Raater Alo

বাংলা নতুন অনুগল্প – গোপন ক্রাশ | Bengali Love Story | Bangla Real Love Story 2023 | Stories in Bengali 2024

বাংলা নতুন অনুগল্প এর বিবর্ণ বিচিত্র সম্ভারে আধুনিক সমাজের নানান দিক ও মানুষের বিভিন্ন আবেগ, সংগ্রাম, আশা, হতাশা, স্বপ্ন, ও বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠে। এসব গল্পে বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা, গোপন ক্রাশ, প্রেম, দ্বন্দ্ব, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ইস্যু, অর্থনৈতিক চাপ, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব, পরিবেশগত উদ্বেগ এবং নারী-পুরুষের ভূমিকা পরিবর্তনের মতো বিষয় স্থান পেয়েছে।

লেখকরা তাদের সৃজনশীলতা ও কল্পনার মাধ্যমে এই সমস্ত দিককে তুলে ধরেন, যা পাঠককে নতুন ভাবনাচিন্তা ও অনুভূতিতে নিয়ে যায়। এই অনুগল্পগুলি শুধু মনোরঞ্জন নয়, বরং সামাজিক বার্তা দেওয়া, চিন্তাভাবনার পরিবর্তনে অবদান রাখা এবং সাংস্কৃতিক সচেতনতা বৃদ্ধির এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কখনো কখনো জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন আমারা কারো প্রেমে পড়ি। কিছু গল্প থাকে যেখানে আমাদের মনের কথা ভালোবাসার মানুষটিকে জানাতে পারি, আবার এমনও কিছু গল্প থাকে যেখানে ভালোবাসার মানুষটিকে মনের কথা জানানো হয়ে ওঠে না। তারা আজীবন আমাদের হৃদয়ে গোপন ভালোবাসা (গোপন ক্রাশ) হয়ে থাকে যায়। 

আজকে “রাতে আলো ডট কম” ওয়েব পোর্টাল আপনাদের জন্য একটা সত্যি প্রেমের গল্প নিয়ে এসেছে আশাকরি আজকের গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।

গল্প – গোপন ক্রাশ।

লেখক – সঞ্জয় কীর্ত্তনীয়া।

বাংলা নতুন অনুগল্প – গোপন ক্রাশ | Bengali Love Story | Bangla Real Love Story 2023 | Stories in Bengali 2024

বাংলা নতুন অনুগল্প – গোপন ক্রাশ

এখন থেকে প্রায় ৯ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্মৃতি গুলো আজও যেন সতেজ রয়ে গেছে। মনে হয় তখন কত কঠিন সময় ছিলো মোবাইল ফোনের ব্যাবহার নেই।ভালোলাগা ও ভালোবাসা ব্যাপারে আধুনিকতার প্রকাশ হয়নি।তখন প্রথম দেখায় ভালোলাগাকে বলা হতো মনে ধরেছে।আর এখন কার মনের মনে ধরার থেকে ক্রাশ খায় আর ফোনে ধরে। তখন কার সময়ের একটি ঘটে যাওয়া ঘটনার আধুনিক ভালোলাগা ক্রাশ তবে গোপন ক্রাশ।


সে বছর ২০১৫ দ্বাদশ শ্রেণি ফলাফল প্রকাশিত হবার পর সঞ্জয়ের মনে আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে। কারণ উচ্চ মাধ্যমিক দেবার পর নিজেকে নতুন করে দেখতে পারবে,কলেজে ভর্তি হবার মুহূর্ত গুলো একটা আলাদা জগত ও অনুভূতির মতো। কত নতুন মুখ নতুন বন্ধু নতুন নতুন সম্পর্ক নিয়ে কাটিয়ে দিতে হবে তিন চারটে বছর। তবে যাইহোক বন্ধুদের সাথে সাথে সে বাড়ির কাছের স্থানীয় কলেজে ভর্তির আবেদন করে।

তখন সঞ্জয় অনার্স পাওয়া শর্তেও কিছু কারণে সাধারণ পাশ কোর্সের আবেদনে দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়।সঞ্জুর প্রথম দিনের কলেজে প্রথম যাকে দেখে চোখ হঠাৎ করে থমকে গিয়েছিলো ,চোখ ফেরাতে পারছিল না। একটি মেয়ে গোপালি রঙের চুড়িদার পড়া যেমন তার চোখ, মুখের হাসি ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের প্রলেপ দেওয়া মেয়েটির মাথায় ভর্তি লম্বা ঘন চুলের বাহার।যেন মন হচ্ছে সদ্য স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা,সে সাধারণ পোশাকে সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।পাশে আছে কয়েকশো সুন্দরী মেয়ে তবে তাদের দিকে চোখ যাচ্ছে না।

সঞ্জু ও তিন বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে ছেলেদের লম্বা লাইনে আর মেয়েটি পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কলেজের ভর্তির টাকা জমা দেবার জন্য।তখন সঞ্জুর কাছে সেই মেয়েটি নামহীন একটি পরী, তাকে প্রথম দেখে ভালো লাগলেও সেকথা বলা হয়নি তাকে। কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে হঠাৎ একদিন দেখা হয়। ওর সঙ্গে দেখা হলেও তখনো আলাপ হয়নি। কারণ সঞ্জু অন্য ক্লাসের আর মেয়েটি বাংলায় অনার্স নিয়েছে।তাই একই কলেজে থাকায় সঞ্জু খুঁজে পাইনি তাকে।বাংলায় অনার্স ক্লাসের ছাত্রী জানার পর কিছুদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দূর থেকে দেখতো তবে কাছে যায়নি ভালোলাগার কথাটি জানানোর জন্য।

তখন সঞ্জু বন্ধুরা ওর সঙ্গে নতুন বন্ধুত্ব না হবার জন্য নাম, ঠিকানা কোথায় বাড়ি কোন কিছুই জানা হয়নি। তবে হ্যাঁ মেয়েটির মধ্যে ভালো গুন বা প্রতিভা লুকিয়ে আছে সঞ্জু বুঝতে পারে।সঞ্জয় স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে থেকে বাদ পরে যায় কলেজে গিয়ে,পাশ কোর্সের ছাত্র হোলেও সঞ্জু, তবে মাঝে মাঝে বাংলা অনার্স ক্লাসে ক্লাস করেতে আসতো মেয়েটিকে দেখবার অজুহাতে। সঞ্জুর প্রথম দিনের দেখা প্রথম ভালোলাগার মুখিটি দেখে আলাদা অনুভূতির জগতে চলে যেত। ধীরে ধীরে কলেজের নতুন বন্ধু, নতুন বন্ধুদের সাথে আলাদা করে নিজেকে ওদের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া।যাইহোক ভালোই চলছিলো মেলামেশা কলেজে এসে পড়াশোনা ও আনন্দ করে সময় কাটানোর মুহূর্ত গুলো। 


এমন একটা ঘটনা ঘটে যায় সঞ্জু তখন সেখানে কিছু করতে পারেনি।সঞ্জু কখনো কল্পনা করতে পারেনি সেই ঘটনার ব্যাপারটি। কলেজে বন্ধুরা একসঙ্গে ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তখন সঞ্জুর এক প্রিয় বন্ধু হঠাৎ করে সবাইকে চুপ করতে বললো। সঞ্জু বুঝতে পারল না, জিজ্ঞেস করলো বিনোদ কি হলো রে..?  কারণ সঞ্জয় এ ক্লাসের নয় তাই সম্পূর্ণ ঘটনা সঞ্জুর কাছে অজানা ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে..।


বিনোদ বললো আমাদের বন্ধু ওই মেয়েটিকে পছন্দ করে ও প্রেমে পড়েছে..এমনকি ওকে নিয়ে কল্পনায় তার ছবি এঁকেছে।
একদম ওর মতোই হয়েছে দেখতে। সঞ্জুর ভালোলাগা মুখটির কথা তার বন্ধুর ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়ে যাবে।
সঞ্জুর ভালোলাগা ক্রাশ মেয়েটির কথা কোন বন্ধু এমনকি বিনোদ জানতো না আর কখনো জানানো হবে না। কল্পনার ভালোবাসা অন্যের ভালোবাসা হবে খুশির ব্যপার। বাংলা অনার্স ক্লাসে ওরা ভালো বন্ধুত্ব হয়ে কয়েক বছর কাটিয়ে দেয় পরবর্তীতে… সেই মেয়েটিকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলে সে তাকে মেনে নিতে পারেনি আর একটা বন্ধুত্বের ভালোবাসা হারিয়ে যায়। সব ঝামেলার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো নতুন কাহিনি এটাও সঞ্জু ভাবতে পারেনি।এদিকে প্রথম যে মেয়েটিকে  দেখে , সেই এখন সঞ্জুর সর্বনাশ। দেখা হয় কথা হয় তবু মুখ ফুটে বলা হয়না ভালোলাগে..তোকে ভালোবাসি।

এ যেন এক অদৃশ্য গলায় ফাঁসি। গোপন থেকে যায় ক্রাশের কাছে সঞ্জুর গোপন ভালোলাগা ও ভালোবাসা। স্নাতক পরীক্ষা হবার পর কলেজ শেষ হয়ে যায় ২০১৮ তে, তারপর থেকে বিচ্ছেদ হয় একে একে নিজেরা নিজেদের ব্যস্ততার জীবনে। বর্তমান অবস্থায় সেই মেয়েটি কে দেখে যে সব অনুভূতির ছবি দেখেছিলো সঞ্জু, সেই সব নতুন প্রতিভা গুলো প্রকাশিত হয় নাচ,গান,ছবি আঁকা ইত্যাদি।সেই ক্রাশের কাছে সঞ্জু আজও অজানা ওর কল্পনায় সে নেই বাস্তবতা কঠিন করেছে। 


মিথ্যে কিছু ক্ষুদ্র সম্পর্ক বটবৃক্ষের ঠেস শিকড়ের মতো হয়ে যায়। চাইলেও ছিড়তে মন চায়না বাকিটা জীবন কষ্টে ও অবহেলায় কাটাতে হবে। তাকে ভালোবাসা দেবার ও তার ভালোবাসা পাবার আশা সঞ্জু কখনো রাখেনি বরং ওর কাছে অন্য এক ভালো সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
নাম হীন মেয়েটি আজ পরিচিত হয়ে মিথ্যে এক সম্পর্ক দিয়ে সব পথ বন্ধ করেছে। সঞ্জু বুঝতে পারেনি ভালোলাগা জিনিসটা ঠিক যেন গভীর বনের মধ্যে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে আনন্দ দেওয়া আর ভালোবাসা হলো সেই বনে দুজনে একসঙ্গে হারিয়ে গিয়ে হারানোর আনন্দ নেওয়া।
দীর্ঘ সম্পর্কের কিন্তু দীর্ঘ পথ থাকে তবে সময় ভালো থাকে না 
এদিকে সঞ্জুর গোপন ভালোলাগা ও ভালোবাসা সারাজীবন গোপন ক্রাস হয়েই থেকে যাক এই শুভ কামনা রইলো……..!।


গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। 

গল্পটি ভালো লাগলে কমেন্টস বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন আর বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। 


বাংলা নতুন অনুগল্প – “গোপন ক্রাশ” | Bengali Love Story | Bangla Real Love Story 2023 | Stories in Bengali 2024


বাংলা নতুন অনুগল্প: আলোর মিছিল


গলির মোড়ে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান। সেখানে প্রতিদিন ভোরের প্রথম আলোতে মিনতি চা বানায়। মিনতির চায়ের দোকানটি স্থানীয় মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তার হাতের চায়ে যেন এক অদ্ভুত মায়া আছে, যা মানুষের মন কেড়ে নেয়।

একদিন, সকালের আলো ফুটতেই মিনতির দোকানে এক অচেনা যুবক এসে হাজির হলো। তার চোখে মুখে এক ধরণের ক্লান্তি ও অস্থিরতা স্পষ্ট। মিনতি তাকে এক কাপ চা দিয়ে বলল, “এই নাও, একটু আরাম পাবে।”

যুবকটি চায়ে চুমুক দিয়ে যেন একটু স্বস্তি পেল। তারপর সে মিনতিকে তার জীবনের গল্প শোনাতে থাকে। সে বলে, “আমি অনেক দূর থেকে আসছি, আমার জীবনে আলো খুঁজে পাইনি, শুধু অন্ধকার।”

মিনতি শুনল, তারপর বলল, “জীবনে আলো না পাওয়া মানে এই না যে আলো নেই। আমাদের চারপাশে অন্ধকার থাকলেও আমরা যদি আশা না হারাই, তাহলে একদিন আলো নিজে থেকেই আমাদের খুঁজে নেয়।”

মিনতির কথা শুনে যুবকের মনে এক ধরনের শান্তি আসে। সে বুঝতে পারে যে, তার জীবনের অন্ধকারের মধ্যেও আলোর খোঁজ চলছে। মিনতির চায়ে এবং তার কথায় যেন এক নতুন আশা এবং শক্তি পায় সে।

সেই দিন থেকে, যুবকটি প্রতিদিন মিনতির দোকানে আসে। তারা নানা বিষয়ে কথা বলে, আর প্রতিদিনের এই আলাপে যুবকের জীবনে আস্তে আস্তে আলোর উপস্থিতি বেড়ে চলে। একদিন, যুবকটি মিনতিকে বলে, “তুমি আমার জীবনের আলোর মিছিল সঞ্চালন করেছ।”

মিনতি হাসে এবং বলে, “আমি কিছুই করিনি। আলো সবসময় তোমার ভেতরেই ছিল, শুধু তুমি তা খুঁজে পাওনি। মানুষের জীবনে আলোর মিছিল শুরু করার শক্তি তার নিজের ভেতরেই থাকে।”

গল্পটি শুধুমাত্র একজন যুবক এবং মিনতির নয়, এটি প্রত্যেকের জীবনের গল্প। আমরা প্রত্যেকেই জীবনের বিভিন্ন মোড়ে অন্ধকার ও আলোর মাঝে দোলাচলে থাকি। কিন্তু আশা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে, আমরা নিজেদের জীবনে আলোর মিছিল সঞ্চালন করতে পারি।

আর আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের উক্তি, গল্প, কবিতা পড়তে পছন্দ করেন তাহলে “রাতের আলো ডট কম” ওয়েব পোর্টালটি নিয়মিত ফলো করুন। এখন থেকে আমাদের ওয়েব পোর্টালে ‘ভূতের গল্পের’ একটি নতুন গল্পের সিরিজ শুরু হচ্ছে আশা করি এই বাংলা গল্পের সিরিজটাও আপনাদের মন কেড়ে নেবে।


বাংলা অনুগল্প “ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি” l Bangla Anugolpo- Pratishruti

সামনের অঘ্রাণে অর্ক’র বিয়ে । ব্যস্ততার চূড়ান্ত । প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যায় অফিস ফেরতা অর্ক তার হবু বধূর সাথে কখনো শাড়ী-গয়নার দোকানে, কখনোবা ফুলের দোকানে ঢুঁ মারছে । প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু কেনাকাটা করছেই তারা ।

এমন সময় হঠাৎ, অর্কর মোবাইলে হোয়াটসআপ থেকে একটি মেসেজ ঢোকার টুং টাং শব্দ হলো । হালকা ঘুমচোখে মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ রাখলো অর্ক । না, পারমিতা নয় । একটি ভীষণই চেনা নাম্বার থেকে একটি ক্ষুদ্র মেসেজ এসেছে । কতকাল পরে এলো ? পাঁচবছর ? হয়তোবা ।হঠাৎ, চোখ জ্বালা করে উঠলো অর্কর ।

“কেমন আছো ?”

এ পাহাড়সম বেদনা অনুভব করলো অর্ক যতবার মেসেজটি পড়তে লাগলো । আজ এতকাল পরে বৈশাখী জানতে চাইছে অর্ক কেমন আছে । একটা বোবা অবরুদ্ধ কান্না সহসা জমা হলো অর্কর হৃদয়ে । কষ্টের অভিঘাতে মুখ বিকৃত করে ফেললো সে ।

বৈশাখী যদি আরেকটু কিছু লিখতো তার মেসেজে তবে, এতটা কষ্ট পেতো না আজ অর্ক; কিন্তু, ওই ছোট্ট মেসেজটা “কেমন আছো ?” দিয়ে বৈশাখী আজ বুঝিয়ে দিয়েছে যে সে আসলে ভালো নেই ।

বৈশাখী । একমাত্র নারী, যাকে অর্ক সত্যিকারের ভালোবেসেছিলো । না ভুল হলো, এখনো ভালোবাসে । যে বৈশাখী একদিন শ্রাবণ সন্ধ্যায় তার বুকে মাথা রেখে কথা দিয়েছিলো অর্কর জন্য পৃথিবীর সে সব কিছু ছাড়তে রাজি, সেই বৈশাখী সবার আগে তাকেই ছেড়ে দিলো ।

অনেক গভীর সম্পর্ক ছিল তাদের দুজনের মধ্যে । হাতে হাত রেখে এক সাথে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর ছিল দুটি তরুণ হিয়া । হঠাৎ, কি যে হলো ! একদিনের সামান্য একটা মন কষাকষি থেকে অভিমানের বাষ্প জমলো দুজনেরই মনে । অর্ক ব্লক করে দিলো হোয়াটসআপ-এ বৈশাখী-কে । মাত্র একটি দিনের জন্য । পরের দিন ভোরেই সে ঘুম থেকে উঠেই আনব্লক করে বৈশাখীকে মেসেজ দিলো । মেসেজ সেন্ড হলো না । কল করলো, গেলো না । মেসেঞ্জার-এ, ফেসবুকে ব্লকড পেলো নিজেকে । বৈশাখী তাকে ব্লক করেছে ।

পাগলের মতো অর্ক ডিরেক্ট কল করলো, ঢুকলো না । Truecaller দিয়ে অর্কর নাম্বারটাই ব্লক করেছে বৈশাখী । এরপরে বহু চেষ্টা করেছে অর্ক যোগাযোগ করার । পারেনি, অন্য নাম্বার দিয়ে কল করে দেখেছে । অর্কর গলা শোনা মাত্রই ফোনটা রেখে দিয়েছে বৈশাখী ।

ফিজিক্যালি যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেছে অর্ক বহুবার । কিন্তু, কেউ যদি কারো সাথে দেখা করতে না চায় তবে তার সাথে দেখা করা কি সম্ভব ? না, সেটা সম্ভব নয় ।

একদিন মুহূর্তের রাগের বশে অর্ক যেটা করেছিল বৈশাখী সেটিকে পাঁচটি বছর ধরে রেখেছে । আজ এতকাল পরে সে জানিয়েছে অর্ককে যে সে আসলে ভালো নেই একটুও ।

বুকের বাঁ পাশটাতে একটা ব্যাথা অনুভব করলো অর্ক ।

দ্রুত কাঁপা হাতে নাম্বারটাতে কল করলো সে ।

মাত্র একবার রিং হতেই কল একসেপ্টেড হলো । দুজনেই নীরব, নিস্তব্ধ । শুধুমাত্র হালকা শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যেতে লাগলো । দীর্ঘ দুই মিনিটের নীরবতার পরে অর্কই বললো – “কেমন আছো তুমি ?”

সহসা কান্নায় ভেঙে পড়লো বৈশাখী । ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একে একে সব কিছুই জানালো সে অর্ককে । এক নির্বাক শ্রোতা হয়ে, নীরব কান্নার অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে অর্ক শুনলো সব কথা বৈশাখীর ।

অর্কর সাথে বিচ্ছেদ করেছে বৈশাখী এক সমুদ্রসম অভিমান আর পাহাড়সম জেদের বশে । এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে এরপরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে । অর্ককে কষ্ট দিতে, অর্ককে উচিত শিক্ষা দিতে গিয়ে সে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনে । বিয়ের পর পরই আমেরিকা পাড়ি দেয় সে । ততদিনে অর্কর প্রতি রাগ অভিমান কিচ্ছু নেই । কিন্তু, কোনো অধিকারও যে নেই আর । অর্কর কাছে ফেরার পথ সে নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে । আর কোনো পথ খোলা নেই ।

বিয়ের পরে আমেরিকা এসে স্বামীর আসল চরিত্রের সাথে পরিচিত হলো বৈশাখী । মদ্যপ, লম্পট আর চরম অত্যাচারী । শারিরীক নির্যাতন সে করতো, তবে তার চাইতে হাজার গুন বেশি কষ্ট দিয়ে বৈশাখীকে মানসিক নির্যাতন করে সে পৈশাচিক আনন্দ পেতো । কতবার বৈশাখী অর্ককে মেসেজ দিতে গিয়েও দেয়নি । সে যে ভুল করেছে তার জন্য তার এমনটা সাজা হওয়াই উচিত । তার কষ্টটাকে তাই তার প্রাণের মানুষটার সাথে ভাগ করে নিতে মন সায় দেয়নি ।

একটি কন্যা সন্তানের জন্মের পর পরেই স্বামীর অত্যাচার এখন আরো বেড়ে গিয়েছে । বৈশাখী তাই এখন বাঁচতে চায় । নিজের সন্তানের একটি সুস্থ জীবন দিতে চায় । বিদেশে একটা জিনিস ভালো । আইনের সঠিক প্রয়োগ আছে এদেশে । সহজেই ডিভোর্স পেয়েছে বৈশাখী । প্রবাসী কিছু ভারতীয় তাকে অনেক সাহায্য করেছে । মূলত তাঁদের সাহায্যেই ডিভোর্সের পরে দেশে ফিরতে পেরেছে সে ।

স্তব্ধ হয়ে সব কিছু শুনছে অর্ক । গাল বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে তার । বৈশাখীকে শুধু বললো তুমি বাড়িতেই থেকো, আমি এখুনি আসছি ।

তাদের ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি বৈশাখী ভঙ্গ করেছে । কিন্তু, অর্ক তো করতে পারে না । শ্রাবনের এক সন্ধ্যায় বৈশাখীকে বুকে নিয়ে সে কথা দিয়েছিলো বৈশাখীর জন্য সে পৃথিবীর সব কিছু ছাড়তে রাজি আছে । আজকে সেই কথা রাখার দিন ।

কাঁপা কাঁপা হাতে পারমিতাকে মেসেজ করলো অর্ক – “পারো, আমাকে ক্ষমা কোরো ।”

বাংলা অনুগল্প – ভালো থেকো l Premer Anugolpo – Bhalo Theko l Bangla Premer Anugolpo

“কেমন আছ ?”

এক মুহূর্তের জন্য হার্টবিটটা কেমন যেন থমকে যায়।সেই আওয়াজ, সেই অতি পরিচিত শব্দ দুটো।চমকে উঠে ডানদিকের সিটে বসা লোকটির দিকে তাকায় কথা।না চিনতে ভুল হয়নি, চেহারা এখনো প্রায় আগের মতোই আছে।শুধু চশমার পাওয়ারটা অল্প বেড়েছে বোধহয়।

প্রায় পাঁচবছর পর আবিরকে দেখল কথা আর সেই সঙ্গে মনে পড়ে যায় পুরনো দিনগুলো। কলেজের প্রথমদিনই সিনিয়রদের র‍্যাগিং এর শিকার হতে হয়েছিল তাকে।সাধারণ ইন্ট্রোডাকশনের পর তাকে সিনিয়র ছেলেদের মধ‍্যে একজনকে প্রপোজ করতে বলা হয়।শান্ত, মুখচোরা কথার তখন প্রায় ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা।পাশেই দাঁড়ানো ছেলেটির দিকে ঘুরে চোখ বুজে বলেই ফেলল ইংরেজিতে সেই অপূর্ব…না,না এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শব্দ তিনটি।

“তাই নাকি !!”
আওয়াজটা শুনে ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখে ছেলেটি ওরদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।চশমার ঐদিকে থাকা চোখ দুটোতে যেন দুষ্টুমি খেলছে।লজ্জায় কান অব্দি লাল হয়ে গেছিল কথার।তারপর থেকে ছেলেটাকে এদিকে দেখলে ওদিকে পালাত সে।পূজার কাছে শুনেছিল ছেলেটির নাম আবির। আবির চ‍্যাটার্জী,থার্ড ইয়ার, ফিজিক্স অনার্স।
একদিন ক‍্যান্টিনে বসে পূজার জন্য ওয়েট করছিল, এমন সময় শুনতে পেল “কিরে, বয়ফ্রেন্ড আসতে লেট করছে নাকি? ” ঘুরে তাকিয়ে দেখে..ও বাবা!!এ যে শ্রীমান চশমাওয়ালা মূর্তিমান,একেবারে মুখোমুখি।নাহহহ্…পালানোর কোনো রাস্তা নেই।অগত্যা ঢোক গিলে তোতলাতে তোতলাতে বলল..”না.. মানে, ইয়ে….” ।

“কি ব‍্যাপার বল তো ? আমাকে দেখলে তুই এমন ঘাবড়ে যাস কেন? ” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল আবির।তারপর কি মনে হতে নিজেই বলল,”ও আচ্ছা, বুঝেছি।তুই এখনো সেই প্রথম দিনের ঘটনায় আটকে আছিস।আরে পাগল নাকি তুই!!ওসব আবার কেউ মনে রাখে !!ওটা তো জাস্ট একটা মজা ছিল।আর আমি ওতো খারাপও নই যে আমাকে দেখে পালিয়ে যেতে হবে।বুঝলেন ম‍্যাডাম !!”

সেদিন আবিরের বলা ওই কথাগুলোর মধ্যে কিছু একটা ছিল যা কথার মনের জড়তাগুলোকে সরিয়ে অন্য একটা অনুভূতির জানান দিয়েছিল।তারপর থেকে কলেজে দেখা হলে হালকা হাসি থেকে গল্প করা, অফ পিরিয়ডে একসাথে ফুচকা খাওয়া, উইক এন্ডে মুভি দেখা.. কবে যে এসব অভ‍্যাসে পরিণত হয়েছিল তা নিজেই বুঝে উঠতে পারেনি ওরা এবং সেই অভ‍্যাসের পরিণতি পেয়েছিল ‘ভালোবাসা’ হয়ে।
…………………..

“ভালো আছি, তুমি কেমন আছো ?” অতীতের স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফিরে জিজ্ঞেস করে কথা।
“এই চলছে আরকি‌।” উত্তাপহীন গলায় নির্বিকারভাবে বলে আবির।
“কথা, আমি জানি, তুমি আমার উপর খুব রেগে আছ।কিন্তু বিশ্বাস করো, সেইসময় আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী হয়ে যাবে।আমি ভাবতাম আমার মা, বাবা দুজনেই খুব উদারমনস্ক,উচ্চবিত্ত- নিম্নবিত্ত এসব মানেন না। কিন্তু ওনাদের কাছে যে সোস্যাল স্ট্যাটাস এতটাই ম‍্যাটার করে জানতাম না।পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও প্লিজ।” মাথা নীচু করে কথা গুলো বলে আবির।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে বসে থাকে।একের পর এক ভাঙা স্বপ্নগুলো ভেসে উঠে স্মৃতিপটে।
“মাম্মাম…”

মিষ্টি একটি ডাকে সম্বিৎ ফেরে দুজনের। আবির দেখে একটি ছোট্ট আড়াই-তিন বছরের বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে কথার বুকে আর তার ঠিক পিছনেই প্রায় আবিরেরই বয়সী একজন হাসিমুখে এগিয়ে আসছে।ছেলেটি এসেই কথার পাশের সিটে ধপ্ করে বসে বলতে শুরু করে,” আচ্ছা, তুই সিওর তো, হস্পিটালে আমাদের বাচ্চা বদল হয় নি। এই দস‍্যি মেয়ে আমাদের কি করে হয় রে !!!!! পুরো এয়ারপোর্ট আমাকে দৌড় করিয়ে ছেড়েছে এই বিচ্চুটা।”
অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখে আবির, কথার মুখে এক অপূর্ব মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে ছেলেটাকে দেখে।

পরম যত্নে কপালের হাল্কা ঘাম মুছে দিচ্ছে নিজের ওড়নায়।অজান্তেই বুকের বামপাশটা যেন অল্প মোচড় দিয়ে উঠে আবিরের।ততক্ষনে ‘কলকাতা টু দিল্লি’ ফ্লাইটের ফাইনাল এনাউন্সমেণ্ট হয়ে গেছে।ছেলেটি ইশারায় কথাকে আসতে বলে বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে তুলে লাইনের দিকে এগিয়ে গেল।কথাও ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে।তবে যাওয়ার আগে শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাকে ভালোবেসেছিলাম আবিরদা, কিন্তু অবান্চ্ছিত একটা সম্পর্কে সারাজীবন বেঁধে রাখব তো বলিনি কোনোদিন। জোর করে আর যাই হোক অন্তত ভালোবাসা যায় না।আমি ভালো আছি.. তুমিও ভালো থেকো, আসছি।”
নির্বাক দৃষ্টিতে কথার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে আবির, সত্যিই তো, জোর করে আর যাই হোক, ভালোবাসা যায় না। তা নাহলে সে কেন আজ অবধি নেহাকে ভালোবাসতে পারল না। শুধুমাত্র নিঃশব্দে স্বামীর কর্তব্যই করে চলেছে…


আপনাদের জীবনেও যদি কোন গল্প থাকে আর “raateralo.com” এ প্রকাশ করতে চান তাহলে যোগাযোগ করুন – raateraloofficial@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরো পড়ুন:

সরকারি চাকরির সেরা ঠিকানা www.siksakul.com
Exit mobile version