Bangla Sad Story – কষ্ট জমানো ডাইরির পাতা-য় না বলা কথা | Story in Bengali 2024

By raateralo.com

Updated on:

বন্ধুরা বাংলা গল্প ও কবিতার আসরে আপনাদের স্বাগত। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরেকটি নতুন গল্প আপনাদের জন্য পরিবেশন করা হলো। আশাকরি আজকের গল্পটিও প্রতিদিনের মতো আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে।

Bangla Sad Story “কষ্ট জমানো ডাইরির পাতা-য় না বলা কথা” একটি অসাধারণ বাংলা দুঃখের গল্প। এই গল্পে আমরা পাব সাধারণ মানুষের সাধারণ কষ্টের অভিজ্ঞতা, তাদের অস্তিত্বের ভয়াবহ দুর্দান্ত সত্য, এবং তাদের মধ্যে যে ভালোবাসা, অবস্থা, এবং সহনীয়তা নিহিত রয়েছে। লেখকের কল্পনা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এই গল্পের কাহিনীকে একটি অদ্ভুত আর্ট ও ভাবনার রূপে প্রদর্শন করে। সাধারণ কাহিনীতে অসাধারণ মুমুর্ষুকতা এবং সামগ্রিক স্বাধীনতা বিষয়টি প্রকাশ পাওয়া যায়, যা পাঠকদের অনুভব করা হবে এবং তাদের বাস্তব জীবনের পরিস্থিতির সাথে সংকল্পনা বিস্তারিত করা হবে। “কষ্ট জমানো ডাইরির পাতা-য় না বলা কথা” বাংলা সাহিত্যে একটি অমর রচনা, যা আপনাকে আত্মবিশ্বাস এবং আশার সাথে আলোকিত করবে।

Bangla Sad Story – না বলা কথা

বাসায় প্রবেশ করে টেবিলে বসতেই ছাত্রী বলে উঠলো স্যার আপনার আন্ডার পেন্টটা কি খুব দামি? ক্লাস টেনে পড়ুয়া মেয়ের মুখে হটাৎ এমন কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। হা করে তাকিয়ে আছি উত্তর খোজার চেস্টায়, কেনো হটাৎ এই প্রশ্ন?

ছাত্রীটি আবার জিজ্ঞেস করলো – বলুন না স্যার কোন মার্কেট থেকে কিনলেন?

অবশেষে আমি ছাত্রীটিকে বললাম – দেখো রুমিলা, ফাজলামির সাথে তোমার বেয়াদবিটাও দিন দিন বাড়ছে।

তখন ছাত্রীটি উওরে বলল – কেনো স্যার, আমি শুনছি দামি কিছু কিনলে মানুষ সবাইকে দেখায়। যদি দামি পেন্ট না হতো তাহলে কি আর গেট খোলা রেখে সবাইকে দেখাতেন? হি হি হি… 

নিচের দিকে তাকাতেই  জিভে কামর দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলাম। লজ্জায় আর কিছু বলার থাকলো না আমার ছাত্রীটির বলা কথায়। মাথাটা নিচু করে ওকে পড়াতে লাগলাম আমি। ওর মুখের দিকে তাকাতেই কেমন যেন লজ্জা বোধ করছি। ও বার বার টেবিলের নিচে পা দিয়ে আমায় খোচাচ্ছে, আর মিঠি মিঠি হাসছে। বিষয়টা কিছুটা বুঝলেও না বুঝার ভান করলাম। কারণ এটা তার বয়সের দোষ। 

কিছুক্ষন পড়ানোর পরই বেড়িয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবছি ওর ফাজলামির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। ওকে আর পড়াতে যাবো না।

খুবই গরিব পরিবারের সন্তান আমি, পড়া লেখা চলছে বলে কোনো চাকরি বাকরি করতে পারছিনা। যার কারনে টিউশনি করেই নিজেকে চলতে হয়, সাথে বাবার ঔষধের খরচ।  

বাসায় গিয়ে দেখি বাবার ঔষধ শেষ। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র ৫০০ টাকা আছে। মাসের এখনো ৩-৪ দিন বাকি এই টাকা দিয়েই এই ৩-৪ দিন চলতে হবে। আপাতত বাবার ঔষধগুলো নিয়ে আসি বাকিটা পরে বুঝা যাবে। 

দুই দিন যেতেই আন্টি ফোন দিলো, কি হলো বাবা তুমি রুমিলাকে পড়াতে আচ্ছোনা কেনো?

কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছিনা। 

আর কি করার আন্টির জোড়াজুড়িতে আবার পড়াতে শুরু করলাম রুমিলাকে। 

একদিন রুমিলা হটাৎ আমার হাতটা ধরে ফেললো, বললো স্যার আপনাকে একটা কথা বলার আছে। আমি তার কথা না শুনলেও কিছুটা অনুমান করতে পারছি। তাই কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে ধমকের সুরে পড়তে বললাম। আর আন্টিকে সোজা বলে দিলাম আমি আর রুমিলাকে পড়াতে পারবোনা। 

বিকেলে হটাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো, রিসিভ করতেই বুঝলাম রুমিলা, কেটে দিতে চাইলে সে বললো, স্যার স্যার আমার কথাটাতো একবার শুনুন।

আচ্ছা বেশ, কি বলবে বলো।

স্যার আজকের রাতটাকি আমি আপনার বাসায় থাকতে পারি?

আমি শুনে অবাক! এই মেয়ে কিসব বেয়াদ্দপের মতো কথা বলছো, তোমার সাহস হয় কি করে এভাবে কথা বলার, আর কক্ষনো এই নাম্বারে ফোন দিবানা।

তার পর থেকে রুমিলা আর ফোন করেনি। 

এইদিকে বাবার শরীলটাও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই একটা প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে গেলাম, কারণ ওখানে চিকিৎসা ভালো হয়। 

ডাক্তার বললো, আমি নাকি একটু দেরি করে ফেলেছি। এখন বাবার অপারেশন করাতে হবে, তাই ২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। টিউশনি করে এতো টাকা যোগার করা আমার পক্ষ সম্ভব না।  

ভাইয়াকে ফোন দিলাম। আসলে ভাইয়া আমাদের সাথে থাকেনা। ভাইয়া আগেও এমন ছিলো তা না, বিয়ে আগে আমাদের সাথেই থাকতো। চাকরি করে যা পেতো তা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোই যেতো। কিন্তু ভাইয়ার বিয়ের পর থেকে অন্য রক্তের গ্রাণ পেয়ে নিজের রক্তকেই অবহেলা করতে শুরু করলো। 

ভাইয়াকে বাবার কথা জনাতেই বললো, আমার কাছেতো এখন তেমন টাকা পয়সা নেই। আর যা আছে তা হয়তো কয়দিন পর তোর ভাবির ডেলিভারিতে লেগে যাবে। আর বাবাতো আর আমার একার না, তোরও …. তখনি আমি ফোনটা কেটে দিলাম কারণ যা বুঝার আমি বুঝে গেছি। 

এর কাছ ওর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে করে অনেক কষ্টে এক লক্ষ টাকা যোগার করলাম। 

এক‌ লাক্ষ টাকা নিয়ে ডাক্তার বাবুর কাছে গেলাম, ডাক্তার বাবু বললো , ধুর মিয়া আপনার অভাবের কথা চিন্তা করে আমরা ২ লক্ষ টাকা চেয়েছি। অন্য কারো থেকে হলে ৩ লক্ষ টাকার কম নিতাম না। 

কোনো উপায় না পেয়ে ডাক্তার বাবুর পায়ে ধরে বললাম, প্লিজ ডাক্তার বাবু এর থেকে বেশি জোগার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

ডাক্তার বাবু মেজাজের সাথে বলে উঠলেন, তাহলে এখানে এলেন কেনো? কোনো সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অনেক কম টাকায় চিকিৎসা করাতে পারবেন।

উপায়ান্তর না পেয়ে বাবাকে নিয়ে গেলাম কাছের সরকারি হাসপাতালে। ওপরত্তয়ালার উপর ভরসা করলাম বাচা মরা তো তিনিই নির্ধারন করেন।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাবা এখন মোটামুটি সুস্থ। সেই দিনের পর থেকে ভাইয়ার সাথেও আর যোগাযোগ হয়নি।

আজ শুক্রবার। সকালে বসে বসে ফোনে গেম খেলছি এমন সময় আন্টির ফোন এলো, 

ফোন রিসিভ করতেই দেখি আন্টি কাঁদছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হলো আন্টি কাঁদছেন কেনো? 

কয়েক বার জিজ্ঞেস করার পর আন্টি কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন – বাবা রুমিলা, শুধু এটুকু বলে আবার কেঁদে দিলো।

আমি কিছু না বুঝতে পেরে আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে আন্টি?

বাবা তুমি একটু আমাদের বাসায় এসো – শুধু এটুকু 

বলেই ফোনটা কেটে দিলো।

তারাহুরা করে রুমিলার আইডি চেক করতেই একটা মেসেজ সামনে আসলো – “যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার ঘরে এসে ডায়রিটা নিবেন আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।”

রুমিলার নিথর দেহটা ফ্লোরে পরে আছে পাশে আঙ্কেল আন্টি বসে কাঁদছে। আমাকে দেখেই আন্টি এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

বিকেলের মধ্যেই দাফন কাফন সব শেষ। ঘরে আঙ্কেল আন্টিকে সান্তনা দিচ্ছি। হটাৎই রুমিলার দেওয়া শেষ মেসেজটার কথা মনে পড়লো। 

ওর রুমে গিয়ে ওর ডাইরিটা খুললাম- 

স্যার,

আমি জানি এই ডায়রিটা যখন আপনার হাতে যাবে তখন আমি আর থাকবোনা। আপনি অনেক সময় আমাকে বলতেন, আমি ফাজিল মাঝে মাঝে বেয়াদবিও করি। কিন্তু জানেন স্যার আমার ফাজলামি টুকু সুধু আপনি আসার পর থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ততেই সিমাবদ্ধ ছিলো। আপনি সবসময় যাদেরকে আমার মা বাবা বলে জানতেন তারা আসলে আমার মা বাবা নয়। আমার মা তাদের বাসায় কাজ করতো। মা যখন মারা যায় তখন আমার বয়স ১০ বছর। তাদের কোনো সন্তান না থাকায় মা মারা যাওয়ার পর ওরা আমাকে তাদের সাথে রেখে দেয়। আসলে স্যার একটা কথা আছে, পর কখনো আপন হয়না।

যখন আমি তাদের বাসায় থাকা শুরু করি তখন থেকেই আঙ্কেল মানে বাবা আমায় খুব আদর করতো। তখন ভাবতাম আঙ্কেল হয়তো আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু যখন আমার বারো তেরো বছর তখন থেকে বুঝতাম আঙ্কেলের আদরটাতেও এক ধরনের শয়তানি লুকিয়ে থাকতো। যখন খেয়াল করতাম সে আমাকে আদর করার নামে আমার স্পর্শ কাতর অঙ্গ গুলোতে হাত দিতো, তখন থেকে তার কাছ থেকে দুরে দুরে থাকতাম। যৌন মিলনের প্রথম ছোয়া পেলাম যখন ক্লাস টেনে উঠি। তাও আবার নিজের বাবা ডাকা লোকটার কাছ থেকে। 

সেদিন আন্টি মানে মা বাড়িতে ছিলোনা। তখন আমাকে ভয় দেখানোর কারনে কাওকে কিছু বলিনি।

কিন্তু সেই দিন যখন শুনলাম মা একদিনের জন্য তার বান্ধবির বাসায় যাচ্ছে, তখন আমি আপনাকে এই বিষয়ে বলতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু আপনি আমায় ভুল বুঝলেন। ফোনেও আপনার কাছে একটি রাত হেল্প চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি পুরোটা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলেন। আমার আর কিচ্ছু করার ছিলো না। আচ্ছা স্যার, তার একটা মেয়ে থাকলে আমার মতো কি সেও তাকে বাবা ডাকতো না? তখন কি তার সাথেও সে এমন করতো? 

সেদিনও বিষয়টা কাওকে বলিনি। শুধু মাঝরাতে ছাদে দাড়িয়ে আকাশটার সাথে কথা বলতাম। আমার সকল দুঃখ কষ্ট ওই তারা ভরা নীল আকাশটাই ভাগ করে নিতো।

কিন্তু কিছুদিন আগে যখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি প্রেগনেট, তখন ভাবলাম আমার মতো পাপীর এই পবিত্র পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই নেই। ভালো থাকবেন স্যার। কখনো কোনো বেয়াদবি করে থাকলে মাফ করি দিবেন।

হটাৎ খেয়াল করলাম ডায়রির পাতাগুলো ভিজে গেছে। হয়তো হতভাগিটার জন একটুখানি চোখের জলে।

আসার সময় আঙ্কেলকে কানে কানে বললাম, মানুষের কৃত কর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। যদি আপনি যৌনতা কন্ট্রোল রাখতেন তাহলে রুকেয়া এখনো বেঁচে থাকতো, তারপর আমি ওনাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। 

নিরিবিলি রাস্তায় হেঁটে চলছি আর বারবার চোখের পানি মুচছি। চাইলে হয়তো আমি মেয়েটাকে উপকার করতে পারতাম। নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো কিনা জানিনা।

Broken heart sad love story bangla – Bangla Sad Story

বাংলা প্রেমের গল্প – ভালবাসা কারে কয়? Bangla Premer Golpo

আমার ছোটবেলায় বাবা তার বন্ধু নিরুপম জেঠু কে কথা দিয়েছিল যে তার একমাত্র কন্যার সাথে অর্থাৎ আমার সাথে নিরুপম জেঠুর একমাত্র পুত্রের বিবাহ দেবে। কথা মতোই ঠিক যখন উনিশ বছরে পা দিলাম সবেমাত্র প্রেম ভালোবাসার গল্প পড়তে শুরু করলাম, আশেপাশে প্রেমিক যুগল কে দেখে মনে প্রেমের ইচ্ছারা বাসা বাঁধতে শুরু করলো ঠিক তখনই আমার সব ইচ্ছার অবসান ঘটিয়ে ঢাক ঢোল বাজিয়ে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো অনুপমদার সাথে। ছোটবেলা থেকেই অনুপমদা কে চিনতাম তবে একদিন যে ওর সাথেই আমার বিয়ে হবে সে কথা আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। অনুপমদা বোধহয় জানতো সে কথা। যাইহোক, বিয়ের পরেরদিন কেঁদেকেটে বিদায় জানালো আমাকে আমার এতদিনের সম্পর্ক গুলো। আমিও সমাজের নিয়ম মেনে মা বাবার ঋণ তিন মুঠো চাল ছুড়ে দিয়ে শোধ করে বিদায় নিলাম।

বিয়ের পর যে বার প্রথম আমি আর অনুপম এক হলাম, যে মুহূর্তে অনুপম আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো সেদিন ভেবেছিলাম হয়তো এটাই ভালোবাসা। অনুপম অফিস যাওয়ার পর সারাদিন কাজের ফাঁকে অনুপমের অপেক্ষা করতাম। কখনো বা আগের রাতের আদরের কথা ভেবে আপন মনে লজ্জা পেতাম। অনুপমের শার্ট নিয়ে সেই শার্টের পারফিউমের গন্ধে নিজেকে ডুবিয়ে দিতাম। সন্ধে বেলায় যখন অনুপমের ফেরার সময় হত তখন চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক, আরো কত কি দিয়ে সাজিয়ে তুলতাম নিজেকে। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে অনুপমের চোখ থেকে দেখতে ইচ্ছা হতো। ঠিক যখন মগ্ন হতে শুরু করেছি ভালোবাসার মধ্যে তখনই এক দুপুরে খবর পেলাম যে আমি অন্তঃসত্ত্বা।

সত্যি বলতে খবর টা শুনে খুশির থেকে ভয় বেশি পেয়েছিলাম। আমি কি পারবো?এই প্রশ্নটাই মাথায় ঘুরপাক খেয়ে যেত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। তবে এক সন্ধ্যায় যখন ভিতরে এক নিষ্পাপ প্রানের বেড়ে ওঠার আভাস পেলাম সেদিন বুঝলাম ভালোবাসা কি। অনুপম তখন তার অফিসের সহকর্মী সোমা কে নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ত হওয়া টাও স্বাভাবিক আমার কাছ থেকে তার যা চাওয়া তা আপাতত তার পাওয়া হচ্ছিল না। একদিন অনুপম ঘুমিয়ে পড়ার পর তার ফোনে “গুড নাইট হানি। লাভ ইউ।” মেসেজটা আসতে দেখে জানতে পারি সে কথা। তারপর থেকে এরকম অনেক ভাবেই সামনে এসেছে অনুপমের পরকীয়ার সত্যি। তাতে যদিও আমার খারাপ লাগেনি কারণ ততদিনে আমার ভালোবাসার সংজ্ঞা বদলেছে।

আমার কাছে ভালোবাসা মানে তখন আমার মধ্যে বেড়ে ওঠা সেই ছোট্ট প্রাণ।বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর একদিন আমার কোল আলো করে জন্ম নিলো আমার ছেলে অভিরাজ। মিথ্যে বলবো না তবে মা হওয়ার পর বুঝতে পারলাম ত্যাগ কি জিনিস। রাত বিরেতে নিজের ঘুম ত্যাগ করে সন্তানের জন্যে জেগে থাকা, গরম জলে সন্তান কে স্নান করানোর আগে সেই জলে নিজের হাত যে কতবার পুরিয়েছি তা খেয়াল নেই। সন্তানের আধ খাওয়া খাবার খেয়ে কত বেলা পেট ভরিয়েছি। নিজের জন্য শাড়ি কেনবার টাকা দিয়ে যখন অভি কে রিমোটের গাড়ি বা কোনো রোবট কিনে দিতাম ওর মুখের হাসিটার মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে পেতাম। তবে সে ভালোবাসাটাও বেশিদিন টিকলো না।

যে বার স্কুলে খারাপ রেজাল্ট করায় ছেলেকে বকে ছিলাম সেই বার অনুপম বলেছিলো “আমার ছেলে কে একদম বকবে না। ওর যেমন ইচ্ছা ও তেমন ভাবে চলবে।” তা শুনে অভি ও বলেছিল, “আমার বাবা সবচেয়ে ভালো।”না তারপর থেকে অনুপমের ছেলে কে আর কোনো কিছুই বলিনি।

নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলাম সকলের থেকে। একদিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে নেমবুক ঘাটছি হঠাৎ একটা মেসেজ এলো ‘হাই, তোকে আজ দেখলাম। ভালো লাগছিলো অনেকদিন পর দেখে।’অচেনা কেউ না যদিও স্কুলে পড়াকালীন একসাথেই পড়তো নাম -ঋজু বিস্বাস। ছোটবেলায় খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল আমাদের সকলের। আজ আর তেমন বন্ধু কই। যাক উত্তর না দিলে খারাপ দেখায় তাই পাঠালাম, ‘ওহ কোথায় দেখলি?‘উত্তর এলো- ‘একটা খেলনার দোকানে।’

মনে পড়লো অভির জন্মদিন সামনে তাই ওর জন্য উপহার কিনতে গিয়েছিলাম। তখনই দেখেছে বোধহয়। আবার মেসেজ আসলো, ‘আচ্ছা তোকে দেখে আগের মতো আর হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল লাগলো না। তোর জীবনে কি কোনো সমস্যা আছে?’হাত লিখতে চাইলো সমস্ত মনের কথা তবে ‘না তেমন কিছুই না রে।’ এই শব্দগুলি ছাড়া আর কিছুই লিখে উঠতে পারলাম না।

সেদিনের মতো আর কথা হলো না তবে পরেরদিন আবার যেই রাতে নেমবুকে ঢুকলাম অমনি মেসেজ আসলো,‘কেমন আছিস?’

লিখলাম, ‘ভালো তুই কেমন আছিস?’ এই ভাবেই কথা হতে থাকে প্রায় প্রতিদিন। জানতে পারলাম ঋজু এখন নাম করা এক কোম্পানী তে চাকরি করে। মা, বাবা এবং দিদির সাথে থাকে। ঋজুর বাড়ি আমার বাবার বাড়ির পাশের পাড়ায়। খুব বেশি দুরত্ব না। আমার বৈবাহিক জীবনের যখন সাত বছর পূরণ হতে চলেছে তখনও ঋজু অবিবাহিত। কয়জন পুরুষই বা আমাদের মতো কম বয়সে বিয়ে করে। সে যাইহোক আমাদের এই প্রতিদিন রাতের কথাবার্তাগুলো কেমন যেন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে লাগলো আমার কাছে।আসতে আসতে সেই রাতের কথোপকথনগুলো সারাদিনের হিসেব-নিকেশে বদলে গেল। আমরা একে অপরের সব থেকে কাছের মানুষ হয়ে উঠলাম নিজেদের অজান্তেই।

তবে এইবারের ভালোবাসাটায় কারুর কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না ছিল শুধু একটাই ইচ্ছা যাতে অপরজন ভালো থাকে। এক দু বার দেখা করেছি বাইরে তবে ঋজু কখনো আমার হাতটা ও ধরেনি। এই ভালোবাসাটা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে নিঃস্বার্থ হয়ে ভালোবাসা যায়। ঋজু প্রতিটা মুহূর্তে আমার ভালো থাকার কথাই মাথায় রাখতো। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়তো তখন লুকিয়ে কখনো ছাদে বা কখনো বারান্দায় ফোনে গল্প করতাম আমরা দুজন। সে গল্পের বেশিরভাগই থাকতো আমাদের স্কুলের বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে। এই ভালোবাসাটা নিয়ে আমি দিব্যি সুখে ছিলাম বুঝেছিলাম ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ তবে ঠিক তখনই ঋজুর বাড়ি থেকে ওর জন্য বিয়ে ঠিক করা হলো।

ঋজু কি করবে জানতে চাইলে আমিই তাকে বিয়েটা করে নিতে বলি কারণ ততদিনে আমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা টা খুবই পরিষ্কার। ‘একজন মানুষকে ভালোবাসলে তাকে নিজের করে পেতে হয়না। মনে ভালোবাসার অনুভূতি থাকলেই তাকে পাওয়া যায় কখনো ভাবনায়, কখনো শব্দে, কখনো নিস্তব্ধতায়, কখনো স্বপ্নে বা কখনো কোনো গানের লাইনে।’ঋজুর বিয়েতে খুব মজা করেছিলাম।

অনুপম, অভি আর আমি আমরা তিনজনেই গিয়েছিলাম। ঋজুর বউটাও খুব ভালো হয়েছে। যেমন মিষ্টি দেখতে তেমন ভালো স্বভাব। ঋজু ভালোই থাকবে নতুন সংসারে। বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে আসার আগে ঋজু কে বিদায় জানাতে গেলে ঋজু সবার চোখের আড়ালে হাতে একটা চিরকুট দিয়ে চলে গেল। খুলে দেখলাম তাতে লেখা, ‘তোকে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করতাম তবে তখন বলতে পারিনি। যখন বলবো ভাবলাম তখন তোর বিয়ে হয়ে গেল। এখন যখন তোকে পেলাম তখন আমাকে বিয়ে করতে হলো। এই জন্মে তো তোকে পাওয়া হলো না তবে যদি পরজন্ম বলে কিছু হয় তাহলে তুই শুধু আমারই হবি। ভালো থাকিস বন্ধু।’ঋজুর সাথে যে আর কথা হয়নি তা না।

যে বার হানিমুনে গিয়েছিল মালদ্বীপে সে বার আমাকে ওর বউ অন্বেষার সাথে ছবি পাঠিয়েছিল। আগের মাসে মেয়ে হয়েছে ওদের। ঋজু আমার নামেই মেয়ের নাম রেখেছে তনয়া। বলেছিল, ‘তোকে তো পাওয়া হলো না তাই আমি নিজের মেয়ের মধ্যেই তোকে খুঁজে নেব।’এতটা পবিত্র চিন্তা যে আমাকে নিয়ে কারুর থাকতে পারে তা আগে বুঝিনি।

অন্বেষা কে ঋজু যথেষ্ট ভালোবাসে সেটা ঋজু কখনোই অস্বীকার করেনি।আজ অনুপম চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করলো। অভি কলেজ পাশ করে ভালো চাকরিতে ঢুকেছে চার বছর আগে। অভির জীবনের দরজায় ভালোবাসা কড়া নেড়েছে বহু আগে। আমাদের দু বাড়ির থেকেই কোনো অমত ছিলোনা ওদের সম্পর্ক নিয়ে। অভি বিয়ের পর বউয়ের সাথে নতুন ফ্ল্যাটে স্থানপরিবর্তন করেছে। মাঝে মধ্যে আসে যদিও আমাদের দেখে যেতে।

অনুপমের জীবনে এই মুহূর্তে আর কোনো সোমা নেই। এই মুহূর্তে অনুপমের চাওয়া পাওয়া কেবল একটি মানুষ যে দিবা রাত্রি তার খেয়াল রাখবে, তাকে সময় সময় খেতে দেবে, তার সাথে দুটো মিনিট সুখ দুঃখের আলাপ আলোচনা করবে আর চোখের সামনে তেমন মানুষ আমায় ছাড়া আর কেউ নেই। তাই ইদানিং অনুপমের কাছে আমি তার সবচেয়ে কাছের হয়ে উঠেছি আবার। ঠিক যখন অনুপমের মধ্যে নিজের অস্তিত্বটা খুঁজে পেতে শুরু করেছিলাম তখনই একদিন অনুপম আমাকে চিরবিদায় জানিয়ে পরলোকে পাড়ি দিলো।

ছেলে বলেছিল তার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকতে তবে এতগুলো বছরের স্মৃতির মায়া ছেড়ে চলে যেতে পারিনি। এই বাড়িতেই তো প্রথম অনুপম আমাকে আপন করেছিল। এই বাড়িতেই আছে আমার মাতৃত্বের স্মৃতি। এই বাড়িতে আমার ছোট্ট অভির বেড়ে ওঠার সব স্মৃতি এখনো জীবন্ত। এমন কি এই বারান্দাতেই ঋজুর সাথে কত সুখ দুঃখের কথা রয়েছে।জীবনে এত গুলো ভালোবাসার অর্থ বোঝার পর কেবল একটি গানই বারংবার গেয়ে যেতে ইচ্ছা হয় আমার,“সখী, ভাবনা কাহারে বলে।সখী, যাতনা কাহারে বলে ।তোমরা যে বলো দিবস-রজনী‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—সখী, ভালোবাসা কারে কয় !সে কি কেবলই যাতনাময়।”


গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। 

গল্পটি ভালো লাগলে কমেন্টস বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন আর বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। 

Bangla Sad Story – কষ্ট জমানো ডাইরির পাতা-য় না বলা কথা | Story in Bengali 2024

আর আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের উক্তি, গল্প, কবিতা পড়তে পছন্দ করেন তাহলে “রাতের আলো ডট কম” ওয়েব পোর্টালটি নিয়মিত ফলো করুন। এখন থেকে আমাদের ওয়েব পোর্টালে ‘ভূতের গল্পের’ একটি নতুন গল্পের সিরিজ শুরু হচ্ছে আশা করি এই বাংলা গল্পের সিরিজটাও আপনাদের মন কেড়ে নেবে।

Read more: বাংলা নতুন অনুগল্প – গোপন ক্রাশ


আপনি কি সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন? তাহলে এখানে ক্লিক করুন : siksakul.com

raateralo.com

Leave a Comment