারণ ঘরের সন্তান চন্দ্রগুপ্তকে নিজের কূটনৈতিক বুদ্ধির জোরে মগধের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন চাণক্য। এই ঘটনা আমাদের বোঝায় যে নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে আপনি সারা পৃথিবী জয় করতে পারেন। তাই সফল হতে সমস্ত নেগেটিভ চিন্তা মন থেকে সরিয়ে দিন এবং নিজের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখুন।
ভবিষ্যত্ নিয়ে চিন্তা
চাণক্যের পরামর্শ অনুসারে সফল ব্যক্তির বর্তমান জীবনে সঠিক পদক্ষেপ করে সামনে এগিয়ে যান। তাই ভবিষ্যত্ নিয়ে অনর্থক চিন্তা না করে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে সঠিক পদক্ষেপ করুন। তাহলেই ভবিষ্যত্ সুন্দর হবে।
অহংবোধ
অহংবোধ বা ইগো আমাদের জীবনের পথে এগিয়ে যেতে আটকায়। সাফল্য লাভ করা যতটা কঠিন, সেই সাফল্য ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন। কারণ একবার সাফল্য পেয়ে গেলে গর্ব ও অহংকার আমাদের মনে বাসা বাধে। আর অহংবোধ থেকেই শুরু হয় মানুষের পতন। তাই সাফল্য ধরে রাখতে নিজে গর্ব ত্যাগ করতে হবে।
সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন যে, “দেহের সৌন্দর্যের চাইতে চিন্তার সৌন্দর্য অধিকতর মোহময় ও এর প্রভাব যাদুতুল্য।” অন্যদিকে চাণক্য ছিলেন দক্ষ পরিকল্পনাবিদ। সিদ্ধান্তে তিনি ছিলেন অটল এবং অর্থহীন আবেগের কোন মূল্য ছিল না তার কাছে। নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন কঠোর।
সমাপ্তি
চাণক্য নীতি বাংলা অনুসরণ করে মানুষ চেনার উপায় সম্পর্কে জানা সম্ভব। এই নীতিগুলি শুধু প্রাচীন কালের জন্য নয়, বর্তমান সময়েও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। আসুন, চাণক্যের এই অমূল্য শিক্ষাকে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি এবং একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি।
1 thought on “চাণক্য নীতি (Chanakya Niti Bengali)-১০৯ টি গুরুত্বপূর্ণ চানক্য নীতি: নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের পাথেয় 2024”